কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। স্থানীয়
নির্বাচন হিসেবে এর রাজনৈতিক প্রচার থাকার সুযোগ নেই। তবে গুরুত্ব বিবেচনায়
রাজনৈতিক দলগুলো পরোক্ষভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে নেমে পড়েছে। সবাই জানেন
প্রার্থীরা কে কোন দলের, কোন প্রার্থী কার সমর্থক। এটা ওপেন-সিক্রেট ব্যাপার।
সিটি করপোরেশনগুলোকে ক্ষমতার রাজনীতির পাটাতন মনে করা হয়। মূলত
বিভাগীয় শহরগুলোর রাজনীতি আবর্তিত হয় স্থানীয় নেতাদের নেতৃত্বে। সিটি করপোরেশনে
যিনি নেতৃত্ব দেন, তিনি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দেয়ার অধিকতর সুবিধা ভোগ করেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, গাজীপুরসহ প্রধান
প্রধান শহরগুলোর সিটি করপোরেশন শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, প্রশাসনিকভাবেও
গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারি দল হার-জিতের ঝুঁকি নিয়েই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পথে
এগিয়েছে। এর প্রধান কারণ, আপাত সুপ্ত, ভেতরে উত্তপ্ত রাজনীতির সঙ্কট আড়ালে রেখে জনগণের দৃষ্টি এ দিকে
সীমাবদ্ধ রাখা। বিরোধী দলকেও আন্দোলনের পথে জোরেশোরে অগ্রসর হওয়ার রাস্তায় একটা
সাধারণ ব্যারিকেড সৃষ্টি করা। এমনিতেই সরকার কমপক্ষে আরো দু’মাস বিরোধী দল ও জোটকে খামোশ
করে রাখার পক্ষে। সরকার ধরে নিয়েছে ক্ষমতায় থেকে জাতীয় নির্বাচন হয়তো করা যাবে
না। জাতীয় নির্বাচনে হেরে গেলে সিটি করপোরেশনে ভরাডুবি নিশ্চিত। এখন কিছু
সম্ভাবনা কাজে লাগানো সহজ ও নিরাপদ। এ কারণেই ক্ষমতার একেবারে শেষপ্রান্তে এসে
সরকারি দল গুরুত্বপূর্ণ ক’টি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পথে পা বাড়িয়েছে। এখানে সদিচ্ছার
চেয়েও রাজনৈতিক চিন্তা বেশি সক্রিয়। প্রকারান্তরে রাজনীতি নিষিদ্ধ করে সরকার যে
ভুল করেছে তার প্রভাবও সিটি করপোরেশনের ভোটে পড়বে। নগরের মানুষ রাজনৈতিক বিবেচনা
প্রাধান্য দেবে।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিবেচনায় জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত মাঠের
রাজনীতি চূড়ান্ত পরিণতির দিকে যায় না। বান-বরিষা-বাদল আর প্রতিকূল আবহাওয়াই এর
প্রধান কারণ। তবে এ সময়ে রাজনীতি একটা মেরুকরণের প্রেক্ষিত সৃষ্টি করে। এই সময়
সরকারি দল নিজেদের ভবিষ্যৎ সামনে রেখে পরিকল্পনা করে। বিরোধী দল বর্ষা শেষে
চূড়ান্ত ধাক্কা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়, যাতে নভেম্বরের মধ্যে
রাজনীতিকে তুঙ্গে তোলা সম্ভব হয়।
জোটবদ্ধতার এ সময়ে রাজনীতি এখন এককভাবে কোনো দলের নিয়ন্ত্রণে নেই।
নৈতিক শক্তি হারিয়ে ফেললেও সরকারের ক্ষমতার দাপট আছে; কিন্তু পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণের ভার অনেকের হাতে। বিরোধী দল সে তুলনায় ভালো অবস্থানে রয়েছে। এ জন্য
বিরোধী দলের কোনো কৃতিত্ব নেই। বরং বলা চলে সরকারি দলের ব্যর্থতাগুলো বিরোধী দল
কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়ে জনগণকে হতাশ করেছে। দলীয় কর্মীদেরও মানসিক শক্তি দুর্বল
হয়েছে। সরকার এখন নিজের ব্যর্থতার ভারে কাবু। তার ওপর চার দিক থেকে সঙ্কট সরকারকে
ঘিরে ধরেছে। এটাই বিরোধী দলকে বাড়তি সুবিধা দেবে।
প্রবল হামলা-মামলা, দমন-পীড়ন ছাড়াও সাধারণভাবে সরকারি দল বিরোধী দলের কোনো কর্মসূচি
বাস্তবায়ন করে দেয় না। বিরোধী দলও জনস্বার্থে সরকারি দলকে ওয়াক ওভার দেয় না।
এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। সরকার বিরোধী দলকে এতটাই কোণঠাসা করে দিয়েছে, সাড়ে চার বছরে
বিরোধী দল বারকয়েক ঝলসে উঠলেও লাগাতার বা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে
পারেনি। এ জন্য সরকারের আগ্রাসী নীতি, নিপীড়ন, রাষ্ট্রকে পুলিশি
ধারায় নিয়ে যাওয়াকে দায়ী করলেও বিরোধী দল যে শক্ত অবস্থানে থেকে কার্যকর
প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি, তা-ও অস্বীকার করা সম্ভব নয়।
ক্ষমতায় এসেই সরকার অত্যন্ত চালাকির সাথে যুদ্ধাপরাধী ইস্যুকে সামনে
নিয়ে আসে। এই কূটচালে বিরোধী দল ধরাশায়ী না হলেও বারবার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে
পড়েছে। সরকারি দল কোথাও গাছের পাতা নড়লে বিচার বানচালের ষড়যন্ত্র আবিষ্কার
করেছে ঠাণ্ডা মাথায়। বিরোধী দল সরকারের এই রাজনৈতিক এজেন্ডার মতলব বুঝেও সময়মতো
প্রতিবাদ করেনি। কার্যকর প্রতিরোধও গড়ে তোলেনি। সরকার এই ইস্যুটি খাড়া করেছে দেশী-বিদেশী
মিত্রদের পরামর্শে। রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে এর ওপর গুরুত্ব দিয়েছে অতি
মাত্রায়। রাজনৈতিক প্রতিরোধ ছাড়া সরকার যে থামবে না, সেটা বিরোধী দল
সম্ভবত আজো বোঝেনি। বিরোধী দল এটাও বুঝতে চাইছে না, সরকারি দল ক্ষমতায় বসে এই
এজেন্ডাটি বাস্তবায়ন করছে বিরোধী দলকে কাবু করার জন্য। আবার বিরোধী দলে গেলেও এই
ইস্যু কাজে লাগাবে সরকারকে নাকাল করার জন্য। এ ক্ষেত্রে সরকারের নৈতিক ও আইনি
অবস্থান অত্যন্ত ঠুনকো। তারপরও বিরোধী দলের নীতিগত অবস্থান দুর্বল। কার্যকর
বক্তব্যও যথেষ্ট যুৎসই নয়। ফলে সরকার এই অস্ত্র ব্যবহার করে সব সময় ফায়দা তুলতে
চাইবে। ইতোমধ্যে নিজেদের পায়ের তলার মাটি সরিয়ে দিলেও সরকার বিরোধী দলের
যাত্রাভঙ্গে অনেক সাফল্য পেয়েছে।
সরকার শুরু থেকেই বিরোধী দলকে ভাগ করে জোট ভেঙে রাজনীতি করতে
চেয়েছে। ‘জামায়াত-শিবির বধ’ নাটক এ কারণেই
সফলভাবে মঞ্চায়ন করা হলো। অবশ্য সরকার যেমনটি আশা করেছিল এই শক্তিটিকে সেভাবে
নিশ্চিহ্ন করে দেয়া সম্ভব হয়নি, হবেও না। তবে এই ধারার রাজনীতির কোমর ভেঙে দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারি
প্রচেষ্টায় কোনো ছাড় ছিল না। এটাও ঠিক এই নিশ্চিহ্নের রাজনীতি জনগণ গেলেনি। ফলে
ইস্যুটি বিরোধী দলের জন্য অদূরভবিষ্যতে শাপে বর হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিত সৃষ্টি
করেছে। তা ছাড়া জামায়াত-শিবিরের ‘তাণ্ডব’-এর প্রচারণা ও মিডিয়ার একচোখা
নীতি জনমনে কোনো দাগ কাটেনি। বরং বিরোধী দল ও জামায়াতের প্রতি জনগণের সিম্প্যাথি
বেড়েছে। এ সিম্প্যাথি যা না সহমর্মিতার কারণে, তার চেয়ে অনেক বেশি সরকারের
আচরণকে মেনে নিতে পারছে না বলে। সরকার দেশ পরিচালনায় সাফল্য দেখাতে পারলে জনগণ
কিছু বিষয় মেনে নিত। কার্যত সরকার কোনো ক্ষেত্রেই সাফল্য দেখাতে পারেনি।
দুর্নীতিমুক্ত থাকতে পারেনি। জাতীয় সমস্যাগুলোর সন্তোষজনক সমাধান করতেও সক্ষম
হয়নি। তাই জনগণ ধরে নিয়েছেÑ এ সরকার ভাত
দেয়ার ভাতার নয়, কিল মারার গোসাই। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুও জনমনে এই চিন্তার বাইরে কোনো
আবেদন সৃষ্টি করেনি। তবে নতুন প্রজন্মের মনে কিছু প্রশ্ন সৃষ্টি করে দিতে পেরেছে।
সরকার যত পথে হেঁটেছে, সব হোঁচট খেয়েছে। দমননীতির আশ্রয় নিয়েও সরকার দু’টি তাৎক্ষণিক লাভ গুনতে গিয়ে
দশটি পয়েন্ট হারিয়েছে। সরকার জামায়াতকে বলেছে বিএনপি ছাড়ো, মুশকিল আসান করে
দেবো। বিএনপিকে বলেছে জামায়াত ছাড়ো, আদর-সোহাগ করে আগলে রাখা পথ
ছেড়ে দেবো। এটা যে রাজনীতির পুরনো কূটচাল, তা জামায়াত-বিএনপি ভালোভাবে
বুঝলেও মাঝে মধ্যে প্রচারণার ধূম্রজাল তাদের রাজনীতিকে ধোঁয়াশা করে দিয়েছে। এরা
পাতা ফাঁদ অতিক্রম করে শক্ত অবস্থান নিতে পারেনি। এই দুর্বলতার সুযোগই সরকার বিগত
সাড়ে চার বছর কাজে লাগিয়েছে। এখনো কূটচালের রাজনীতি সক্রিয় রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত
যে দলই ফাঁদে পা দেবে তারাই আখের নষ্ট করবে। বিশ্বাস ভঙ্গের রাজনীতিও নতুন মাত্রা
পাবে।
এখন ক্ষমতা পরিবর্তনের রাজনীতি আর থেমে থাকবে না। রাজনীতি সরকারের
আঁকা ছকেও এগোবে না। বরং সরকারকেই এখন দৃশ্য-অদৃশ্য চাপ ও জনগণের কথা বিবেচনায়
নিয়ে সময় পার করতে হবে। প্রচ্ছন্ন জরুরি অবস্থার আদলে রাজনীতি নিষিদ্ধের হঠকারী
সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার ধনুকের শেষ তীরটিও বিরোধী দলের মাথা লক্ষ্য করে ছুড়ে
দিয়েছে। সেটা লক্ষ্য ভেদ করেনি। বরং বুমেরাং হয়ে তাদের কপালে এসে ঠেকেছে। তা
ছাড়া অতি উৎসাহী বামপন্থীদের ঘেরাটোপে পড়ে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুর সাথে ইসলামবিদ্বেষে
জড়িয়ে সরকার অনেক পাপের বোঝা বাড়িয়েছে। ইসলাম ফোবিয়ার কারণে সরকার নিজেদেরকে
ধর্মবিদ্বেষীদের পক্ষে নিয়ে গেছে। ইসলাম মানা না মানা নিয়ে জনগণের কোনো
মাথাব্যথা নেই; কিন্তু বাংলাদেশের মানচিত্রে ইসলামবিদ্বেষ লালন করে পার পাওয়া কঠিন।
এক সময়ের বাঙালি ও বাংলাদেশী ধারায় মেরুকরণ এখন মুসলিম পক্ষ-বিপক্ষ হিসেবে
আবির্ভূত হয়েছে। এ বিভাজনে সরকার স্পষ্টভাবে ইসলামের বিপক্ষ অবস্থানে চলে গেছে। এ
মৌলিক বিচ্যুতি আওয়ামী লীগকে নাই করে দিতে পারে।
ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসলামপন্থী দমন ইস্যুতে সরকারকে
ছাড়ও দিয়েছে; প্রশংসাও করেছে। এটা সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী নীতির একটা
জায়গায় দাঁড়িয়ে তারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নিরন্তর যুদ্ধের ভাবনা থেকে দেখেছে।
ইসলাম ফোবিয়াই তাদের তাড়া করেছে; কিন্তু এরা বাঙালি মুসলমানের
মন মেপে দেখেনি। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, আবার অসাম্প্রদায়িক, একই সাথে
ধর্মান্ধতা থেকেও মুক্ত। এই মন না মাপার খেসারতই সরকার এবার হাতে হাতে পেয়ে যাবে।
সরকার হেফাজত ইস্যুতে কী হারিয়েছে আর কী অর্জন করেছে তাও মেপে দেখতে চায়নি। এর
ফলে যে পরিণতি ডেকে এনেছে তার খেসারতও গুনতে হবে মেপে মেপে। ভারত বা অন্যরা উসকানি
দিয়েছে; কিন্তু সেই উসকানি যে সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে সেটা টেরও
পায়নি।
এখন সরকার কৌশলে জামায়াত তোষণ করলে আশ্চর্য হবে না কেউ। আবার জোট
ভাঙার জন্য কিছু ছাড় দেয়ার প্রয়োজন হলে তাও করবে। প্রশ্ন হচ্ছে, মেরুকরণের এই
সময়টিতে সরকার ফুঁসে ওঠা জনমতকে কতটা সামাল দিতে পারবে, সেটাই এখন বড়
প্রশ্ন। মেরুকরণের সময় বিবেচনায় বি. চৌধুরী সময় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না সেটা
সময়ই বলে দেবে। এখন এমন সিদ্ধান্ত আরো আসবে। এভাবেই মেরুকরণ ষোলকলায় পূর্ণ হয়ে
একটা অনিবার্য পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করবে। সরকার সেখানেও কূটচালের আশ্রয়
নিতে চাইবে, সেটাই হবে বিপর্যয় ডেকে আনার শেষ আয়োজন। এ সময় বিএনপি তার গুণগত
রাজনীতিকে স্বচ্ছ করতে না পারলে ক্ষমতা স্পর্শ করতে পারলেও জাতিকে কোনো সুফল উপহার
দিতে পারবে না। জামায়াতকে সরকার বনসাই বানাতে চায়। তা ষোলআনা না পারলেও সরকারের
অর্জন কম নয়। জামায়াতকে রাজনীতিতে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার স্বার্থে একাত্তরের একটা
খোলামেলা ব্যাখ্যায় যেতে হবে। প্রবীণ নেতাদের ব্যাপারে জনধারণার নিষ্পত্তি করতে
হবে। গতানুগতিক ক্ষমতার পক্ষপুটে লাগসই হওয়া, রাজনৈতিক এজেন্ডা ও মৌলিক
ভূমিকার ব্যাপারে নীতিগত অবস্থান বোধগম্য করতে হবে। এখন বিশ্বপরিস্থিতি থেকে কেউ
বিচ্ছিন্ন নয়। পৃথিবীজোড়া অভিজ্ঞতার ছড়াছড়ি থেকে নিজেদের আলাদা করা ঠিক হবে না।
অবস্থানগত কারণেই জাতীয় পার্টিকে কোলবালিশের মতো রাজনীতি করতে হবে।
নয়তো আদর্শিক ভাবনা থেকে এরশাদীয় ইমেজের বাইরেও একটা গুণগত রাজনীতির অবয়ব দাঁড়
করাতে হবে। স্ববিরোধী অবস্থান দলটিকে ক্ষয়িষ্ণু করে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের নিজস্ব
রাজনীতি কী এখন আর স্পষ্ট নেই। এক ধরনের ককটেল ধারণায় বিদেশী আধিপত্যবাদের ও
বামপন্থীদের প্রেসক্রিপশনের বাইরে দলটি যেতে পারছে না। এই অবস্থান দলটির প্রয়োজন
ফুরিয়ে যেতে সাহায্য করছে। বাংলাদেশে চরম বাম ও ডানের জায়গা কম। মডারেট বামদের
স্বকীয়তা বিসর্জন দিয়ে পরগাছা ধরনের রাজনীতিতে টিকে থাকতে হবে। ইসলামের পক্ষে
বিপক্ষে যে মেরুকরণ হয়ে গেছে সেই মেরুকরণে বিএনপি কিছুটা সুফল পাবে। স্বকীয়তা
হারাবার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত আওয়ামী লীগ আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিএনপি ক্ষমতার রাজনীতির সাথে পরিচিত। তাই নির্বাচিত সরকারকে পাঁচ
বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে দেয়ার একটি সংস্কৃতি সৃষ্টি করার পক্ষে। ঐক্য ছাড়া এখন
বিরোধী দল কোনো কিছু হারানোর পর্যায়ে নেই। তবে সঠিকভাবে রাজনীতি করতে না পারলে
অর্জন হবে কম। ক্ষমতার রাজনীতির একটা চেনা পথ রয়েছে। বিরোধী দল গতানুগতিকভাবে সেই
পথে হাঁটলে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনও আশা করা যায় না। আওয়ামী লীগ এবার মিত্রদের
সাথে নিয়ে ক্ষমতাচর্চা করতে এসে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং মৌল ধারা পাল্টে
দেয়ার চেষ্টা করেছে। এরা এর নাম দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তির রাজনীতি।
এখানে মুক্তিযুদ্ধকে রাজনৈতিক ব্যবহারের কদর্য ভূমিকা বেশির ভাগ জনগণকে বিগড়ে
দিয়েছে। এতে জাতিকে বিভক্ত করা ছাড়া তারা স্থায়ী কিছু অর্জন করেনি। এই মাটি ও
মানচিত্রের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য অস্বীকার করে কিছুই করা সম্ভব নয়। বিরোধী দল
এভাবে চিন্তা করতে না পারলে প্রত্যাশার জায়গাটা শূন্যই থেকে যাবে।
এ মূল্যায়ন কোনো ভালো উপসংহারের ইঙ্গিত দেয় না। যার যার অবস্থান
থেকে এখনো দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন না করলেও ক্ষমতার হাতবদল হয়ে যাবে। সেটা
কাক্সিত হবে কি না, সে প্রশ্ন তোলার অবকাশও পাওয়া যাবে না।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন