বর্তমান সরকারের আমলে তিনটি টেলিভিশন চ্যানেল নিষিদ্ধ হয়েছে। আমার
দেশ পত্রিকার প্রকাশনা নিষিদ্ধ হয়েছে। আরেকটি টেলিভিশন চ্যানেল সর্বোচ্চ আদালত
থেকে অনুকূল রায় পাওয়ার পরও কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। সম্প্রতি লন্ডনের
প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন ইকোনমিস্ট বাংলাদেশের মিডিয়া সম্পর্কে
পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছে, ‘শাপলা চত্বরের ঘটনায়
বাংলাদেশের মিডিয়া নতজানু’।
আওয়ামী লীগ সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় কতটুকু বিশ্বাস করে তা অনুধাবন
করার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলের কয়েকটি ঘটনা এখানে তুলে ধরা হলো :
১. মতিয়া চৌধুরীসহ অন্যদের
নেতৃত্বে মস্কোপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণে দু’জন নিহত হলে এ সম্পর্কে প্রকৃত
তথ্য প্রকাশের দায়ে সাংবাদিক তোয়াব খানকে দৈনিক বাংলা থেকে সরিয়ে ১৯৭৩-এ ওএসডি (Officer on Special Duty) করা হয়।
২. সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকার
সম্পাদক হওয়া সত্ত্বেও সরকারি কাজে ও নির্দেশে ‘জি হুজুর’ করতে অস্বীকার করায় কবি হাসান
হাফিজুর রহমানকে ১৯৭৪-এ দৈনিক বাংলার সম্পাদকের পদ থেকে অপসারণ করে কূটনীতিকের
চাকরির নামে কার্যত নির্বাসনদণ্ড দেয়া হয়েছিল। যার ফলে তিনি ব্যাধির চেয়ে
হতাশায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বেশি। (চতুরঙ্গ, দৈনিক ইত্তেফাক-৩-৪-৯৩)
৩. দি বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকার
সম্পাদক প্রয়াত (এখন ধর্মনিরপেক্ষতার কারণে ‘মরহুম’ নয় প্রয়াত বলতে হবে) আবদুস
সালাম The Supreme Test (সুপ্রিম টেস্ট) শিরোনামে একটি সম্পাদকীয়তে ক্ষমতাসীন সরকারের
ভ্রান্তনীতির কিছু সমালোচনা করেছিলেন বলে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল।
৪. দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায়
চালের মূল্য বৃদ্ধি ওপর একটি কার্টুন প্রকাশিত হয়েছিল বলে বার্তা সম্পাদক মীর
নুরুল ইসলামের চাকরি চলে গিয়েছিল। রিপোর্টার হোসেন তৌফিক লবণের মূল্যের ওপর
রিপোর্ট লিখে চাকরি হারান।
৫. ‘জালালাবাদ’ প্রদেশ দাবি করে সাপ্তাহিক
হলিডেতে একটি চিঠি প্রকাশিত হলে এনায়েতউল্লাহ খানকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাকে
জালালাবাদ বা সিলেট জেলে পাঠানো হয়েছিল।
৬. বিশেষ ক্ষমতা আইনে বাংলাদেশ
অবজারভারের বাবুল রাব্বানী, তার বাবা হাবিবুর রহমান এবং কবি আল মাহমুদকে গ্রেফতার করা হয়। এর
আগে অন্য আইনে সাংবাদিক আতিকুল আলমকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পুলিশ বাবুল
রাব্বানীকে ‘সর্বহারা পার্টির নেতা’ বানিয়ে
মেশিনগানসহ ধরা হয়েছে বলে অভিযোগ দায়ের করে। বিচারকমণ্ডলী ‘বেনিফিট অব ডাউট’-এর বদৌলতে ১৯৭৬ সালে বাবুল রাব্বানীকে ছেড়ে দেন। এভাবে পুলিশকে
মিথ্যা মামলা দায়ের করতে প্রশিক্ষণ দেয়া হলো।
৭. পার্বত্য চট্টগ্রামের ওপর একটি
খবর ছাপানোর জন্য চট্টগ্রামের দেশবাংলা পত্রিকার বার্তা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তীকে
গ্রেফতার করা হয়।
৮. ইন্দিরা-মুজিব স্বাক্ষরিত ভারত-বাংলাদেশ
২৫ বছর মেয়াদি বহুল বিতর্কিত চুক্তির বিরুদ্ধে সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকায় এক
নিবন্ধ লিখে মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল জিয়াউদ্দিন বীর উত্তম চাকরি হারান।
৯. অবজারভার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা
সম্পাদক ও দৈনিক পূর্বদেশের সম্পাদক মাহবুবুল হককে মিথ্যা অভিযোগে জেলে আটকে রাখা
হয়েছিল দেড় বছর।
১০. ১৯৭৪ সালে জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশ সফরে এলে তাকে একনজরে দেখার
জন্য সমবেত জনতার ভিড় ঠেকাতে পুলিশ ও রক্ষীবাহিনী রাস্তার লোকের ওপর লাঠি চার্জ
করে। আহত হন বহু সাংবাদিক। এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন কবি মহাদেব সাহা। সাংবাদিক
ইউনিয়নের নেতারা (তখন সাংবাদিক ইউনিয়নে বিভাজন ছিল না) প্রধানমন্ত্রী শেখ
মুজিবুর রহমানের কাছে এর জন্য বিচার চেয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী
শাসনামলে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের এই প্রথম লাঠিচার্জ।
১১. ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন দেশের চারটি দৈনিক ছাড়া আর সব সংবাদপত্র নিষিদ্ধ
ঘোষণা করে মানুষের বাকস্বাধীনতাকে টুঁটিচেপে হত্যা করা হয়েছিল বলে সাংবাদিক সমাজ
প্রতি বছর ১৬ জুন ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করছে। এর আগে
ফয়জুর রহমানের মুখপত্র ও ইংরেজি স্পোকসম্যান, মওলানা ভাসানীর হক কথা, লাল পতাকা, গণকণ্ঠ, স্বাধিকার, স্বাধীনতা, নয়াযুগ, চট্টগ্রাম থেকে
প্রকাশিত দেশবাংলা প্রভৃতি পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন
করা হলে এর বিরোধিতা করে আবদুল গাফফার চৌধুরী দৈনিক জনপদে সম্পাদকীয় লিখেছিলেন, ‘কান্তি আমায় ক্ষমা কর প্রভু’।
আরো উদাহরণ দেয়া যায়। উত্তরাধিকারসূত্রে বর্তমান আওয়ামী লীগের
চরিত্র কতটুকু মিডিয়াবান্ধব হবে, তা সহজেই অনুমেয়।
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের ওপর প্রথম
গুরুত্বারোপ করেন। তার আমলেই প্রেস ইনস্টিটিউট গঠন করা হয়, যার প্রথম
পরিচালক ছিলেন অবজারভারের সাবেক খ্যাতনামা সম্পাদক আবদুস সালাম। সাংবাদিকদের
আবাসনের জন্য বর্তমান জায়গাটি নামমাত্র মূল্যে জিয়াউর রহমান দিয়েছিলেন।
সাংবাদিকতার মানোন্নয়ন ও সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করার
লক্ষ্যে সম্প্রতি ‘সম্পাদক পরিষদ’ (Editor’s Conncil) গঠন
করা হয়েছে। আমরা আশা করব, এ পরিষদ দেশের স্বার্থে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে আন্তরিক এবং
সাংবাদিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখায় সচেষ্ট হবে।
বর্তমান সরকারের আমলে তিনটি টেলিভিশন চ্যানেল নিষিদ্ধ হয়েছে। আমার
দেশ পত্রিকার প্রকাশনা নিষিদ্ধ হয়েছে। আরেকটি টেলিভিশন চ্যানেল সর্বোচ্চ আদালত
থেকে অনুকূল রায় পাওয়ার পরও কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। সম্প্রতি লন্ডনের
প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন ইকোনমিস্ট বাংলাদেশের মিডিয়া সম্পর্কে
পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছে, ‘শাপলা চত্বরের ঘটনায়
বাংলাদেশের মিডিয়া নতজানু’।
আওয়ামী লীগ সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় কতটুকু বিশ্বাস করে তা অনুধাবন
করার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলের কয়েকটি ঘটনা এখানে তুলে ধরা হলো :
১. মতিয়া চৌধুরীসহ অন্যদের
নেতৃত্বে মস্কোপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণে দু’জন নিহত হলে এ সম্পর্কে প্রকৃত
তথ্য প্রকাশের দায়ে সাংবাদিক তোয়াব খানকে দৈনিক বাংলা থেকে সরিয়ে ১৯৭৩-এ ওএসডি (Officer on Special Duty) করা হয়।
২. সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকার
সম্পাদক হওয়া সত্ত্বেও সরকারি কাজে ও নির্দেশে ‘জি হুজুর’ করতে অস্বীকার করায় কবি হাসান
হাফিজুর রহমানকে ১৯৭৪-এ দৈনিক বাংলার সম্পাদকের পদ থেকে অপসারণ করে কূটনীতিকের
চাকরির নামে কার্যত নির্বাসনদণ্ড দেয়া হয়েছিল। যার ফলে তিনি ব্যাধির চেয়ে
হতাশায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বেশি। (চতুরঙ্গ, দৈনিক ইত্তেফাক-৩-৪-৯৩)
৩. দি বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকার
সম্পাদক প্রয়াত (এখন ধর্মনিরপেক্ষতার কারণে ‘মরহুম’ নয় প্রয়াত বলতে হবে) আবদুস
সালাম The Supreme Test (সুপ্রিম টেস্ট) শিরোনামে একটি সম্পাদকীয়তে ক্ষমতাসীন সরকারের
ভ্রান্তনীতির কিছু সমালোচনা করেছিলেন বলে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল।
৪. দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায়
চালের মূল্য বৃদ্ধি ওপর একটি কার্টুন প্রকাশিত হয়েছিল বলে বার্তা সম্পাদক মীর
নুরুল ইসলামের চাকরি চলে গিয়েছিল। রিপোর্টার হোসেন তৌফিক লবণের মূল্যের ওপর
রিপোর্ট লিখে চাকরি হারান।
৫. ‘জালালাবাদ’ প্রদেশ দাবি করে সাপ্তাহিক
হলিডেতে একটি চিঠি প্রকাশিত হলে এনায়েতউল্লাহ খানকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাকে
জালালাবাদ বা সিলেট জেলে পাঠানো হয়েছিল।
৬. বিশেষ ক্ষমতা আইনে বাংলাদেশ
অবজারভারের বাবুল রাব্বানী, তার বাবা হাবিবুর রহমান এবং কবি আল মাহমুদকে গ্রেফতার করা হয়। এর
আগে অন্য আইনে সাংবাদিক আতিকুল আলমকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পুলিশ বাবুল
রাব্বানীকে ‘সর্বহারা পার্টির নেতা’ বানিয়ে
মেশিনগানসহ ধরা হয়েছে বলে অভিযোগ দায়ের করে। বিচারকমণ্ডলী ‘বেনিফিট অব ডাউট’-এর বদৌলতে ১৯৭৬ সালে বাবুল রাব্বানীকে ছেড়ে দেন। এভাবে পুলিশকে মিথ্যা
মামলা দায়ের করতে প্রশিক্ষণ দেয়া হলো।
৭. পার্বত্য চট্টগ্রামের ওপর একটি
খবর ছাপানোর জন্য চট্টগ্রামের দেশবাংলা পত্রিকার বার্তা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তীকে
গ্রেফতার করা হয়।
৮. ইন্দিরা-মুজিব স্বাক্ষরিত ভারত-বাংলাদেশ
২৫ বছর মেয়াদি বহুল বিতর্কিত চুক্তির বিরুদ্ধে সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকায় এক
নিবন্ধ লিখে মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল জিয়াউদ্দিন বীর উত্তম চাকরি হারান।
৯. অবজারভার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা
সম্পাদক ও দৈনিক পূর্বদেশের সম্পাদক মাহবুবুল হককে মিথ্যা অভিযোগে জেলে আটকে রাখা
হয়েছিল দেড় বছর।
১০. ১৯৭৪ সালে জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশ সফরে এলে তাকে একনজরে দেখার
জন্য সমবেত জনতার ভিড় ঠেকাতে পুলিশ ও রক্ষীবাহিনী রাস্তার লোকের ওপর লাঠি চার্জ
করে। আহত হন বহু সাংবাদিক। এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন কবি মহাদেব সাহা। সাংবাদিক
ইউনিয়নের নেতারা (তখন সাংবাদিক ইউনিয়নে বিভাজন ছিল না) প্রধানমন্ত্রী শেখ
মুজিবুর রহমানের কাছে এর জন্য বিচার চেয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী
শাসনামলে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের এই প্রথম লাঠিচার্জ।
১১. ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন দেশের চারটি দৈনিক ছাড়া আর সব সংবাদপত্র নিষিদ্ধ
ঘোষণা করে মানুষের বাকস্বাধীনতাকে টুঁটিচেপে হত্যা করা হয়েছিল বলে সাংবাদিক সমাজ
প্রতি বছর ১৬ জুন ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করছে। এর আগে
ফয়জুর রহমানের মুখপত্র ও ইংরেজি স্পোকসম্যান, মওলানা ভাসানীর হক কথা, লাল পতাকা, গণকণ্ঠ, স্বাধিকার, স্বাধীনতা, নয়াযুগ, চট্টগ্রাম থেকে
প্রকাশিত দেশবাংলা প্রভৃতি পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন
করা হলে এর বিরোধিতা করে আবদুল গাফফার চৌধুরী দৈনিক জনপদে সম্পাদকীয় লিখেছিলেন, ‘কান্তি আমায় ক্ষমা কর প্রভু’।
আরো উদাহরণ দেয়া যায়। উত্তরাধিকারসূত্রে বর্তমান আওয়ামী লীগের
চরিত্র কতটুকু মিডিয়াবান্ধব হবে, তা সহজেই অনুমেয়।
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের ওপর প্রথম
গুরুত্বারোপ করেন। তার আমলেই প্রেস ইনস্টিটিউট গঠন করা হয়, যার প্রথম
পরিচালক ছিলেন অবজারভারের সাবেক খ্যাতনামা সম্পাদক আবদুস সালাম। সাংবাদিকদের
আবাসনের জন্য বর্তমান জায়গাটি নামমাত্র মূল্যে জিয়াউর রহমান দিয়েছিলেন।
সাংবাদিকতার মানোন্নয়ন ও সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করার
লক্ষ্যে সম্প্রতি ‘সম্পাদক পরিষদ’ (Editor’s Conncil) গঠন
করা হয়েছে। আমরা আশা করব, এ পরিষদ দেশের স্বার্থে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে আন্তরিক এবং
সাংবাদিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখায় সচেষ্ট হবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন