সোমবার, ৩ জুন, ২০১৩

এ এক আজব দেশ

অদ্ভুত এক উটের পিঠে চলছে দেশ। এ কথাটি অকপটে স্বীকার করেছেন স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম। বেগম জিয়ার একটি বক্তৃতার বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই কথার জন্য নাকি তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা করা যায়। আশরাফ বলেন, অন্য যেকোনো দেশে তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা হতো, কিন্তু এটা এমনই এক আজব দেশ যেখানে যা খুশি বলেই পার পাওয়া যায়। এ দেশ যদি আজব দেশ না হতো তাহলে আশরাফ যেদিন বলেছিলেন, আমি হিন্দুও না মুসলমানও না, সেদিনই তার মন্ত্রিত্ব চলে যেত। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সিঙ্গাপুর থেকে খালেদা জিয়া মানসিক রোগী হয়ে ফিরেছেন। কিন্তু সিঙ্গাপুরের কোনো মানসিক হাসপাতালের সার্টিফিকেট বা প্রেসক্রিপশন দেখাতে পারেননি। তবে জননেত্রীকে হাইকোর্ট কি বলেছিল। সেই কপি কিন্তু হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা আছে। যতদূর মনে পড়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা কোর্টের সে রায়ের বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। আজব দেশ না হলে উগ্র মস্তিষ্ক লোক নির্বাচন করতে পারেন না। অদ্ভুত দেশ বলেই দুজন বিশিষ্ট সাংবাদিক খুনের বছর পেরিয়ে গেলেও খুনি ধরা পড়ে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ৪৮ ঘণ্টা পার হয় না। আজব দেশ বলেই মুক্তিযুদ্ধের এক মহানায়ক বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে রাজাকার বলে ধমক দিয়ে তার বীর উত্তম খেতাব ছিনিয়ে নিতে চায় অজপাড়াগাঁয়ের তৃতীয় শ্রেণীতে এসএসসি আর দ্বিতীয় শ্রেণীতে মাধ্যমিক পাস করা নষ্ট যুবক। আজব দেশ বলেই কিছু রাস্তার লোক কোর্টের রায়কে অমান্য করে এক সরকার থাকতে আরেক সরকারের জন্ম দিয়ে খোদ রাজধানীতে সরকারি জায়গা দখল করে মঞ্চ বানায়। আজব দেশ বলেই বিশ্বজিৎ দাসকে শিবিরকর্মী হয়ে ছাত্রলীগের চাপাতির কোপে মরতে হয়। আজব দেশ বলেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাত্রলীগ-যুবলীগকে এ দেশের একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেন। আজব দেশ বলেই এ দেশের রাজনীতিবিদদের ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে আনা হয়। আজব দেশ বলেই স্পিকার বিচারকের বিরুদ্ধে আর বিচারক স্পিকারের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। মীমাংসা হয় না কোনো রুলেরই। সরকারদলীয় ইমারত হওয়ার কারণেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, হরতাল সমর্থক বিরোধীদলীয় কর্মীদের ঝাঁকুনিতেই ৯ তলা ভবনটি ধসে পড়েছে। এর চেয়ে আজব কথা আর কী হতে পারে?
আশরাফ সাহেবের কথাই ঠিক। এটি একটি আজব দেশ বলেই যে কেউ যা খুশি তাই বলেই পার পেয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু ছিলেন এ দেশের স্থপতি, রূপকার, স্বপ্নদ্রষ্টা; সেই বঙ্গবন্ধু পড়শিকে ভালো করেই চিনতেন। তাই তাদের সৈনিক সবাইকে মাত্র চার মাসের মাথায় বাংলাদেশছাড়া করেছিলেন। আবদার, মান-অভিমান কোনো কিছুকেই পাত্তা না দিয়ে বিশ্বমুসলিমের সবচেয়ে বড় সংগঠন ওআইসি সম্মেলনে গিয়েছিলেন শত্রুদেশ পাকিস্তানে। সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানে চেয়েছিলেন সমতা। চলচ্চিত্রের বিনিময়ে চলচ্চিত্র, সংবাদপত্রের বিনিময়ে সংবাদপত্র ছিল তার নির্দেশ। প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ সার্বভৌমত্ব ুণœকারী চুক্তিতে সই করে এসেছিলেন বলে অত্যন্ত প্রিয়জন হওয়ার পরও তাজউদ্দীনকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করেছিলেন। তার শাসনামলে ধরে ধরে এনে হিন্দুস্থানের অচেনা অখ্যাত লোককে সম্মাননা দেননি। পড়শির অপছন্দকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন। আজব দেশ হওয়ার কারণে সেই প্রাজ্ঞ নেতার দল আজ দেশ শাসন করছে তার উল্টো মেরুতে পতাকা উড়িয়ে। পড়শির আদেশে এক-এগারোর কুশীলবেরা একটি পাতানো নির্বাচন করে চলে গেছে। তাদের বিচার হয়নি। উবে যায় সংবিধান থেকে আল্লাহর নাম। কোটি টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ থাকার পর মাত্র ৪০ ঘণ্টার জন্য তার মন্ত্রিত্ব চলে যায়। আবার একটি অসুন্দর হাসি দিয়ে পদহীন মন্ত্রী হয়ে যাচ্ছেতাই আচার-আচরণ শুরু করেন। পড়শির সতর্ক নির্দেশে ওআইসি ডি-৮ সম্মেলনে যাওয়া হয়ে ওঠে না সচিবেরও। আজব দেশ বলেই এ দেশের অনেক মন্ত্রীরই কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিংয়ে গিয়ে প্রাদেশিক মন্ত্রীর সাথেই আলাপ করে খুশিতে গদ গদ হয়ে ফিরে আসতে হয়। আমাদের নদীমন্ত্রী শ্রী রমেশবাবু টিপাইমুখ বাঁধ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। ওপাড়ের বাতাস এসে কাদের মোল্লার রায়কে ওলটপালট করে দিতে চায়, আর তৈরি হয় ফরমায়েশি মঞ্চ। আজব দেশ বলেই সরকারের বসানো আদালতের রায়কে মেনে নিতে অস্বীকার করে কিছু অবাধ্য তরুণ-তরুণী। আজব দেশ বলেই সেকুলার পড়শির ২৭টি টিভি চ্যানেলে সে দেশে চাকরি করে মাত্র সাতজন মুসলমান। আর আমাদের দেশের এগারো চ্যানেলে শুধু সাংবাদিকই আছে এক শ সতের জন হিন্দু তরুণ-তরুণী। কিন্তু যত আজবই হোক, বাংলাদেশ কিন্তু টিকে থাকবে একটি আধুনিক, উদার মুসলিমপ্রধান দেশ হিসেবে। গণতন্ত্রের চাকায় পিষ্ট হয়ে যদি এসব আজবই থেঁতলে যায় তা কিন্তু আজব হবে না। হবে বাস্তব।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads