Special power act বা বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রণয়ন কিন্তু আওয়ামী লীগই করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল বিরোধী মতকে কঠোর হাতে দমন করা। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য অনেক কিছুই করেছিল। তারা হয়তো ধরেই নিয়েছিল যে, জনগণের মতামত নিয়ে তাদের পক্ষে ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে না। তাই তারা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আদলে একটি একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করে নিয়েছিল পার্লামেন্টে অতি দ্রুততার সাথে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এতকিছু করেও আওয়ামী লীগ খুব বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। তারা বিরোধী দলের উপর দলন-পীড়ন ও নিগ্রহ চালাতে বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রণয়ন করেছিল, কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে ক্ষমতা নামীয় গণেশ উল্টে যাওয়ায় নিজেদের তৈরি করা আইনে তাদেরকেও জুলুম-নির্যাতন ও নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে। এমন কি সংবিধানে ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে অন্যের অনুগ্রহ নিয়ে আওয়ামী লীগকে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে ফিরে আসতে হয়েছে। যদিও সে সংশোধনীকে আওয়ামী লীগ বরাবরই অবৈধ বলে এসেছে এবং কোন এক দুর্বিপাকে আদালত কর্তৃক ৫ম সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ হাতে চাঁদ পেয়েছে। কিন্তু সে যাই হোক ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের গণতান্ত্রিক রাজনীতে ফিরে আসার সুযোগ করে দেয়ার জন্য বিশেষ ব্যক্তির প্রতি তাদের অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা জানাতেই হবে। অন্যথায় ইতিহাস তাদেরকে ক্ষমা করবে না।
যা হোক ১৯৭৫ সালের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ও রক্তাক্ত পটপরিবর্তের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সরকারের পতনের পর দীর্ঘ ২১ বছর পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার প্রভাব বলয়ের বাইরে থাকতে হয়েছে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দলের এমন বেহাল অবস্থা হলো কেন তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। তবে এর অন্যতম কারণ হলো আওয়ামী লীগের অগণতান্ত্রিক মানসিকতা এতে কোন সন্দেহ নেই। অবশ্য আজ আমরা সে আলোচনায় যেতে চাই না। তবে তারা দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৯৬ সালে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেছিল। মনে করা হয়েছিল যে, আওয়ামী লীগ অতীতের ভুল-ভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশ, জাতি ও গণতন্ত্রের কল্যাণে কাজ করবে। কিন্তু ভাবসাব দেখে মনে হলো তারা আবার সেই অতীত বৃত্তেই আটকা পড়েছে। সে সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। তিনি তাদের সরকারের মেয়াদ পূর্তি এবং পরবর্তী মেয়াদে আবার ক্ষমতায় আসার জন্য কেবিনেটে এক মজার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। তিনি বিরোধী দলের আন্দোলন দমনের জন্য ‘জননিরাপত্তা আইন’ প্রণয়নের প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। তার প্রস্তাবে কেবিনেট সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ আপত্তি তুললে তিনি নাকি বলেছিলেন, জননিরাপত্তা আইন প্রণয়ন না করলে বিরোধী দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তের কোন বিকল্প নেই। ক্ষমতায় থাকতে হলে এ আইন অবশ্যই করতে হবে।
অনেকটা মোহাম্মদ নাসিমের জিদের কারণেই তদানীন্তন আওয়ামী লীগ সরকার ‘জননিরাপত্তা’ আইন প্রণয়ন করেছিল। কিন্তু সিদ্ধান্তটা যে মোটেই পরিণামদর্শী ছিল না তার প্রমাণ হতে খুব একটা সময়ের প্রয়োজন হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার এ আইনে জনগণের নিরাপত্তার কথা বলে বিরোধী দলের উপর দলন-পীড়ন চালালেও তাদের শেষ রক্ষা হয়নি বরং ২০০১ সালের নির্বাচনে তাদেরকে শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। কাহিনীর এখানেই শেষ হয়নি। আওয়ামী লীগের তৈরি করা জননিরাপত্তা আইনে অনেক আওয়ামী লীগের নেতাকে নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে। এমন কি এ আইনের তাত্ত্বিক গুরু ও স্বপ্নদ্রষ্টা মোহাম্মদ নাসিমও কম হয়রানির শিকার হননি। ভাগ্যিস কোন এক সহৃদয় ব্যক্তি মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে এ আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করেছিলেন। হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে নাসিম সাহেব সৃষ্ট ‘জননিরাপত্তা’ আইন বাতিল হলে তিনি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। না হলে তাকে দীর্ঘদিন শ্রীঘরেই কাটাতে হতো।
এ কথা না বললেই নয় যে, যখন ‘জননিরাপত্তা’ আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল তখন বিরোধী দল এর কঠোর সমালোচনা করেছিল এবং বিলটি পাসের সময় বিরোধী দল সংসদ থেকে ওয়াক আউটও করেছিল। তারা এই আইনকে সংবিধান ও মানবাধিকারের পরিপন্থী ও সরকারের বিরোধী দল দমনের নীলনকশার অংশ হিসাবেই উল্লেখ করেছিল। উচ্চ আদালতের রায়েও বিরোধী দলের দাবির সত্যতা মিলেছে। দীর্ঘ শুনানি শেষে বিচারপতি এম এ আজিজের নেতৃত্বাধীন একটি বেঞ্চ জননিরাপত্তা আইনকে সংবিধান পরিপন্থি ও অবৈধ সন্তান বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। মূলত হাইকোর্ট বিভাগের রায় আওয়ামী লীগের জন্য মোটেই স্বস্তিদায়ক ছিল না। তাই রায় প্রদানকারী বিচারপতি যখন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তখন আওয়ামী লীগ তার প্রতি অনাস্থা জানিয়ে তাকে একহাত নিয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে ১/১১ নামের উটকো উপদ্রব জাতির ঘাড়ে চেপে বসেছিল।
আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখন তারা মনে করতে পারে না যে, তাদেরকে আবার কখনো ক্ষমতা হারাতে হবে। ফলে ক্ষমতা হানানোর যত প্রকার ছিদ্রপথ রয়েছে সবগুলো পরিকল্পিতভাবে এবং অত্যন্ত যত্ম সহকারে বন্ধ করার চেষ্টা করে। যেমন করা হয়েছিল স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েমের মাধ্যমে। বিরোধী মত যাতে বিকশিত হতে না পারে সে জন্য ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন ঞযব হবংিঢ়ধঢ়বৎ (অহহড়ঁহপবসবহঃ ড়ভ ফবপষধৎধঃরড়হ.) অপঃ-১৯৭৫’ জারি করে গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে তারা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে একই ধারা অব্যাহত রাখে। পুরো ৫ বছর বিরোধী দলের ওপর নানাভাবে নিগ্রহ চালানো হয়। সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে রাষ্ট্রের প্রশাসন যন্ত্রসহ নির্বাচনে প্রভাব সৃষ্টি করে এমন বিভাগকে দলীয় আদলে সাজানো হয়। বিরোধী দলের দাবি উপেক্ষা করে দলীয় অনুগত আমলা এম এ সাঈদকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। তথাকথিত জনতার মঞ্চের আর এক আমলা শফিউর রহমানকে নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু নিজেদের সাজানো নির্বাচন করেও ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে জেতা সম্ভব হয়নি। মূলত যারা প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চায় এবং সকল ছিদ্রপথ বন্ধ করার প্রাণান্ত চেষ্টা চালায় তারা বোধহয় পতনের পথটা মনের অগোচরেই খোলা রাখে। মনে হয় সে ছিদ্রপথেই ইতিহাসের সকল স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। রুমানিয়ার স্বৈরশাসক নিকোলাই চসেস্কু, ইরাকের লৌহ মানব খ্যাত সাদ্দাম হোসেন, লিবীয় নেতা কর্নেল মোয়াম্মার গাদ্দাফী এবং মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনী মোবারকসহ কোন স্বৈরাচারই অনন্তকালের জন্য ক্ষমতায় থাকতে পারেননি।
আওয়ামী লীগ বর্তমান মেয়াদে ক্ষমতায় এসে সে উল্টো পথেই হাঁটা শুরু করেছে। যে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল এবং আওয়ামী নেত্রী নিজেকে কেয়ারটেকার সরকারের রূপকার হিসাবে দাবি করে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলতেন তারাই আবার ক্ষমতায় এসে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করে এখন বলছেন অন্য কথা। প্রধানমন্ত্রী এখন প্রায়শই বলছেন, অন্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে যেভাবে নির্বাচন হয় আমাদের দেশেও সেভাবে নির্বাচন হবে। মূলত আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে সন্দেহ-অবিশ্বাস ও আদর্শিকভাবে দেউলিয়াপনার কারণেই নির্বাচনকালীন সময়ে কেয়ারটেকার সরকারের কনসেপ্ট আসে। একথা অস্বীকার করার জো নেই যে, আমরা নির্বাচনকালীন সময়ে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার আবশ্যকতা স্বীকার করে নিয়ে নিজেদেরকেই অপমান করেছি। এতে বহির্বিশ্বে প্রমাণিত হয়েছে যে, আমাদের দেশের রাজনীতিকরা অসৎপ্রবণ। তাদের দিয়ে কোনভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় কিন্তু যে কথাই বলা হোক না কেন আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটাই বাস্তবতা। দেশের মানুষ এর কোন বিকল্প আছে বলে মনে করে না। কিছুদিন আগে আমাদের আইনমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন যে, তারা নাকি ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থায় বিশ্বাসী এবং তারা নির্বাচনকালীন সময়ে সে পদ্ধতিরই সরকার প্রতিষ্ঠা করবেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো তারা যে পদ্ধতির নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসলেন সে পদ্ধতি কী ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতির ছিল? মূলত কোন দেশে কী ধরনের নির্বাচন পদ্ধতি, সরকার ব্যবস্থা ও নির্বাচনকালীন সরকার প্রচলিত আছে তা বড় কথা নয় বরং আমাদের দেশের বাস্তবতা উপলব্ধি করেই যেকোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী যে অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশ এবং বৃটিশ সরকার পদ্ধতির কথা বলছেন তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, কোন দেশের সরকার পদ্ধতির সাথে অপর কোন দেশের সরকার পদ্ধতির পুরোপুরি মিল নেই। মূলত সংশ্লিষ্ট দেশের ডকট্রিন অব নেসেসিটি হিসাবে সরকার ও শাসন পদ্ধতি নির্ধারিত হয়ে থাকে। যেমন বৃটেনের পর্লামেন্টের সভাপতি বা স্পিকার নির্বাচিত দলনিরপেক্ষ সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে। কারণ মনে করা হয় যে, স্পিকার কোন বিশেষ দল থেকে নির্বাচিত হলে অন্য দলের সদস্যরা পার্লামেন্টে বক্তব্য প্রদানের জন্য কাক্সিক্ষত সময় পাবেন না এবং তাদের উপর অবিচার হতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশের স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন সরকারদলীয় এমপিদের মধ্য থেকে। বিলেতে কেউ মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করলে তাকে অবশ্যই দলীয় নির্বাহী পদ ছাড়তে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সে ব্যবস্থা নেই। শেখ হাসিনা একাধারে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। তাই সরকারের পক্ষে যে অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশ বা বিলেতি পদ্ধতির সরকারের কথা বলা হচ্ছে তা গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয় না। কারণ বিলেতি প্রেক্ষাপট ও আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট অভিন্ন নয়। বাস্তবতার জন্যই এখানে নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার জরুরি। আর এ বাস্তবতাকে অস্বীকার করা আওয়ামী লীগের জন্য মোটেই কল্যাণকর হবে বলে মনে হয় না।
বর্তমান সরকারের সময়ে কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচার একটি চটকদার ইস্যু। মনে করা হয় যে, কথিত এ বিচারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলকে ধ্বংস বা নিদেনপক্ষে কোণঠাসা করতে চায়। অভিজ্ঞ মহল মনে করে এ ইস্যুর সরকার সাময়িক আত্মতৃপ্তি ও সুবিধা অর্জন করলেও এর দীর্ঘ মেয়াদি ফল আওয়ামী লীগের জন্য মোটেই সুখকর হবে না। কারণ ডিফেন্স পক্ষ দাবি করেছে যে, চলমান বিচার প্রক্রিয়ার কোন আইনগত ভিত্তি নেই। বিচার চলাকালীন সময়ে বারবার আইন সংশোধন মোটেই আইনগত ও সংবিধানসু¤œত হয়নি। এমন কি রায় ঘোষণার পরও আইন সংশোধন করে নতুন বিতর্কের জন্ম দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনও উষ্মা প্রকাশ করেছেন। মূলত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে কথিত এই বিচার কাজ পরিচালিত হচ্ছে। এমন কি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান পর্যন্ত স্বীকার করে নিয়েছেন যে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেই বিচার কাজ পরিচালিত হচ্ছে। মূলত বিচারের অগেই সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপিরা রায় নিয়ে আগাম মন্তব্য এবং প্রায় ক্ষেত্রেই সে মন্তব্যের প্রতিফলন পুরো বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী বিচারকদের শুধু আইন দেখে বিচার না করে কথিত জনমত অনুযায়ী বিচারের কথা বলে দুধের ভা-ে লেবুর রস ঢেলে দিয়েছেন। আসলে বিচারপতির স্কাইপ কেলেংকারি ফাঁসের মাধ্যমে পুরো বিচার প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ ও বিচারের হীন উদ্দেশ্য প্রকাশিত হয়েছে। এরপর এই বিচার চালিয়ে যাওয়ার কোন আইনগত ও নৈতিক ভিত্তি নেই।
সরকার যেভাবে বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে তাতে যেকোন নিরপরাধ লোককে শাস্তি দিতে কোন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এ পর্যন্ত যে কয়টি রায় ঘোষিত হয়েছে তার পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার অভিযোগে প্রাণদ-ে দ-িত করা হয়েছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো মরহুম কুট্টির স্ত্রী তার স্বামী হত্যার জন্য ১৪ জনকে আসামী করে থানায় এফ আই আর করেছিলেন। সে অভিযোগের বিচার শেষে অনেককে শাস্তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে ১৪ জনের মধ্যে মাওলানা সাঈদীর নাম তো ছিলই না বরং এফ আর আই এ দেলাওয়ার নামের কোন লোকের নামও উল্লেখ করা হয়নি। তাকে দ-িত করা হয়েছে বিশাবালী হত্যার অভিযোগে। কিন্তু বিশাবালীর ভাই সুখরঞ্জনবালী আদালতে ডিফেন্স পক্ষে সাক্ষী দিতে এসে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক অপহৃত এবং পরে প্রতিবেশী দেশ ভারতে কারাগারে তার সন্ধান মিলেছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পিরোজপুরের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বহু প্রামাণ্য গ্রন্থ রচিত হয়েছে। কিন্তু কোন গ্রন্থেই মাওলানা সাঈদীকে স্বাধীনতা বিরোধী বা রাজাকার-আলবদর হিসাবে উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি ট্রাইব্যুনাল যেসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে বা তাতে দ-িত করেছে সেসব ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট এবং ভিকটিমদের আত্মীয়-স্বজনরা এখন সরাসরি মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তারা অবলীলায় বলে যাচ্ছেন মাওলানা সাঈদী এসব ঘটনার সাথে কোনভাবেই জড়িত ছিলেন না।
অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আরেক জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছে। কোন প্রকার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছাড়াই শোনা কথার ভিত্তিতে এবং অনুমান নির্ভরভাবে তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে বলে ডিফেন্স পক্ষ অভিযোগ করেছে। তারা আরও অভিযোগ করেছেন যে, মিরপুরের বিহারী কসাই কাদের-এর যাবতীয় অপকর্মের দায়ভার আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে চাপিয়ে তাকে দ-াদেশ দেয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল আরেক জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামনকেও প্রাণদ-ে দ-িত করেছে। ডিফেন্স এখানেও অভিযোগ করেছে যে, ১৯৭১ সালে আলবদর বাহিনীর আঞ্চলিক কমা-ার হিসাবে এবং হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ নানাবিধ অভিযোগে তাকে দ-িত করা হয়েছে। কিন্তু সে সময় তিনি মাত্র ১৭ বছরের কিশোর ছিলেন। একজন কিশোরের পক্ষে আলবদর বাহিনীর আঞ্চলিক কমান্ডার এবং হত্যা, সন্ত্রাস ও ধর্ষণসহ নানাবিধ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হতে পারে কীভাবে? বিষয়টি পর্যালোচনা করলে ডিফেন্স-এর দাবি একেবারে অসার বলে মনে হয় না।
মূলত প্রতিহিংসা প্রতিহিংসারই জন্ম দেয়। কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে সরকার বিরোধীদলীয় শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে যে আচরণ করছে তা আওয়ামী লীগের জন্যও গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াতে পারে। ইতোমধ্যেই ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ফজলে কবীর ডিফেন্স পক্ষের এক সাবমিশনের জবাবে বলেছেন, বর্তমান ট্রাইব্যুনাল আইনে এখনও যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে তাদেরও বিচার করা সম্ভব। সরকার কথিত বিচারের নামে বিরোধীদলীয় নেতাদের যেভাবে পশু কোরবানীর ব্যবস্থা করেছে তাতে আগামী দিনে ক্ষমতার পালাবদল ঘটলে নিজেদের ফাঁদেই আওয়ামী লীগ আটকা পড়তে পারে। কারণ যে ধরনের অভিযোগ এনে বিরোধীদলীয় নেতাদের বিচার করা হচ্ছে সে ধরনের অভিযোগ আওয়ামী নেতাদের বিরুদ্ধে নেহাত কম নেই। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির এমন আশংকা উড়িয়ে দেননি। তিনি বলেছেন, বর্তমান ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের নির্মূল করা না গেলে আগামী দিনে এই ট্রাইব্যুনাল দিয়েই মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার করা হবে। আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম তো আরও একধাপ এগিয়ে বলেছেন, আমরা সাপের লেজে পা দিয়েছি। ট্রাইব্যুনাল দিয়ে তাদেরকে নির্মূল করতে না পারলে একদিন আমাদেরকেই জেলের ঘানি টানতে হবে।
অতিসম্প্রতি পুলিশকে অবাধ ক্ষমতা দিয়ে সরকার সন্ত্রাসবিরোধী বিল পাস করেছে। মূলত পুলিশকে অবারিত ক্ষমতা দিয়ে, সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী কাজকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত ও পরিধি বৃদ্ধি করে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ (সংশোধন) বিল, ২০১৩, ১১ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। বিলটিকে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের চেয়ে মারাত্মক কালো আইন আখ্যায়িত এবং বিরোধী দলকে দমন করার জন্যই আইনটি পাস করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে বিরোধী দল বিলটি পাসের আগে সংসদ থেকে ওয়াক আউট করে। পাসকৃত আইনে পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটের পূর্বানুমতি ছাড়াই মামলা রুজু ও তদন্ত করতে পারবে। মূলত পাসকৃত আইনে পুলিশের অবারিত ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। আইনটি পর্যালোচনা করলে নানান ত্রুটি বিচ্যুতি ও সংবিধান বিরোধী ধারা বেরিয়ে আসবে। কিন্তু আলোচ্য নিবন্ধের পরিসর সীমিত রাখার খাতিরেই সেদিকে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে সচেতন ব্যক্তি মাত্রই একথা অবগত আছেন যে পুলিশ বাহিনীকে অতীতে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল সে ক্ষমতারই তারা সদ্ব্যবহার করতে পারেনি বরং অনেক ক্ষেত্রেই তার অপব্যবহার হয়েছে। কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে সোপর্দ করার কথা থাকলেও পুলিশ ক্ষমতার অপব্যবহার করে দিনের পর দিন মাসের পর মাস আটক করে নির্যাতন করে আসছে। কাউকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে দেশের উচ্চ আদালতের সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা থাকলেও পুলিশ সে নির্দেশনাকে এখন পর্যন্ত বৃদ্ধাঙ্গুলিই প্রদর্শন করছে। পুলিশের গ্রেফতার বাণিজ্য, ঘুষ বাণিজ্য, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার কারো অজানা নয়। সম্প্রতি ডিসি ডিবি মোল্লা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এ ধরনের মারাত্মক অভিযোগ এসেছে। অভিযোগ এতই গুরুতর যে তাকে ডিবি থেকে বদলী করতে হয়েছে। এখন শোনা যাচ্ছে তাকে নাকি ইতোমধ্যেই ওএসডি করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধেও রয়েছে গুরুতর অভিযোগ। বিদ্যমান আইনেই পুলিশ বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের উপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে আসছে। একজন নিরপরাধ পথচারীকে গ্রেফতার করে ডিবি অফিসে নিয়ে শুধুমাত্র টাকা আদায়ের জন্য তাকে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ ও পুরুষাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে তাকে প্রজনন ক্ষমতাহীন করা হয়েছে। তিনি নির্যাতকের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া তো দূরের কথা এখন প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বিদ্যমান আইনেই যদি তারা এত বেপরোয়া হন তাহলে নতুন আইনে তারা কী করবেন তা রীতিমত কল্পনাতীত।
পুলিশী হেফাজতে নির্মম নির্যাতন তো নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশী হেফাজতে হত্যা, ধর্ষণও নেহাত কম নয়। সম্প্রতি যশোর কারাগারে দীর্ঘদিন আটক এক মহিলা বন্দীর অন্তঃসত্তা হওয়ার খবর বেরিয়েছে। অভিযোগে জানা গেছে যে, কোর্ট হাজিরা দেয়ার সময় কোর্ট গারদে পুলিশ সদস্যের আদিম লালসার শিকার হয়েছে সেই ভাগ্যাহতা মহিলা বন্দী। পুলিশী হেফাজতে চট্টগ্রামে সীমা হত্যা ও ধর্ষণ, দিনাজপুরের কিশোরী ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা, ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে তিন বছরের শিশু তানিয়া ধর্ষণ, পুলিশের এসি আকরাম কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছাত্র রুবেলকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা পুলিশের অতীত অপকর্মের সাক্ষ্য বহন করে। তাই পুলিশ বাহিনীর ক্ষমতা বৃদ্ধি করে দেশের মানুষ কোন সুফল পাবে বলে মনে হয় না। এতে বরং সরকারের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষই চরিতার্থ হতে পারে।
পুলিশ বিভাগে মূলত সমস্যা তাদের ক্ষমতা নয় বরং মূল সমস্যা হলো কতিপয় পুলিশ সদস্যদের নৈতিক অবক্ষয়। পুলিশ বাহিনীর মধ্যে যদি নৈতিক অবক্ষয় রোধ করা যেত তাহলে ক্ষমতা বৃদ্ধি না করেই এ বাহিনীর কাছ থেকে দেশের মানুষ উপকৃত হতে পারতো। কিন্তু সরকারের উদ্দেশ্য বোধ হয় সে রকম নেই। তারা মূলত বিরোধী দলের আন্দোলন দমনের জন্যই রাজনৈতিক কর্মকা- সংশ্লিষ্ট ঘটনাকে নতুন আইনে অপরাধ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। ফলে দেশে নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। অভিজ্ঞমহল নতুন আইন সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেছে, পাসকৃত আইনে নাগরিক ও বাক স্বাধীনতা সংকুচিত হবে এবং এ জন্য আমাদেরকে চরম খেসারতও দিতে হতে পারে। মূলত নতুন আইনের মাধ্যমে দেশের প্রচলিত আইন ও ফৌজদারী বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতিষ্ঠিত নিয়ম ও রীতি তছনছ হয়ে গেছে। তাই এই আইন সরকার ও বিরোধী দল কারো জন্যই কল্যাণকর হবে না।
অতীতে যারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতে নিজেদের মর্জিমতো নতুন নতুন আইন প্রণয়ন করেছে, কালের বিবর্তনে ও সময়ের প্রয়োজনে এ জন্য নিবর্তনমূলক আইন প্রণেতাদেরও চরম খেসারত দিতে হয়েছে। কারণ ক্ষমতা কোন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয়। যারাই ক্ষমতায় যায় তারা কখনোই ক্ষমতা থেকে নামার কথা ভাবে না। কিন্তু প্রকৃতির অমোঘ বিধানে সকলকেই একদিন ক্ষমতা থেকে বিদায় গ্রহণ করতে হয়। পরে তাদেরকে নিজেদের পাতানো ফাঁদে পড়ে আহাজারী করতে শোনা যায়।
মিসরের ক্ষমতাচ্যূত রাষ্ট্রপতি নিজের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য তিন দশকেরও অধিককাল সময় দেশে জরুরি অবস্থা জারি রেখেছিলেন। ১৯৭০ সালের ২৬ জুন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ভারতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন। সে সময় ভারতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও হরণ করা হয়েছিল। মূলত তিনি এতে সুফল লাভ করতে পারেননি। তাকে আবার গণতান্ত্রিক মোড়কেই ফিরে আসতে হয়েছে। কিন্তু ভারতে গণতন্ত্রের লেবেলে যা প্রচলিত আছে তা তাদের জন্য মোটেই সুফল বয়ে আনেনি। ভারতীয় গণতন্ত্রের মূল স্পিরিট অনুপস্থিত থাকায় ভারত কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের শিখ সমস্যার সমাধান করতে পারেন নি বরং শিখদের দমনে বলপ্রয়োগ করে বহু লোককে হতাহত করেও সমস্যার সমাধান হয়নি বরং গান্ধী পরিবারকে এ জন্য চরম মূল্য দিতে হয়েছে। শিখ দেহরক্ষীর গুলীতে শ্রীমতি গান্ধী প্রাণ হারিয়েছেন। পুত্র রাজীব গান্ধীকে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ দিতে হয়েছে। গান্ধী পরিবার রাজনীতিতে থাকলেও ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানোর জন্যই এখন পর্যন্ত ক্ষমতার প্রভাব বলয়ের বাইরেই থাকতে হচ্ছে। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী (মাহাত্মা গান্ধী) অগণতান্ত্রিক মানসিকতার কারণেই পাকিস্তান আন্দোলন শুরু হয়েছিল এবং ফলশ্রুতিতে ভারত ভেঙ্গেছে। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল স্বাধীন ভারতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোন কাজটি করা হবে। তিনি প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন, আগে গোহত্যা নিবারণ করা হবে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ধারণ করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই পাকিস্তান ভেঙ্গেছে। জাতিগত সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থতা ও প্রকৃত গণতন্ত্রের অভাবে এক সময়ের পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গেছে। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে স্কটল্যান্ড স্বাধীনতা দাবি করায় বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামরন সেখানে গণভোট দেয়ার চিন্তা করছেন। কিন্তু ভারত অধ্যুষিত কাশ্মীরে জাতিসংঘের প্রস্তাব মোতাবেক গণভোটের সিদ্ধান্ত থাকলেও ভারত দীর্ঘকাল যাবত তা অস্বীকার করে আসছে।
অতীত থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তেই পৌঁছতে পারি যে, বলপ্রয়োগের মাধ্যমে এবং অগণতান্ত্রিক পন্থায় কোন কিছু অর্জন করা সম্ভব হয়নি। যে সমাজে গণমানুষের কথার মূল্যায়ন করা হয়েছে সে সমাজ স্থায়ী হয়েছে। স্বৈরমানসিকতার কারণে বিশ্বের দোর্দ- প্রতাপশালী হিটলার নিজের শেষ রক্ষা করতে পারেন নি। গায়ের জোরে চাপিয়ে দিয়ে তা থেকে ফল অর্জন করা যায়নি। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের ক্ষমতাকে নিষ্কন্টক করার জন্য যা করছে সেগুলোকে দেশের সচেতন মানুষ দুরদর্শী সিদ্ধান্ত বলে মনে করতে পারছেন না। অতীতে তাদের অদুরদর্শী সিদ্ধান্তের জন্য তাদেরকে যেভাবে খেসারত দিতে হয়েছে বর্তমান সময়ে গৃহীত সিদ্ধান্তের জন্য তাদেরকে তেমনিভাবে মূল্য দিতে হতে পারে। তারা বিরোধী দলের উপর যেভাবে দলন-পীড়ন ও নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়ন করছে অদূর-ভবিষ্যতে তাদেরকে আরো করুণ পরিণতি বরণ করতে হতে পারে। তখন তাদের পক্ষে আফসোস করা ছাড়া কোন গত্যন্তর থাকবে বলে মনে হয় না।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন