বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করা হয়েছিল। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার লঙ্ঘন কঠোরভাবে বন্ধ করার কথাও বলা হয়েছিল সেখানে। কিন্তু আওয়ামী লীগের ইতিহাসে ওয়াদা পূরণের নজির নেই বললেই চলে। সেটা আবারও সত্য প্রমাণিত হলো গত চার বছরে।
আইনের শাসন কীভাবে ভেঙে পড়েছে, সেটা এখন আর ব্যাখ্যা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বরং আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ কোথায় আছে, সেটাই খুঁজে দেখার বিষয়। প্রশাসনের কেন্দ্র সচিবালয় থেকে শুরু করে উপজেলা প্রশাসন বা থানা পুলিশের কাজেও আইন মেনে চলার ঘটনা ব্যতিক্রম হয়ে উঠেছে গত চার বছরে। দুর্নীতি, দলীয়করণ আর বিশৃঙ্খলার দাপটে সবাই যেন কুঁকড়ে গেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অপহরণ, গুম, গুপ্তহত্যার হিড়িক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অব্যাহত ‘ক্রসফায়ারের’ মতো গুম-গুপ্তহত্যার সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। গত চার বছরে বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় দুই নেতাসহ দেড়শতাধিক ব্যক্তির গুম-গুপ্তহত্যার শিকার হওয়ার কথা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এসব ঘটনার বেশিরভাগেরই হদিস বের করতে পারেনি আইন রক্ষাকারী কোনো সংস্থা। সর্বশেষ গত শনিবার সন্ধ্যায় অপহরণের পর গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন রাজধানীর বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মজুমদার।
রফিকুলকে তার শ্বশুরবাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকূপা থেকে র্যাব পরিচয়ে জোর করে ধরে নিয়ে যায় সশস্ত্র ব্যক্তিরা। তারা র্যাব লেখা সাদা মাইক্রোবাসে এসে দেয়াল টপকে ঘরে ঢুকে রফিকুলকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দেয়ায় তার আত্মীয় নারী-পুরুষদের মারপিটও করে। এর কিছুক্ষণ পর আরও একটি একই ধরনের গাড়িতে কয়েকজন লোক এসে তার ভায়রা ও ড্রাইভারকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় ঝিনাইদহ র্যাব অফিসে যোগাযোগ করতে বলে। রাত ২টায় তাদের ছেড়ে দেয়া হলেও তার আগেই কুমারখালী থানা থেকে রফিকুলের শাশুড়িকে মোবাইল ফোনে লাশ পাওয়ার খবর দেয়া হয়। অপহরণের দুই ঘণ্টা পর ২০ কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানা এলাকার একটি পেঁয়াজের ক্ষেতে হাতকড়া পরা অবস্থায় রফিকুলের লাশ উদ্ধার করা হয়। হাতকড়ায় ইংরেজিতে ‘পুলিশ’ লেখা ছিল, এটা প্রত্যক্ষদর্শীদের মতো পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিতে সবাই দেখেছে। রফিকুলকে ধরে নিয়ে আসার অভিযোগ অস্বীকার করলেও অন্য দু’জনকে ধরে আনার কথা স্বীকার করেছে র্যাব কর্তৃপক্ষ। এ থেকে দু’য়ে দু’য়ে চার মিলিয়ে নেয়া কঠিন নয় মোটেই। আর পুলিশের কথাও ভাবনার বিষয়। হাতকড়া প্রসঙ্গে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের মন্তব্য, বাজারে ‘পুলিশ’ লেখা হাতকড়া কিনতে পাওয়া যায়, যা সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করতে পারে। এ সবকিছুই আওয়ামী আইনের শাসনের প্রকৃষ্ট উদাহরণই বটে!
খুন হওয়া রফিকুল ইসলাম ছিলেন রাজধানীর ৫৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সচিব। জনপ্রিয় রফিক ঢাকা সিটি করপোরেশনের আগামী নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হিসেবে প্রচারণাও শুরু করেছিলেন। এর আগে ২০১০ সালের ২৫ জানুয়ারি একই ওয়ার্ডের তত্কালীন কমিশনার বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের হাতে অপহৃত হন। এযাবত্ তার কোনো খোঁজ দিতে পারেনি কেউ। এ নিয়ে সরকারের প্রভাবশালীরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের কথা বলেই দায় সেরেছেন। গুম হওয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী সম্বন্ধেও একই পুনরাবৃত্তি দেখতে হয়েছে দেশবাসীকে। দেশজুড়ে খুন, গুপ্তহত্যা আর গুমের ঘটনা বিচারে এটা স্পষ্ট যে, এসবের প্রধান টার্গেট সরকারবিরোধী দল ও মতের লোকজনই। ফলে এসব ঘটনার পেছনে ক্ষমতাসীনদের হাত থাকা স্বাভাবিক মনে করলে কাউকে দোষ দেয়া যাবে না।
সরকার শুধু আইনের শাসনকে কবরেই পাঠায়নি, চার বছরে জননিরাপত্তাও দেশ থেকে উধাও হয়ে গেছে। কুড়িগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে কিশোরী ফেলানী হত্যার দু’বছরে যেমন এ নিয়ে দেয়া কোনো প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়নি, তেমনি নিজ বেডরুমে খুন হওয়া সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসহ চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনার তদন্তের অগ্রগতিও দেখা যায়নি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডও সমানতালে অব্যাহত রয়েছে। আর র্যাব পুলিশের নির্যাতনের কথা বলে শেষ করা যাবে না। সরকার কর্তৃক এভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ধর্ষণকারীদের বেপরোয়া হতে কতটা মদত জুগিয়েছে, সেটা দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও ধর্ষণশেষে খুনের ঘটনা থেকেই বোঝা যায়। আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে যাই অঙ্গীকার করুক না কেন বাংলাদেশে মানবাধিকার ও আইনের শাসন বলতে কিছু আর অবশিষ্ট নেই, সেটা জোর দিয়েই বলা যায়।
আইনের শাসন কীভাবে ভেঙে পড়েছে, সেটা এখন আর ব্যাখ্যা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বরং আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ কোথায় আছে, সেটাই খুঁজে দেখার বিষয়। প্রশাসনের কেন্দ্র সচিবালয় থেকে শুরু করে উপজেলা প্রশাসন বা থানা পুলিশের কাজেও আইন মেনে চলার ঘটনা ব্যতিক্রম হয়ে উঠেছে গত চার বছরে। দুর্নীতি, দলীয়করণ আর বিশৃঙ্খলার দাপটে সবাই যেন কুঁকড়ে গেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অপহরণ, গুম, গুপ্তহত্যার হিড়িক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অব্যাহত ‘ক্রসফায়ারের’ মতো গুম-গুপ্তহত্যার সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। গত চার বছরে বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় দুই নেতাসহ দেড়শতাধিক ব্যক্তির গুম-গুপ্তহত্যার শিকার হওয়ার কথা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এসব ঘটনার বেশিরভাগেরই হদিস বের করতে পারেনি আইন রক্ষাকারী কোনো সংস্থা। সর্বশেষ গত শনিবার সন্ধ্যায় অপহরণের পর গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন রাজধানীর বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মজুমদার।
রফিকুলকে তার শ্বশুরবাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকূপা থেকে র্যাব পরিচয়ে জোর করে ধরে নিয়ে যায় সশস্ত্র ব্যক্তিরা। তারা র্যাব লেখা সাদা মাইক্রোবাসে এসে দেয়াল টপকে ঘরে ঢুকে রফিকুলকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দেয়ায় তার আত্মীয় নারী-পুরুষদের মারপিটও করে। এর কিছুক্ষণ পর আরও একটি একই ধরনের গাড়িতে কয়েকজন লোক এসে তার ভায়রা ও ড্রাইভারকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় ঝিনাইদহ র্যাব অফিসে যোগাযোগ করতে বলে। রাত ২টায় তাদের ছেড়ে দেয়া হলেও তার আগেই কুমারখালী থানা থেকে রফিকুলের শাশুড়িকে মোবাইল ফোনে লাশ পাওয়ার খবর দেয়া হয়। অপহরণের দুই ঘণ্টা পর ২০ কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানা এলাকার একটি পেঁয়াজের ক্ষেতে হাতকড়া পরা অবস্থায় রফিকুলের লাশ উদ্ধার করা হয়। হাতকড়ায় ইংরেজিতে ‘পুলিশ’ লেখা ছিল, এটা প্রত্যক্ষদর্শীদের মতো পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিতে সবাই দেখেছে। রফিকুলকে ধরে নিয়ে আসার অভিযোগ অস্বীকার করলেও অন্য দু’জনকে ধরে আনার কথা স্বীকার করেছে র্যাব কর্তৃপক্ষ। এ থেকে দু’য়ে দু’য়ে চার মিলিয়ে নেয়া কঠিন নয় মোটেই। আর পুলিশের কথাও ভাবনার বিষয়। হাতকড়া প্রসঙ্গে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের মন্তব্য, বাজারে ‘পুলিশ’ লেখা হাতকড়া কিনতে পাওয়া যায়, যা সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করতে পারে। এ সবকিছুই আওয়ামী আইনের শাসনের প্রকৃষ্ট উদাহরণই বটে!
খুন হওয়া রফিকুল ইসলাম ছিলেন রাজধানীর ৫৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সচিব। জনপ্রিয় রফিক ঢাকা সিটি করপোরেশনের আগামী নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হিসেবে প্রচারণাও শুরু করেছিলেন। এর আগে ২০১০ সালের ২৫ জানুয়ারি একই ওয়ার্ডের তত্কালীন কমিশনার বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের হাতে অপহৃত হন। এযাবত্ তার কোনো খোঁজ দিতে পারেনি কেউ। এ নিয়ে সরকারের প্রভাবশালীরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের কথা বলেই দায় সেরেছেন। গুম হওয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী সম্বন্ধেও একই পুনরাবৃত্তি দেখতে হয়েছে দেশবাসীকে। দেশজুড়ে খুন, গুপ্তহত্যা আর গুমের ঘটনা বিচারে এটা স্পষ্ট যে, এসবের প্রধান টার্গেট সরকারবিরোধী দল ও মতের লোকজনই। ফলে এসব ঘটনার পেছনে ক্ষমতাসীনদের হাত থাকা স্বাভাবিক মনে করলে কাউকে দোষ দেয়া যাবে না।
সরকার শুধু আইনের শাসনকে কবরেই পাঠায়নি, চার বছরে জননিরাপত্তাও দেশ থেকে উধাও হয়ে গেছে। কুড়িগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে কিশোরী ফেলানী হত্যার দু’বছরে যেমন এ নিয়ে দেয়া কোনো প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়নি, তেমনি নিজ বেডরুমে খুন হওয়া সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসহ চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনার তদন্তের অগ্রগতিও দেখা যায়নি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডও সমানতালে অব্যাহত রয়েছে। আর র্যাব পুলিশের নির্যাতনের কথা বলে শেষ করা যাবে না। সরকার কর্তৃক এভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ধর্ষণকারীদের বেপরোয়া হতে কতটা মদত জুগিয়েছে, সেটা দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও ধর্ষণশেষে খুনের ঘটনা থেকেই বোঝা যায়। আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে যাই অঙ্গীকার করুক না কেন বাংলাদেশে মানবাধিকার ও আইনের শাসন বলতে কিছু আর অবশিষ্ট নেই, সেটা জোর দিয়েই বলা যায়।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন