বুধবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৩

ছাত্রলীগ ২০১২


আরো দু’টি বড় ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে বাদ দিয়ে কেবল ছাত্রলীগের আমলনামা তৈরি করা ঠিক হবে না। মুশকিল হলো অন্য জায়গায়; গত বছরে ছাত্রদলকে সক্রিয় দেখা যায়নি। ২০০৬ সালে জরুরি সরকার ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গুটিয়ে যায় এরা। পালাবদলের প্রথম ধাক্কায় এরা ছিটকে পড়েছিল। এরপর এরা প্রায় অস্তিত্বহীন থেকেছে। একই অবস্থা অবশ্য ছাত্রলীগেও দেখা গিয়েছিল। ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের পর দিন মধ্য রাতে একযোগে দেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তারা সটকে পড়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে পালিয়ে যাওয়ার সেই দৃশ্য বড়ই কৌতুক উদ্রেগকারী ছিল। মধ্য রাতে ফলাফল ঘোষণার শুরুতে লেজ গুটিয়ে হল ছেড়ে নিরাপদ আস্তানায় চলে যায়। কেউ তাদের পেটানোর জন্য সামনে দাঁড়ায়নি। বা কেউ পেছন থেকে হাঁকডাক দেয়নি। এ পালানো অন্যায়কারী অত্যাচারীর পলায়ন।

বিগত ২০ বছরের বেশি সময় ইসলামী ছাত্রশিবিরকে দেখা গেছে সরকারবিরোধী ছাত্রসংগঠনের ভূমিকায়। চারদলীয় জোটের শাসনের সময় ছাত্রদল তাদের মোকাবেলা করেছে। একইভাবে আওয়ামী লীগ শাসনের সময় ছাত্রলীগ তাদের মোকাবেলা করছে। লক্ষণীয় বিষয় ছিল, গত বছর ছাত্রসংগঠনটিকে একসাথে ছাত্রলীগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং সংবাদমাধ্যমÑ চারটি ফ্রন্টে লড়তে হয়েছে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ অভিযানে অস্তিত্ব রক্ষায় এরা যখন মরিয়া তখন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তাদের বিরুদ্ধে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। একই সময় সংবাদমাধ্যমগুলো একচেটিয়া তাদের বিরুদ্ধে খবর দিয়েছে। চোরাগোপ্তা হামলা, নাশকতা, ল্যাপটপ পরিকল্পনা এসব নামে অসংখ্য ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। ছাত্রলীগ যখন রাস্তায় বিশ্বজিৎকে পিটিয়ে হত্যা করছিল, রেশমা-তুষিকে বিষপানে হত্যা করছিল, ছয় বছরের শিশুকে ধর্ষণ করছিল, পিটিয়ে শিক্ষকের হাড়গোড় ভেঙে দিচ্ছিল তখন ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে করা খবরগুলো পত্রিকা ও টিভির পর্দায় কেবল প্রচারণা হিসেবে দেখেছে পাঠকেরা। এ কারণে বাংলাদেশের সংবামাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে পড়ছে।
অসীম প্রতাপ নিয়ে ছাত্রলীগ যমের ভূমিকায় ছিল ২০১২ সালে। বছরটি শুরু হয় নিজ সংগঠনের সদস্য যুবায়েরকে হত্যা করে। ছাত্রলীগ ভিসি গ্রুপের তাড়া খেয়ে যুবায়ের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসছাড়া হন। সেই ভিসি শরীফ এনামুলের কাছ থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেয়েই ৮ জানুয়ারি পরীক্ষা দিতে ক্যাম্পাসে ঢোকেন। সতীর্থরা কুপিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে তাকে হত্যা করে প্রমাণ করল ভিসি নন, ছাত্রলীগই ক্যাম্পাসের প্রধান প্রশাসক। তার আগে বছরের প্রথম দিনই পুলিশ হত্যার মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ আলোচনায় থাকতে পারত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ওই পুলিশ সদস্যকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কোপালেও তিনি মারা যাননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মাখদুম হল গেটে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। অপরাধ ছিল ধর্মীয় ওয়াজ শোনা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে যান হল শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সুশান্ত। তার নেতৃত্বে ছাত্রলীগ সদস্যরা দুই পুলিশকে গেটের বাইরে নিয়ে উপর্যুপরি কোপাতে থাকেন। একজন পালিয়ে যেতে সমর্থ হলেও অন্যজন ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ধরাশায়ী হন। কাঁপতে কাঁপতে পুলিশ কর্মকর্তারা মুমূর্ষু কনস্টেবলকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলন। কর্মকর্তা কাউকে জিজ্ঞাসা করেননি, কে এই নির্মম আঘাত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। বিচার তদন্ত এসব নিয়ে তৎপরতা দেখাতে সাহস পেল না কেউ।
যুবায়েরকে দিয়ে শুরু আর বছর শেষ হয়েছিল বিশ্বজিৎকে দিয়ে। গরিব দর্জি বিশ্বজিৎকে রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে প্রাণ বধ করেছে এরা। জান কবজ হওয়া পর্যন্ত প্রতিযোগিতা করে পাষণ্ডরা তার ওপর ধারালো অস্ত্র চালিয়েছে। বিশ্বজিতের ক্ষীণ আশা ছিল হয়তো ধর্মীয় পরিচয় দিলে তিনি রক্ষা পাবেন। হত্যার জন্য যারা প্রতিযোগিতা করছিল তাদের মনের খবর বিশ্বজিৎ জানতেন না। ছাত্রলীগের মনোস্তত্ত্ব এ হত্যাকাণ্ডে প্রকাশ পেয়েছে। অপরাধীরা প্রেসের ক্যামেরা দেখলে যেখানে মুখ ঢাকে সেখানে ছাত্রলীগের এ সদস্যরা যেন হত্যালীলায় তাদের বীরত্ব প্রকাশ পাক তা দেখাতে চাচ্ছিল! তারা এ পৈশাচিকতাকে রাজনৈতিক পদন্নোতির একটি সুবর্ণ সিঁড়ি হিসেবে দেখছিল। কেউ বলেছেন একটি চাকরি পাওয়া নিশ্চিত করতেন হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। তারা দেখাতে জোর অপচেষ্টা চালায় ব্যক্তিগতভাবে মানুষ বধে তারা কতটা পারঙ্গম। বড় ভাইদের রাজনৈতিক গুরুত্বের মানদণ্ডটা তারা ভালো করে জানে।
ছাত্রলীগ ৯ জনকে হত্যা করেছে এ বছর। যুবায়ের ও বিশ্বজিতের মতোই আরো সাতটি তরতাজা প্রাণকে এরা প্রকাশ্য দিবালোকে শেষ করেছে। খালবিলে নাম না জানা যে অসংখ্য লাশ পাওয়া যাচ্ছে সেখানে ছাত্রলীগের অবদান কতটুকু তা জানার সাধ্য কারো নেই। বাংলাদেশের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ডজন ডজন বাহিনী সবাই মহাব্যস্ত নাশকতা আর সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র উদঘাটনে। নোবেলজয়ী ড. ইউনূস সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান গ্রামীণের শক্তি দইয়ে ক্ষতিকারক ফরমালিনের পরিমাণ নিয়ে রাসায়নিক পরীক্ষা ও বিরোধীদলীয় নেতা ফখরুল ইসলামের ময়লার গাড়িতে ঢিল মারার রাষ্ট্রবিনাশী কর্মকাণ্ড তদন্তে এরা রাতদিন ব্যস্ত। বছরজুড়ে ছাত্রলীগ ১০৭৮ জনকে পিটিয়ে আহত করেছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনা এগুলো। এর বাইরে আড়ালে-আবডালে আরো কত মারধর, নির্যাতন ও লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটেছে, তা জানার সাধ্য নেই একই কারণে।
বিজয় দিবসে দুই তরুণীকে হত্যা করা হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর স্বামীবাগ মিতালী স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাচগান শেষে সূত্রাপর থানা ছাত্রলীগ সভাপতি আবু হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদ রেজাসহ এক বাসায় প্রমোদ আড্ডা হয় গভীর রাত অবধি। সেখানে মদসেবন করা হয়। রেশমা ও তুষি নামের দুই মামাতো ফুপাতো বোন বিষক্রিয়ায় মারা যান। একজন ছিলেন ছাত্রলীগ নেতার রক্ষিতা। গোপনে তাদের লাশ দাফন কাফন হয়েছে। সাংবাদিকেরা আত্মীয়স্বজনের সাথে কথা বলতে চাইলে ভয়ে কেউ মুখ খোলেনি। স্থানীয় পুলিশ এ ঘটনা জানলেও হত্যা তদন্তে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। দু’জন তরুণীর হত্যারহস্য নিয়ে নারী অধিকারের পক্ষে কাজ করা মহিলা সংগঠনগুলোর কোনো তৎপরতা দেখা গেল না। আমরা দেখেছি মগবাজারে হিজাব পরা ২১ জন নারীকে কোনো ধরনের অপরাধের অভিযোগ ছাড়াই গ্রেফতারে পুলিশের তৎপরতা। তাদের মধ্যে একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাও ছিলেন। এ মহিলাদের মুক্তির দাবিতে প্রেস কাবে আয়োজিত অনুষ্ঠান থেকে পুলিশ উল্টো ভাষাসৈনিক চেমন আরাসহ ১৩ মহিলাকে আটক করে। এদের কয়জনের কাছ থেকে বোরখা ছিনিয়ে নেয় পুলিশ।
একই সময় প্রকাশ্যে নারীরা ছাত্রলীগ সদস্যদের হাতে লাঞ্ছিত হচ্ছেন, কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। ১৪ এপ্রিল ১ বৈশাখের অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২০ তরুণীকে ছাত্রলীগ লাঞ্ছিত করে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ফি কমানোর জন্য আন্দোলনকারী ছাত্রীদের ওপর প্রকাশ্যে অত্যাচার চালায় এরা। প্রথম বর্ষ ছাত্রবরণ, নববর্ষের অনুষ্ঠানের মতো ছাত্র জমায়েতের অনুষ্ঠানে ছাত্রীদের বর্বর আক্রমণের অসংখ্য ঘটনা ছাত্রলীগ ঘটিয়েছে। ময়মনসিংহে ছয় বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করে এক ছাত্রলীগ নেতা। এগুলোর একটিরও বিচার হয়েছে এমন নজির নেই। নারী নেত্রীরা এ ছাত্রলীগ নেতার ফাঁসি চেয়ে মিছিল করেছে এমন দেখা যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বছর সবচেয়ে শক্তিশালী পক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হয় ছাত্রলীগ। ক্ষমতাচর্চায় ভিসিরা ছিলেন অনেক পেছনের কাতারে। পুলিশ প্রশাসন ছিল স¤পূর্ণরূপে ছাত্রলীগের সহযোগী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টরকে ছাত্রলীগ মারধর করে। তাকে কলার ধরে টেনে-হিঁচড়ে ক্যাম্পাসের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যায় তারা। প্রক্টর নিজেও আওয়ামী লীগের ধামাধরা। শিবির কেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে, এটা তার অপরাধ। নির্ধারিত সিট ছেড়ে অন্য আসনে কেন বসেছে এ প্রশ্ন করায় শিক্ষককে চরমভাবে অপমান করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বখাটে ছাত্রলীগ নেতা। প্রতিপক্ষ সংগঠনের বিরুদ্ধে যখন সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়েছে ছাত্রলীগ, পুলিশ পাশে থেকে নিবিড়ভাবে তাদের সহযোগিতা করেছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে তা স্পষ্ট দেখা গেছে।
শিক্ষকেরা মার খাচ্ছেন, কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। একদল শিক্ষক লজ্জাজনকভাবে ছাত্রলীগের সহযোগীই থেকেছেন সবসময়। এর ফলে সাধারণ ছাত্রদের নিগ্রহ প্রকট হয়েছে। ইজ্জত যাচ্ছে অহরহ শিক্ষকদের। বছরের একেবারে শেষ প্রান্তে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ঘটল এমনই একটি ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয় অমর একুশ হল ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল হক মুন্নার নেতৃত্বে একদল উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র ২০২ ও ২০৩ নম্বর রুমের আবাসিক ছাত্রদের গালিগালাজ করে। তিনজন আবাসিক ছাত্রের মোবাইল ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়। পর দিন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ও হল প্রভোস্টের কাছে এ ব্যাপারে এরা প্রতিকার চায়। ঘটনার বিচার না করে হল প্রশাসন উল্টো নির্যাতিত ছাত্রদের হল থেকে বহিষ্কার করেছে। অপরাধী এবং বিচারক যেন এক পক্ষে চলে গেলেন। রায় গেল নির্যাতিত ফরিয়াদিদের বিরুদ্ধে। তা কার্যকর হলো দ্রুততার সাথে। ৩০ ডিসেম্বর অন্য একটি ঘটনায় ছাত্রলীগের অন্যায়ের সহযোগী হিসেবে পাওয়া গেল রাজশাহীর মতিহার থানার পুলিশকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়াম মার্কেটে ফটোকপি করছিলেন দুই ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল হক তাদের ‘শিবির’ বলে আখ্যায়িত করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। পুলিশ উৎসাহের সাথে তাদের আটক করে। পুলিশ-ছাত্রলীগের এ খেলাটি এবার সারা দেশে ব্যাপক হারে চর্চা হচ্ছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কতটা শক্তিশালী তা গেল বছর দেখিয়ে দিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ পরিণত হয়েছিল নিয়োগবাণিজ্যে। মনে হলো ছাত্রলীগ নেতাদের কামাইরুজির জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলো। প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিতে গিয়ে তারা বেসামাল হয়ে গিয়েছিল। নির্ধারিত আসনের চেয়ে বেশিসংখ্যক প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল তারা। তাদের সবাইকে নিয়োগ দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। তার খেসারত অবশ্য ছাত্রলীগ নেতাদের নয়; দিতে হয়েছে ভিসিকে। দলের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য থাকার পরও ভিসিকে পদ ছাড়তে হয়েছে। ছাত্রলীগের অত্যাচারের টিকতে না পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসমাজ আন্দোলনে নামে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি সম্পাদকসহ ৩০ জন শিক্ষককে ছাত্রলীগ পিটিয়েছে। অপরাধীদের একজনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এমন দেখা যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণে ঠিকাদারির কাজ কারা পাবে, কাকে নিয়োগ দেয়া হবে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবেÑ প্রশাসনের এসব রুটিন কাজেও এ বছরে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের পছন্দের প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগ দিতে তারা ভিসিকে অবরুদ্ধ করে রাখে। তাদের কথামতো কাজের পাকা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভিসি সে দিন রক্ষা পেয়েছিলেন। চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি ছিল গতানুগতিক ব্যবসায়। এগুলো অবাধে তারা করেছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে। নিয়োগ ও ভর্তিবাণিজ্য এবার ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের পদ বিক্রি হয়েছে চড়াদামে। পদ ও পদবি বিক্রি আগেও ছিল। এবার এ ব্যবসায়ের আকার যেমন বেড়েছে এ দুর্নীতি প্রকাশ্য হয়েও পড়েছে। দলের গাজীপুর জেলা নেতারা কেন্দ্রীয় সভাপতির বিরুদ্ধে পদবাণিজ্যের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনেছেন। ছাত্রলীগ অনেকের লাঠিয়াল হিসেবেও ব্যবহার হয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ভূমিখেকোর পক্ষ নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জায়গা দখল করে দিয়ে নগদ কামিয়েছে এরা। একটি জাতীয় দৈনিক ছাত্রলীগ নেতাদের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামনোর ওপর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে দলটির তোপের মুখে পড়ে। প্রতিবেদনে কার ক’টি কোন মডেলের গাড়ি, কোথায় ফ্যাট ও প্লট রয়েছে এসব বিষয়ে প্রামাণ্য তথ্য প্রকাশ করেছে।
নতুন বছরটি কেমন যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় ক্যাম্পাসে একদল সাংবাদিককে পিটিয়ে তার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে ছাত্রলীগ। এসব সাংবাদিকদের অবশ্য তারা জঙ্গি আখ্যা দেয়নি। তবে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছিল। জ্ঞানচর্চার কোন লেবেল অর্জিত হবে তার ইঙ্গিতও তারা দিলো। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে এলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। মাওলানা আবুল কালাম আযাদ যিনি বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মুখোমুখি। তার সাথে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি ও স্বাধীন ভারতের শিক্ষামন্ত্রী মাওলানা আবুল কালাম আযাদকে গুলিয়ে ফেলেছে। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কংগ্রেসের এ নেতার গলায় ফাঁসির রজ্জু ঝুলিয়ে ‘স্বাধীনতাবিরোধী আবুল কালাম আযাদের ফাঁসি চাই’ পোস্টার ছাপিয়েছে। এ ধরনের পোস্টারসমেত প্ল্যাকার্ড হাতে আয়োজিত র‌্যালিতে যোগ দেন ভিসিসহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads