রাষ্ট্রের ভেতরে কি যে ঘটছে তা নাগরিকরা সবসময় জানতে পারছে না। সংবিধান সংশোধন কিভাবে হচ্ছে আর তার ভেতরে কি ভাষা আছে, সেটি জানার অধিকার সাধারণ মানুষের নেই। অনেক ক্ষেত্রে সবই গোপন। আবার বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সরকার দেশের পক্ষে বা বিপক্ষে কি চুক্তি সম্পাদন করছে, সেটিও সাধারণ মানুষের জানার বাইরে। অথচ বিধান ছিল যে, সংসদে তা পেশ করতে হবে ও জনগণকে জানাতে হবে। অথচ ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনা কিযে চুক্তি করে এলেন, তার বিন্দু বিসর্গ এদেশের ১৬ কোটি নাগরিক জানতে পারেনি। ভারতের সঙ্গে চুক্তির পর সরকারের মনে হলো যে, ঐ গোপন চুক্তি জাতীয় সংসদে আলোচনা করতে হবে। তখন সংবিধান সংশোধন করে তারা এক নতুন আইন করল যে, ঐ গোপন চুক্তি জাতীয় সংসদে পেশ না করলেও চলবে। শুধুমাত্র প্রেসিডেন্টকে জানালেই হবে। অথচ সংবিধানে স্পষ্ট ভাষায় লেখা আছে যে, এ রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। মালিক জানতে পারবে না রাষ্ট্র নিয়ে সরকার কি ভয়ঙ্কর খেলাই না খেলছে। এবং এটাও সত্য যে, শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে কী গোপন চুক্তি করেছেন সেটি সম্ভবত জানতেন মরহুম প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান। নতুন প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ এডভোকেট সে বিষয়টি সম্পর্কে ইতোমধ্যে অবহিত হয়েছেন কি না, বা জানতে পেরেছেন কি না সে বলা দুষ্কর। জানতে পারলেও সেটা জনগণকে জানানোর অধিকার তার নেই। জানাতে চাইলে তাকে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিতে হবে। রাষ্ট্র নিয়ে এরকমই খেলা এখন বাংলাদেশে চলছে।
জাতীয় সংসদেও এ সরকার বহুবিধ আইন পাস করেছে। সেসব আইনের বিস্তারিত আলোচনা সংসদে হয় না। “পাস” “পাস” হয়ে যায়। কিংবা স্পিকার ঘোষণা করেন যে, “হাঁ জয়যুক্ত হয়েছে”, “হাঁ জয়যুক্ত হয়েছে”, “হাঁ জয়যুক্ত হয়েছে”। ব্যাস, আইন পাস হয়ে গেল। এভাবে চলে আসছে। কেউ যদি এই বিলের ওপর ভিন্নমত দেন, সেটা তিনি দিতে পারবেন সংসদীয় কমিটিতে। যদি ওঠে, (দিতে পারবেন সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে যদি আলোচ্যসূচিতে সেটি থাকে এবং তাকে কথা বলার অনুমতি দেয়া হয়)। দলীয় টিকিটে নির্বাচিত কোনো সংসদ সদস্য দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদে যদি ভোট দেন তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। এক অদ্ভূত আইন। আমি এক বিশেষ রাজনৈতিক দলের টিকিটে নির্বাচিত হয়েছি বলে আমার আত্মপরিচয়, ব্যক্তি, মেধা, শিক্ষা সবকিছু মুহূর্তেই বিলুপ্ত হয়ে যায়। ফলে ভিন্নমত থাকলে সে সত্যের পক্ষে অবস্থান নিতে পারেন না।
এসেছে এক সন্ত্রাসবিরোধী ভয়াবহ বিল
তেমনই আমরা দেখলাম “সন্ত্রাসবিরোধী বিল” (সংশোধন বিল) পাস নিয়ে। এ আইন এমন যে, সরকার যেন ১৬ কোটি লোকের মুখের সামনে ফাঁসির দড়ি ঝুলিয়ে দিল। সংসদ সদস্যরা কমই সংসদে উপস্থিত থাকেন। বিরোধী দল এরকম একটি জনবিরোধী বিল আনায় সংসদ থেকে ওয়াকআউট করে। বাকি যারা ছিলেন তাদের কেউ কোনো পর্যায়ে এই আইনটি পড়ে দেখেছেন কি না, জানি না। যদি কোনো আওয়ামী সজ্জন এটা পড়েও থাকেন, তাহলে তার প্রতিবাদের কোনো উপায় ছিল না। তার সামনেও যেন ফাঁসির দড়ি অবিরাম ঝুলতে আছে। ফলে ‘হাঁ কে জয়যুক্ত করা ছাড়া তার সামনে আর কোনো পথ থাকে না। যদি সুস্থ হয়ে ওঠে আরো কিছুদিন জীবিত থাকি তাহলে আমি এরকম সংসদের সদস্য হবার জন্য কিছুতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না।
আমি করি বা না করি জাতীয় সংসদ থাকলে এ সংসদের নির্বাচনও হবে কখনো সুষ্ঠু, কখনো পাতানো, কখনো আঁতাতের, কখনোবা ক্ষমতা হালাল করার। ১৯৫৯ সাল থেকে আমিতো অবিরাম ধারাবাহিকভাবে ৪৫ বছর ধরে বাংলাদেশে এই একই ধারা লক্ষ্য করে আসছি। তৃতীয় বিশ্বেও এমন ঘটনা ঘটে যে, গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতার পট পরিবর্তন কোনো দেশের জনগণ দশকের পর দশক দেখতে পায় না। যেমন বিগত ৬৬ বছরে পাকিস্তানে এই প্রথম তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার হাত বদল হলো। পাকিস্তানিদের জীবনে এটি একটি স্মরণীয় ঘটনা। তারা যদি গণতন্ত্র চর্চার এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে না পারেন তাহলে আবারো ভূতের পায়ের মতো তাদের পেছন দিকে যেতে হবে। আমরা আশা করতে চাই যে, পাকিস্তানে গণতন্ত্রের এই ধারাবাহিকতা অটুট থাকুক।
কিন্তু আমরা নিজেরাই অবিরাম নিজেদের লাঞ্ছিত করছি। ১৯৯১ সাল থেকে গণতান্ত্রিকভাবে সরকার পরিবর্তনে যে ধারাবাহিকতা বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল তা চলছিল ২০০৬ সাল পর্যন্ত। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হাসিনার আহ্বানে জেনারেল মঈন এর নেতৃত্বে এক কিম্ভুত সরকার দু’বছরের জন্য সংবিধান লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল। শেখ হাসিনা একবারে গদ গদ হয়ে বলেছিলেন যে, মঈন-ফখরের ঐ সরকার তাদের আন্দোলনের ফসল। তারা বিএনপিকে এক হাত নিক তাতে সংবিধান দেখার কোনো দরকার নেই। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মঈন-ফখর সরকারের সকল কর্মকা-ের বৈধতা দেয়া হবে। তিনি কথা যেমন বলেছিলেন। কথা রেখেছেনও।
হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার গল্প
কিন্তু ব্যাপরটা কেমন দেখা যায়, সে কারণে এক আজীব গপ্প তিনি সাজিয়েছিলেন। সে গপ্পটা হলো মঈন-ফখরের সরকার তার শরীরে আর্সেনিক বিষ প্রয়োগ করে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। এ নিয়ে উপদেষ্টা ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের হোসেন, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী প্রমুখ আওয়ামী লীগ নেতা হৈ হৈ, রৈ রৈ রব তুলে ফেলল। আমরা সাধারণ নাগরিকরা কেবল বিস্মায়াভিভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ঐসব বাণী শুনে কর্ণ ধন্য করেছি। এসব কিছুই যে, একবারে পাতানো তার প্রমাণ হলো ঐ তত্ত্বাবধায়কের বাতাবরণে সামরিক সরকারের একটি লোকের বিরুদ্ধেও শেখ হাসিনা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। বরং মঈন উদ্দিন, ফখরুদ্দিনকে নির্বিঘেœ দেশ ছাড়তে সাহায্য করেছেন। তাকে হত্যার চেষ্টাকারীদের অন্যতম জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে এখনো স্বসম্মানে অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূত নিয়োজিত রেখেছেন। গলায় পুঁতির মালা পরা জেনারেল মতিন বাংলাদেশেই ব্যবসা-বাণিজ্য করে দেশ-বিদেশ ঘুরছেন। তাহলে শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগটা কি বানোয়াট বলে প্রতীয়মান হয় না?
আমাদের প্রসঙ্গ সম্পূর্ণরূপে এখানে নয়। প্রসঙ্গ সন্ত্রাসবিরোধী সংশোধন বিল পাস। সে এক ভয়াবহ গণবিরোধী, তারুণ্যবিরোধী, প্রযুক্তিবিরোধী বিল। এদেশের প্রবীণ লোকেরা খুব বেশি ফেসবুক নিয়ে বসে থাকে না। তাদের আরো অনেক কাজ আছে। কিংবা তারা নির্বিঘœ অবসর জীবনযাপন করেন। ঐ বিলে যা বলা হয়েছে, তা সাংঘাতিক। তাতে ফেসবুক, স্কাইপ, টুইটার বা অন্য কোনভাবে ইন্টারনেটে ব্যবহৃত আলোচনা, কথাবার্তা, স্থির বা ভিডিওচিত্র সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করা যাবে। কেউ বিদেশে অপরাধ করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিলে তার বিচার এদেশেই করা যাবে। কারো বিরুদ্ধে দেশে বা বিদেশে আল-কায়েদা বা জঙ্গিবাদের সঙ্গে কোন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে বিচারের আওতায় আনা যাবে।
বিলটি পাসের প্রতিবাদে বিরোধী দল জাতীয় সংসদ থেকে ওয়াক আউট করে। উল্লেখ্য, অনেকদিন পরে এই সময় বিরোধী দল জাতীয় সংসদে হাজির হয়েছে। বিএনপির সংসদ সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, “সন্ত্রাস দমনে নয় বিরোধী দলকে দমনে এই নিকৃষ্ট আইন করা হচ্ছে। এটি ইতিহাসে কালো আইন বলে চিহ্নিত হবে। এ আইনে পুলিশের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে এতে আইনের অপব্যবহার হবে। আমরা এর প্রতিবাদে ওয়াক আউট করছি”। সন্ত্রাস দমন আইন সরকার প্রথম পাস করে ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। আইনটি পাসের পর বলা হয়, এটি যুগোপযোগী নয়। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের ধরনও দ্রুত বদলে যেতে থাকে। এ কারণে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থা এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ (এপিজি) এবং ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) মানদ- অনুসরণ করতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ প্রেক্ষিতে গত বছর আইনটি আরেক দফা সংশোধন করা হয়। কিন্তু এর পরও আরো কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আন্তর্জাতিক মহল থেকে অনুরোধ আসে। সেসব অনুরোধ যুক্ত করতেই সরকার আরেকটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিলটি পাসের জন্য উত্থাপন করলে তা কণ্ঠ ভোটে পাস হয়। বিলের উপর দেয়া বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের সংশোধনী প্রস্তাব, জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব সরকারি দলের কণ্ঠ ভোটে নাকচ হয়ে যায়। সাধারণত সরকারি দল এসব বিল কয়েক মিনিটে পাস করিয়ে নেয়। কিন্তু সেদিন বিরোধী দল সংসদে উপস্থিত থাকায় বিলটি পাস হতে ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় লাগে।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, কোনো সন্ত্রাসী ব্যক্তি বা সংগঠন এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকা- করলে সাক্ষ্য বা আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন এ সংক্রান্ত তথ্যগুলো প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে। তিনি জানান, আল-কায়েদার সম্পদ বাজেয়াপ্ত, অস্ত্র বিক্রি, ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ও জঙ্গিবাদে অর্থায়নে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দেয়া দুটি প্রস্তাবও আইনে পরিণত হলো।
এ আইনের দুই ধারা অনুসারে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ম্যানুয়াল/ইলেক্ট্রিক্যাল/ডিজিটাল কিংবা যেভাবেই লেনদেন করা হোক না কেন তা এ আইনের আওতায় আসবে। অর্থের উৎস দেশ-বিদেশের যেকোন স্থান থেকে হতে পারে। শুধু যদি মনে হয় সন্ত্রাসী কর্মকা-ের উদ্দেশ্যে টাকা পাচার করা হচ্ছে তাহলে তা এই আইনের আওতায় চলে আসবে। এক্ষেত্রে নগদ টাকা পাঠানোর বিষয়টি যে প্রমাণিত হতে হবে তা নয়। চেক, মানি অর্ডার, পে অর্ডার, ডিডি, টিটি, ক্রেডিট কার্ড এমনকি ই-মেইল বার্তায় প্রমাণ পাওয়া গেলে তা এ আইনের আওতায় অর্থ পাচারের অভিযোগে সাক্ষ্য হিসেবে আমলে নেয়া হবে। এছাড়া সন্ধেহজনক যেকোন লেনদেন এই আইনের আওতায় আসবে।
পিতাগণ, সন্তানকে টাকা পাঠাতে সাবধান
আইনের ২১ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সন্ত্রাসী ব্যক্তি, সত্তা, বা সংগঠনের ফেসবুক, স্কাইপ, টুইটার বা ইন্টারনেটের যেকোন মাধ্যমের অপরাধ সংশ্লিষ্ঠ আলাপ-আলোচনা ও কথাবার্তা, অথবা অপরাধ সংশ্লিষ্ঠ স্থির বা ভিডিওচিত্র অপরাধের আলামত হিসেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আদালতে উপস্থাপন করতে পারবে। এ বিষয়ে সাক্ষ্য আইনে যাই থাকুক না কেন মামলার স্বার্থে তা আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, প্রচলিত সাক্ষ্য আইনে এ ধরনের আলামত আদালতে গ্রহণযোগ্য নয়। তাহলে কি দাঁড়াল? আমার ছেলে দূরের কোন শহরে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। তার দাড়ি আছে। সে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে। টুপিও পরে। আমি যদি তাকে যেকোন মাধ্যমে টাকা পাঠাই তাহলে, আমি ও আমার সন্তান সন্ত্রাসী কর্মকা-ের দায়ে অভিযুক্ত হবো? এই আইন বলে হবো।
প্রচলিত আইনের ৪০ ধারায় বলা হয়েছে, “এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে অবহিত করে মামলা করে তদন্ত কাজ শুরু করতে পারবেন। এই আইন অনুযায়ী কাউকে অপরাধী চিহ্নিত করে বিচার শুরু করতে পুলিশই যথেষ্ট, কারো কোনো অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংবিধান ও মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী। তাদের মতে এ আইনের অপপ্রয়োগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এবং এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হবে। আইনটি সংশোধনের কথা ভাবা হচ্ছিল বিগত দুই বছর ধরে। কিন্তু ৩ জুন ২০১৩তে সন্ত্রাসবিরোধী বিলটি সংসদে উত্থাপন করা হলো। আর তড়িঘড়ি করে মাত্র আট দিনের মাথায় বিলটি পাস করিয়ে নেয়া হয়। আইন ও শালিস কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেছেন, আন্তঃরাষ্ট্রীয় যেসব চুক্তি আছে সেগুলোর উদ্দেশ্য ছিল দেশের সীমানার বাইরে বসে কেউ যেন নিজ দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে না পারে। এর জন্য নতুন আইনের প্রয়োজন ছিল না।
বাচ্চালোক হুঁশিয়ার
এখানে আরও একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য তা হলো সরকার বিশ্বে যে ডিজিটাল যুগের সূচনা হয়েছে, তা থেকে তরুণ সমাজকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। ফেসবুক, টুইটার, স্কাইপির মাধ্যমে তরুণরাই দিন-রাত নানা ধরনের বিষয় পোস্ট করে থাকে। এই আইনের ফলে তাতে যবানিকাপাত ঘটবে। তাদের বারোটা বাজল। সামাজিক যোগাযোগের যেসব মাধ্যম তারা ব্যবহার করতো সেগুলো এখন থামাতে হবে। কারণ কি করিলে কি হবে সেকথা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। এক্ষেত্রে সংবিধানে ব্যক্তির যে গোপনীয়তার অধিকার সেটিও কেড়ে নেয়া হয়েছে। একথা বলেছেন আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক।
আর থলের বিড়াল সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয়ে পড়ল গত ১৪ জুন ২০১৩ তে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায়। পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ কালো তালিকাভুক্তি এড়ানোর জন্য তড়িঘড়ি করে বিলটি পাস করেছে। যেন বিশ্বের সংশ্লিষ্ট দেশগুলো মনে করে যে, বাংলাদেশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বযুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। যারা এ কথা ভাববে সেসব দেশেও ফেসবুক, টুইটার, স্কাইপি কোনটিই নিষিদ্ধ নয়। যারা আরো জানতে চান তারা আইনটি পড়ে দেখুন। সরকার এদেশের প্রতিটি নাগরিকের গলা টিপে ধরার উদ্যোগ নিয়েছে। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাই সাবধান! হুঁশিয়ার
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন