দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হয়েছিল দুর্নীতিতে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জন্য, যার মাধ্যমে সমাজে ও প্রশাসনের সর্বত্র যে দুর্নীতির বিস্তার ঘটছে, তার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে। কিন্তু বাংলাদেশের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো দুর্নীতি দমন কমিশনকেও রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে স্বাধীন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও মর্যাদা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি দাঁড়াতে পারছে না। বর্তমান সরকার এই কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় একজন সাবেক আমলাকে। সম্প্রতি তার নিয়োগের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, আইনের দুর্বলতার কারণে এই প্রতিষ্ঠানটি ‘টুথলেস টাইগার’ বা দন্তহীন বাঘে পরিণত হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বিদায়ের শেষ মুহূর্তে এসে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে এমন মন্তব্য করলেন। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, আইনগত দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে বিগত সময়ে তিনি কতটা কাজ করেছেন। আর যে আইনগুলো রয়েছে তা-ই বা কতটা কার্যকর ছিল। আমরা দেখছি দুর্নীতি দমন কমিশনবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে যতটা তৎপর, ক্ষমতাসীন দলের নেতা বা মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ততটাই উদাসীন। বরং ন্যক্কারজনকভাবে তিনি দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা একাধিক মন্ত্রীকে কিন সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। বিশেষ করে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও তার ছেলেকে। একইভাবে দেশের বড় ধরনের যেসব দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে বিশেষ করে ডেসটিনি, হলমার্ক, ইউনিপেটুইউ’র জালিয়াতির মতো বড় ঘটনাগুলোর সাথে জড়িত ক্ষমতাবান নেপথ্যব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা বলব, দুর্নীতি দমন কমিশন সাহস দেখাতে পারেনি কিংবা রাজনৈতিক প্রভাবের ওপর উঠতে পারেনি।
পদ্মা সেতু দুর্নীতি নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান পুরো বিষয়টিকে লেজেগোবরে করে ফেলেছে। এখন তিনি বলছেন, বিশ্বব্যাংকের কথামতো দুর্নীতি দমন কমিশন চলতে পারে না। আমরা তার বক্তব্যের সাথে পুরোপুরি একমত। কিন্তু এই দুর্নীতি দমন কমিশন বিশ্বব্যাংকের অভিযুক্তদের একবার কিন সার্টিফিকেট দিয়েছে। আবার তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগও এনেছে। আবার কাউকে রক্ষার চেষ্টা করেছে। পদ্মা সেতু ইস্যুতে দুর্নীতি দমন কমিশন মোটেই স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। এ ধরনের ব্যর্থতার পরও তিনি আমলাতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে নিজের দায় এড়িয়ে আইনি দুর্বলতার কথা বলে নিজের ব্যর্থতা আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। এ ধরনের পরাজিত ও ক্ষমতাসীনদের প্রতি আনুগত্যশীল মানসিকতা দিয়ে আর যা-ই হোক, কোনো প্রতিষ্ঠান স্বাধীনভাবে চলতে পারে না। দুর্নীতি দমন কমিশনকে প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হলে প্রথমে দরকার সাহসী ও স্বাধীনচেতা লোক। এর সাথে অবশ্যই আইনগত দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা দরকার।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন