গণচীনের নতুন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে
যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন, দ্বিতীয় মেয়াদের মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাথে দুই দিন
ধরে তার একান্ত আলোচনা হলো কিন্তু ঢাকঢোল পেটানো মোটেই হলো না বলা চলে। এমনকি
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদেরও উল্লেখযোগ্য অংশ আদৌ এই সফর আর শীর্ষ সম্মেলন সম্বন্ধে
জানতে পেরেছে কি না সন্দেহ।
এ সফর আর এই শীর্ষ সম্মেলন প্রকৃতই ছিল অভিনব। ওয়াশিংটনের হোয়াইট
হাউজে নয়। নেতারা ক্যালিফোর্নিয়ার মরুভূমিতে সান্তা বারবারার কাছের এক ব্যক্তিগত
সম্পত্তিতে (অনেকটা বাগানবাড়ির মতো) ছিলেন দুই দিন। সেখানে আলোচনার বেশির ভাগ
সময়জুড়ে দুই নেতা এবং তাদের দোভাষীরা ছাড়া আর কেউ উপস্থিত ছিলেন না। অর্থাৎ
খুবই অনানুষ্ঠানিক ছিল এই শীর্ষ সম্মেলন।
সম্মেলনের শেষে উভয় পক্ষই আশাবাদী কথাবার্তা বলেছে। মার্কিন পক্ষ
বিশেষ জোর দিয়ে বলেছে, প্রেসিডেন্ট ওবামা ‘সাইবার অ্যাটাক’ বন্ধ করার জন্য
শি জিনপিংয়ের ওপর চাপ দিয়েছেন। চীনা প্রেসিডেন্টও বলেছেন যে তিনি সে দিকে নজর
দেবেন। এটা স্বাভাবিকই ছিল। ইদানীং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঘন ঘন অভিযোগ উঠেছে যে
চীনারা কম্পিউটার হ্যাকিং দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন তথ্যগুলো অবলীলায় হাতিয়ে
নিচ্ছে।
বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশ থেকে সত্তরের দশকে একে অন্যের পারমাণবিক
প্রযুক্তি চুরির অভিযোগ মার্কিন ও রুশদের দিক থেকে ঘন ঘন শোনা যেত। ইদানীং সে
রকমেরই অভিযোগ হচ্ছে মূলত মার্কিন দিক থেকে। মার্কিন মিডিয়ার কোনো কোনো অংশের
অভিযোগ অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের সমরাস্ত্র শিল্পপ্রযুক্তির বেশির ভাগই এখন চীনা
ব্লগাররা হাতিয়ে নিয়েছে।
পরস্পরের সমরাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে গুপ্তচরবৃত্তি দেশে দেশে ঐতিহাসিক
কাল থেকেই হয়ে আসছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এখন বেশি উদ্বিগ্ন শ্রমশিল্পের
প্রযুক্তি অপহরণের ব্যাপারে। মার্কিন প্রযুক্তি নকল করে সস্তা শ্রমশক্তি দিয়ে চীন
অনেক কম ব্যয়ে সমরাস্ত্র এবং বাণিজ্যিক যন্ত্রপাতি ও উপকরণ তৈরি করতে পারবে। তার
সাথে প্রতিযোগিতায় মার্কিনিরা পেরে উঠবে না। সুতরাং দুই রাষ্ট্রপ্রধানের আলোচনায়
অবশ্যই বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে এবং মার্কিন সরকারি বয়ানে এ বিষয়টার ওপরই বেশি
জোর দেয়া হয়েছে।
কিন্তু নেতারা অবশ্যই দুই দিন ধরে এই একটি বিষয় নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন
না। বস্তুত আলোচনা শেষে উভয় পক্ষই পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়ন নিয়ে কিছু ইতিবাচক
কথাবার্তা বলেছে। বাংলাদেশ প্রমুখ দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জন্য সেটা
সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক উত্তেজনার পেছনের একটা বড় কারণ
এ উপলব্ধি যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভারত যে কাটাকুটি খেলার মতো করে
বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সড়ক, রেল ও নদীপথে ট্রানজিট পথ করে নিচ্ছে সেটা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও
সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দেয়ারই শামিল।
এই ট্রানজিটগুলো ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ দু’টি কারণে। প্রথমত যে ধরনের
অর্থনৈতিক ও গণতান্ত্রিক বঞ্চনার কারণে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার জন্য
অস্ত্র হাতে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছিল, ঠিক একই ধরনের বঞ্চনার কারণে
উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত বোন নামে পরিচিত সাতটি রাজ্যের মানুষও চার দশকেরও বেশি
সময় ধরে মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। বহু কারণে ভারত সরকার সে বিদ্রোহ দমন করতে
পারছে না। সে মুক্তিযুদ্ধ দলনের জন্য সে অঞ্চলে ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও সৈন্য পাঠানো
ভারতের জন্য ক্রমেই বেশি সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
সমরশক্তির সরবরাহ পথ
দ্বিতীয়ত ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা একমত যে হিমালয়ের
গায়ের বিশাল এলাকার মালিকানা নিয়ে আরেকটি চীন-ভারত যুদ্ধ শুধুই সময়ের ব্যাপার।
তেমন যুদ্ধ যদি সত্যি সত্যি শুরু হয় তাহলে চীন প্রথমেই বাগদোগরা বিমানঘাঁটি থেকে
আকাশপথে এবং ‘চিকেন নেক’ নামে পরিচিত সরুপথটি দিয়ে
স্থলপথে দেশের অবশিষ্টাংশের সাথে সাত বোনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেবে বলে
সমরবিশেষজ্ঞরা একমত। উভয় কারণেই অস্ত্র, রসদ ও সৈন্য পাঠানোর প্রয়োজনে
বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ট্রানজিট পথ ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন ছাড়াও বাংলাদেশের জন্য ভয়ের কারণ এই যে দুই
দেশের যুদ্ধ শুরু হলে সেটা প্রতিরোধের বাহানায় বাংলাদেশে সমরশক্তি নিয়োগ ছাড়া
ভারতের জন্য গত্যন্তর থাকবে না। অর্থাৎ স্বাধীন বাংলাদেশ ভারতের সামরিক দখলে চলে
যাবে। সে রকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অবস্থা প্রকৃতই হবে ‘রাজায়-রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখড়ের প্রাণ
যায়’ গোছের। এসব কারণেই বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ বিবদমান দুই পক্ষের
কারো সাথেই গাঁটছড়া বাঁধার বিরোধী। বাংলাদেশের জন্য আদর্শ পন্থা হবেÑ ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়’।
ভারত জানে বাংলাদেশের কোনো প্রকৃত গণতন্ত্রী সরকারই ভারতকে বেপরোয়া
ও ঢালাও ট্রানজিট দিতে রাজি হতে পারে না। সে কারণেই ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসের
নির্বাচনে গণসমর্থনহীন আওয়ামী লীগকে কৃত্রিম মাস্টারপ্ল্যানের নির্বাচনে ক্ষমতা
দেয়া হয়েছিল। স্বাধীনতার পর থেকে বহু কারণে বেশির ভাগ সময়ই ভারতের সাথে
যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভালো ছিল না। কিন্তু বর্তমানে ওয়াশিংটন চীনকে পঞ্চাশের
দশকের সোভিয়েত ইউনিয়নের মতোই বৈরী হিসেবে রেখেছে। ‘আমার শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু’Ñ এ মন্ত্র অনুসরণ করে কিছুকাল ধরে আমেরিকা ভারতের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে
তুলতে বাধ্য হচ্ছে। দিল্লির চাপে পড়েই শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা দেয়ার ষড়যন্ত্রে
ওয়াশিংটন ভারতের সাথে সহযোগিতা করছে।
অপমান হজম করছে মার্কিনিরা
এ অবস্থার আলামত বিগত কিছু দিনে বেশ পরিষ্কার লক্ষ করা যাচ্ছে।
গ্রামীণ ব্যাংক, ড. মুহাম্মদ ইউনূস, মানবাধিকার, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গার্মেন্ট শিল্পে ট্রেড
ইউনিয়ন গঠন ইত্যাদি বহু ব্যাপারে বিগত সাড়ে চার বছরে আওয়ামী লীগ সরকার বলতে
গেলে ওয়াশিংটনকে অপমান করে চলেছে। গ্রামীণ ব্যাংককে সরকারি দখলে না নেয়ার অনুরোধ
জানাতে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি কিনটন ঢাকা পর্যন্ত এসেছিলেন। শেখ
হাসিনা তার অনুরোধ গ্রাহ্য করেননি। একজন সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে
সাক্ষাৎ দিতেও তিনি অস্বীকার করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের জন্য মার্কিন
রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা বিগত প্রায় চার মাস ধরে অপেক্ষা করছেন।
ওয়াশিংটন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই নিজেকে গণতন্ত্রের ধারক ও
বাহক বলে দাবি করছে। কিন্তু তার নিজের স্বার্থে টান পড়লে মার্কিনিদের
গণতন্ত্রপ্রীতি অদৃশ্য হয়ে যায়। একটা দৃষ্টান্ত বর্তমান বাংলাদেশ। রাজনৈতিক
হত্যাকাণ্ড, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম করা, বিরোধী দলগুলোর
সভা-সমাবেশ করার অধিকার হরণ করা, সরকারের সমালোচক মিডিয়ার কণ্ঠরোধ, ১৭ জন সাংবাদিক হত্যা ইত্যাদি
প্রতিটি ঘটনা গণতন্ত্রের নীতি ও আদর্শের পরিপন্থী। মার্কিন সংবিধান ও গণতন্ত্রের
জনক জর্জ ওয়াশিংটন নিশ্চয়ই তার সমাধিতে খুবই লজ্জিত বোধ করছেন। কিন্তু ভারতের
সাথে নবলব্ধ বন্ধুত্বের প্রয়োজনে ওয়াশিংটন এসবই হজম করে যাচ্ছে।
অতি সাম্প্রতিক কিছু দিন মজিনার কথাবার্তা থেকে মনে হচ্ছিল যে আসন্ন
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটন মোটামুটি একটা নিরপেক্ষ অবস্থান নেয়ার চেষ্টা
করছে। কিন্তু সেটা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। মজিনার কথাবার্তাগুলো এখন আবার ১৮০ ডিগ্রি
ঘুরে গেছে বলে মনে হয়। সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যান খালেদা জিয়ার
সাথে বৈঠক বাতিল করে ওয়াশিংটন ফিরে গেলেন। এখন সত্যি সত্যি আবার এক-এগারো ও
মাস্টারপ্ল্যানের তোড়জোড় শুরু হয়েছে বলেই মনে হয়।
আশাহত বিএনপি
অভ্যন্তরীণ বিবাদের কারণে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি কিংকর্তব্যবিমূঢ়
হয়ে পড়েছেÑ এ কথা অনেকেই বলে থাকেন।
বিকল্প মতবাদ হচ্ছে এই যে কূটনৈতিক সমর্থনের ওপর অতিমাত্রিক নির্ভরশীল হতে গিয়ে
বিএনপি মার খেয়েছে। এ দলের কেউ কেউ এখন হয়তো কৃত্রিম আশাবাদ সৃষ্টির চেষ্টায়
বলতে শুরু করেছেন যে ২৫ জুন নতুন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বাংলাদেশে
আসবেন। সে উপলক্ষে সম্ভবত বাংলাদেশে মার্কিন নীতির ভুলত্রুটি শোধরানোর কিছু
চেষ্টাও হবে। খড়কুটোর মতো হলেও এদের আশাবাদের কিছুটা ভিত্তি থাকতে পারে।
প্রেসিডেন্ট ওবামা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির একটা প্রধান অঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ রদবদল
করেছেন। টম ডনিলনের স্থলে জাতিসঙ্ঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সুজান রাইসকে নিয়োগের কথা
ঘোষণা করা হয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে তিনি অনেক বেশি বাস্তবতা ও বিচক্ষণতার
পরিচয় দেবেন।
এ কারণেই ওয়াশিংটনেও কেউ কেউ মনে করছেন যে দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে
ওবামা বিশেষ করে চীনের ব্যাপারে নীতিতে কিছু নতুনত্ব আনার চেষ্টা করবেন। ও দিকে
শিপ জিনপিংও বলতে গেলে চীনের নতুন প্রজন্মের ও নতুন ভাবধারার নেতা। ওবামা আগ্রহী
হলে চীন হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে রাজি হবে। তেমন
অবস্থায় উভয় দেশের বৈদেশিক নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ রদবদল অস্বাভাবিক হবে না।
এ রকমেরই একটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন এবং তার
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার সত্তরের দশকের শুরুতে। দুই দেশের মধ্যে তখন
কূটনৈতিক সম্পর্কও ছিল না। মাও জে দংয়ের সফল বিপ্লবের পর গণচীন কমিউনিস্ট
সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথেই ঘনিষ্ঠ ছিল। কিন্তু তাত্ত্বিক মতভেদের কারণে দুই দেশের
সম্পর্কে কিছু শীতলতা দেখা দেয়। সে সুযোগ নিয়ে কিসিঞ্জার পিকিংয়ের (তখনকার নাম)
সাথে সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেন। পাকিস্তানের সামরিক ডিক্টেটর জেনারেল ইয়াহিয়া
খান তখন পিকিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে মধ্যস্থতা করেছিলেন।
তখনকার পরিস্থিতি বর্তমানের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। চীন তখন ছিল
দরিদ্র, অনুন্নত ও দুর্বল দেশ। আশঙ্কার দৃষ্টি নিয়ে তাকে ঘন ঘন তাকাতে হতো
সীমান্তের ওপারের সোভিয়েত ইউনিয়নের দিকে। অন্য দিকে ওয়াশিংটন তখন শক্তিধর
পরাশক্তি এবং উন্নত দেশের রাজধানী। তার সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে সোভিয়েতরাও
তাকে বেশি ঘাঁটাতে সাহস পাবে না। সে কারণে পিকিং বিনয়ী ছোট তরফের ভূমিকা পালন
করতে পিছপা হয়নি। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়েছে। বিগত তিন
দশকে চীনের অর্থনীতি আর শ্রমশিল্পের বিস্ময়কর অগ্রগতির কারণে এখন সবাই ধরে নিচ্ছেন
যে চীনই হচ্ছে ভবিষ্যতের ১ নম্বর পরাশক্তি। এমন নাটকীয় পরিবর্তন প্রায় সময়ই
বিশ্ব পরিস্থিতিতে তোলপাড় ঘটায়।
পূর্ব এশিয়ায় তোলপাড়
এই তোলপাড় হয়েছে পূর্ব এশিয়ায়। এর সূচনা হয় ২০১০ সালে এবং দুই
প্রকারে। ওয়াশিংটন এ অঞ্চলে তার সমরশক্তি বৃদ্ধি করে চলেছে। নতুন নতুন নৌজাহাজ ও
সমরাস্ত্র মোতায়েন হয়েছে এ অঞ্চলে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ফিলিপাইনের
সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মৈত্রী জোরদার করা হয়েছে, উত্তর
অস্ট্রেলিয়ার ডারবান অঞ্চলে একটা মার্কিন মেরিনঘাঁটি বসানো হয়েছে। কার্যত এর ফলে
ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের মতো দেশ বেশি সাহসী হয়ে উঠেছে। দক্ষিণ চীন সমুদ্রের
ছোটখাটো দ্বীপের মালিকানা নিয়ে বিরোধে তারা চীনের প্রতি অধিকতর উদ্ধত আচরণ করছে।
মার্কিন স্ট্র্যাটেজির দ্বিতীয় ধারাটি অর্থনৈতিক। এতদঞ্চলে
ওয়াশিংটন ট্র্যান্সএশিয়া পার্টনারশিপ নামে যে নতুন বাণিজ্যিক ব্লক সৃষ্টি করেছে
সেটা অত্যন্ত নগ্নভাবে চীনবিরোধী। গণচীনের নাকের ডগায় তাকে এ অঞ্চলের বাণিজ্য
থেকে বাইরে রাখাই এই পার্টনারশিপের উদ্দেশ্য। স্বভাবতই বেইজিং এ জোটকে সুনজরে
দেখতে পারছে না।
চীন-মার্কিন সম্পর্কের পরশপাথর হয়ে দাঁড়িয়েছে পূর্ব এশিয়া।
ওয়াশিংটন দীর্ঘকাল যাবৎ ছিল একমাত্র পরাশক্তি। তার মধ্যে একটি দাদাগিরির প্রবণতা
গেড়ে বসেছে। শত্রু-মিত্র সব দেশের প্রতি তার আচরণ ছিল অসম। চীনের বিস্ময়কর
শক্তিবৃদ্ধির কারণে সে আর ছোট তরফের মতো বিনয়ী হয়ে থাকতে রাজি নয়। ওয়াশিংটনকে
এখন পুরনো বদ অভ্যাস ত্যাগ করে অন্তত চীনকে সমানে সমানে বিবেচনা করা শিখতে হবে।
সান্তা বারবারার শীর্ষ সম্মেলনে কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং তার
ফলাফল কী হয়েছে সেসব সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা যাবে ভবিষ্যতে এবং ক্রমান্বয়ে। দুই
পক্ষে বন্ধুত্বের তাগিদ অনুভূত হয়েছে কি না এবং তার ফলাফলই বা কী সেটাও আমরা
জানতে পাবো ধীরে ধীরে। কিন্তু অগ্রগতি যদি সত্যি সত্যি কিছু হয়ে থাকে তাহলে
বাংলাদেশের ব্যাপারেও মার্কিন নীতিতে বাস্তবতা ফিরে আসবে। হয়তো আসন্ন নির্বাচন
সম্বন্ধেও ওয়াশিংটন নতুন করে ভাবতে শুরু করবে। জন কেরি যদি সত্যি সত্যি ২৫ জুন
বাংলাদেশে আসেন তাহলে কার কার সাথে কী মেজাজে তিনি আলোচনা করছেন সে দিকে অনেকেই
আগ্রহী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন