বৃহস্পতিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৩

দেশজুড়ে ভূমিদস্যুরা বেপরোয়া



বর্তমান আওয়ামী সরকারের শীর্ষ থেকে শুরু করে সর্বত্রই পৃথিবীর নজিরবিহীন অনিয়ম, অব্যবস্থা, অযোগ্যতা, অদক্ষতা, অসততা, বিশৃংখলা, চুরি, ডাকাতি, সশস্ত্র সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, খুন, গুম, কমিশন ও নিয়োগ বাণিজ্য, লাগামহীন ঘুষ-দুর্নীতি, লুটপাট, প্রতারণা, জালিয়াতি ও জবরদখলের অপরাধমূলক ঘটনা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী সরকারের মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই ক্ষমতাসীন দলের সবাই যেন বেপরোয়া হয়ে জবরদখলে নেমে পড়েছে সরকারি অফিস-আদালত থেকে  শুরু করে ব্যাংক-বীমা, বড় বড় শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ গ্রামীণ জনপদের স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতেও একই চিত্র। এই জালিয়াত জবরদখলকারী অপশক্তির হাত থেকে বাড়ী, জমি, খাল, জলাশয় কিছুই রেহাই পায়নি, আজো পাচ্ছে না। রাজধানী ঢাকা মহানগর ও তার চারপাশের বিশাল এলাকার বেশিরভাগ বাড়ী, মার্কেট, জমি, খাল ও মুক্ত জলাশয়ে অনেক দিন ধরেই সরকারদলীয় প্রভাবশালী ও একশ্রেণীর জালিয়াত আবাসন ব্যবসায়ীদের জবরদখল প্রতিষ্ঠিত হতে দেখা যাচ্ছে। বিচ্ছিন্ন বাড়ী ও জমির অসহায় মালিকরা যেমন এই প্রতারক, জালিয়াত, জবরদখলকারী ও ভূমি দস্যুদের আগ্রাসী থাবার সামনে টিকতে পারছেন না, ঠিক তেমনি সরকার, সরকারি প্রশাসন, সরকারের আজ্ঞাবহ বলে সুপরিচিত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), আইনশৃংখলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরাও জনস্বার্থে এই গণদুশমনদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। যার ফলে এখন সরকারি পতিত জমি, সংরক্ষিত বনভূমি, পুকুর, দীঘি, মৎস্য অভয়াশ্রম, হাওর-বাঁওর, খেলার মাঠ, পার্ক, খাল, নদী ও জলাশয় সবই হারিয়ে যেতে বসেছে। এই একই কারণে সারাদেশের ফসলি জমির পরিমাণও কমতে শুরু করেছে। রাজধানী ঢাকা মহানগরী কিংবা দেশের বড় বড় নগরীর অবস্থার সাথে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা শহর, বন্দর, গঞ্জ, হাটবাজার ও আশপাশ এলাকার গ্রামের পার্থক্য কমই। সারাদেশের গ্রামাঞ্চলেও এখন আওয়ামী জালিয়াতচক্র দরিদ্র অসহায় মানুষের বসতবাড়ী ও জমি জবরদখল করে নিচ্ছে। দেশজুড়ে দাপটের সাথে চলছে আওয়ামী ভূমিদস্যুদের বেপরোয়া তান্ডব। আওয়ামী সরকারের চার বছরে দৈনিক সংগ্রামসহ প্রায় সব পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকেও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আওয়ামী জালিয়াত ও ভূমিদস্যুদের অপতৎপরতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের হাওর এলাকার সরকারি জমিতে গড়ে উঠা কবরস্থানও ক্ষমতাসীন দলের দাপট দেখিয়ে দখল করে নিয়েছে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সেখানকার মূল্যবান গাছগাছালি কেটে এখন চাষাবাদ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েও কোনো সুফল পায়নি। ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ওয়াকফ এস্টেটের শতকোটি টাকার জমি আত্মসাৎ ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো আগ্রহই দেখা যায়নি। ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নের তিন ফসলি জমিতে আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মাণের পদক্ষেপ নিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। অভিযোগ উঠেছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই পতিত জমি বাদ দিয়ে ফসলি উর্বর জমি বিনষ্ট করে আশ্রয়ন প্রকল্পের নামে ফায়দা লুটতে মেতে উঠেছে সরকারদলীয় গ্রামীণ প্রভাবশালীরা। এই জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে এলাকার কৃষক নারী-পুরুষদের সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়ানোর খবর পাওয়া গেছে। খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি বাজারে কোটি কোটি টাকার সরকারি জমি স্থানীয় আওয়ামী ভূমিদস্যুরা জবরদখল করে নিচ্ছে। ভূমিদস্যুরা প্রথমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড টানিয়ে দখল নিয়ে পরে ব্যক্তিমালিকানায় ঘরবাড়ী তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঢাকা মহানগরীর আদাবর থানা এলাকার আওয়ামী নামধারী কুখ্যাত ভূমিদস্যুরা জালদলিল বানিয়ে শতাধিক প্লট ও বাড়ী সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে জবরদখল করে নিয়েছে। ভুক্তভোগিরা থানা পুলিশের কাছে বারবার ধরণা দিয়েও কোনো সহায়তা পায়নি বলে জানা গেছে। উত্তর বাড্ডার আফাজউদ্দিনের পৈত্রিক এক বিঘা দেয়ালঘেরা জমি জালিয়াত চক্র  দখল করে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার চরজাজিরা মৌজাস্থিত আবাদি জমি আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট করে জবরদখল করে নিচ্ছে। ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া পৌরসভার পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমি স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র সরকারি দলের দাপট দেখিয়ে দখল করতে গেলে আইনের আশ্রয় নিয়েও জীবনের হুমকির মুখে পড়েছেন বৃদ্ধ আবু তাহের। গত চার বছর ধরেই আওয়ামী সন্ত্রাসী, জালিয়াত ও ভূমি জবরদখলকারীরা এমন অপরাধমূলক ঘটনা রাজধানী ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় নির্দ্বিধায় ঘটিয়ে চললেও সরকার, সরকারি প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, পুলিশ-র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বশীলরা এর দায় এড়িয়ে যেতে পারেন কী?
আওয়ামী সন্ত্রাসী, জালিয়াত ও ভূমিদস্যুদের অপকর্মে এভাবে দেশজুড়ে জমি, প্লট, বাড়ী, পার্ক, খেলার মাঠ, কবরস্থান, পুকুর, দীঘি, জলাশয়, খাল, নদী সবই বেদখল হয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এছাড়াও এখানে সেখানে রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ী তৈরি এবং বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডেও নিয়মিত ফসলি জমির পরিমাণ কমে আসছে। কুখ্যাত ভূমিদস্যুদের মতো সরকারও কীভাবে দেশ ও জনবিরোধী কাজে লিপ্ত থাকতে পারে সেটাই আমাদের বুঝে আসে না। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে যেখানে ফসলি জমি রক্ষা করা খুবই জরুরি, সেখানে এর বিপরীত কর্মকান্ড অবিলম্বে বন্ধ করা প্রয়োজন। এর অন্যথায় রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশের খাল-নদী-জলাশয়ের মতো করুণ দশা দেখতে হবে কৃষিক্ষেত্রেও। নিয়মিত দখল ও দূষণের শিকার হয়ে অনেক খাল যেমন চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে, তেমনি বাদবাকি খাল-নদীগুলো নোংরা-বিষাক্ত-দুর্গন্ধময় পানিতে জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠেছে। অথচ সারাদেশের ফসলি জমি, আর জলাশয় ধ্বংস হতে থাকলে কেবল খাদ্য নিরাপত্তাই বাধাগ্রস্ত হবে না, নিরাপদ পরিবেশও হারিয়ে যাবে। কিন্তু আওয়ামী সরকার গত চার বছরের মধ্যে পরিকল্পিত কৃষি, ভূমি ব্যবহার, জলাশয় সংরক্ষণ এমনকি পরিবেশ উন্নয়নের নামে মিথ্যা গলাবাজি আর হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট ছাড়া কাজের মতো কাজ কিছুই করেনি। সর্বত্রই হীন স্বার্থ উদ্ধারে রাজনীতির নামে আওয়ামী-বাকশালী রামরাজত্ব গড়ে তুলতেই সরকার তার একমাত্র সাফল্য দেখাতে তৎপর, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় আছে কী?

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads