শুক্রবার, ৭ জুন, ২০১৩

সংলাপের আহ্বান নয়, চাপ সৃষ্টি করুন

দেশের চলমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের অবসান বাংলাদেশের জনগণের মতো বিদেশী বন্ধুরাও চায়। চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। চায় জাতিসঙ্ঘ। তবে এই সমাধান যুক্তরাষ্ট্র অথবা জাতিসঙ্ঘ কিংবা অন্যান্য শক্তি যে উপায়ে করতে চাচ্ছে তা শুধু অবাস্তবই নয়, অন্যায়কারীদের প্রতি পক্ষপাতমূলকও। যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসঙ্ঘ এবং অপরাপর শক্তি বলছে যে সরকার এবং বিরোধী দল সংলাপে বসুক এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের পদ্ধতি খুঁজে বের করুক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাতিসঙ্ঘ এবং অন্য শক্তিধর মহাপণ্ডিতদের জানা উচিত ছিল, নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় না বলেই সরকার একরকম গায়ের জোরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছে। সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা উঠিয়ে দিয়ে নিজেদের অধীনে নির্বাচনব্যবস্থা চালু করেছে এ জন্য  তাতে তারা ভোট চুরি করতে পারবে। ভোটচুরি ছাড়া তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার আর কোনো রাস্তাই খোলা নেই। আর ক্ষমতায় যেতে না পারলে তাদের শাসন-শোষণের সব যন্ত্র বিকল হয়ে যাবে এবং দাঁড়াতে হবে আসামির কাঠগড়ায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এবং জাতিসঙ্ঘের প্রতিনিধির কথায় যে সরকার নিরপেক্ষ এবং সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান যে করবে না, তা তাদের বোঝা উচিত ছিল। কারণ বিদেশী ও জাতিসঙ্ঘের চেয়েও বড় চাপ তারা মোকাবিলা করছে দেশের ভেতর থেকে। সরকারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিদ্রোহ করছে। হেফাজতে ইসলাম, সাঈদী মঞ্চ, ইসলামী ঐক্যজোট, শিবির প্রভৃতি সংগ্রাম-আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, সরকারের দুঃশাসন থেকে দেশকে রক্ষার জন্য এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের জন্য। যে সরকার তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা তথা নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থা ঠেকাতে গিয়ে স্বৈরাচারের কলঙ্ক ও গণহত্যাকারীর দাগ গায়ে মাখল, অত্যাচারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হলো, তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা প্রবর্তনের সহায়কের সুনাম হারাল, দেশে ও বিদেশে ব্যর্থ সরকারের পরিচিতি লাভ করল, দেশকে অরাজকতার অন্ধকারে পাঠিয়ে দিয়ে নিজেদের অস্তিত্বকে সঙ্কটময় করে তুলল, সেই সরকার বিদেশীদের অনুরোধে নিরপেক্ষ নির্বাচন  দেবে তা বিদেশীরা কোন বিবেচনায় মতামত প্রকাশ করল বা আশা করতে পারল? এক বাঙালি কবি, সম্ভবত নবীন চন্দ্র তার পলাশীর যুদ্ধ কবিতায় মিরজাফরকে ব্রিটিশদের সম্পর্কে বলেছিলেন,
মূর্খ তুমি, মাটি কাটি লাভ কোহিনুর
ফেলিয়া সে রতœ হায়, কে ঘরে ফিরিয়া যায়
বিনিময়ে অঙ্গে মাটি মাখিয়া প্রচুর।
বিদেশী বন্ধুদের এই কথাটিই বলতে চাই যে যারা এত কষ্ট করে নিজেদের অধীনে ভোট চুরির নির্বাচন ব্যবস্থা স্থাপন করল, তারা কি করে সেই রতœ’ হারিয়ে জেলের ঘানি টানবে শুধু ড্যান মজিনা ও জাতিসঙ্ঘের প্রতিনিধির সাদামাটা অনুরোধে?
আলোচনা বা সংলাপ হলেও হতে পারে। কিন্তু সরকার কি তাতে তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে? কখনোই না। সরকারকে অবশ্যই নিরপেক্ষ ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিতে পারে। আলোচনা হতে পারে শুধু সেই নিরপেক্ষ ব্যক্তিটি কে হবে তা নিয়ে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক দেশের ক্ষেত্রেই সংলাপের পরামর্শ দিয়ে থাকে। পরামর্শ ও নির্দেশনা দেয় জাতিসঙ্ঘও। কিন্তু সে সব সংলাপে প্যালেস্টাইন ও কাশ্মির সমস্যা সমাধান না হওয়ার মতো বিশ্বের বহু সমস্যা যুগ যুগ ধরে সমাধান না হওয়ার তালিকায় রয়েছে। এসব পরামর্শের মাধ্যমে শুধু অত্যাচারী পক্ষই লাভবান হয়েছে, নির্যাতিত ও বঞ্চিত পক্ষের লাভ হয়নি এক কানাকড়িও। হলফ করে বলা যায়, ড্যান মজিনা এবং বান কি মুনের প্রতিনিধির উভয় দলের মধ্যে আলোচনার প্রস্তাব শুধু এটিই বুঝায় যে, অত্যাচারী ও অত্যাচারিত উভয় পক্ষই সমান অপরাধে অপরাধী। ঠিক যেমনি আমাদের সমাজে একটি মেয়ে নির্যাতিত বা ইভটিজিংয়ের শিকার হলে মেয়েটিকেও দায়ী করা হয় সমানভাবে। চীনের মোকাবিলায় বাংলাদেশকে যদি ভারতের উপগ্রহ হিসেবে দেখতে না চান, যদি বিশ্ব দুর্নীতিবাজ এবং গণহত্যাকারীদের শাসনের পরিবর্তে বাংলাদেশে জনগণের শাসন দেখতে চান, যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন এ দেশের মাটিতে কামনা করেন, তাহলে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করুন। সরকারকে বাধ্য করুন নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে। একটি ভয়ানক দুর্নীতিবাজ, চরম অত্যাচারী সরকারকে হটাতে জনগণের চাপের সাথে জাতিসঙ্ঘ,  ন্যাটো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,  ওআইসি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশ্বব্যাংক, জাপান, এডিবি, চীন প্রভৃতি রাষ্ট্র ও সংস্থার সম্মিলিত চাপের কোনো বিকল্প নেই। অন্যথায় বাংলাদেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। এ দেশে গণতন্ত্রের শেষ রশ্মিটুকুও মিলিয়ে যাবে। গণমাধ্যম স্বাধীনতা ফিরে পাবে না। শাপলা চত্বর এবং সাঈদীর রায়ের পরবর্তী আন্দোলনে গণহত্যার মতো আরো অনেক অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটবে। চৌধুরী আলম ও ইলিয়াস আলীর মতো আরো অনেক গুমের ঘটনা ঘটবে, সাগর-রুনির মতো আরো অসংখ্য সাংবাদিক নির্মমভাবে নিধন হবে। তাজরীন, স্পেকট্রাম, রানা প্লাজার মতো দুর্ঘটনা আরো বেশি ঘটবে, পদ্মা সেতু কলঙ্ক, সুরঞ্জিত বাবুর রেল কেলেঙ্কারি, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ, ডেসটিনির মতো দুর্নীতি আরো ব্যাপকতা লাভ করবে। তাই আবারো বলি মানবতা রক্ষার্থে গণতন্ত্রের স্বার্থে, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বিদেশী বন্ধুরা, জাতিসঙ্ঘের কর্তারা, বিবেকবান লোকেরা আপনারা বাংলাদেশের জনগণের বাঁচার সংগ্রামে সহায়তা করতে এগিয়ে আসুন এবং ধোঁকা দিয়ে কূটকৌশল অবলম্বন করে যারা ক্ষমতা দখল করে এবং জনগণের ওপরে দমননিপীড়ন চালায় তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করুন। তাদের বাধ্য করুন রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে সরে যেতে।হ


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads