মঙ্গলবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৩

ক্ষমতাসীনদের নামে আর কতকাল চলবে লঙ্কাকান্ড



মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান : চরাঞ্চলের নিরীহ মানুষকে জিম্মি করে অবাধে চলছে ত্রাসের রাজত্ব। মুজিব বন্দনার মাধ্যমে চিহ্নিত চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী ও গডফাদাররা সাধারণ মানুষকে ঠকাচ্ছে। পাহাড়সম অপরাধ করেও থাকছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। আধুনিকতার এ যুগে চরাঞ্চলের মানুষের মৌলিক অধিকার, নাগরিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রকাশ্যে ঘটলেও এর প্রতিকার নেই। ফলে সন্ত্রাসীরা বেপরোয়াভাবে নিজস্ব আইন ও শাসন পরিচালনা করছে। আর এসবই তারা করছে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের নামে। এসবকে তারা তাদের অবৈধ কর্মকান্ডের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। আমরা নিজামুদ্দিন আউলিয়ার কথা জানতাম। যিনি নাকি একটি খুনের বদলে অতীতের সব পাপ মুক্ত হয়ে পরে আউলিয়া হন। আর বাংলা নিউজের সুবাদে এবার নিজাম ডাকাতের পরিচয় পেলাম। যিনি রক্তে-মাংসে ষোলো আনা আওয়ামী লীগার। শয়নে-স্বপনে যে শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের বন্দনা করতে যারপরনাই সচেষ্ট। নিজাম ডাকাত আইনকে নিজের হাতে তুলে নিয়ে সেখানে লঙ্কাকান্ড করত। সব মিলিয়ে সেখানের অবস্থা অনেকটা আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও ভোলার চরাঞ্চলের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এক জনপদ। প্রকৃতির খেয়ালের ওপর ভর করে চলে এখানের মানুষের জীবন-জীবিকা। তার ওপর জলদস্যুদের অতর্কিত হানা এখানকার মানুষকে রাখে চরম নিরাপত্তাহীনতায়। এর পুরোটাই সন্ত্রাসের উপকূল। এ ভয়াল জনপদ ও বিস্তীর্ণ জনপদে এক পক্ষকাল চষে বেড়িয়েছেন বাংলা নিউজের সিনিয়র করেসপনডেন্ট রহান মাসুদ। তার তুলে আনা খবরের কিঞ্চিত তুলে ধরা হলো। সনদ্বীপ-হাতিয়া এলাকার কুখ্যাত জলদস্যু সম্রাট নিজাম ডাকাত যে দুটি মোবাইল ফোনসেট ব্যবহার করে, তার প্রতিটিতেই ওয়েলকাম টিউন হিসেবে সে ব্যবহার করছে বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। কেবল নিজাম ডাকাত নয়, বাহার কেরানি, কামাল উদ্দিন, করিম ফিটার, আব্রাহিম ব্যাপারী, নূরু মেম্বারসহ প্রায় সবার মোবাইলের ওয়েলকাম টিউনই সেই ৭ই মার্চের ভাষণ।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চর বাসারের নাম করা হয়েছে এক সময়ের জলদস্যু সম্রাট বাসার মাঝির নামে। ক্যারিং চরে বাসার মাঝির মেয়ের নামে আছে শাবনাজ বাজার। এই চরে শেখ মুজিবের নামে আছে মুজিব বাজার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে আছে হাসিনা বাজার। প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানার নামে আছে রেহানা বাজার। শেখ রাসেলের নামে রাসেল বাজার, শেখ কামালের নামে কামাল বাজার, শেখ জামালের নামে জামাল বাজার। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে আছে জয় বাজার ইত্যাদি। আছে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ফখরুদ্দীনের নামে ফখরুদ্দীন বাজার। ক্যারিংচরে প্রয়াত বাসার মাঝির সদর দফতর মুজিব বাজারে। নিজাম ডাকাতের সেকেন্ড ইন কমান্ড বাহার কেরানি এবং মুজিব বাজার সেক্টরের কমান্ডার করিম ফিটার বাংলা নিউজকে বলেন, ‘আমরা এ এলাকাকে একটি স্বতন্ত্র উপজেলা হিসেবে ঘোষণার জন্য সরকারের কাছে দাবি করছি। নতুন এ উপজেলার নাম হবে মুজিবনগর উপজেলা'। নিজাম ডাকাত এলাকার নামকরণ সব আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে রাখা সম্পর্কে বাংলা নিউজকে বলেন, ‘আমরা সবাই আওয়ামী লীগ করি। বাসার মাঝি বেঁচে থাকতেই তিনি এসব নামকরণ করে গেছেন। এ কারণে চারদলীয় শাসন আমলে এমপি আজিম সাব আমাদের অনেক অত্যাচার করেছেন।'
বাজারগুলোতে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি বাজারেই নিজাম বাহিনীর একটি করে ‘পানিশমেন্ট সেন্টার' (শাস্তিকেন্দ্র) আছে। কেন্দ্রগুলো আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর  পোস্টারে সাজানো। এসব  সেন্টারকে তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের অফিস হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। তবে কোথাও এসব সংগঠনের সাইনবোর্ড নেই। প্রতিটি অফিসকে কেন্দ্র করে আছে দস্যুদের দুটি করে কমিটি। এলাকার বাহিনী কমান্ডারই এসব অফিসের সভাপতি এবং তার সহকারী সাধারণ সম্পাদক। প্রতিটি অফিসেই আছে বাঁশে লাগানো মাইক। ভূমিহীনদের ধরে এনে এসব মাইকে বিচার কার্যক্রম প্রচার করা হয়। এদেরই কয়েকজন গোপনে বাংলা নিউজকে জানান, মাসিক চাঁদা, মওসুমি ধান ও বার্ষিক টাকা না দিলে ভূমিহীনদের বিচারের সম্মুখীন করা হয়। এ ছাড়া সাংবাদিক বা প্রশাসন কিংবা পুলিশের সঙ্গে কথা বললে নিজাম বাহিনীর ইউনিট কমান্ডার তার বাহিনীর মাধ্যমে ধরে নিয়ে আসে অভিযুক্ত ভূমিহীনদের। এরপর ওই এলাকার সবাইকে মাইকের মাধ্যমে নির্দেশ দেয়া হয় পানিশমেন্ট সেন্টারে আসার জন্য। সবার সামনে বিচার করেন কমান্ডার। শাস্তি হিসেবে লাঠি দিয়ে অমানবিকভাবে পেটানো হয় অভিযুক্তকে। এ কার্যক্রম মাইকের মাধ্যমে শোনানো হয় বাড়িতে থাকা নারীদেরও। মৃত বাসার মাঝি চালু করে গেছে এ বিচার প্রক্রিয়া। যেটা এখনো বজায় রেখেছে তার যোগ্য সাগরেদ নিজাম ডাকাত। আর সব জোর-জুলুম ও অত্যাচার-নির্যাতন নীরবে হজম করতে বাধ্য হচ্ছে নিরীহ চরবাসী। সেখানে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ কথাই আইন। দেশের প্রচলিত আইন সেখানে সম্পূর্ণ উপেক্ষিত।
উপজেলা কর্মকর্তা মাহিদুর রহমান বলেন, ‘চর জেগে ওঠার আগেই জলদস্যুরা এসব চরের দখল নিয়ে নেয়। আমি শুনেছি, এরা ইউনিটভিত্তিক জমি ভাগ করে ভূমিহীনদের জায়গা দেয়ার নামে তাদের কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা আদায় করে। এরা জমি বরাদ্দের সময় চালাকি করে এলাকার নাম রাখে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদের নামে। প্রতিটি এলাকায় বাজার, পুলিশ ফাঁড়ি, স্কুলের জন্য জায়গা রাখে।' ডাকাতদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে কেউ প্রশাসনের কাছে কোনো অভিযোগ করে না। হাতিয়া থেকে একেকটি চরে যেতে ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার মেঘনা পাড়ি দিতে হয়। তা ছাড়া চরের কেউই কারো বিরুদ্ধে মুখ খোলে না অত্যাচরের ভয়ে। প্রশাসন চলে এলেই তাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে নতুন একজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সেখানে বাস করতে দেয়া হয়। সে কথা না শুনলে তাকেও উচ্ছেদ করে অন্য কাউকে...। এভাবেই চলে চরের জীবন।'
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় প্রশাসনের পক্ষেও চরবাসীকে সাহায্য ও নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয়।' চরে শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করে গেছেন মৃত বাসার মাঝি। নিজাম বাহিনীর প্রধান নিজাম এ বিষয়ে জানায়, ‘আমাদের মুরুববী এই চরে ৪৫টি স্কুল, ৪৫টি মাদ্রাসা, ৪৫টি মসজিদ, ৪৫টি পার্টি অফিস ও ১টি মন্দির প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তিনি জীবিত থাকার সময় নিজ খরচে এসব প্রতিষ্ঠান চালাতেন। এখন আমি এগুলো দেখাশোনা করি।' নিজাম বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড বাহার কেরানি জানায়, ‘আমরা চরের ভূমিহীনরা এসব প্রতিষ্ঠান চালাই। এ জন্য পরিবারপ্রতি মাসে ৫০ থেকে ১০০ টাকা নেয়া হয়। চৌধুরী সাব (নিজাম) আমাদের প্রতিটি মাদরাসায় ৪টি করে মাইক, একটি করে সোলার প্যানেল দিয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিটি স্কুলের দু'জন করে মাস্টারের বেতন ৫ হাজার করে এবং মাদরাসায় একজন বাংলা মৌলানা এবং একজন আরবি মৌলানার বেতন দিতে হয় ৭ হাজার করে।' এসব মাদরাসা ও মসজিদে প্রতিদিন সন্ধ্যায় নিজাম ডাকাতের জন্য মিলাদ ও দোয়া পাঠ করা হয় বলে জানালেন মুজিব বাজার মাদরাসার ছাত্র আল-আমিন। ডাকাতের জন্য দোয়া করেন কেন, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘নিজাম চৌধুরী আমাদের মাঝে মাঝে মহিষ জবাই করে খাওয়ায়, তা ছাড়া আমাদের হুজুর মিলাদ পড়ায়, আমরা পড়ি।' এসব প্রতিষ্ঠান চালানোর পেছনে মূল কাজ চাঁদাবাজি। চাঁদাবাজির জন্যই আদতে প্রতিষ্ঠানগুলোর সৃষ্টি। সরল প্রাণ এ শিশুরা তো অত সব বুঝে না, জানে না। দু'মুঠো খাবার পায়, তাতেই তুষ্ট। এসব খারাপ লোক, মানবতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের সম্পর্কে তারা তো অজ্ঞ। যখন তারা এসব বুঝবে, তখন আর করার কিছুই থাকবে না। নীরবে সহ্য করা ছাড়া।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহিদুর রহমান বলেন, ‘চরে আমাদের দুটি প্রশাসনিক কমিটি আছে। এদের মাধ্যমে এসব স্কুলে সরকারের তরফ থেকে বই সরবরাহ করা হয়।' তিনি বলেন, ‘এ বছর হাতিয়া উপজেলায় ১৮টি নলকূপ এসেছে। এ দিয়ে কয়জনের কাজ হবে!' চরে সংবিধান লঙ্ঘন হচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন হাতিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এখানে সরকারের দুটি প্রশাসনিক কমিটি আছে, তা দিয়েই কাজ চলছে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে এখানে নির্বাচন হচ্ছে না।' তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের আইন অনুযায়ী এত দিন নির্বাচন না দিয়ে প্রশাসক দিয়ে স্থানীয় সরকার চালানো অসাংবিধানিক।' এ বিষয়ে উপজেলা কর্মকর্তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত নোট পাঠিয়েছেন বলেও জানান। কিন্তু এভাবে আইন লঙ্ঘন করে অবাধে চলছে এখানের সব কর্মকান্ড। এগুলো দেখার যেন কেউ নেই। ডিজিটাল যুগে যেখানে মুহূর্তের মধ্যে সব কিছু জানা যায়, সেখানে এ চরাঞ্চলের মানুষ নিয়তির ওপর নির্ভর করে জিন্দা লাশের মতো বেঁচে আছে। তার সব দন্ড-মুন্ডের কর্তা ওই ডাকাতরা। তাদের হাতে জিম্মি সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। মুখ খুলে এখন কেউ মৌলিক অধিকার পরিপন্থী কাজের প্রতিবাদ করার সাহস পান না। তারা শুধু নীরবে-নিঃশব্দে উপরওয়ালার কাছে আরাধনা করেন।
জানা গেছে, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এতটা সংঘবদ্ধ ও শক্তিশালী যে বিগত বিএনপি জোট সরকারের আমলে অনেক চেষ্টা করেও সেখানে ঢুকতে পারেনি আইন-শৃক্মখলা রক্ষাকারী বাহিনী। সেখানের আধিপত্য বিস্তারকারীদের কাছে সরকার ও প্রশাসন টিকতে পারেনি। এখানেও রাজনীতি কাজ করেছে বলে অনেকে মনে করেন। অনেকের মতে, প্রশাসন আন্তরিক হলে সেটা পারত। বাসার ও নিজামরা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সব কিছু করে। তারা একা কিছু খায় না। তাদের নজর-নেওয়াজ স্তরে স্তরে ভাগ হয়ে প্রায় সর্বত্র চলে যায়। আওয়ামী লীগের নামে তারা সব কিছু করলেও স্থানীয় প্রায় সব রাজনৈতিক দল এখান থেকে মাসোয়ারা পায়। তবে পরিমাণের হেরফের হয় একটু-আধটু। সেখানে সাবেক এমপি নিজাম এসব বন্ধে অনেকটা তৎপর ছিলেন। বাকিরা নাকি আইওয়াশ করেন। তলে তলে বাসার-নিজামদের মাসোয়ারায় তারা বেশ তুষ্ট। স্থানীয় প্রশাসনও সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের দরবারে সিন্নি দিয়ে তবেই তারা এসব অসামাজিক ও অমানবিক কাজটা করছে। তারা আজও কাউকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পায়নি। চরাঞ্চলের নির্যাতিত মানুষগুলোর দুর্দশা লাঘব, তাদের মানবিক ও মৌলিক অধিকার এবং সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিতে সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। একটি দেশে দুটি আইন কখনো কার্যকর থাকতে পারে না। দ্বৈত শাসন চলতে পারে না, যা সম্পূর্ণ  বেআইনি। এমনটা হলে সরকারের ডিজিটাল শব্দটাও যে লজ্জা পাবে। ডিজিটালের যুগে এসব কোনো বাধা হতে পারে না। সদিচ্ছা থাকলে এসব বাধা তুচ্ছাতিতুচ্ছ। নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে অনতিবিলম্বে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ সময়ের দাবি। 
আরো অবাক কান্ড হলো, জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা, ছিনতাই, নৌ-ডাকাতি, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় ছাড়াও চরের সমগ্র অর্থনীতির দখল জলদস্যুদের হাতে। চরের ৪৫টি ছোট ছোট বাজারের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক জলদস্যুরা। এ ছাড়া মাছ ঘাট, জেলে নৌকা, দাদন ও মাছের ব্যবসা জলদস্যু এবং তাদের মদদদাতাদের দখলে। স্থানীয় ভূমিহীনরা জানান, কেবল তা-ই নয়, বর্ষা মওসুমে ভূমিহীনরা মাছ ও কাঁকড়া ধরেন, যা জলদস্যুর এজেন্টদের কাছে পানির দরে বিক্রি করতে বাধ্য হন তারা! এ ছাড়া প্রতিটি পরিবারকে প্রতি মওসুমে দাগপ্রতি (১৬০ শতাংশ) ৫ মণ ধান দিতে হয়। গরু বা মহিষ প্রতি দিতে হয় ৩০০ টাকা (মাসে)। এর অন্যথা হলে পানিশমেন্ট সেন্টারে চলে নির্যাতন। এসব তো হওয়ার কথা নয়। সেখানে দুর্বৃত্তসমরা প্রকাশ্যে এসব করছে। আর তা করার দুঃসাহস দেখাতে পারছে নামকরণের সুবাদে। সব কিছু জেনে-বুঝে প্রশাসন চোখ বুজে আছে। সাধারণ মানুষ বলী হলেও তাদের যেন কিছু করার নেই। তারা যেন সব কিছুর ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নিজামরা আমজনতার সঙ্গে ছিনিমিনি খেলার সুযোগ পায়। আইন নিজস্ব গতিতে চললে সেখানে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টিকারীরা এভাবে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যেতে পারত না। আর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের আশকারা না পেলে তারা এসব অপকর্ম জায়েজ করতে পারত না। আওয়ামী লীগ সমর্থক স্থানীয় সাবেক এমপি তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা বলে জানা গেছে। তার প্রত্যক্ষ মদদ পেয়ে নিজাম ডাকাতরা এতটা বেপরোয়া যে, তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। ইচ্ছেমতো সব কিছু করছে। ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত একটি সরকারের জবাবদিহিতা থাকে জনগণের কাছে, সেটাও নিজামদের নেই। তারা সব ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে সেখানকার মানুষকে এক রকম নরকে বসবাস করতে বাধ্য করছে। আর নিজেরা স্বর্গীয় সুখ ভোগ করছে। তাদের অবাধ কার্যক্রম প্রমাণ করে এ যেন সরকারের ভেতরে আরেকটি সরকার। যে সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই কারো কাছে।                
লেখক : সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন। ই-মেইল : jalam_prodhan72@yahoo.com 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads