বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০১৩

ব্যালটই হোক বুলেটের চেয়ে শক্তিশালী

রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পাল করে। এই চার সিটি করপোরেশনের মধ্যে রাজশাহী ও খুলনায় সর্বপ্রথম ১৯৯৪ সালে নির্বাচনে জনগণের প্রত্য ভোটে মেয়র যথাক্রমে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনু ও শেখ তৈয়বুর রহমান। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে মতায় এসেও তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে ১৯৯৯ সালে এই দুই সিটিতে নির্বাচন দেয়নি। ২০০১ সালে বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মতায় আসার পর ২০০২ সালের ২৫ এপিল রাজশাহী ও খুলনা সিটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। এই নির্বাচনে বিপুল ভোটে আবার রাজশাহীতে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিনু এবং খুলনার বিএনপির কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক শেখ তৈয়বুর রহমান নির্বাচিত হন। আর ২০০৩ সালে ২০ মার্চ বরিশাল ও সিলেট করপোরেশনের সর্বপ্রথম নির্বাচনে বরিশাল বিএনপি নেতা মজিবুর রহমান সরোয়ার এবং সিলেটে বিএনপির একাধিক প্রার্থী ও দলীয় কোন্দলের সুযোগে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান। সিলেটে বিএনপির তিন প্রার্থীর মোট ভোট আওয়ামী লীগের প্রার্থীর চেয়ে বেশি ছিল। একক প্রার্থী দিতে পারলেই বিজয় নিশ্চিত ছিল। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অব্যাহত হরতাল, অবরোধ, ভাঙচুর ও সহিংসতার ঘটনার মধ্য দিয়ে মতায় আসে সাম্রাজ্যবাদী ও সামরিক শক্তির পৃষ্ঠপোষক মইন উদ্দিনÑ ফখরুদ্দীনের সাঙ্গোপাঙ্গ। দেশকে রাজনীতিশূন্য করার অংশ হিসেবে ফেব্রয়ারিতে গ্রেফতার হন রাজশাহীর বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনু এবং সিলেটের মেয়র ও আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। আওয়ামী লীগের প্রতি সরকারের সাথে গোপন আঁতাত থাকায় কামরানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় এপ্রিলেই জামিন পান সিলেটের মেয়র কামরান। কিন্তু অবৈধ সরকার নিজেদের মতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ২০০৭ সালের মে মাসের শেষের দিকে চিরুনি অভিযানে আবার আটক হন সিলেটের কামরান ও বরিশালের মেয়র ও বিএনপি নেতা মজিবুর রহমান। অবস্থা বুঝে সংস্কারপন্থী বনে যান খুলনার মেয়র বিএনপি নেতা শেখ তৈয়বুর রহমান। ২০০৭ সালের জুন মাসে হুট করে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে সুর পাল্টালেন তিনি। কিন্তু বিএনপিকে ভাঙতে ব্যর্থ সংস্কারপন্থীদের নভেম্বরের দিকে গ্রেফতর করতে থাকে। ফলে নভেম্বরের শুরুতে গ্রেফতার হন খুলনার মেয়র শেখ তৈয়বুর রহমান।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপিকে মাঠশূন্য করার জন্য একে একে গ্রেফতার করা হয় খুলনা মহানগরের এমপি আলী আসগর লবী ও সিলেট মহানগর বিএনপি সভাপতি আরিফুল হক চৌধুরীসহ অনেক নেতাকে। এক-এগারোর অবৈধ সরকার আওয়ামী লীগের সাথে গোপনে আঁতাত করে বিএনপির জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী নেতাদের চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে অত্যন্ত ঠাণ্ডামাথায় পরিকল্পিতভাবে আদালত ও দুদককে ব্যবহার করে তড়িঘড়ি করে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করে নির্বাচনী মাঠ থেকে বিরত রাখেন রাজশাহীর মিজানুর রহমান মিনু, খুলনার শেখ তৈয়বুর রহমান ও আলী আসগর লবী, বরিশালের মজিবুর রহমান সরোয়ার এবং সিলেটের আরিফুল হকসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে। সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হচ্ছে, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের অনেক দুর্নীতিবাজ নেতা থাকলেও তাদের গ্রেফতার করা হয়নি। নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়ার জন্য সিলেটের বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে সাজা দেয়া হয়নি। অথচ কামরানের বহু দিন পরে গ্রেফতার হওয়া খুলনার শেখ তৈয়বুর রহমানকে সাজা দেয়া হয়। কামরানের সাথে সরোয়ার একই সাথে গ্রেফতার হলেও সরোয়ারকে মিথ্যা মামলার সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। অথচ কামরানকে চার্জশিট না দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, মানিকগঞ্জের পৌরসভা মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমান সংসদের সংরতি মহিলা আসনের এমপি সঙ্গীতশিল্পী মমতাজের স্বামী রমজান আলী এবং সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরমেয়র আওয়ামী লীগ নেতা জাকারিয়া আহমদ পাপলুসহ অনেক নেতাকে নির্বাচনের আগে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু বিএনপির েেত্র এটি ছিল বিপরীত। মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকাছাড়া করা হয় বিএনপির অনেক নেতাকে।
২০০৮ সালের ৪ আগস্ট অনেকটা তাড়াহুড়ো করে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী আমলা, ফরিদপুরের আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান ড. এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবে ভোটার তালিকা না করেই জরুরি অবস্থার মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করে। নানা কারণে এ নির্বাচন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
রাজশাহীতে জাতীয় চার নেতার অন্যতম কামরুজ্জামানের ছেলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শক্তিশালী প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটনের সাথে বাঘ প্রতীক নিয়ে বাঘের মতো লড়াই করেন মহানগর যুবদলের সভাপতি, নির্বাচনী মাঠের অভিজ্ঞহীন তৃণমূল কর্মী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এবং বিএনপির অপর দুই নেতা। তিনজন মিলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন।
বরিশালে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মহাজোটের একক প্রার্থী শওকত হোসেন হিরণের সাথে তীব্র লড়াই করেন ব্যবসায়ী নেতা শরফুদ্দীন সান্টু, বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আহসান হাবিব কামাল ও বিএনপি নেতা এবাদুল হক চাঁন। বিএনপি নেতা মজিবুর রহমান সরোয়ার নির্বাচন করতে না পারায় তার সমর্থকেরা রাজনৈতিক বিরোধের কারণে কামালকে ঠেকাতে সান্টুকে ভোট দেন। ফলে মাত্র ৫৮৮ ভোটের ব্যবধানে হারলেন সান্টু। হীরণ পান ৪৬ হাজার ৭৯৬ এবং সান্টু ৪৬ হাজার ২০৮ ভোট। সান্টু প্রথম এগিয়ে থাকলেও রাতভর নাটকীয়তার পর সকালে হিরণকে বিজয়ী ঘোষণা করে রিটার্নিং অফিসার। কামাল, এবাদুুল হক চাঁন ও সান্টু মিলে হিরণের দ্বিগুণ ভোট পান।
সিলেটে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেয়র কারাবন্দী নেতা বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের সাথে লড়েন বিএনপি নেতা এম এ হক ও আ ফ ম কামাল। বিএনপির দুই নেতার দ্বন্দ্ব, নেতাকর্মীদের সিদ্ধান্তহীনতা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের বিভক্তির কারণে বিপুল ভোটে জয়ী হন কামরান। দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কামরানকে প্রার্থী করা হলে আওয়ামী লীগের দেওয়ান ফরিদ গাজী সমর্থিত কর্মীরা বিরোধিতা করলে শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তেেপ বিভেদ ভুলে আবুল মাল আবদুল মুহিত, সুরঞ্জিত সেন ও কামরানের মা, স্ত্রী ও ছেলেদের অবিরাম প্রচার-প্রচারণার ফলে তার এই বিজয় হয়। বিএনপি নির্বাচন বর্জন না করে প্রত্যেকটিতে একক প্রার্থী দিলে সরকারের ব্যর্থতা, আওয়ামী লীগের সাথে সরকারের আঁতাতকাহিনী, বিএনপির সাথে সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণ জনগণের কাছে তুলে ধরলে চার করপোরেশন ও ৯টি পৌরসভায় মধ্যে কমপে তিনটি সিটি করপোরেশন (রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা) ও ছয়টি পৌরসভায় বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। পান্তরে প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেয়ার ফলে অনেক বিএনপি নেতা নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিরত থাকেন। অথচ মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার, ড. আর এ গণি, তানভীর সিদ্দিকী, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, তৎকালীন বিএনপির অঘোষিত চেয়ারপারসন হান্নান শাহ, যুগ্ম মহাসচিব নজরুল ইসলাম খান, যুগ্ম মহাসচিব গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, রুহুল কবির রিজভীসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে আওয়ামী লীগের মতো পৃথক পৃথক টিমে বিভক্ত হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালালে কমপে রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা সিটিতে বিজয় সুনিশ্চিত ছিল। কিন্তু দেখা যায়, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরতি মহিলা কাউন্সিলরদের েেত্র চার সিটি ও ৯টি পৌরসভায় বিএনপি-জামায়াত বিপুল ভোটে এগিয়ে ছিল। চার  সিটি করপোরেশনের ১৫৭ কাউন্সিলর পদে বিএনপি ৮০টি এবং জামায়াত আটটি পদে জয়লাভ করে। পান্তরে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি পায় ৪৫টি। পরে ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা মহানগরে বিএনপিপ্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু এবং বরিশাল মহানগরে মজিবুর রহমান সরোয়ার বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রাজশাহী ও সিলেটে বিএনপিপ্রার্থীরা ভোট কারচুরির কারণে সামান্য ব্যবধানে হারেন।
গত ২৯ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন তড়িঘড়ি করে চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। কিন্তু রোডম্যাপ ছিল মে মাসের মাঝখানে ঘোষণা করবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের উৎসাহী ভূমিকার পেছনে লুকিয়ে আছে ২০০৮ সালে ৪ আগস্টের নির্বাচনের মতো সাজানো নির্বাচনের পুনরাবৃত্তির কাহিনী।
সিলেট, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশালে বিএনপি, জামায়াতের হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলজুলুম, মামলা, হামলা, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের অব্যাহত নির্যাতন-অত্যাচারে অতিষ্ঠ। সিলেট, বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহীর মহানগর জামায়াতের আমির  থেকে ওয়ার্ডের কর্মী পর্যন্ত বেশির ভাগই জেলে। বাকিরা মামলা হামলার ভয়ে পলাতক। সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহরিয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও কাউন্সিলর কায়েম লোদী কিছু দিন আগে জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এই চার সিটি করপোরেশনের ১৮ দলীয় জোটের বেশির ভাগ নেতাকর্মী কোনো-না-কোনো মামলার প্রকাশ্য কিংবা অজ্ঞাত আসামি। এখন তারা মামলা মোকাবেলা করবে, নাকি নির্বাচন করবে?
একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য চারটি জিনিস অবশ্যই প্রয়োজন : ক. একটি সংবিধানসম্মত ভোটার তালিকা; খ. নিরপে প্রশাসন; গ. স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন; এবং ঘ. নির্বাচনকালীন পরিবেশ।
এসবের কোনোটিই আমাদের দেশে নেই। তা ছাড়া গত বছর হালনাগাদ হওয়া ভোটার তালিকা এ বছর সংশোধন হয়নি। যদি সংশোধন হতো তাহলে চার সিটি করপোরেশনে হালনাগাদের দুই লাখেরও বেশি তরুণ-তরুণী ভোটার হতে পারতেন। ২০০৮ সালের সেই নির্বাচনে আইডি কার্ডের নম্বরের সাথে ভোটার তালিকার নম্বরের জটিলতায় অনেকে ভোট দিতে পারেননি। এবারের নির্বাচনেও যদি সেটা হয়, তা হবে দুঃখজনক।
নির্বাচনের নিরপে প্রশাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু চার সিটি করপোরেশনের পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ অন্যান্য প্রশাসন বিএনপির প্রতি কী ধরনের বিমাতাসুলভ আচরণ করছে সাম্প্রতিক সময়ে তা আমরা দেখেছি। গত বছর সিলেটে এমসি কলেজ পুড়িয়ে দেয়ার নেপথ্যে খলনায়কেরা সিলেটে নির্বাচন করছেন। এমসি কলেজের অগ্নিসংযোগকারীরা যে ব্যালট বাক্সে অগ্নিসংযোগ করবে না, এমন নিশ্চয়তা কি আছে? তার দৃশ্য তো আমরা ২০১১ সালে ১৮ জানুয়ারি নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী পৌরসভা নির্বাচনগুলোতে দেখেছি। সেখানে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে কেন্দ্রের ভেতরে অবরুদ্ধ করে বাইরে ব্যালট পেপারে আগুন দেয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা। শেষ পর্যন্ত রিটার্নিং অফিসার নির্বাচন বন্ধ করে দিলে তাকে বিএনপি-জামায়াতের দালাল বলে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছে। চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এমন যে হবে না তার গ্যারান্টি কী? চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২০১০ সালের ১৭ জুনের নির্বাচনে ৬০টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার পর বাকি কেন্দ্রগুলোতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মহিউদ্দিন চৌধুরী পিছিয়ে থাকায় ফলাফল ঘোষণা বন্ধ করে দেয় নির্বাচন কমিশন। ৬০টি কেন্দ্রে যেখানে মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভোট ৩৬ হাজার এবং মনজুর আলমের ৩৪ হাজার সেখানে এটিএন নিউজ এবং অন্যান্য আওয়ামী লীগ সমর্থক চ্যানেলে দেখানো হচ্ছিল মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভোট ৪৮ হাজার। পরদিন ১৮ জুন দৈনিক জনকণ্ঠ মহিউদ্দিন চৌধুরী এগিয়ে বলে শিরোনাম করে। ওই পত্রিকায় ছাপানো হয় ৬০টি কেন্দ্রের তার ভোট ৪৮ হাজার (সত্যতা প্রমাণের জন্য ১৮ জুন ২০১০ জনকণ্ঠ দেখুন)।
পরে অবশ্যই রিটার্নিং অফিসার তা সংশোধন করেন। মহিউদ্দিন চৌধুরী, হোন্ডা, গুণ্ডাপাণ্ডা নিয়ে নির্বাচনী কন্ট্রোল রুম দখল করতে চাইলে চার দিক থেকে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের প্রতিরোধের মুখে ব্যর্থ হন। আক্রমণের শিকার হন শত শত পুলিশ, পুড়ে দেয়া হয় পুলিশের গাড়ি। অবশেষে রিটার্নিং অফিসার ফলাফল ঘোষণা করতে বাধ্য হন। সারা রাত ভোট গণনার পর সকালে বিজয় মিছিল নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘরে ফেরেন। আসন্ন চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যাতে ফলাফল ঘোষণায় এমন কিছু না হয় সে দিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের দলীয় পরিচয় ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা ইতোমধ্যে রাজশাহী ও খুলনায় নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন করে দলীয় প্রার্থীর পে গণসংযোগ করেছেন। অথচ নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আমলে নেয়নি। চার সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা কালো টাকা বিতরণ ও পেশিশক্তি প্রদর্শন করছে। অন্য দিকে বিএনপি ও জামায়াতের কর্মীদের পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি নানাভাবে হয়রানি করছে। আওয়ামী লীগ মতায় আসার পর অব্যাহত সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, শেয়ারবাজারে কেলেঙ্কারি, উন্নয়নে সম্পূর্ণ ব্যর্থতা, সিলেটের টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ইলিয়াস আলীসহ হাজার হাজার নেতা গুম, হত্যা, নির্যাতন, মামলা, হামলা, জেলজুলুম, পদ্মা সেতু দুর্নীতি ও হেফাজত নেতাকর্মীদের রাতের আঁধারে গুলি করে হত্যাসহ সরকারের হাজারো ব্যর্থতার দাঁতভাঙা জবাব জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে সরকারকে দেখিয়ে দেবে। এ সরকার মতায় আসার পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও হবিগঞ্জ-১ আসনে উপনির্বাচন বিএনপির জন্য মডেল হতে পারে। কারণ এসব নির্বাচনে নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্ত প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়ে সরকারের রক্তচুকে উপো করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads