সোমবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৩

উদ্বেগজনক পরিস্থিতির অবসান জরুরি


বর্তমান সরকার নাগরিক জীবনে স্বস্তি দিতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। আইনের শাসনও প্রতিনিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের কোনো দৃষ্টিগ্রাহ্য উদ্যোগও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। এসব ক্ষেত্রে সরকারের কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় রাষ্ট্রের সন্তানতুল্য নাগরিকেরা স্বাভাবিক মৃত্যুর ব্যাপারেও উৎকণ্ঠিত। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের ২০১২ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনে যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক।

অধিকারের দেয়া তথ্যানুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ২০১২ সালে দেশে ২৪ জনকে গুম করা হয়েছে। গুম হওয়ার পর কারো কারো তবিত লাশ পাওয়া গেছে। সরকার এ তথ্য আড়াল করতে চাইলেও গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদেরও অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে। কিছু কিছু েেত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে যাওয়ার পর প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে আটক ব্যক্তিকে জনসম্মুখে হাজির ও থানায় হস্তান্তর করতে বাধ্য হওয়ার মতো আপত্তিজনক দৃষ্টান্তও রয়েছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের তালিকায় বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামও রয়েছেন। গেল বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৭০ জন। গুমের শিকার ব্যক্তিরাও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলেই ধরে নেয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।
বর্তমান সরকার ২০০৯ সালের ফেব্র“য়ারিতে জেনেভায় জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের বৈঠকে বাংলাদেশে সব ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের অঙ্গীকার করেছিল। এ অঙ্গীকারের পরও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়নি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ফলে ৫৩ জন ক্রসফায়ারে, সাতজন নির্যাতনে ও আটজন গুলিতে নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে র‌্যাবের ক্রসফায়ারেই ৪০ ব্যক্তি নিহত হওয়ার তথ্য দিয়েছে অধিকার।
তা ছাড়া বিচার বিভাগের তোয়াক্কা না করেই সরকার ২০১২ সালে খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও অবৈধ অস্ত্র রাখার মতো অনেক মামলাকে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বলে চিহ্নিত করে সেগুলো প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এসব মামলার সবই মতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছিল। এ সরকারের বিগত ক’বছরে সাত হাজার ১০১টি মামলা সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার নিয়ন্ত্রিত কমিটি।
তা ছাড়া দেশে ২০১২ সালে ৭২ ব্যক্তি বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে সাতজন নিহত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। একই সময়ে জেল হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে ৬৩ জনের। অধিকারের দেয়া তথ্যানুযায়ী দেশের ৬৮ কারাগারে ধারণমতার অনেক বেশি বন্দী রয়েছে। যাদের উল্লেখযোগ্যই রাজনৈতিক হয়রানির কারণে গ্রেফতার হয়েছেন এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মী। তারা এখন বিনাচিকিৎসা, নিম্নœমানের খাবার ও পানির অসুবিধাসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিনিয়ত অধিকারবঞ্চিত থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
এ বছরটিতে বিচারব্যবস্থা ও পুলিশের প্রতি অনাস্থার কারণে সাধারণ মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নেয়ার নজিরও স্থাপিত হয়েছে। রাজনৈতিক অধিকার হরণের লক্ষ্যে বিগত বছরে দেশে বিভিন্ন সময় সভা-সমাবেশের অধিকার খর্ব করা হয়েছে। ১০৫টি েেত্র ১৪৪ ধারা জারি করে সভা-সমাবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একই সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৬৯ জনের মধ্যে বেশির ভাগই সরকারদলীয় ক্যাডারদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন।
সীমান্তে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সরকার গ্রাহ্যের দৃষ্টিতেও দেখতে চায়নি। মিডিয়াও এ সময় বারবার হুমকির মধ্যে পড়েছে। রামুসহ কয়েকটি ঘটনায় সংখ্যালঘুদের ওপরও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণের ঘটনা জনমনে বিশেষভাবে দাগ কেটেছে। বেড়েছে সামাজিক অবক্ষয়। প্রসার ঘটেছে মাদকের।
আমরা মনে করি আইনের শাসনের অভাবই মূল কারণ। তা ছাড়া গণতান্ত্রিক সহিষ্ণুতার অভাবও অন্যতম কারণ। বিচার বিভাগের ওপর ভরসা কমে যাওয়াও কম দায়ী নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় মেজাজে পরিচালনাকে ছোট করে দেখা সম্ভব নয়। আশা করব সঙ্কটের গভীরতা ও ভয়াবহতা উপলব্ধি করে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads