মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০১৩

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে শংকামুক্ত করুন


চার সিটি-নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে এখন জনগণের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্লেষকরাও এই নির্বাচনের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলছেন। জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এই নির্বাচনের ব্যবস্থা হওয়ায় এর গুরুত্ব আরো বেড়ে গেছে। সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে বলে অনেকে মনে করেন। তাই এই নির্বাচন নিয়ে শুধু প্রার্থীরাই নন, রাজনৈতিক দলগুলোও যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে। নির্বাচনে প্রতিযোগিতা হবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, তর্ক-বিতর্ক হবে, যোগ্যতা ও সাফল্য ব্যর্থতার খতিয়ান নেয়া হবে- এ সবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নির্বাচন যাতে স্বচ্ছ নিরপেক্ষ ও অবাধ হয়। তবে এই আকাক্সক্ষা পূরণে প্রয়োজন নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যথাযথ আচরণ এবং প্রার্থীদের নির্বাচন আচরণবিধি মেনে চলা। কিন্তু এখন প্রায় প্রতিদিনই আচরণবিধি লঙ্ঘনের খবর মুদ্রিত হচ্ছে পত্রিকায়। কিন্তু এ ব্যাপারে কমিশন বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর ভূমিকা কমই লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
গত মঙ্গলবার প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠার শিরোনাম হয়েছে ‘সিলেটে নির্বাচনে সরকারি গাড়ি’। খবরটিতে বলা হয়, সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সিলেট ও আশপাশ জেলার উপজেলা চেয়ারম্যানরা। এটি নির্বাচনী আচরণবিধি ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের গাড়ি ব্যবহার সংক্রান্ত বিধিমালা লঙ্ঘন। অথচ আমরা জানি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষের কেউ নির্বাচনী কাজে সরকারি প্রচারযন্ত্র, সরকারি যানবাহন, অন্য কোনো সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদেরকে ব্যবহার করতে পারবেন না। কিন্তু এইসব আচরণবিধি একের পর এক লঙ্ঘিত হচ্ছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে শুধু সরকারি গাড়িই নয়, রাস্তায় মঞ্চ তৈরি করে সমাবেশ এবং সরকারি সার্কিট হাউসও ব্যবহার করা হচ্ছে। এদিকে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দলীয় একটি সংসদীয় প্রতিনিধি দল। গত সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ শেষে তারা সাংবাদিকদের বলেন, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী এলাকায় গ্যাস সরবরাহ কার্যক্রম উদ্বোধন করে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ভোটারদের লোভ দেখিয়েছেন। এ সময় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন উপস্থিত না থাকলেও মহাজোটের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা উপস্থিত থেকে প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়েছেন। তবে এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ও রাজশাহীর ব্যবস্থাপককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে বলে সিইসি জানান। আরো  উৎকণ্ঠার বিষয় হলো, রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। রঙিন ব্যানার বিলবোর্ড ক্ষমতাধররা সরাচ্ছেন না। অথচ এটি নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ার সাথে সাথে নির্বাচনী আইন ও বিধিবিধান ভাঙার প্রবণতাও বাড়ছে। সরকারি দলের প্রার্থী ও নেতাদের বেপরোয়া আচরণও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব ব্যাপারে অভিযোগ তেমন আমলে নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনÑএমন অভিযোগ উঠছে।
দেশের জনগণ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। কিন্তু আচরণবিধি লঙ্ঘিত হওয়ার পরেও যদি নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে জনগণ আশাবাদী হবে কেমন করে? আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে প্রশাসন নির্লিপ্ত থাকলে জনগণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধে নিজের ভোট দিতে পারবে কিনা সে বিষয়ে ইতিমধ্যেই শংকা জেগেছে। নির্বাচন কমিশন ও পুুলিশ প্রশাসন অবশ্য ভোট গ্রহণ অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে বলে বারবার আশ্বাস দিয়ে আসছেন। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় কোনো কোনো প্রার্থীর বেপরোয়া মনোভাব ও আধিপত্যবাদী কর্মকা- জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। আর এইসব বিষয় দেখেও না দেখার ভান করার কারণে জনমনে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা মনে করি, নির্বাচনকে যে কোনো মূল্যে সরকারি দল রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখা প্রয়োজন। নির্বাচনে অর্থ ও ক্ষমতার খেলা চলতে দেয়া যায় না। এক্ষেত্রে সঙ্গত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন উভয়ের ইমেজই ক্ষুণœ হবে। সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে সঙ্গত ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হলে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে সংকট আরো ঘনীভূত হবে। পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, সরকার বিভিন্ন জাতীয় প্রতিষ্ঠান যেভাবে দলীয়করণ করেছে তাতে নির্বাচন কতটা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে তা নিয়ে সংশয় জাগতেই পারে। সরকারের সামনে এখন বড় পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় তারা স্বচ্ছতা ও ন্যায়ের পক্ষ অবলম্বন করবেন, নাকি যে কোনোভাবে বিজয়ের ডংকা বাজাবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads