নতুন বছরটি সরকারের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জের বছর হবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল। কিন্তু সরকার বিষয়টি সেভাবে উপলব্ধি করছেন বলে তো মনে হয় না। উপলব্ধি করলে সরকারের প্রধান ব্যক্তি সাপ ও ওঝা নিয়ে এতটা ব্যস্ত হয়ে ওঠেন কেমন করে? গণতান্ত্রিক সমাজে সরকার ও বিরোধী দলের বিতর্ক নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে বিতর্ক কতটা জনসম্পৃক্ত বিষয় নিয়ে হচ্ছে, কতটা সঙ্গতভাবে হচ্ছে তা নিয়ে নাগরিকদের মনে প্রশ্ন আছে। দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ ও মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও আচরণ যে জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কতটা উপলব্ধি করেন তা নিয়েও প্রশ্ন জেগেছে। দেশের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য ও আচরণের মাধ্যমে জনগণকে অনেক কিছুই শেখাতে পারতেন, মানদন্ড স্থাপন করতে পারতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, তারা নিজেদের দায়িত্বকে সেভাবে উপলব্ধি করেননি। ক্ষমতার রাজনীতি তাদের এমন এক ঘোরের মধ্যে ফেলে রেখেছে যে, অনেক সময় তারা সুস্থভাবে ভাবার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেন, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপলব্ধি করতেও ব্যর্থ হন। ফলে তারা মানুষের কাছে আর মানদন্ড হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন না। অনেক রাগী তরুণ তো বলেই ফেলছেন, ওনাদের কাছে শেখার কি আছে, বরং ওনাদের থেকে দূরে থাকাই ভালো। এটাও আমাদের জন্য এক ট্র্যাজেডি। জানিনা এই ট্র্যাজেডির মর্মকথা আমাদের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী ও শীর্ষ রাজনীতিবিদরা কখন উপলব্ধি করবেন?
পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, জনগণকে দেয়া নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ, ঘরে-বাইরের সম্পর্কের টানা-পোড়েন কাটিয়ে জনমত পক্ষে নিয়ে বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলা, সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের দায়িত্ব পালনে সাফল্য অর্জন এখন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে উঠেছে। আরো লক্ষণীয় বিষয় হলো, বছরের শুরুতেই জ্বালানি তেলের ৫ম দফা দাম বাড়িয়ে সরকার বিরোধী দলের হরতাল কর্মসূচির মুখোমুখি হয়েছে। আর দাতাদের চাপও ক্রমেই বাড়ছে। পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে ফিরে আসা তো দূরের কথা, দাতারা এখন সরকারের বিশেষ করে দেশী-বিদেশী অর্থায়নে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সব প্রকল্পের তদন্ত চায়। পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি থলের ভেতর আর কি কি রয়েছে তা নিয়েও রয়েছে বড় কৌতূহল। বিশেষজ্ঞরা এখন সেদিকেই তাকিয়ে আছেন। এসব বিষয় নিয়ে ভাবতে গেলে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা হলো, সামনের দিনগুলোতে সরকার দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হলে একের পর এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে সরকারকে। বিষয়টি সরকার উপলব্ধি করলেই মঙ্গল।
ওঝা আর সাপের গল্প বাদ দিয়ে এখন সরকারের উচিত হবে যৌক্তিকভাবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলার সাথে সাথে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসন্ন নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার ব্যাপারে গণআকাঙ্ক্ষার অনুকূলে পদক্ষেপ নেয়া। সরকার নিশ্চয় এতোদিনে বিভিন্ন এজেন্সি ও দলীয় নেতাদের সরবরাহকৃত তথ্যের ভিত্তিতে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন যে, সামনের নির্বাচন পদ্ধতির ব্যাপারে জনগণ কি চায়? জনগণ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় না, বরং চায় নির্দলীয় তথা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। নানা ব্যর্থতার মধ্যেও বর্তমান সরকার যদি গণআকাঙ্ক্ষার অনুকূলে একটি নির্দলীয় তথা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে শান্তিপূর্ণভাবে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করে যেতে পারে তবে সেটা সরকারের জন্য একটি গর্ব করার মত বিষয় হতে পারে। আমরা মনে করি, সরকার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে নির্বাচনের ব্যাপারে সঙ্গত ঘোষণাটি দিলে অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সরকারের জন্য সহজ হয়ে উঠতে পারে। তবে সরকার বিষয়টি উপলব্ধি করে কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন