গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) বিল ২০১৩ পাস হয়েছে। বিলটি পাসের প্রতিবাদে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট সদস্যরা সংসদ থেকে ওয়াক আউট করেন। বিলে সন্ত্রাসীর সংজ্ঞা আরো বিস্তৃত ও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। এই আইনে পুলিশের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। সন্ত্রাস দমন নয়, বিরোধী দলকে দমনে এই আইনের অপপ্রয়োগ হবে বলে সংসদে বিএনপি’র পক্ষ থেকে মন্তব্য করা হয়েছে। বিলের ২১ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সন্ত্রাসী ব্যক্তি বা সংগঠনের ফেসবুক, স্কাইপে, টুইটার বা ইন্টারনেটের যে কোনো মাধ্যমের অপরাধ, সংশ্লিষ্ট আলাপ-আলোচনা ও কথাবার্তা অথবা অপরাধ সংশ্লিষ্ট স্থির ও ডিভিও চিত্র অপরাধের আলামত হিসেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আদালতে উপস্থাপন করতে পারবে। এ বিষয়ে সাক্ষ্য আইনে যাই থাকুক না কেন, মামলার স্বার্থে তা আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে যে, দেশে বর্তমানে বিদ্যমান সন্ত্রাসবিরোধী আইন গত দুই বছর ধরেই সংশোধনের চিন্তা-ভাবনা চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এমন কি পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটলো যে, এমন তড়িঘড়ি করে সেই আইনটি সংশোধন করতে হলো। ৩ জুন সম্পূরক কার্যসূচী হিসেবে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) বিল, ২০১৩ সংসদে উত্থাপন করা হয়। মাত্র আট দিনের মধ্যেই সংসদীয় কমিটিতে পরীক্ষার পর তড়িঘড়ি করে গত মঙ্গলবার বিলটি পাস করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে সংশোধিত আইনটি সংবিধান এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। তাদের মতে, এই আইনের অপপ্রয়োগের আশঙ্কা রয়েছে এবং এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হবে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেন, আন্তঃরাষ্ট্রীয় যেসব চুক্তি আছে, সেগুলোর উদ্দেশ্যও ছিল দেশের সীমানার বাইরে বসে কেউ যাতে নিজ দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অপরাধমূলক ঘটনা না ঘটাতে পারে। কিন্তু এ জন্য নতুন করে আইন করার দরকার ছিল না। কারণ, এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যথেষ্ট আইন বিদ্যমান আছে। এ আইনের মাধ্যমে ব্যক্তির নিরাপত্তা লঙ্ঘিত হবে।
একটু আগে আমরা বলেছি যে, এই আইনের কোনো প্রয়োজন ছিল না। কারণ ২০০০ সালের শুরুর দিকে এই একই আওয়ামী সরকার সংসদে আরেকটি কুখ্যাত আইন পাস করেছিল। সেই আইনের নাম জননিরাপত্তা (বিশেষ বিধান) আইন ২০০০। সেদিনও মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে এমন ভয়াবহ রকম কালো আইন পাস করা হয়েছিল। সেদিনও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা।
॥ দুই ॥
পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ৬৫ বছরের সম্মিলিত ইতিহাসে সদ্য অনুমোদিত জননিরাপত্তা (বিশেষ) আইনকে যদি ২০০০ সালের জননিরাপত্তা আইনের সাথে পাঠ করা হয় তবে এই দুটি আইন বিবেচিত হবে সবচেয়ে কৃষ্ণ আইন হিসেবে। অবিভক্ত ভারত ও পাকিস্তানে জননিরাপত্তা আইন, পাকিস্তান প্রতিরক্ষা আইন, ১৯৭৪ সালের কুখ্যাত বিশেষ ক্ষমতা আইন (এসপিআর), ভারতের পরলোকগত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরার আমলের জরুরী আইন, ‘৭৪ ও ৭৫ সালে বাংলাদেশের জরুরী আইন, ভারতের কুখ্যাত ‘ মিসা’ ও ‘টাডা’ আইনের সবচেয়ে দমনমূলক, নিপীড়নমূলক এবং নিবর্তনমূলক অনুচ্ছেদ ও ধারাগুলো এই ২টি আইনে (সদ্যপ্রণীত জননিরাপত্তা (বিশেষ) আইনে এবং ২০০০ সালের আইনে) সন্নিবেশিত হয়েছে। তাই ইতিহাসের আলোকে এই আইন বাংলাদেশের ৬৫ বছরের সবচেয়ে কুখ্যাত এবং সবচেয়ে কালো আইন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। রাজনৈতিক প-িত ও বিশ্লেষকগণ আলোচনা প্রসঙ্গে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন যে, বাংলাদেশে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের পরলোকগত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, জরুরী আইন এবং অন্যান্য নিবর্তন মূলক কালাকানুন প্রয়োগ করেও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেননি। তাদের মতে, দেশের প্রশাসন, অর্থনীতি, আইন-শৃঙ্খলা এবং বৈদেশিক নীতিতে সীমাহীন ব্যর্থতা, অযোগ্যতা এবং অপশাসনকে চাপা দেয়া এবং ক্ষমতার মসনদ আঁকড়ে থাকার জন্য বর্তমান সরকার এই প্রগতিবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী পশ্চাৎপদ আইন প্রণয়ন করেছেন। কিন্তু এর পরেও তাদের শেষ রক্ষা হবে না।
২০০০ সালের জননিরাপত্তা (বিশেষ) আইনে যে ৯টি অপরাধ দমনের কথা বলা হয়েছে সেই ৯টি অপরাধের মধ্যে ৩টি অপরাধ দমনের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে- গণআন্দোলনের কর্মসূচি, যথা- হরতাল এবং অন্যান্য কঠোর কর্মসূচিকে রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগ করে বানচাল করা। এগুলো হলো- গাড়ী ভাংচুর ও সম্পদ বিনষ্ট করা, যান চলাচলে বাধা প্রদান, ত্রাস সৃষ্টি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। হরতাল, অবরোধ প্রভৃতি কঠোর কর্মসূচি পালন উপলক্ষে সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার যথা- কর্মবিরতি, যান চলাচলে সাময়িক বিরতি প্রভৃতি কর্মসূচি পালনকে সরকার ইচ্ছামত অপব্যাখ্যা করতে পারে এবং জননিরাপত্তা আইনে শায়েস্তা করতে পারে। সম্মিলিত বিরোধীদলের রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ খাড়া করে তাদেরকে অতীতে পাইকারী হারে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং একনাগাড়ে ১২০ দিন অর্থাৎ ৪ মাস আটক রাখা হয়েছিল। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, জননিরাপত্তা (বিশেষ) আইন অনুযায়ী ৯ ক্যাটাগরীর অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হলে তাকে একনাগাড়ে ৩ মাস আটক রাখার বিধান রয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ বা সরকার না চাইলে তাকে জামিন দেয়া যাবে না। এরপর যদি তার শাস্তি হয় তাহলে সেই ব্যক্তি উচ্চতর আদালতে আপিল করতে পারবে। কিন্তু তারপরেও এক মাস সে জামিন পাবে না। সুতরাং শাসক দল যদি ইচ্ছা করে তাহলে তাদের অঙ্গুলী হেলনে পুলিশ সরকারের যে কোন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শ্রীঘরে ঢুকাতে পারবে এবং একটানা ৪ মাস আটক রাখতে পারবে। সুতরাং হরতাল কর্মসূচিসহ বিরোধী দলের চলমান আন্দোলনে নেতা ও কর্মীগণকে, বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের গ্রেফতার করে মাসের পর মাস কারার অন্ধ প্রকোষ্ঠে আটকে রেখে বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করাই ছিল সেই কালাকানুনের আশু লক্ষ্য। রাজনীতিবিদ, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, আইনজ্ঞ ও শিক্ষাবিদসহ সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষ এই মত পোষণ করছেন।
২০০০ সালের ঐ কৃষ্ণ আইনে পুলিশকে আওয়ামী লীগ সরকারের বশংবদ বানানের সব চেষ্টাই করা হয়েছে। পুলিশ অফিসারগণকে কর্তার ইচ্ছায় কীর্তন গাইতে বাধ্য করার জন্য আলোচ্য আইনে সূক্ষ¥ভাবে ফন্দি ফিকির আঁটা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, কোন পুলিশ অফিসার যদি কোনো অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সঠিক সময়ের মধ্যে রিপোর্ট না দেয় অথবা তদন্ত কার্যে গাফিলতি করে তাহলে তার বিরুদ্ধে এই আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। এর সহজ অর্থ এই যে, শাসকগোষ্ঠী যেভাবে চাইবে সেভাবে যদি রিপোর্ট দেয়া না হয় তাহলে সেটাকে কর্তব্যে গাফিলতি বলে গণ্য করা হবে। এর ফলে পুলিশ বিভাগ সর্বক্ষণ ভয় এবং ভীতির মধ্যে থাকবে এবং কর্তাকে খুশি করায় ব্যস্ত থাকবে। যারা বলেন যে, বিএনপি আমলে প্রণীত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের চেয়ে এই আইন উন্নত, তারা জেনে শুনেই ঘটনার বিকৃত ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। বিএনপির আমলে ঐ আইনটি পাস করা হয়েছিল মাত্র ২ বছরের জন্য। ২ বছর পর সেই আইন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বাতিল হয়ে গেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের এই কালাকানুন বাংলাদেশে স্থায়ী আইনসমূহের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে রইল। পরবর্তী সরকার এসে এই আইনটি বাতিল বা সংশোধন না করা পর্যন্ত এই আইন বাংলাদেশের আইনী ব্যবস্থায় এক কলঙ্ক তিলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রইবে।
॥ তিন ॥
ভাবতে অবাক লাগে যে, আওয়ামী লীগ তার পাবলিসিটি স্ট্যান্টের জোরে এদেশে গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে এবং কালাকানুন বাতিলের সংগ্রামী দল হিসেবে অনেকের কাছেই বিবেচিত ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ আমল থেকে যদি ইতিহাস ঘাঁটা যায় তাহলে দেখা যাবে যে, অবিভক্ত বাংলা এবং স্বাধীন বাংলাদেশে সবচেয়ে জুলুমবাজ কালা কানুনগুলো এসেছে আওয়ামী নেতৃবৃন্দের হাত ধরেই। ৪০ এর দশকে বৃটিশরা ডিফেন্স অফ ইন্ডিয়া রুলস বা ভারত রক্ষা আইন জারি করে। এই ্আইন মোতাবেক ভারতে বিদেশী চর অর্থাৎ জাপানী, ইতালী ও জার্মানীর ফ্যাসিস্ট ও নাৎসী চরদের গ্রেফতার করার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল যে, বিদেশী গুপ্তচরদের গ্রেফতার না করে এই আইনটি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে প্রয়োগ করা হচ্ছে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর সেই আইন উঠে গেল ঠিকই, কিন্তু তার পরিবর্তে নেমে এলো একই রকম শক্তিশালী এবং নিবর্তন মূলক আইন। এই আইনটির নাম ভারতীয় জননিরাপত্তা আইন। অবিভক্ত বাংলায় এই আইনটি পাস করেন স্বাধীন বাংলায় গণতন্ত্রের ‘মানসপুত্র’ বলে পরিচিত বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন সোহরাওয়ার্দী। এই আইনের অধীনে সেদিন ভারতের স্বাধীনতাকামী এবং পাকিস্তানের আজাদী পাগল অসংখ্য রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে সবচেয়ে কুখ্যাত কালাকানুনটির নাম বিশেষ ক্ষমতা আইন। এই আইনটি প্রণয়ন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে পাস করেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা, সোহরাওয়ার্দীর উত্তরসূরি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বময় নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। আর এবার ২০০০ সালে স্মরণ কালের সবচেয়ে কুখ্যাত এবং জুলুমবাজ আইনটি বানালেন এবং পাস করলেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা নামে আখ্যায়িত আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
॥ চার ॥
ক্ষমতার গদি পোক্ত করার জন্য বর্তমান সরকার এই আইনটি জারি করেছে। কিন্তু এর ফলে কি শেখ হাসিনা রাজনৈতিকভাবে শেষ রক্ষা করতে পারবেন? একটু আগেই বলেছি যে, আওয়ামী লীগের জনক জনাব সোহরাওয়ার্দী অবিভক্ত বাংলায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জননিরাপত্তা আইন নামে একটি কালাকানুন জারি করেছিলেন। অবিভক্ত ভারতের বাংলা এবং পাঞ্জাবে সরকার প্রধানকে ঈযরবভ গরহরংঃবৎ বা মুখ্যমন্ত্রী না বলে চৎরসব গরহরংঃবৎ বা প্রধানমন্ত্রী বলা হতো। বাংলা ভাগ হওয়ার পর সোহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রিত্ব হারান। এরপর একটি বিশেষ মিশনে তিনি তৎকালীন পূর্ববঙ্গে এলে গ্রেফতার হন এবং পশ্চিমবঙ্গে তাকে ফেরত পাঠানো হয়। ভাগ্যের কি নিষ্ঠুর পরিহাস যে, যে আইন সোহরাওয়ার্দীর হাতে তৈরী হয় সেই আইনেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। অনুরূপভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ সরকারই বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রণয়ন করেন। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অদৃষ্টের ফেরে সেই আইনের অধীনেই আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ও কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়লে নিজেকেই যে সেই গর্তে পড়তে হয় এই দু’টি ঘটনা তার আদর্শ নমুনা !
বিগত অর্ধশতাব্দীর ব্যবধানে অপরাধের সংজ্ঞার কি আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে। পাকিস্তান আমলে গ্রেফতারের গ্র্যাউন্ড হিসেবে দেখানো হত ঝঁনাবৎংরাব বা চৎবলঁফরপরধষ ধপঃরারঃু অর্থাৎ ধ্বংসাত্মক বা ক্ষতিকর কার্যকলাপ। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। বলা হচ্ছে যে, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ যথা চাঁদাবাজি, ছিনতাই, টেন্ডারবাজি, সম্পত্তি বিনষ্ট করা, গাড়ী ভাঙচুর করা ইত্যাদি অপরাধের জন্য নিরাপত্তা আইন পাস করা হয়েছে। দেশের প্রচলিত আইনের অধীনে এসব অপরাধের শাস্তি দেয়ার বিধান আছে। কিন্তু সেদিকে না গিয়ে নিরাপত্তা আইনের নামে এই নতুন দানব সৃষ্টি করা হলো কেন? এর কোন জবাব নেই। বৃটিশ এবং পাকিস্তান আমলে অসংখ্য ব্যক্তিকে ধ্বংসাত্মক কাজের অভিযোগে অনির্দিষ্টকালের জন্য জেলখানায় পচতে হয়েছিল। কিন্তু কারো বিরুদ্ধেই ধ্বংসাত্মক অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। সকলেই আশঙ্কা করছেন যে, নতুন আইনে সন্ত্রাসী কাজের অভিযোগে অনেক রাজনৈতিক কর্মীকে গ্রেফতার করা হবে। তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ প্রমাণ করা যাবে না।
শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ রোজহাশর পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে না। একদিন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবে। সেদিন যদি পরবর্তী সরকার এই একই আইনের অধীনে আওয়ামী লীগের নেতা এবং কর্মীদের আটক করে তখন তারা কি বলবেন? বলা হয় যে, এই পুলিশ প্রশাসন পচে গেছে। তাদেরকে নাকি অপরাধীরা ‘ম্যানেজ’ করে। ম্যানেজ করার ফলে তারা নাকি দুর্বল এবং ত্রুটিপূর্ণ চার্জশীট বানায়। সেই দুর্বলতা এবং ত্রুটির ফাঁক ফোকর গলিয়ে অপরাধীরা বেরিয়ে যায়। এখন সেই ঘুণে ধরা আমলাতন্ত্র এবং পুলিশ প্রশাসনের হাতেই তো বেশী করে ক্ষমতা দেয়া হলো। তাতে করে আইনের ফোকরটা কি আর বড় হলো না? তাই তো বলেছি যে, এই আইন জারি করে শিয়ালের হাতে মুরগি বরগা দেয়া হলো।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন