পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ব্রিটিশ হিল
ম্যানুয়েল অ্যাক্ট ১৯০০ কিংবা উপজাতীয়দের প্রথাগত ভূমি অধিকারের ধুয়া তুলে কিছু
নেতা ও তাদের ঘনিষ্ঠ বিদেশী দাতারা আবারো পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে নতুনভাবে
খুঁচিয়ে তুলছেন। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পরও আজো কেন পার্বত্যাঞ্চলে
বসবাসরত বাঙালি ও উপজাতি ভাইবোনেরা শান্তিতে ঘুমাতে পারেন না? কেন আজো বন্দুকযুদ্ধ চলছে, কেন মানুষকে
অস্ত্রধারীদের চাঁদা দিয়ে চলতে হচ্ছে? এক হাজার ৯৮০ জন উপজাতীয় তরুণ
অস্ত্রশস্ত্র জমা দেয়ার পরও কোথা থেকে এলো এত অস্ত্র? ওইসব বেআইনি
অস্ত্র যত দিন উপজাতীয় তরুণদের হাতে থাকবে, তত দিন কিছুতেই পাহাড়ে শান্তি
আসবে না। যে উপজাতীয় তরুণটির হাতে এখন অস্ত্র, যার প্রচুর টাকা উপার্জন এই
পথে, সেই তরুণ ভ্রাতৃঘাতী সঙ্ঘাত বন্ধের ডাকে সাড়া দেবে কেন? আসলে এটি
রাষ্ট্রদ্রোহী সশস্ত্র সঙ্ঘাত, যার অবসান ঘটাতে পারে জেএসএস ও ইউপিডিএফ। গত ১৮ মে গোলটেবিল বৈঠকে
টিআইবির কর্মকর্তা ড. ইফতেখারুজ্জামান বললেন, ‘শান্তিচুক্তির সব শর্ত বাস্তবায়ন করলেই পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি
ফিরে আসবে।’ পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক
আন্তর্জাতিক কমিশনের কো-চেয়ারপারসন সুলতানা কামালও বলেন, ‘উপজাতীয় নেতা সন্তু লারমা, পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা
পরিষদের হাতে পাহাড়ের যাবতীয় বিষয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করলেই পার্বত্য
চট্টগ্রামের সব সমস্যা মিটে যাবে।’ বেআইনি অস্ত্র
উদ্ধার, চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য একটি কথাও তারা বলেননি। তাদের মুখ থেকে এ
কথাটি একবারও কেন আসছে নাÑ পাহাড়ের ৫০৯৩ বর্গমাইল ভূমির
মালিক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের কোনো
অংশেরই ভূমির মালিক ওই এলাকার বিশেষ নৃগোষ্ঠীর লোকেরা হতে পারেন না। প্রকৃতপক্ষে
পাহাড়ের হেডম্যান, কারবারি, পাড়াপ্রধান, সার্কেল চিফ বা রাজা বলে যাদের ভূমির মালিক সাজানো হচ্ছে, তারা আদৌ
পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমির মালিক নন, খাজনা আদায়কারী সরকারি
প্রতিনিধিমাত্র। পাকিস্তান বা ব্রিটিশ আমলের অজুহাত দেখিয়ে উপজাতীয় নেতারা যা
বলছেন, তা মেনে নিলে আমাদের ১৯৪৭ সালের পাক-ভারত বিভক্তি এবং ১৯৭১ সালের
মহান মুক্তিযুদ্ধের নিদারুণ অবমাননা হবে। টিআইবি, সিএইচটি কমিশন ও কিছু নেতা এর
পরও কি গোঁ ধরে থাকবেন? আশা করি, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। ছলাকলা করে ব্যর্থ হয়ে কয়েক বছর ধরে
উপজাতীয় নেতারা বলছেন, তারাই পাহাড়ের আদিবাসী জুম্ম জাতি।
তাদের মুখপত্র জুম্ম নিউজ বুলেটিন, জুম্মকণ্ঠ, তাদের নতুন
রাষ্ট্রের নাম ‘জুম্মল্যান্ড’, তাদের সেনাবাহিনীর নাম হবে
জুম্ম লিবারেশন আর্মি। অন্য দিকে পাহাড়ে দীর্ঘকাল ধরে বসবাসরত বাঙালিদের তারা
বলছেন, ‘মুসলিম অনুপ্রবেশকারী’, সেটেলার, রিফিউজি কিংবা
মোগদা বাঙাল নামে। আমাদের যেসব বীর সৈনিকেরা পাহাড়ে সন্ত্রাস-যুদ্ধ মোকাবেলা করে
জীবন ও জনগণের নিরাপত্তা দিচ্ছেন, তাদের লেখনীতে তারা হলেন ‘দখলদার, বাংলাদেশী সামরিক জান্তা, জলপাই স্বৈরাচার…।’ ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ো, জুম্মল্যান্ড কায়েম করো; কাটো কাটো বাঙালি কাটো’ বলেও স্লোগান দিচ্ছে। সমতলে বসবাসকারী একজন নাগরিক ১৮ বছর পার হলেই
ভোটার হতে পারবেন; কিন্তু তারা বলছে পাহাড়ে জমির মালিকানা ও ভূমির দলিল না থাকলে
কিছুতেই তাকে ভোটার করা যাবে না। আর এটি নাকি শুধু বাঙালিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
উপজাতীয় ব্যক্তি সে ভারতের মেঘালয়, ত্রিপুরা, অরুণাচল, মিজোরাম, আসাম কিংবা যেখান
থেকেই আসুক না কেন; তার জন্য এ দেশের পাহাড়ের মাটি উন্মুক্ত। তার কোনো দলিলপত্র না
থাকলেও, খাজনা-ট্যাক্স না দিলেও সে ‘প্রথাগত ভূমি অধিকার’-এর বলে পাহাড়ের
মাটিতে তার সার্বভৌম দখল থাকবে। সবচেয়ে রহস্যজনক বিষয় হলো উপজাতীয় নেতারা জাতিসঙ্ঘ, আইএলওসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে
নিজেদের পূর্বপুুরুষের দেয়া পরিচিতি তথা চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, বম, পাংখু, লুসাই, তনচঙ্গা প্রভৃতি
ঐতিহ্যগত পরিচয় না দিয়ে ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি
আদায়ে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। এ জন্য তারা চাকমা সার্কেল চিফ দেবাশিস রায়কে
জাতিসঙ্ঘের আদিবাসীবিষয়ক কমিটির সদস্য বানাতেও সক্ষম হয়েছেন। গারো নেতা সঞ্জীব
দ্রংকে ঘন ঘন তারা বিদেশে পাঠান এ কাজের জন্য। অথচ আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ান বা
অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের মতো হাজার বছর আগের অধিবাসী নন বাংলাদেশের
পার্বত্যাঞ্চলের উপজাতীয়রা। তারা তিব্বত, আরাকান, মিয়ানমার, চীনসহ বিভিন্ন
স্থান থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চলে আগমন ও বসতি স্থাপন শুরু
করেছিলেন। বাংলাদেশে তারা প্রকৃতপক্ষে আশ্রিত বা অভিবাসী। জাতি হিসেবে স্বীকৃতি
পেলেও ‘আদিবাসী’র সংজ্ঞায় তারা পড়েন না। নিজেদের আদি পরিচয় বাদ দিয়ে কোনোভাবে
জাতিসঙ্ঘ থেকে তারা ‘আদিবাসী’ পরিচিতি আদায় করে বাংলাদেশের
সংবিধানে তা সংযোজন করে দিতে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। তারা জানেন একবার যদি তারা
আদিবাসী বলে স্বীকৃতি নিতে পারেন, তবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বাধিকারের নামে একদিন বিচ্ছিন্ন করা
অসম্ভব হবে না। জাতিসঙ্ঘের আদিবাসীবিষয়ক সনদ মোতাবেক পার্বত্যাঞ্চল থেকে বাংলাদেশ
সরকারকে হাত গুটাতে হবে। উপজাতি ভাইবোনেরা আমাদের সবার মতো নাগরিক সুবিধা ও
সাংবিধানিক সম-অধিকার ভোগ করবেন এ বিষয়ে কারোই
দ্বিমত নেই। কিছু উপজাতীয় নেতার একগুঁয়েমি, দম্ভ ও স্বার্থান্ধ মনোবৃত্তির
কারণেই পাহাড়ে ঐক্য, শান্তি ও সম্প্রীতি স্থাপিত হচ্ছে না। তাদের ধর্মে জীবহত্যা মহাপাপ, অহিংসা পরম ধর্ম
জেনেও তারাই পাহাড়ে ৩৫ হাজার বাঙালি হত্যা করেছে, মানবতার চেয়ে আদিবাসী
পরিচয়টি কি এত বড় হয়ে গেল?
কেন তারা চান পাহাড়ে জাতিসঙ্ঘ পর্যবেক্ষক বাহিনী আসুক? পাহাড়ে ভূমি
বেদখল করে রাতারাতি ঘর বানিয়ে সেখানে বুদ্ধের মূর্তি বসানোর মাধ্যমে মূলত তার
অবমাননার রহস্য কী? এ দেশের পাহাড়ে মানবাধিকার যতটুকু আছে, বিশ্বের অনেক
দেশের উপজাতিরাই এর ১ শতাংশ মানবাধিকারও পাচ্ছেন না। বিচারপতি খাদেমুল ইসলামের
নেতৃত্বে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ ও নিষ্পত্তি কমিশনকে বাধাগ্রস্ত ও
অসম্মান করার দায় নিতে হবে ওই সব উপজাতীয় নেতাকে। প্রচলিত আইন মোতাবেকই পাহাড়ের
ভূমি সমস্যারও সমাধান হতে হবে। সংবিধান ও বাংলাদেশকে স্বীকার করলে ভূমিবিরোধ বা
জটিলতা সমাধানের অযোগ্য নয়। গত ২৭ মে মন্ত্রিসভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি
সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে যে প্রস্তাব পাস হয়েছে, এর বাস্তবায়ন হলে সরকার ও
বাংলাভাষীদের পার্বত্য চট্টগ্রাম হারাতে হবে ভবিষ্যতে। অহেতুক তিন পার্বত্য জেলায়
নিরীহ সরলপ্রাণ বাঙালিদের সরকার আন্দোলনের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এর জবাব আগামী
নির্বাচনে পার্বত্যবাসী জনগণ দেবে।
কেন তারা চান পাহাড়ে জাতিসঙ্ঘ পর্যবেক্ষক বাহিনী আসুক? পাহাড়ে ভূমি
বেদখল করে রাতারাতি ঘর বানিয়ে সেখানে বুদ্ধের মূর্তি বসানোর মাধ্যমে মূলত তার
অবমাননার রহস্য কী? এ দেশের পাহাড়ে মানবাধিকার যতটুকু আছে, বিশ্বের অনেক
দেশের উপজাতিরাই এর ১ শতাংশ মানবাধিকারও পাচ্ছেন না। বিচারপতি খাদেমুল ইসলামের
নেতৃত্বে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ ও নিষ্পত্তি কমিশনকে বাধাগ্রস্ত ও
অসম্মান করার দায় নিতে হবে ওই সব উপজাতীয় নেতাকে। প্রচলিত আইন মোতাবেকই পাহাড়ের
ভূমি সমস্যারও সমাধান হতে হবে। সংবিধান ও বাংলাদেশকে স্বীকার করলে ভূমিবিরোধ বা
জটিলতা সমাধানের অযোগ্য নয়। গত ২৭ মে মন্ত্রিসভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি
সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে যে প্রস্তাব পাস হয়েছে, এর বাস্তবায়ন হলে সরকার ও
বাংলাভাষীদের পার্বত্য চট্টগ্রাম হারাতে হবে ভবিষ্যতে। অহেতুক তিন পার্বত্য জেলায়
নিরীহ সরলপ্রাণ বাঙালিদের সরকার আন্দোলনের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এর জবাব আগামী
নির্বাচনে পার্বত্যবাসী জনগণ দেবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন