বাংলাদেশের গণমাধ্যম এখন কঠিন সময় অতিক্রম করছে। আজ থেকে ৩৮ বছর আগে
বাংলাদেশে সংবাদপত্র জগতে যে অন্ধকার নেমে এসেছিল, এখনকার পরিস্থিতি যেন তার
চেয়েও অসহনীয়। তৎকালীন একদলীয় বাকশাল সরকার সংবাদপত্রের কণ্ঠ রোধের জন্য মাত্র
চারটি দৈনিক সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণে রেখে সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল। এর আগে ১৯৭৫
সালের ২৫ জানুয়ারি দেশে কার্যত গণতন্ত্রকে হত্যা করে কায়েম করা হয় একদলীয়
শাসন। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে দেশ বহুদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্রের বদলে
কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রপতি শাসনের নিগড়ে আবদ্ধ হয়। তার প্রায় পাঁচ মাসের মাথায়
সংবাদপত্র, সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়। এ জন্য ১৬ জুন
জাতির ইতিহাসে একটি কালো দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
আজকে এমন এক পরিস্থিতিতে এই দিনটি আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে, যখন একটি দৈনিক
পত্রিকা অনানুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে সম্পাদককে সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই কারাগারে
অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। ‘উসকানিমূলক প্রচারণা’র অভিযোগ এনে চরম অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে সরকার দু’টি টেলিভিশন চ্যানেল, দিগন্ত ও ইসলামিক
টেলিভিশন বন্ধ করে দিয়েছে। এর আগে বন্ধ করে দেয়া হয় চ্যানেল ওয়ান। সব
প্রস্তুতির পরও সম্প্রচারের অনুমতি দেয়া হয়নি যমুনা টেলিভিশনকে। এভাবে গণমাধ্যম
বন্ধ করে দেয়ায় হাজারেরও বেশি সাংবাদিক ও কলাকুশলী চাকরি হারিয়েছেন; মানবেতর বেকার
জীবনযাপন করছেন। গণমাধ্যম কর্মীদের একই পরিণতি হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন।
গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধের লক্ষ্য তখন যা ছিল, এখনো তাই অর্থাৎ ভিন্নমত সহ্য করতে না পারা। যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন, তারা চান সব
সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেল যেন এক সুরে কথা বলে; একই চিন্তার প্রকাশ ঘটায় এবং
সংবাদ পরিবেশনে সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন যেন ঘটে। যখন কোনো সংবাদপত্র ও টেলিভিশন
চ্যানেলে এর ব্যত্যয় ঘটেছে তখন খড়গ নেমে এসেছে।
দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন কায়েমের পর সংবাদপত্রের কণ্ঠ রোধ করা
হয়েছিল আর এখন নির্বাচিত ও বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সরকার হিসেবে দাবি করে একই কাজ
করা হচ্ছে। বরং পরিস্থিতি কোনো কোনো দিক দিয়ে আগের চেয়ে আরো খারাপ হয়েছে। আগে
অন্তত সাংবাদিককে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়নি, এখন তা-ও ঘটছে। সংবাদপত্রের
সম্পাদককে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। মধ্যরাতে হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়া
হচ্ছে টেলিভিশন চ্যানেল। এর পরও সরকার গণতান্ত্রিক হিসেবে দাবি করছে নিজেকে এবং
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জোর গলায় উল্লেখ
করছে। আমরা আশা করি, পূর্বসূরিদের গণতন্ত্রবিরোধী নীতি থেকে
বর্তমান সরকার সরে আসবে। তথ্য ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে এখন দুনিয়া
এগিয়ে চলছে, কিন্তু বাংলাদেশ পেছনে পড়ে রয়েছে; নির্যাতন-নিপীড়নের পথ গ্রহণ
করছে। আমরা আশা করব, অবিলম্বে বন্ধ সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো খুলে দেয়া হবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন