আওয়ামী সরকারের গত সাড়ে চার বছরের শাসনামলে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ বিভিন্ন উপকরণের মূল্য বেড়েছে। খাদ্যসহ অন্যান্য পণ্য যেমন পরিধেয় বস্ত্র, শিক্ষা উপকরণ, আসবাবপত্র, গৃহস্থালী সামগ্রীর মূল্য বেড়েছে। বাড়ি ভাড়া, বাস, ট্রেন, লঞ্চ, পরিবহন ভাড়াসহ ওষুধ, চিকিৎসা ও অন্যান্য সেবামূল্য বৃদ্ধিও অব্যাহত রয়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহে নাকাল সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের জন্য দুঃসংবাদ বটে। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ধকলে নিষ্পেশিত সাধারণ মানুষ গত সাড়ে চার বছর ধরে চরম দিশেহারা অবস্থায় দিন অতিবাহিত করছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যয় সংকোচন করেও অত্যাবশ্যকীয় ব্যয় নির্বাহে হিমশিম খাওয়া সাধারণ মানুষ মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে পিষ্ট। বিশ্ববাজারে খাদ্যসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্য হ্রাস পেলেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে খাদ্যসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর মূল্য কেবল লাফিয়ে লাফিয়েই বেড়ে যায়। সরকার ও সরকারি প্রভাবশালী মহলের গোপন মদদে অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা সরকার, সরকারি প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নাকের ডগায় এ অপকর্ম দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের সরকারি হাঁক-ডাক বুলি আওড়ানো লোক দেখানো মাদারির খেল নয় কী? ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো দেশের রাজনৈতিক বিষয়ে অনর্থক নাক গলানো, পরামর্শ ফেরি করতেই অতি উৎসাহী দেখা যায়। অথচ অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর তৎপরতা নেই কেন? সরকারের রহস্যজনক গাছাড়া ভাব এবং ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর দায়িত্বহীনতা মজুতদার, মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদেরকে ইচ্ছামতো পণ্যের মূল্য বাড়ানোর সুযোগ এনে দেয়ায় তারা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দু’হাতে টাকার পাহাড় গড়ে তুলছে। ব্যবসায়ীর তকমা লাগানো মজুতদার ও অতিমুনাফাখোরদের দৌরাত্ম্য নির্মূল করা না হলে যখন- তখন পণ্যের মাত্রাতিরিক্ত মূল্য বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের পকেট হাতিয়ে নেয়া কিভাবে বন্ধ করা হবে? আওয়ামী জোট ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-কে কার্যকর করার গালভরা অনেক কথাই দেশবাসীকে শুনিয়েছে। দীর্ঘদিন নানা বাহানার পর টিসিবিকে কার্যকর করতে সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
আওয়ামী সরকারের মদদপুষ্ট একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী জনগণের পকেট কেটে টাকার পাহাড় গড়ছে। পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির আরেকটি কারণ কমিশনবাজি ও চাঁদাবাজি। আওয়ামী জোট রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ক্ষমতাসীন দলের একশ্রেণীর নেতাকর্মী কমিশনবাজি ও চাঁদাবাজিকে বিনা পুঁজির ‘ব্যবসা’ হিসাবে চালিয়ে যাচ্ছে। এসব নেতাকর্মীর রাজধানী ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশের ফুটপাতের ক্ষুদ্র দোকান, গ্রাম্য হাট-বাজারের দোকানদার থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা, কমিশন, চাঁদা আদায় ওপেন-সিক্রেট। পাবলিক ও পণ্য পরিবহনে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী-ক্যাডারদের চাঁদাবাজির উপদ্রব এক কথায় ভয়াবহ। পুলিশও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। অসাধু ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজদের দমন করা গেলে নিত্যপণ্যের মূল্য রাতারাতি অনেকটাই কমে আসবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। জনস্বার্থে সরকার কি সেটা করবে? সারাদেশে পরিবহন ভাড়া ইচ্ছামতো বাড়ানো নিয়মে পরিণত হয়েছে। সরকার সমর্থক পরিবহন মালিকরা পরিবহন মালিক সমিতিগুলো সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ বাহিনী নিয়ে দখল করে নিয়েছে। এদের কথাই যেন আইন। বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারটিও বাড়িওয়ালা নব্য জমিদারদের মর্জিনির্ভর। সরকারি বিধিবদ্ধ আইনের কোনো প্রকার তোয়াক্কাই করে না বাড়ির মালিকরা। দফায দফায় বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর অশুভ প্রবণতা রোধে আওয়ামী সরকারের কোনো প্রকার ডিজিটাল অ্যাকশন দেখা যাচ্ছে না। দেশের সাধারণ মানুষকে মূল্য বৃদ্ধির যাঁতাকলে সঁপে দিয়ে সরকার ও সরকারি সুবিধাবাদী মহল আড়চোখে দেখছে। সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি আর লুটপাটের খেসারত দিচ্ছে বিদ্যুৎ খাতসহ অন্যান্য সেবা খাত। দফায় দফায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং অন্যান্য সেবাখাতের ব্যয় বাড়িয়ে দেশের সাধারণ মানুষের পকেট কেটে নিচ্ছে আওয়ামী সরকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ বিভিন্ন খাতের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণ খুঁজে দেখলে সর্বত্রই লুটপাটের চিত্রই বেরিয়ে আসে। দেশের নিরীহ ভোক্তা সাধারণের চোখে ধুলো দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে আওয়ামী সরকার ও মহলের দুর্বৃত্ত চক্রগুলো। এই দুর্বৃত্তপনা বন্ধ না হলে মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরা যাবে না। অসাধু ব্যবসায়ী এবং আওয়ামী সরকারের ছেলে ভোলানো কানামাছি খেলা ও দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে দেশের সাধারণ ভোক্তা সমাজকেই সোচ্চার হতে হবে। দেশের সাধারণ ভোক্তাদের সরকার ও সরকারি দলের একটি বিশেষ শ্রেণী মূল্য বৃদ্ধির যাঁতাকলে ফেলে কৌশলে শোষণই করে যাচ্ছে।
দেশের সাধারণ মানুষের ওপর মূল্য বৃদ্ধির চাপ ক্রমাগত বাড়ছেই। সাধারণ মানুষের সঞ্চয় নেই। সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গানোর হারও বেড়ে গেছে। বহু পরিবারকে দৈনন্দিন খরচ মেটানোর তাগিদে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার ক্ষতি করতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির অস্বাভাবিক গতি রোধে ব্যর্থ হলে সামাজিক শৃঙ্খলা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন