র্যাব বা পুলিশের পরিচয়ে অপহরণ, গুম, খুন এখন অতি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কোথাও কোথাও এমনও অভিযোগ আছে, ব্যক্তিগত শত্রুতা হাসিল করতে অনেকেই র্যাব বা পুলিশকে ভাড়া পর্যন্ত করতে পারছে। নির্ধারিত অর্থের বিনিময়ে তারা এসব অপকর্ম করে থাকে বলে অভিযোগ উচ্চকিত হয়ে উঠছে। পরনে পুলিশের পোশাক, হাতে ভারী অস্ত্র, কোমরে গোঁজা হাতকড়া, আসার বাহন পুলিশের গাড়ি, হঠাৎ করেই দিনদুপুরে বা মধ্যরাতে যেকোনো নাগরিককে যেকোনো সময় তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তারপর দাবি করা হচ্ছে বিপুল অঙ্কের অর্থ। অনাদায়ে গুম হয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। দূরে কিংবা কাছে কোথাও মিলছে তার লাশ। গুলিবিদ্ধ। একই ঘটনা হচ্ছে র্যাবের ক্ষেত্রেও। র্যাবের গাড়িতে আগমন। পরনে কালো পোশাক। মাথায় কালো কাপড় বাঁধা। হাতে ভারী অস্ত্র। মধ্যরাতে কারো দুয়ারে হানা দিচ্ছে। পরিবারের লোকজনের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে কাউকে কাউকে। তারপর বিপুল অঙ্কের অর্থের দাবি। অন্যথায় গুম কিংবা খুন। এগুলো অহরহ হচ্ছে।
সম্প্রতি এক সহযোগী সরেজমিন থানায় ঘুরে এক রিপোর্ট দিয়েছে। বিশেষত হরতালের আগে কিংবা অন্য কোনো উপলক্ষে। যেকোনো মামলায় পুলিশ এখন হাজার হাজার অচেনা লোককে আসামি করছে। অমুক, অমুক, অমুক এবং আরো তিন হাজার। এ কেমন ধারার বিচার বা প্রহসন। এই তিন হাজারের মধ্যে আমি যে নেই, তার কী প্রমাণ আছে। হঠাৎ একদিন মধ্যরাতে এই দুই বাহিনীর কোনো একটি দল এসে হাজির হলোÑ মাদারটেকে গাড়ি পোড়ানো মামলায় তুমি আসামি। সাথে চলো। অথচ মাদারটেক কোথায়, আমি তা জানিও না। তারপর বাকিটা আল্লাহ ভরসা। তেমনি ঘটনা ঘটছে থানাগুলোতে। সহযোগী লিখেছে, সন্ধ্যার দিকে থানাহাজতে গিজগিজে বন্দী। ভোরের দিকে ফাঁকা। রাতের মধ্যে লাখ লাখ টাকা ডিল হয়েছে। টাকা দিয়ে পরিবারের সদস্যরা ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে স্বজনদের। আমি আমার সন্তানদের শিখিয়েছি, যেকোনো বিপদে পড়লে দৌড়ে পুলিশের কাছে যাবে। তার সহায়তা নেবে। আমি শেখাইনি যে, পুলিশ থেকে দূরে থেকো। পুলিশে বড় ভয়।
অথচ এ রকম তো হওয়ার কথা ছিল না। পুলিশের হওয়ার কথা ছিল মানুষের বিপদের বন্ধু। যেকোনো দুর্বৃত্তের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার আশ্রয়। পুলিশ বাহিনী তৈরিও করা হয়েছিল সেই লক্ষ্য সামনে নিয়ে। কিন্তু সেদিনের অবসান ঘটেছে। পুলিশ বাহিনী কখনো দুর্নীতির ঊর্ধ্বে ছিল না কিংবা সর্বাংশে ন্যায়পরায়ণ ছিল না। পুলিশ ঘুষ খায়Ñ এ কথা সর্বজনবিদিত। তার পরও কিছু ভরসা সব সময় তাদের ওপর ছিল। বিপদে-আপদে মানুষ পুলিশের সহায়তাই চেয়েছে। র্যাবের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। র্যাব যখন গঠন করা হলো তখন চরম আতঙ্কে পড়েছিল দেশের শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসীরা। তাদের অধিকাংশই পালিয়ে গিয়ে বিদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। একবার এক ক্ষৌরকারের দোকানে চুল কাটাতে বসেছিলাম। তখন ছয়-সাত বছরের একটি শিশুকেও চুল কাটাতে নিয়ে এলেন তার অভিভাবক। ক্ষৌরকার জানতে চাইলেন, তোমার চুলের ছাঁট কার মতো দেবো? অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান কিংবা বাংলাদেশের রাজ্জাকের মতো? ছেলেটি ঝটপট জবাব দিলোÑ না, র্যাবের মতো দেবেন। ক্ষৌরকার বললেন, র্যাবের ছাঁট তো দেখা যায় না। কালো কাপড়ে ঢাকা থাকে। তাহলে? জবাবে সে বলল, তা আমি জানি না। র্যাবের মতো ছাঁট দেবেন।
এই উদাহরণের মর্মার্থ হলো, র্যাবের সুনাম শিশুদের কাছ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। নিশ্চয়ই অভিভাবকেরা ওই শিশুটির কাছে র্যাবের সুনাম করেছিলেন। আজ সে সুনাম ধুলায় মিশে গেছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই র্যাব-পুলিশকে যেমন ব্যাপকভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে, তেমনি এসব বাহিনীর জবাবদিহিতাও শূন্যের কোঠায় পৌঁছে গেছে। রাজনীতিক দলনে এই দুই বাহিনীকে ব্যবহার করার ফলে তারাও ক্রমে ক্রমে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। উপরন্তু সরকারের সর্বমহলে ব্যাপক হারে দুর্নীতির যে বিস্তার ঘটেছে, তাতে র্যাব-পুলিশও টাকা বানানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। আর সে হিসেবে তারা করছে গ্রেফতারসহ বিভিন্ন বাণিজ্য ও অপকর্ম। এর সর্বশেষ উদাহরণ বিএনপির ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মজুমদার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। এই ওয়ার্ডেরই সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আলম দুই বছর আগে গুম হয়ে যান। তাকে তুলে নিয়ে যায় র্যাব। এরপর তার লাশও পাওয়া যায়নি। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে অপহরণ করে র্যাব। এই অপহরণের সময় এক পুলিশ কর্মকর্তা অপহরণকারীদের চ্যালেঞ্জ করলে র্যাব তাকে তাদের পরিচয়পত্রও দেখিয়েছিল। সে খবর পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। তারপর যথারীতি র্যাব-পুলিশ ওই অপহরণের দায় অস্বীকার করে। ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালকের সন্ধান এখনো মেলেনি।
নিহত রফিকুল ইসলাম মজুমদার ঢাকা থেকে ঝিনাইদহে তার শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে র্যাব সদস্যরাই তাকে তুলে নিয়ে যায় বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। র্যাব ৬-এর ওই টিমের সবার গায়ে ছিল র্যাবের কালো পোশাক। মাথায় কালো কাপড়। ঘাড়ে র্যাব লেখা। আর গাড়িতেও ছিল র্যাবের স্টিকার। সাথে বড় অস্ত্র ছিল। তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ৬ ঘণ্টার মধ্যেই তার লাশ পাওয়া যায় কুষ্টিয়ার কুমারখালীর এক শস্যক্ষেতে। তার হাতে তখনো ‘পুলিশ’ খোদাই করা হ্যান্ডকাফ লাগানো ছিল। কিন্তু তাকে অপহরণের কথা অস্বীকার করেছে র্যাব ও পুলিশ।
তাহলে কে তাকে তুলে নিয়ে গেল? র্যাবের গাড়ি নিয়ে, র্যাবের অস্ত্র নিয়ে, র্যাবের পোশাক পরে যারা তাকে তুলে নিয়ে গেল, তারা কি কেউ নয়? সবই কি ভৌতিক কারবার? সরকারকে তো জবাব দিতে হবে। সরকারের জবাব পরিষ্কার! বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আপনারা তদন্ত করে দেখছেন আর জনগণের নাভিশ্বাস উঠছে। কত অবলীলায় একটি সরকার একজন রাজনৈতিক নেতার হত্যাকাণ্ডকে এমন ঢোঁক মেরে গিলে ফেলতে পারছে। রাজনৈতিক নেতা বলে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। কিন্তু তিনি যদি হতেন কোনো সাধারণ মানুষ, তাহলে এমনকি রাজনৈতিক নেতারাও সেদিকে ভ্রƒক্ষেপ করতেন না। সাধারণ মানুষের নিয়তি এখন এ দেশে এমনই।
রফিকুল ইসলামের হাতে পুলিশের হ্যান্ডকাফ কিভাবে এলো, এর জবাবে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, এসব পোশাক বা হ্যান্ডকাফ বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। বাহ, কী চমৎকার জবাব! পুলিশ কি তবে জানে না যে, এগুলো দিয়ে খুনের মতো মারাত্মক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটানো সম্ভব? তাই পুলিশের এ জবাব দায়িত্ব এড়ানোর কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। এগুলো যারা বিক্রি করছে তারা অপরাধীদের অপকর্মের সহায়ক। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন?
শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী এখন পড়ছি। বইটি অফিসে রাখা। প্রতিদিন দশ-বিশ পৃষ্ঠা পড়ার সুযোগ হয়। পাকিস্তানি শাসকেরা যে কায়দায় বিরোধীদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছিল, তার বিস্তারিত বিবরণ যথাসম্ভব ওই গ্রন্থে আছে। বইটি পড়তে পড়তে আমার মনে হয়েছে, প্রতিদিন কাগজের একেবারে শীর্ষে শেখ মুজিবের বাণীগুলো ছাপি। স্বৈরাচার ও গণতন্ত্র, বিরোধীদের ওপর নির্যাতন এই নিয়ে শেখ হাসিনা যা করছেন, সে বিষয়ে তার পিতার অনুভূতি কী ছিল সেটা যেন তিনি দেখেন। দেখা যাক, কবে নাগাদ তা পারি। কিন্তু বইটি পড়তে পড়তে বারবার মনে হচ্ছিল, শেখ হাসিনার শাসনকালে যদি শেখ মুজিবুর রহমান একজন নিতান্তই অচেনা রাজনৈতিক কর্মী হতেন, তাহলে তার প্রতিও শেখ হাসিনার আচরণ কী হতো? আমি জানি না, শেখ হাসিনা নিজে শেখ মুজিবের অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ার সময় করতে পেরেছেন কি না। যদি তিনি পড়ার সময় করতে পারতেন, তবে তার শাসনের উন্নতি ঘটত।
শেখ মুজিবুর রহমান তার পরিণত বয়সে লিখেছিলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব যখন জনসমর্থনহীন হয়, তখন সে নেতৃত্ব আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। আমলাতন্ত্র এক বিশাল মতলবি প্রতিষ্ঠান। তারা ইস্কান্দার মির্জা এবং নুরুল আমিনকে দিয়ে কী কী করিয়েছেন না করিয়েছেন, সে বিষয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের মূল্যায়ন আছে। শেখ হাসিনা শেখ মুজিবুর রহমানের তুলনায় রাজনীতিতে বালিকা মাত্র। তিনি যদি ওই আত্মজীবনী পড়ে থাকেন, তাহলে তার উপলব্ধি করার কথা ছিল যে, সরকার কিভাবে পরিচালনা করতে হয়, কী করলে সরকারের ভালো হয়, কী করলে সরকারের মন্দ হয়, কী করা উচিত, কী করা উচিত নয়।
শেখ মুজিবুর রহমান যা চেয়েছিলেন, তিনিও শেষ পর্যন্ত সেভাবে বাংলাদেশের শাসনকার্য পরিচালনা করতে পারেননি। যখন রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে পেলেন, তখন তিনিও ক্ষমতান্ধ হয়ে পড়েছিলেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে (এ পর্যন্ত আমি যতটুকু পড়েছি) তিনি যা উপলব্ধি করেছিলেন, ১৯৭২ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি তার একেবারেই বিপরীত মেরুতে অবস্থান নেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার জন্য তিনি পুলিশি ব্যবস্থার বাইরেও রক্ষীবাহিনী গঠন করে তাদেরকে ব্যবহার করতে শুরু করেন। তারা বিরোধী দলের ৪০ হাজার লোককে হত্যা করে। নরহত্যা মহাপাপÑ এ কথা শেখ মুজিবুর রহমান নিজে জেলখাটা দাঙ্গাকারীদের বলেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার শাসনকালে নরহত্যা ও নারী নির্যাতন এক উৎসবে পরিণত হয়েছে।
এগুলো পরবর্তী সময়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যদি সময়-সুযোগ পাই। কিন্তু বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মজুমদার হত্যার ঘটনার পর তার জায়গায় নিজেকে দাঁড় করিয়ে বিবেচনা করার চেষ্টা করলাম। আমার তো কোনো উদ্বেগ নেই। আমি কোনো অপরাধ করিনি। বিদ্যুৎ পাই না সে কথা আলাদা। এখন শুধু আলো জ্বলার জন্য আমার বিদ্যুৎ দরকার। এসির জন্য নয়। এমনকি হিটারের জন্যও নয়। গ্যাস সঙ্কটের ভয়ে আমি মাফলার-চাদর মুড়ি দিয়েও হিটার চালাই না। কারণ গ্যাস নিতে কখনো কখনো গ্যাসের লাইনে ১ ঘণ্টারও বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ঢাকা শহরের বেশির ভাগ গ্যাস স্টেশনে গ্যাস নেই। লাইন দিয়ে লাভ কী!
কিন্তু বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মজুমদারের হত্যাকাণ্ডের পর আমার ভেতরে এক অদ্ভুত পরিবর্তন ঘটল। আমি মনে মনে জীবনে এই প্রথম র্যাব-পুলিশকে ভয় করতে শুরু করলাম। আমার জানা মতে, আমি জীবনে কোনো অপরাধ করিনি। আমার বিরুদ্ধে আদালতে কোনো মামলাও নেই। মামলা করার কোনো কারণও নেই। আমি একজন অতি নিরীহ সাংবাদিক। লেখালেখি ছাড়া আর কিছুই করি না। আগে গল্প-উপন্যাস লিখতাম। বইটই লিখতাম। এখন বয়স হয়েছে, পারি না। সংবাদপত্রে কলাম লিখে কিংবা সম্পাদনা করে জীবন নির্বাহ করি।
পুলিশের হ্যান্ডকাফ দেখে আঁতকে উঠলাম। স্ত্রী-সন্তানদের আকুতির চিত্র টিভি চ্যানেলে ও সংবাদপত্রে দেখলাম। দেখে সত্যি সত্যি চমকে উঠেছি। এভাবে মানুষকে খুন করা যায়? ওই জায়গায় নিজে দাঁড়ালাম। আমি বাসায় ঘুমিয়ে আছি। মধ্যরাতে কেউ দরজায় নক করল। হয়তো বলল, আমরা র্যাব। আপনাকে গ্রেফতার করতে এসেছি। মাণ্ডায় আপনি গাড়িতে আগুন দিয়েছেন। ফলে আপনাকে গ্রেফতার করা হলো। আমার ক্ষেত্রে হয়তো এই ন্যূনতম সৌজন্য তারা দেখাতে পারে। কিন্তু অন্য রাজনৈতিক কর্মীদের ক্ষেত্রে তা যে দেখাবে না, সেটা একেবারে নিশ্চিত।
এটা কি সমাজ? এটা কি নাগরিকের জীবন? কোথাও যদি কোনো সরকার থেকে থাকে, তাহলে তারা তো এর প্রতিকার করবে। কই, প্রতিকার তো দেখি না। সম্ভবত এই সরকারের আমলে প্রতিকার দেখাও যাবে না। আমরা যেটা দেখি, তা হলো গ্রামাঞ্চলে যখন ডাকাতি বেড়ে যায়, তখন গ্রামের লোকজন ডাকাতদের প্রতিরোধে পাহারার আয়োজন করে। অর্থাৎ নিজেরাই নিজেদের হাতে আইন তুলে নেয়। এসব কিছু থেকে কি সরকার কোনো রকম শিক্ষাই নেবে না?
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন