গত ১১ই জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণে তিনি তার দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির প্রায় সবটাই পূরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, বিশ্ববাসী এখন তার সরকারের খুব প্রশংসা করছে এবং স্বীকার করছে যে, বর্তমান সরকারের ব্যাপক কর্মকান্ড বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিচ্ছে। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা প্রয়োজন বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন যে, একমাত্র দেশবাসীই পারে তাদের পুনরায় ক্ষমতায় যাবার সুযোগ দিয়ে এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে। তিনি দেশবাসীকে সতর্ক করে এও বলেছেন যে, মাইনাস টু ফর্মুলার লোকরা পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। সাংবিধানিক অধিকার কেউ যেন কেড়ে নিতে না পারে তার জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য বিরোধী দলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন এবং দৃঢ়তার সাথে বলেছেন যে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট শক্তিশালী।
প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ নিয়ে পত্রপত্রিকা ও গণমাধ্যমসমূহ এবং সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ইতোমধ্যে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা করেছেন। বিরোধী দলের তরফ থেকে তার এই বক্তব্যকে শূন্যগর্ভ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে দেশের মৌলিক ইস্যুগুলোকে পাশ কাটিয়ে অর্থনৈতিক অগ্রগতি, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ এবং দ্রব্যমূল্য ও মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি তার সরকারের চরম ব্যর্থতা, দুর্নীতি, দলন-নিপীড়ন, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বনদ্বীদের মর্মান্তিক নির্মূল কর্মকান্ড সম্পর্কে কোনো কথাই বলেননি এবং নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দেশে বর্তমানে যে, সঙ্কট সৃষ্টি করেছেন সে সম্পর্কেও কোনো কথা বলেননি। দৈনিক পত্র-পত্রিকাসমূহ সাময়িকী এবং কিছু কিছু টিভি চ্যানেলে পরিচালিত জনমত জরিপে তার সরকারের নীতি-কৌশল, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ড সম্পর্কে দেশবাসীর নেতিবাচক যে সব প্রতিক্রিয়া প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে সম্ভবত তাতে হতাশ হয়ে তিনি বিশ্ববাসীর মতামতের বরাত দিয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অসার তথ্য দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেছেন। তার এই ভাষণ দেশবাসী শুধু নয়, তার দলীয় লোকদেরও সন্তুষ্ট করতে পারছে বলে মনে হয় না।
প্রধানমন্ত্রীর ১১ই জানুয়ারির ভাষণ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ কেউ বলছেন যে, তার সরকারের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে গত ৬ই জানুয়ারি তার ভাষণ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তা তিনি স্থগিত করে ১১ তারিখে এই ভাষণ দিয়েছেন। অসুস্থতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, ৬ই জানুয়ারি থেকে তার ভাষণ ১/১১তে নিয়ে আসাটা তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি তার সরকারের ৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে নয় বরং ৬ বছর পূর্তি উপলক্ষেই এই ভাষণ দিয়েছেন। ১/১১ এর ফখরুদ্দিন মইনউদ্দিন সরকারের তিনি যতই দুর্নাম করুন না কেন ঐ সরকার তারই সরকার ছিল। তিনি নিজেই একাধিকবার ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছিলেন যে, ১/১১'র সরকার তারই আন্দোলনের ফসল, তার দলেরই সরকার। এই সরকারের সাফল্য তার দলের সাফল্য এবং ব্যর্থতা তার দলেরই ব্যর্থতা। এই সরকার তিনি ও তার দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির মামলা এনে আদালতে বিচারের একটি নাটক মঞ্চস্থ করে তাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে গেছেন। এই অবস্থায় ১/১১'র সরকারের প্রতি তিনি এবং তার দলের কৃতজ্ঞতাবোধ থাকা স্বাভাবিক। এবং স্বাভাবিক বলেই ১/১১'র সরকার ব্যাপকভাবে নিন্দিত হলেও এবং এমনকি তারা দেশের রাজনীতি ও সমাজনীতি এবং মানুষের জীবনযাত্রাকে তছনছ করে দিলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ১/১১'র কুশিলবদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বরং তাদের পুরস্কৃত করেছেন। একজনকে রাষ্ট্রদূত শুধু বানাননি বরং তার মেয়াদও সম্প্রসারণ করেছেন। তাদের সকল কাজকে তিনিই বৈধতা দিয়েছেন। তিনি তার সরকারের ধারাবাহিকতা চেয়েছেন এবং নিজেকে ১/১১'র সরকারের সম্ভবত ধারাবাহিক সরকার মনে করেন বলে। অবশ্য তাতো বটেই; দমন-নিপীড়ন ও গ্রেফতার রিমান্ডের দৃষ্টিকোণ বর্তমানের সঙ্গে ১/১১-এর পার্থক্য নেই। ১/১১'র সরকার মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল। তিনি তার ভাষণে বলেছেন যে, মাইনাস টু ফর্মুলার লোকরা পুনরায় মাথাচাড়া দিচ্ছে। তারা যদি মাথাচাড়া দিয়ে থাকেন তাহলে তাদের মাথা তিনি নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছেন। যদি তাই হয়, তাদের তিনি চিহ্নিত করছেন না কেন? মাইনাস টু ফর্মুলার নায়করা বেসামরিক ছিলেন না, সামরিক বাহিনীর লোক ছিলেন। তারা এখন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় আছেন। এখন তিনি যাদের দেখছেন তারা কোথায় আছেন, কে বা কারা তিনি দেশবাসীকে জানিয়ে দিলেই ভাল করতেন বলে মনে হয়। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কথাই যদি বলতে হয়, তা হলেও অন্তত তার কথায় সারবত্তা কিছু দেখা যায় না। এই সমৃদ্ধির কিছু আছে দৃশ্যমান আর কিছু অদৃশ্য। দৃশ্যমান সমৃদ্ধির একটি সূচক হচ্ছে অবকাঠামো তৈরি। এক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সাফল্য ক্ষীণ। সারা দেশের রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট, সড়ক, মহাসড়কের যে দুরাবস্থা তা গত কয়েক বছর ধরেই জনদুর্ভোগের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীসহ কয়েকটি বিভাগীয় শহরে নির্মিত ও নির্মাণাধীন ব্যয়বহুল উড়াল সড়ক ও ফ্লাইওভার সরকারদলীয় টেন্ডারবাজদের অর্থ উপার্জনে সহায়তা করেছে সন্দেহ নেই, কিন্তু তাতে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কোনও উপকার হয়নি। আবার এই স্থাপনাসমূহের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বহদ্দারহাট উড়াল সড়কের গার্ডার ধসে ১৬ জন লোকের প্রাণহানি এবং দেড়শতাধিক লোকের আহত হবার ঘটনা এ কথাটিই স্মরণ করিয়ে দেয়। আবার গ্রামাঞ্চলের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করে মহানগরগুলোতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই স্থাপনাগুলো গ্রামীণ দারিদ্র্য দূরীকরণে আদৌ সহায়ক কি না তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। গ্রোথ সেন্টারসমূহে অবকাঠামো, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগের অভাবে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বর্তমানে স্থবির অবস্থায় আছে। পদ্মা সেতু ইতিহাসের বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। তারপরও প্রধানমন্ত্রীর সমৃদ্ধির গল্প শ্রুতিমধুর হতে পারছে বলে মনে হয় না।
মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ের বিষয়টি হচ্ছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রধান সূচক। এই সূচক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ২০০৬ সালে বিগত চারদলীয় সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের পর আমাদের প্রধানমন্ত্রীর আন্দোলনের ফসল এক এগারোর সরকার কর্তৃক দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বর্তমান সরকারের বিগত চার বছরে দেশে খাদ্যসামগ্রী ও অন্যান্য খাতে ব্যয় বৃদ্ধির ফলে দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ে খাদ্যসামগ্রীর খাতে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে ১২৬%। খাদ্য বহির্ভূত খাতে ৬০.২৪%, বাড়িভাড়া খাতে ৭৪.৭২%, চিকিৎসা ব্যয় খাতে ৫৮.৬৬%, পরিবহন ব্যয় খাতে ৫২.৮৮% এবং অন্যান্য খাতে ৭৯.৭২%। পক্ষান্তরে এই সময়ে সরকারি কর্মচারীদের নতুন পে-স্কেলে কিছুটা বেতন বৃদ্ধি ছাড়া সাধারণ মানুষের আয়ের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন আসেনি। সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ ও শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির ফলে কৃষি পণ্যের উৎপাদন ব্যয় সাংঘাতিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায় মূল্য থেকে ব্যাপকভাবে বঞ্চিত হয়েছেন এবং হচ্ছেন। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্যে দেশবাসীর কাছে ভোট চেয়েছেন। তার এই ভোট চাওয়াটা হাস্যোস্পদ। তার একজন মন্ত্রীর উপর কিছুদিন আগে জুতা বৃষ্টি হয়েছে এবং তিনি ও তার সরকার যা করছেন তাতে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি নিশ্চয়ই উপলব্ধি করতে পারছেন যে, দিন দিন তার দলের জনপ্রিয়তা কমছে বৈ বাড়ছে না।
কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা বিলোপ করে দলীয় মন্ত্রিসভা ও সংসদকে বহাল রেখে মেয়াদ পূর্তির তিনমাস আগে নির্বাচনের বিধান রেখে তিনি সংবিধান সংশোধন করেছেন। আবার সংবিধানের যে কোন ধারার বিরোধিতাকে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক অপরাধ গণ্য করে এতে ৭ (ক) উপধারা সংযোজন করেছেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর উপর তার সরকার নির্যাতনের স্টীম রোলার চালাচ্ছেন। বিএনপি'র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এখন বাইশ হাজার মামলা ঝুলছে এবং জামায়াত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আছে চৌত্রিশ হাজারেরও বেশি মামলা। এসব মামলার আসামী যথাক্রমে সোয়া লক্ষ ও সাড়ে তিন লক্ষ। একটি পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী কারাগার এখন রাজবন্দীশালায় রূপান্তরিত হয়েছে। বন্দী শীর্ষে জামায়াত এবং দ্বিতীয় অবস্থানে বিএনপি। আইনশৃক্মখলা বাহিনী এবং দলীয় ক্যাডাররা দিন দিন হিংস্র থেকে হিংস্রতর হয়ে উঠছে। আন্দোলনকারীদের উপর এখন গ্যাস, মরিচের গুঁড়া এবং জীবন বিধ্বংসী গ্রেনেড ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকার যেদিকে এগুচ্ছেন তাতে মনে হচ্ছে না যে, তারা ফলপ্রসূ ও সকল দলের অংশগ্রহণে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চান। কিন্তু তার পরও প্রধানমন্ত্রীর ভোট চাওয়ার বিষয়টি বোদ্ধা মহলে অনুসন্ধিৎসার উদ্রেক করে।
আমার মনে হয় কূটবুদ্ধি ও ছলচাতুরীতে আওয়ামী লীগ প্রধান ও তার সরকারের সমকক্ষ কোন নেতা ও দল বাংলাদেশে নাই। ক্ষমতায় থাকার একটা মহান পরিকল্পনাকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার রূপকল্প- ২০২১ প্রণয়ন করেছে। এই রূপকল্প তাদের ক্ষমতায় থাকার একটা মহাপরিকল্পনাও। কেউ কেউ বলে থাকেন তাদের যাত্রাপথে তারা সেনাবাহিনীকে সর্বদা প্রতিবন্ধক হিসেবেই বিবেচনা করে এসেছেন। যদিও প্রতিদ্বনদ্বী দমন তাদের অগ্রযাত্রা রোধ এবং নিজস্ব দলীয় স্বার্থে এই বাহিনীকে ব্যবহার করার খায়েশ তারা সব সময় করে এসেছেন। কিছুদিন আগে জেনারেল এরশাদ একটা সত্য কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, ১৯৮২ সালে তার ক্ষমতাগ্রহণকে শেখ হাসিনাই সর্বপ্রথম অভিনন্দন জানিয়ে ছিলেন। জেনারেল নাসিমকে দিয়ে অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা দেশবাসী ভুলেনি। এক-এগারো সৃষ্টির জন্যে তার দলের পক্ষ থেকে জেনারেল শফিউল্লাহ ও জেনারেল হারুন ২০০৬ সালে একাধিকবার তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের দরবারে ধরনা দিয়েছিলেন। ক্ষমতায় গিয়ে তারা পর্যায়ক্রমে দু'টি কাজ করেছেন বলে মানুষের মধ্যে একটা বদ্ধমূল ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। এর একটি হচ্ছে বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তা হত্যার মাধ্যমে এ বাহিনীর ঘাড় মটকে দেয়া এবং দ্বিতীয় কাজটি হচ্ছে সেনাবাহিনী কর্তৃক ক্ষমতাগ্রহণকে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপরাধ বলে আখ্যায়িত করে সংবিধানে নতুন ধারা অন্তর্ভুক্তকরণ। আওয়ামী লীগের মহাপরিকল্পনার উল্লেখযোগ্য অবশিষ্ট অংশগুলো হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিদ্বনদ্বীদের নির্মূল ও পঙ্গু করার লক্ষ্যে যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে জামায়াতকে প্রথমে এবং পরে বিভিন্ন অভিযোগে বিএনপিকে সাইজ করা। প্রশাসন, আইনশৃক্মখলা বাহিনী ও বিচার বিভাগের নির্লজ্জ দলীয়করণ হচ্ছে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার আরেকটি কৌশল এবং বর্ণিত মহাপরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তাদের এই মহাপরিকল্পনার আরেকটি অংশ হচ্ছে দলীয় সরকার এবং দলীয় এমপিদের ক্ষমতায় বহাল রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠান। এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তারা এগিয়ে যাচ্ছেন। একজন মন্ত্রী এবং ১৪ দলীয় নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জামায়াতের কারাবন্দী শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির আদেশ তারা কার্যকর করবেন। বিচার কিন্তু এখনো চলছে। তা শেষ হবার আগেই তারা ফাঁসির রায় কার্যকর করার ঘোষণা দিয়ে বোঝাতে চাচ্ছেন যে, রায়টি আগেই ঠিক করা আছে এবং তাকে আনুষ্ঠানিকতা দেয়াই শুধু বাকি আছে। নির্বাচনের বছর এই রায় কার্যকর করার পদক্ষেপ নেয়া হলে তারা মনে করেন যে, জামায়াত আন্দোলনে নেমে যাবে, তারা সেখানে ব্যস্ত থাকবে। এই সুযোগে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের অভিযোগে নতুন ও পুরাতন মামলা চালু হবে। তাদের নির্বাচনে অযোগ্যও ঘোষণা করা হতে পারে। এই অবস্থাতেই আগামী নির্বাচন হবে এবং তারা জয়ী হয়ে পুনরায় ক্ষমতায় আসবেন। নির্বাচন হবে প্রহসন মাত্র। বিরোধী দলীয় জোট এক্ষেত্রে অর্থবহ কিছু করতে পারবেন কিনা তা বলা মুশকিল। আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে মানুষ এখন অতীষ্ঠ, তাদের জীবন ওষ্ঠাগত। তারা এথেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজছেন। বিরোধী দলের আন্দোলনকে তারা স্বাগত জানাচ্ছেন। কিন্তু এই আন্দোলন দমনে সরকারি নির্যাতন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যেখানে তার গতিকে বৃদ্ধি ও বেগবান করার কথা তা হচ্ছে না। মানুষ বলছেন, এক পা এগিয়ে দু'পা পিছিয়ে আন্দোলন হয় না। আবার ভদ্রলোকী আন্দোলন দিয়ে আওয়ামী লীগের ন্যায় জালেম একটি সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করাও সম্ভব নয়। এই অবস্থায় আগামী দু'এক মাসের মধ্যে বিরোধী দলগুলো যদি আন্দোলনে ফলপ্রসূ গতিশীলতা আনতে না পারেন তাহলে অবরুদ্ধ অফিস ভবন ও কারাগারের লৌহ কপাটের মধ্যেই তাদের থাকতে হতে পারে। আওয়ামী লীগ দেশবাসীর ইচ্ছার বিরুদ্ধেই নির্বাচনের নাটক সাজিয়ে পুনরায় ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করবে। এই অবস্থা কি আমরা কেউ চাই?
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন