বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০১৩

আমাদের জাতীয় স্বার্থ ও ঐক্য


রাষ্ট্র নিজেই একটি সত্তা। এই সত্তার রয়েছে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ও শক্তি। এই অন্তর্নিহিত শক্তির উৎস তার অতীত ইতিহাস। আমাদের ইতিহাস অনেক গৌরবের। আবার অনেক ঐতিহ্যম-িত ও বেদনা-বিধুরও বটে। বিস্ময়কর এই সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় নিকট-অতীতে এখানে আর্যদের আগ্রাসন, ইংরেজদের শোষণ আর এদেশীয় মিরজাফরদের বিশ্বাসঘাতকতার মোকাবিলায় তীব্রতর লড়াই হয়েছে। প্রাণ দিয়েছে বটে মান বিকিয়ে দেয়নি। এই জাতি রক্তে মাংসে সংগ্রামী, অস্তিত্বে স্বাধীনচেতা আর মূল্যবোধ ও বিশ্বাসে এক আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করে না। কিন্তু এই চেতনা ও মূল্যেবোধের উপর আঘাত হয়েছে অসংখ্যবার। এখনো ষড়যন্ত্র চলছে অব্যাহতভাবে। কিন্তু বীরের এই জাতিকে বশ মানানো বড় কঠিনই হবে বলে মনে হয়। এই আঘাতের যাত্রা ১৬৩৪ সালে বাংলায় বাণিজ্য করার নামে বৃটিশ বেনীয়ারা এখানে এসে ইঙ্গ-হিন্দু মৈত্রী গড়ে তোলে। লক্ষ্য ছিল মুসলিম শাসনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল তৈরি করা। তারই ধারাবাহিকতায় নবাব সিরাজউদৌলার পতন, আর এদেশীয় মিরজাফর ও ঘসেটি বেগমদের অন্যের নিকট মাথা বিক্রি করে এই জনপদে যে বিভক্তির বীজ বপন করেছে তা আজ অঙ্কুরিত হয়ে বিভক্তির অনেক ঢালপালা গজিয়েছে। সেই কালো রেখা আমাদের জাতীয় ঐক্যের  মাঝে বিভেদকে আজ স্পস্টভাবে যেন  টেনে দিয়েছে। তার উদ্বোধনী পর্বই সম্প্রতি শাহবাগে সম্পন্ন হয়েছে। তার যোগানদাতা আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং এদেশে তাদের দোসররা।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বৃটিশ পরাধীনতার শিকল থেকে এই ভূখ-কে মুক্ত করতে বাংলাসহ সারা ভারতে মুসলমানরাই সশস্ত্র লড়াইয়ে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছে। স্বাধীনতার জন্য বাংলায় মীর কাশিম, ফকির মজনুশাহ থেকে শুরু করে সৈয়দ নেসার আহমেদ তিতুমীর, হাজী শরীয়তুল্লাহসহ হাজার হাজার আলেম-ওলামার শাহাদাত, ত্যাগ আর প্রায় দু’শত বছরের জিহাদের সংগ্রামী ইতিহাসের উপর গোড়াপত্তন হয়েছে এই ভূখ-ের। সেই ত্যাগের রিহার্সেল শাপলা চত্বরে আবার হয়ে গেল। একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী, মতলববাজ ইতিহাস বিকৃতকারীরা এই জনপদেও ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে ১৯৫২-র পেছনে যেতেই চান না। কারণ ১৯৪৭-এর পূর্বে মুসলমানদের গৌরবোজ্জল ইতিহাস আর হিন্দুদের তীব্র মুসলিমবিদ্বেষী অবস্থানের কথা বলতে দারুণ শরম-ই লাগে। যেমন এখনই রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী তার সম্পাদিত, বাংলাদেশ ঐতিহাসিক সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ, বইতে লিখেছেন- “গবেষকদের অনেকের মতে স্বাধীনতা যুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের অধিকাংশ ছিল সংখ্যালঘু” আজ এদেশের কতজন যুবকের জানা রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে প্রচ- আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। আমাদের নতুন প্রজন্ম এই দেশ ও মাতৃকার প্রকৃত ইতিহাস না জানলে এ দেশের মানচিত্রের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে না। একটি জাতিকে ধ্বংস করতে হলে দুটি জিনিসই তার থেকে নতুন প্রজন্মকে আড়াল করে রাখতে হবেÑ এক. সেই জাতির পূর্বসূরিদের প্রকৃত ইতিহাস। দুই. সেই দেশের সম্ভাবনার প্রকৃতরূপ।
১৯৪৭ সালের দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তি ও দু’দেশের বিভক্তি, হয়েছিল ধর্মের ভিত্তিতে। যদিও এখন ভারত এই চেতনা ইতিহাস থেকে মুছে দিতে সবচেয়ে বেশি তৎপর। অথচ আমাদের ভাষা আন্দোলনও এদেশের ধর্মীয় চেতনা সম্পন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের তত্ত্বাবধায়নে  অনুষ্ঠিত  হয়েছিল।  এ কথা সকলেরই জানা পৃথিবীর মানচিত্রে আমাদের জায়গা যত ছোটই হোক জাতি হিসেবে ইতিহাসে আমাদের স্থান ঈর্ষণীয়। এই আকাক্সক্ষার অতৃপ্ত সূচনা হয়েছিল পলাশীর প্রান্তরে আর সমাপ্তি হয়েছিল অনেক আত্মদান, ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা যে স্থান অধিকার করেছি তার মধ্যদিয়ে। লক্ষ্য ছিল জাতি হিসেবে আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য বহাল রেখে আত্মপরিচয়ে বলীয়ান হওয়া। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের ৪২ বছরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে প্রাপ্তির হিসেব কষতে গিয়ে আমরা হতবাক, বিস্মিত ও আবেগাপ্লুত।  বাংলাদেশের এই অপার সম্ভাবনার কথা স্বীকার করেছেন একবাক্যে প্রায় সকলেই। বাংলাদেশ এক সুমহান ঐতিহ্যের প্রশংসায় বিদেশীরা উচ্চকিত হয়েছেন। সতের খ্রিস্টাব্দের শেষে মির্জা নাথান বাহারিস্তান-ই গায়েবীতে মোগল সুবাদার শায়েস্তা খার নৌবহরের তারিফ করেছেনÑযে নৌবহরের অবস্থান ঢাকায়। পলাশী যুদ্ধের প্রাক্কালে ডিগবী সাহেবের অভিমত ছিল বাংলাদেশ বৃটেনের চাইতে অনেক বেশি সমৃদ্ধশালী। ৪র্থ-৬ষ্ঠ শতকে প্রায় সমগ্র বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গুপ্ত শাসনাধীনে আসে। গুপ্তদের সময় এ দেশে এক উন্নত সভ্যতা, সুশৃঙ্খল শাসনব্যবস্থা এবং জনসাধারণের মধ্যে অর্থ প্রাচুর্য ও স্বাচ্ছন্দ লক্ষ্য করা যায়। ২য় খ্রিস্টাব্দে ইতিহাসবেত্তা টলেমি বলেছেন, গঙ্গে বন্দরের নিকট ছিল সোনার খনি। এই সব জনপদের নদীগুলোতে প্রাচীনকালে বোধহয় গুঁড়ো গুঁড়ো সোনা পাওয়া যেত।” মোগল সম্রাট হুমায়ুন গৌড় অধিকার করেন (১৫৩৮ খ্রিঃ)। গৌড়ের সুরম্য প্রাসাদাবলী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে তিনি খুব মুগ্ধ হন এবং এর নাম রাখেন জান্নাতাবাদ।
তাইতো বিদেশী শকুনদের এই লোলুপতা এখনো আমাদের সোনার বাংলার প্রতি। সময় যতই এগিয়ে যাচ্ছে ভারত হাঙ্গরের মতো তার আসল চরিত্র নিয়ে হানা দিচ্ছে বাংলাদেশের উপর। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলমন্ত্র হবে গণতন্ত্র। এটি সংবিধানে খচিত হলেও দেশ পরিচালিত হয়েছে কখনও একনায়কতন্ত্র তথা বাকশাল, কখনো সামরিকজান্তা, আবার কখনো স্বৈরশাসনের অধীনে। অনেক আন্দোলনের পর ১৯৯০ সালে স্বৈরশাসনের অবসান হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হলেও জনগণের চাহিদার সত্যিকারের প্রতিফলন এখনো ঘটেনি। কারণ গণতান্ত্রিক পন্থায় এগিয়ে যাওয়া এই অপরূপ ও অবারিত সম্ভাবনার বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী দেশ ও বহিঃবিশ্বের চক্ষুশূল হয়ে উঠে। ফলে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো বিভক্তি, হিংসা, বিদ্বেষ ও নেতৃবৃন্দের ক্ষমতার লোভ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনৈতিকতার সুযোগকে পুঁজি করে ষড়যন্ত্রকারীরা এগিয়ে যেতে থাকে ধীরে ধীরে। আর দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ বহিঃশত্রুর ষড়যন্ত্রের শিকারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যতটুকু; তার থেকে অনেক পিছিয়ে গেছে এদেশের মিরজাফরের উত্তরসূরীদের কারণে। তাদের থেকে সাবধান করতে হবে আমাদের নতুন প্রজন্মকে।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে “দিন বদলের বাংলাদেশ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ” গড়ার স্বপ্ন-জাগানিয়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। মহাজোট সরকার জাতির কাছে স্বপ্নের এক উঁচু পাহাড় দাঁড় করিয়েছিল। ডিজিটাল বাংলাদেশ, সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ, দিন বদলের বাংলাদেশ ইত্যাদি স্বপ্নাতুর সেøাগান দেয়া হলেও পদ্মা সেতু, হলমার্ক, ডেসটিনি, কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ দুর্নীতির নতুন ইতিহাস কায়েম করেছে। দলীয় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, হত্যা লুটপাট, আর বিরোধীদল দমনে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে দমন-নিপীড়ন, গুম, খুন, গণহত্যা আর মানবাধিকার লংঘনে সরকার দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি। ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার পরিবর্তে চাকরি হরণ ও রানা প্লাজার মত আরো অনেক ঘটনা ঘরে ঘরে কান্নার রোল সৃষ্টি করেছে এই সরকার।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসেই দিল্লিকেন্দ্রিক পররাষ্ট্র নীতি চালু করে। কূটনৈতিক এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতের সঙ্গে একতরফা বন্ধুত্ব গড়তে গিয়ে বর্তমান সরকার ভারতনির্ভর হয়ে পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, নতুন ধরনের কূটনীতি শুরু করতে হবে। না হলে বাংলাদেশকে চরম মূল্য দিতে হবে। জনগণের দুর্দশা আরও বাড়বে। এতে একদিকে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে বন্ধুহীন হয়ে পড়ছে; অন্যদিকে এ সুযোগে ভারত তার অযৌক্তিক দাবিগুলো বাংলাদেশকে মানতে বাধ্য করছে। তারা বলছেন, বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে শুধু একটি দেশকে অবলম্বন করে কোনো দেশের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব নয়। (নয়া দিগন্ত)
সন্ত্রাস দমনের নামে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর বিদ্রোহ দমনে বাংলাদেশকে ব্যবহার করা; করিডোর, ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা; চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার; সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের অনুমতিসহ ভারত যা যা চেয়েছে তার সবকিছুতেই সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে দিল্লী সফরের সময় ভারতের বিখ্যাত দৈনিক দ্য হিন্দুর সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়, ‘সুযোগ পেয়ে ঢাকার কাছ থেকে সবকিছু লুফে নিয়েছে দিল্লী।’ অপদখলীয় ভূমি এবং ছিটমহল বিনিময়সহ সীমান্ত সমস্যার ব্যাপারে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি এবং টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে রীতিমত বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতারণা করেছে ভারত। চীনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশ এখন আর বাংলাদেশের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে। সৌদি আরবসহ মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন খারাপ। সব মিলিয়ে বর্তমান পররাষ্ট্রনীতি বাংলাদেশকে এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে।
“সীমান্তে নিরস্ত্র নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যাকা-ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফ। বর্তমান সরকারের সাড়ে ৩ বছরে ফেলানী হত্যাসহ প্রায় ২শ’ নিরীহ নিরস্ত্র বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে বিএসএফ। তাছাড়া বিদেশী কোম্পানিকে দেশের ভূখ-ে বাণিজ্যিকভাবে বেচাকেনা করতে দেয়া সংবিধানসম্মত? এই অভিযোগ আজ সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে। সাহারা গ্রুপ বাংলাদেশে এপার্টমেন্ট ব্যবসা করার জন্য সরকারের কাছে এক লাখ একর জমি চেয়েছিল। সরকার তাদেরকে প্রাথমিকভাবে ৫০০ একর জমি দেবে বলে জানা গেছে। কিন্তু কোন বিদেশী কোম্পানিকে দেশের ভূখ- বাণিজ্যিকভাবে বেচাকেনা করতে দেয়া সংবিধানসম্মত নয়। সরকারিভাবে বিদেশী কোম্পানিকে এপার্টমেন্ট ব্যবসায় ডেকে আনার প্রয়োজন কেন দেখা দিল, তাও আবার রাজউকের তত্ত্বাবধানে জমি হুকুম দখল করে দেয়াটা আমাদের বোধগম্য নয়। সরকার কোন দেশীয় বিল্ডারকে কখনও এমন উদারতা দেখিয়েছে বলে কোন দৃষ্টান্ত নেই। (নয়া দিগন্ত ২৯ মে-২০১২) বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস-সম্পদ নিজস্ব পুঁজি ও কারিগরি সহায়তায় নিজেরাই আহরণ করা। বাংলাদেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছে ইজারা। (নিউ এইজ সেপ্টে:২০০৯)
আমরা স্বাধীনতার ৪২ বছর অতিক্রম করেছি। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় যে প্রকৃত গণতন্ত্রের সুফল ভোগ করতে পারিনি। একথা সত্য আমরা এখনো অন্যের নিয়ন্ত্রিত আর কাগুজে গণতন্ত্রের মধ্যেই অবস্থান করছি। কিন্তু আমাদের দেশে প্রত্যেক শাসক শ্রেণীই তাদের নিজস্ব সুযোগ-সুবিধা ও ক্ষমতার চৌহদ্দি ঠিক রেখে গণতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করেছে। গণতান্ত্রিক শাসনে মতপ্রকাশের অবাধ অধিকার থাকবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দল গঠন মতপ্রকাশ ও সমালোচনার অধিকার স্বীকৃত থাকে। রাষ্ট্রে বিরোধী দল অবশ্যই থাকবে। বিরোধী দলের অস্তিত্বকে মেনে না নিলে তা গণতান্ত্রিক শাসন হতে পারে না। গণতন্ত্রের মূলকথা ব্যক্তির স্বাধীনতা, তার সার্বভৌম ইচ্ছার সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বীকৃতি। এই ইচ্ছাকে অস্ত্রের জোরে বা বল প্রয়োগের মাধ্যমে কেউ যদি দাবিয়ে রাখে তাহলে সেই নিপীড়ককে প্রয়োজনে বল প্রয়োগের মাধ্যমে অপসারণ করার অধিকারকে স্বীকার করাটাও গণতন্ত্র। আমার অধিকার যদি বল প্রয়োগের মাধ্যমে কেউ হরণ করে নেয় তবে তা গণতান্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করাটাকে নৈরাজ্য বলা যায় না।
তাই অনেক ত্যাগের মিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং সম্ভাবনাময় এই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন জাতীয় স্বার্থের উপলদ্ধি আর জাতীয় ঐক্যের। দেশের সকল নাগরিক সেই দায়িত্ববোধ থেকে এগিয়ে আসবেন এটাই সকলের প্রত্যাশা। সমাজের সর্ব পর্যায়ে আজ ফাটল দেখা দিয়েছে। আর আমাদের জাতীয় জীবনের অনৈক্য ও বিভক্তির মাঝে সুযোগ নিচ্ছে অনেকেই। “ডিভাইড এন্ড রুল” পলিসি কাজে লাগিয়ে এদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, খনিজ ও মানব সম্পদকে ধ্বংস ও হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো। এই জন্য দায়ী আমাদের অসৎ, নতজানু নেতৃত ¡। দিন যতই যাচ্ছে আমাদের এই সংকট আরো ঘনীভূত হচ্ছে। বর্তমানে সরকার সেক্যুলারিজম এর নামে এদেশের মানুষের হাজার বছরের  ধর্মীয় মূল্যবোধ আর ইসলামী সংস্কৃতি, রাজনীতি, তাহজিব তামাদ্দুনের বিরুদ্ধে আঘাত করে  মুসলমানদের বিশ্বাস ও চেতনার শিকড় উপড়ে ফেলছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আওয়ামী লীগ সংবিধানে যোগ করেছে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, সংবিধান থেকে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস, শিক্ষানীতির নামে ধর্মবিমুখ নতুন সেক্যুলার প্রজন্ম তৈরি, নারীনীতির নামে পাশ্চাত্য অনুকরণে আমাদের পরিবার প্রথা ভেঙ্গে দেয়া, ভয়াবহ অপসাংস্কৃতিক ছোবল, আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে প্রহসনের নাটক সাজিয়ে ইসলামী আন্দোলন ও নেতৃত্বকে নিঃশেষ করা, স্বাধীনতার পক্ষ বিপক্ষ শক্তির ধূয়া তুলে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দুর্বল করে  ভারত এদেশে তাদের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সেজন্য তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও পরামর্শে আমাদের প্রিয়মাতৃভূমি বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে ভয়াবহ অনিশ্চয়তা আর গভীর অন্ধকারের দিকে। এই জন্য সততা, দক্ষতা আর দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads