রবিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৩

আওয়ামী লীগের কুআদর্শের প্রভাবে



সাইফুল ইসলাম তানভীর
শুধু আমাদের পরিবার নয়, আওয়ামী লীগের কুআদর্শের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লাখ লাখ পরিবার। আওয়ামী লীগের কুআদর্শে আদর্শিত ব্যক্তিরা বর্তমানে এই দেশ পরিচালনা করছে। ফলে গোটা দেশ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। হিংস্রতা, রূঢ়তা, উচ্ছৃঙ্খলতা ছাড়া কোনো আওয়ামী লীগ সমর্থক পাওয়াও কঠিন। হ্যাঁ, আওয়ামী লীগের আদর্শে আদর্শিত কিছু ব্যক্তির কাছে আমি অনেক স্নেহও পেয়েছি; কিন্তু সেই স্নেহের মধ্যে লুকিয়ে ছিল হিংস্রতার থাবা। কয়েক বছর আগের কথা, আমার এক বন্ধু তার বাবার সঙ্গে তাদের প্রাইভেট গাড়িতে কারওয়ানবাজার রোড হয়ে তাদের মহাখালীর বাসার দিকে যাচ্ছিল। গাড়িতে বসে বাবা- ছেলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছিলেন। বাবা আওয়ামী লীগের আদর্শে আদর্শিত। ছেলে কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক নয়। কিন্তু সে আওয়ামী লীগকে পছন্দ করে না। ছেলে গাড়িতে বসে আলাপচারিতায় বাবার কাছে আওয়ামী লীগের কয়েকটি কুকর্মের কথা বলছিল। তখন গাড়িটি ফার্মগেট দিয়ে যাচ্ছিল; তত্ক্ষণাত্ বাবা ক্ষিপ্ত হয়ে তার একমাত্র ছেলেকে গাড়ি থেকে ফার্মগেটে নামিয়ে দেন। বুদ্ধিমান ছেলে অবশ্যই বুঝতে সক্ষম হয়েছিল যে, এটা তার বাবার দোষ নয়, এটা আওয়ামী লীগের আদর্শের কুপ্রভাব। এ ঘটনা আমি ওই বন্ধুর কাছে শুনেছি। আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) যখন ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন, তখন অনেক যুবক ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন; সে কারণে সেই ইসলাম গ্রহণ করা যুবকদের তাদের বাবা-মার কাছে, সমাজের মোড়লদের কাছে অনেক নির্যাতন সইতে হয়েছিল। কারণ ইসলাম গ্রহণ করা তখনকার অনেক যুবকের বাবা-মা এবং তাদের সমাজের মোড়ল ইসলামবিরোধী ছিল। আমাদের দেশে যে সংস্কৃতি—যে চায়ের দোকানে একজন আওয়ামী লীগ সমর্থক থাকবে, সেখানে অন্য কোনো আদর্শের পঞ্চাশজন সমর্থক থাকলেও আওয়ামী লীগের আদর্শিত লোকদের কাছে চাপাবাজিতে পরাজিত হয়। এই আওয়ামী লীগে ভদ্রলোক পাওয়া বড়ই মুশকিল। এবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসলে দু-একজন মন্ত্রীকে অনেকে ভদ্র ভেবেছেন। এর মধ্যে খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক একজন। ক’দিন আগে বিবিসি আয়োজিত একটি টকশোতে তিনি উপস্থিত ছিলেন; অপরদিকে ছিলেন বিএনপির ড. মঈন খান। টকশোটি প্রচার করেছে চ্যানেল আই। আমি আশ্চর্য হলাম, টকশোর মধ্যে ড. আবদুর রাজ্জাক অপ্রাসঙ্গিকভাবে বিরোধী দল নিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করা শুরু করলেন। তখন উপস্থাপক বিব্রত অবস্থায় পড়লেন। এই হলো আওয়ামী লীগের কথিত ভদ্রলোকদের চরিত্র। আশির দশকের শুরুর কথা। তখন আমি শিশু। আমার বড় ভাই, সেও ছিল শিশু বয়সের। আমরা দুই ভাই এবং বাবা-মা নিয়ে পুরান ঢাকায় আমাদের সংসার খুব সুন্দরভাবেই চলছিল। আমার বাবা ছাত্রজীবন থেকেই বাড়ির বাইরে থাকতেন। আমার দাদার ছিল একটি মধ্যবিত্ত পরিবার। দাদার সাত সন্তান। পাঁচ ছেলে এবং দুই মেয়ে। আমার বাবা, দাদার তৃতীয় সন্তান। আমার বাবা নিয়মিত দাদার কাছে টাকা পাঠাতেন। আমার চাচা ও ফুফুদের দিকে আমার বাবা যথেষ্ট খোঁজখবর নিতেন এবং সার্বিক সহযোগিতা করতেন। দাদার পরিবারে তখন আমার বাবা একাই ছিলেন শহরে। আমার বাবা-মা আমাদের দুই ভাইকে নিয়ে ঢাকা থেকে দাদার বাড়িতে মাঝে মাঝে বেড়াতে যেতেন। এভাবে অনেক সুখ-শান্তিতেই চলছিল আমাদের পরিবার। কিন্তু আমার এক চাচা আমাদের এই সুখ সহ্য করতে পারলেন না। সেই চাচার খলনায়ক ভূমিকার কারণেই আমার বাবা, দাদার পরিবারে থেকে লেখাপড়া করতে পারেননি। চাচার হিংসায় আমার বাবা লেখাপড়া করার উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। আমি শিশু থাকাকালে যখন কিছুদিন আমার দাদার বাড়িতে ছিলাম, তখন আমার বাবা আমার জন্য ‘শিশু খাদ্য’ গুঁড়ো দুধ ঢাকা থেকে এক লোকের মাধ্যমে দাদার বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন। তখন সেই চাচা এই গুঁড়ো দুধ পেয়ে গোপন করে রেখেছিলেন। আমাকে খেতে দেয়া হয়নি। এমনকি আমি মায়ের কাছে শুনেছি, দাদার বাড়িতে আমার জন্মগ্রহণকালে সুসংবাদ সেই চাচা দুঃসংবাদ হিসেবে গ্রহণ করেছেন; হিংসায় জ্বলে যাচ্ছিলেন। এর মূল উত্স হচ্ছে আমার চাচা আওয়ামী লীগ আদর্শে আদর্শিত। তিনি আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী। আমার দাদা তিনিও আওয়ামী লীগ আদর্শে আদর্শিত। তিনি নৌকা ছাড়া অন্য কোনো প্রতীকে ভোট দেয়া পছন্দ করতেন না।
তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে অনেক ভালোবাসেন। আমার চাচা দাদার ওপর প্রভাব খাটিয়ে আমাদের পরিবারে একের পর এক অশান্তি সৃষ্টি করতে লাগলেন। আমার দাদা অত্যন্ত সরল ব্যক্তি। কিন্তু দাদাকে চাচা বিভিন্নভাবে আমাদের পরিবারের ওপর ক্ষেপিয়ে তুলতে সক্ষম হন। একপর্যায়ে আমার মামারা সেটা হজম করতে পারলেন না। আমার নানা তখন জীবিত ছিলেন না। আমার মামারা আমার মাকে বাধ্য করেছিলেন আদালতে মামলা করতে। আমার বাবা অত্যন্ত ভদ্রমানুষ। তিনি এসব ঝামেলার সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত মামলা করা হলো। সেই মামলায় আসামি ছিলেন যথাক্রমে আমার বাবা, দাদা এবং দ্বিতীয় ও চতুর্থ চাচা। তারা গ্রেফতার হলেন। আমার নানার অনেক সম্পদ ছিল। সেজন্য মামাদের টাকার অভাব ছিল না। প্রশাসন ছিল মামাদের পক্ষে। এভাবে এ মামলাটি কয়েক বছর চলতে থাকে। এ মামলায় আমার দাদির কিছু জমি, দাদার সংসারের ধান, গরু, ব্যবসায়ী নৌকা ইত্যাদি বিক্রি করে অর্থের জোগান দেয়া হয়েছিল। উল্লেখ্য, মামাদের আদর্শও আওয়ামী লীগ। যার কারণে তারা সুস্থ চিন্তা না করে এরকম একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আমাদের পরিবারে এ ধরনের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর থেকে আমরা এখন পর্যন্ত শান্তি কী জিনিস তা বুঝিনি। হারিয়েছি আমার সুন্দর একটি ক্যারিয়ার। কখনও মায়ের কাছে থেকেছি, কখনও বাবার কাছে। আমার বাবা এই মামলার পরও মাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন; কিন্তু মামাদের কারণে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাই খুব ছোট থেকেই পরিবারে অশান্তির তুফান দেখতে দেখতে বড় হয়েছি। বারবার স্থান পরিবর্তনে এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার আগেই ১০টি স্কুলে পড়েছি। চট্টগ্রাম শহরে থাকাকালে ছোটবেলায় মাকে ছাড়া স্কুলে যাব না বলে আমরা দু’ভাই আন্দোলনও করেছিলাম। তাই মা যথাক্রমে চট্টগ্রাম, ঢাকায় দুবার আমাদের দুই ভাই ও বাবার কাছে এসেছিলেন। তখন বাসায় সত্ মা ছিলেন। এ কারণে মা শহরে না থেকে গ্রামে গিয়ে স্থায়ী থাকার সিদ্ধান্ত নেন। এভাবে কেটে গেল বহু বছর। আওয়ামী লীগের আদর্শে আদর্শিত আমার সেই চাচা এ সময়গুলোতে বাবার কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়েছেন। উল্লেখ্য, আমার ওই চাচা তার সংসার অভাব-অনটনে চালাতে না পেরে সন্তানদের নিয়ে ভারতে যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু বাবা দাদার পারিবারিক মানসম্মান রক্ষার্থে চাচাকে ভারতে যেতে দেননি। এ ঘটনা ছিল ওই মামলারও আগে। দাদা-দাদির জন্য ঢাকা থেকে বাড়িতে বাবা টাকা পাঠাতেন। কিন্তু সেই টাকাও ওই চাচা আত্মসাত্ করতেন। দাদা-দাদিকে চাচা অনেক কষ্ট দিতেন। যত ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে সব আমার বাবার কাছ থেকে চাচা গ্রহণ করেছেন। দুঃখের বিষয়, এত সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরও চাচা এখন পর্যন্ত আমাদের ক্ষতি করার মিশন অব্যাহত রেখেছেন। তিনি এখন কোটিপতি। অসত্ উপায়ে টাকার বস্তা কামিয়েছেন। মজার বিষয়, সেই আওয়ামী লীগের আদর্শের চাচার এক সন্তান এখন ছাত্রলীগের নেতাও হয়েছে। রাস্তায় ফেস্টুন টানিয়েছে। ওইদিকে আমার নানার প্রায় ১৫০ বিঘা জমি থাকা সত্ত্বেও আমার মা তা থেকে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা পাননি। এক বিঘা জমিও আমার মামারা আমাদের দেননি। তারা বিভিন্ন কৌশলে জমিগুলো বিক্রি করছেন। আমার মামারা কঠিন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ আদর্শের। তাদের দলের নেত্রী শেখ হাসিনা কোরআনের আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে বাবার সম্পত্তিতে ছেলে ও মেয়েদের সমান অধিকার দিতে চান। কিন্তু সে কথা মামারা বুঝেও না বোঝার ভান করেন।
নানাবাড়ির দিক থেকে দূর সম্পর্কের আত্মীয় এক ব্যক্তি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে এমপি নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। আমার ছোট দুই মামাকে সেই ব্যক্তি কয়েকটি সিগারেট, কয়েক কাপ চা, সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে প্রায় দুই কোটি টাকার জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন। এতে আমার মামারা অনেক খুশি। কারণ আওয়ামী লীগের আদর্শিক ব্যক্তির জন্য শুধু এই জমিই নয়, তারা আরও কিছু দিতে প্রস্তুত। জমি তো দিয়েছেনই এবং সেই ব্যক্তির সক্রিয় কর্মীও হয়েছেন আমার মামারা। এসব ঘটনার কথা উল্লেখ করেছি শুধু আওয়ামী লীগের কুআদর্শ বোঝানোর জন্য।
গত ২০ ডিসেম্বর যশোরে শেখ হাসিনা যে ধরনের কথা বলেছেন, তা কোনো সভ্য নারীর মুখের কথা হতে পারে না। এই সরকারের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী সারাদেশে গুণ্ডামি, মাস্তানি করছে। খুন, গুম, ডাকাতি, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তাদের পালিত গুণ্ডারা না করে। এদেশের অধিকাংশ অমুসলিম ব্যক্তি অন্ধভাবে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। অথচ এই আওয়ামী লীগের লোকরাই হিন্দুদের অধিকাংশ জমি দখল করে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের কাছে কোনো ধর্মের লোক নিরাপদ নয়। গত চারদলীয় জোট আমলে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, ‘মাননীয় স্পিকার, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই হিন্দুরা পথেঘাটে থাপ্পড় খায়।’
গৌতম চক্রবর্তীর কথা মোটেও অসত্য নয়। বিশ্বজিতের কথা তো এখন সারা বিশ্বে প্রচারিত।
এই সরকার আমার দেশ এবং সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে যে শয়তানি করল, তাতে শয়তানও দুঃখে কাঁদে। শয়তানও শয়তানিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পরাজিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের লোকদের ন্যূনতম লজ্জাশরম থাকলে মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে এই ফাজলামি করত না। ইদানীং আওয়ামী লীগের গুণগান গাওয়া একটি পত্রিকা বিবেকের দায়ে ছাত্রলীগের দুর্নীতির কথা লিখতে গিয়ে বিপদে পড়েছে। পত্রিকাটির বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ বিভিন্ন জায়গায় মামলাও করেছে। পত্রিকাটির সম্পাদক একজন বিশিষ্ট সাহিত্যিক, তিনি একসময় আমার দেশ-এও চাকরি করেছিলেন। পত্রিকাটির ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তাদের উচিত গণমাধ্যমের সঠিক দায়িত্ব পালন করা।
পরিশেষে আমি মহান আল্লাহর কাছে আওয়ামী লীগের কুআদর্শের কালো থাবা থেকে এই দেশকে রক্ষার জন্য প্রার্থনা করছি।
saifulislamtanvir@gmail.com

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads