শুক্রবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১৩

‘তলে তলে' অন্য কোনো আয়োজন সেরে নেয়া হচ্ছে?



 আওয়ামী লীগ সরকারের বদৌলতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বিচিত্র পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, ক্ষমতাসীনরা একদিকে ‘তলে তলে' সমঝোতার লক্ষ্যে তৎপরতা চালানোর কথা প্রচার করে বেড়াচ্ছেন, অন্যদিকে আবার বিরোধী দলের ওপর দমন-নির্যাতন চালানোর কর্মকান্ডকেও জোরদার করছেন। এ ক্ষেত্রে সরকারের প্রধান শিকারে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। উল্লেখযোগ্য কোনো একজন জামায়াত নেতাকেই এখন আর বাইরে দেখা যাচ্ছে না। মিছিল-সমাবেশ ধরনের গণতন্ত্রসম্মত তৎপরতাও চালাতে পারছেন না তারা। একের পর এক সব নেতাকেই সরকার জেলের ভেতরে ঢুকিয়েছে। যে দু'-চারজনকে এখনো জেলের ভাত খাওয়ানো যায়নি তাদের প্রত্যেককেও ধাওয়ার মুখে রেখেছে র‌্যাব ও পুলিশ। সিটি জামায়াতের সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম বুলবুলের মতো নেতারা ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছেন বুলেটের আঘাতে। সব মিলিয়েই এক ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে সরকার।
ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে নিষ্ঠুর রসিকতাও কম করা হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর কথায় ও অঙ্গভঙ্গিতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, পরিকল্পিত সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রীতিমতো দৌড় শুরু করেছেন তিনি। প্রতিটি জনসভায়, এমনকি সরকারি খরচে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সমাবেশেও তাকে ভোট চাইতে দেখা যাচ্ছে। কৌশলও মন্দ নিচ্ছেন না তারা। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামরা শুধু নন, সরকার সমর্থক বুদ্ধিজীবী ও টকশোওয়ালারাও এমন সুচিন্তিত প্রচারণা চালাচ্ছেন, যা শুনে মনে হবে যেন প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও নির্বাচনী দৌড়ে জোরেশোরেই নেমে পড়েছে! বেগম খালেদা জিয়াও নাকি প্রধানমন্ত্রীকে অনুসরণ করছেন এবং এতদিনকার মতো আক্রমণ বাদ দিয়ে ‘সুশীল' বক্তব্য রাখতে শুরু করেছেন! এভাবে পান্ডিত্যপূর্ণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ অনুমানকেই সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে যে, আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপির কাছেও এখন সংসদ নির্বাচনই প্রধান বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রচারণা চালানোর সময় জামায়াতের ব্যাপারেও সুচিন্তিতভাবেই বক্তব্য রাখা হচ্ছে। সরকার সমর্থক বুদ্ধিজীবী ও টকশোওয়ালারা বোঝাতে চাচ্ছেন যেন বিএনপি এরই মধ্যে ক্ষমতাসীনদের ফাঁদে পা ফেলে আটকে গেছে। যেন বিএনপি সত্যি সত্যিই জামায়াতকে ‘রাজনৈতিক দায়' ও ‘বোঝা' মনে করছে এবং ‘আপদ' বিদায় করতে চাচ্ছে! কথাটাকে আরো খোলামেলাভাবে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ৩ জানুয়ারি ময়মনসিংহের সমাবেশেও তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে জামায়াত-শিবিরের ‘সঙ্গ' ত্যাগ করার উপদেশ দিয়েছেন। কারণ জানাতে গিয়ে পুনরাবৃত্তি করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জামায়াতের ‘সঙ্গ' ত্যাগ করলেই নাকি জনগণের মনে বিএনপির জন্য সমর্থন তৈরি হতে পারে! একই সঙ্গে ঢেঁকুর তুলতেও ভুল হয়নি প্রধানমন্ত্রীর। তিনি বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া নাকি কথিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের চেষ্টা চালাচ্ছেন!
প্রধানমন্ত্রী পুনরাবৃত্তি করেছেন বলেই এখানে বিশেষ করে তার দেয়া উপদেশ সম্পর্কে পুনরাবৃত্তি না করে পারা যায় না। এ ব্যাপারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য আগেই জবর শুনিয়ে রেখেছেন। পাঠকদেরও মনে পড়তে পারে, প্রধানমন্ত্রী প্রথমবার উপদেশটি ‘খয়রাত' করার একদিন পর গত ৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীকে ‘নিজের চরকায় তেল দেয়ার' পাল্টা উপদেশ দিয়েছিলেন মির্জা আলমগীর। বলেছিলেন, বিএনপি কি করবে না করবে, কার সঙ্গে থাকবে বা থাকবে না এবং কখন কিভাবে আন্দোলন করবে- এসব বিষয়ে শেখ হাসিনার বলার কোনো অধিকার নেই। বিএনপির ভালো-মন্দের জন্য বেগম খালেদা জিয়াই যথেষ্ট। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবিতে পরিচালিত আন্দোলন পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগও যে জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে রেখেছিল সে কথাও বিশেষ ইঙ্গিত সহকারেই স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন মির্জা আলমগীর। বলেছিলেন, স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদের পতন ঘটানোর এবং দেশকে গণতন্ত্রে ফিরিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে প্রায় দশকব্যাপী পরিচালিত আন্দোলনেও জামায়াতে ইসলামী শুধু বিএনপির নয়, আওয়ামী লীগেরও সঙ্গে ছিল। সুতরাং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে জামায়াতকে সঙ্গে রেখে কোনো দোষই করেননি বেগম খালেদা জিয়া।
অত্যন্ত কঠোর হলেও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করার কোনো সুযোগ ছিল না। কিন্তু যাকে বলে আওয়ামী লীগ সরকার! প্রধানমন্ত্রীকে কষে জবাব দেয়ার ক'দিনের মধ্যেই মির্জা আলমগীরকে কারাগারে ঢুকিয়েছে পুলিশ। মামলাও আবার যেমন তেমন দেয়া হয়নি। পুলিশের অভিযোগ, মির্জা আলমগীরের মতো এত বড় একজন ভদ্র ও সম্মানিত নেতা নাকি সিটি করপোরেশনের ময়লা-আবর্জনার গাড়ি পোড়ানোর কর্মকান্ডে নেতৃত্ব দিয়েছেন! সর্বশেষ পদক্ষেপের মধ্য দিয়েও ক্ষমতাসীনরা নিজেদের অশুভ উদ্দেশ্যের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। হাইকোর্ট দুটি মামলায় ছয় মাস করে জামিন দেয়ার পর ৩ জানুয়ারি অন্য দুটি মামলায় আবারও আটক করা হয়েছে মির্জা আলমগীরকে। বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না, নির্বাচনের ধোঁয়া তুললেও ক্ষমতাসীনরা চাচ্ছেন এমন পরিস্থিতি বজায় রাখতে যাতে বিরোধী দলগুলো সে নির্বাচনে অংশ না নিতে পারে। যাতে ফাঁকা মাঠে গোল দেয়া যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, মূলত সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীকে নির্মূল করে ফেলার ভয়ংকর অভিযান চালানো হচ্ছে। এজন্য কথিত যুদ্ধাপরাধকে অজুহাত বানিয়েছে সরকার। জামায়াতের প্রধান নেতাদের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। জামায়াতকে মিছিল-সমাবেশও করতে দেয়া হচ্ছে না। নেতা-কর্মিদের পুলিশ দিয়ে পেটানো হচ্ছে। কিন্তু এত করেও জামায়াতকে ‘বাগে' যেমন আনা যাচ্ছে না, তেমনি বিএনপির সঙ্গেও জামায়াতের সম্পর্কে ভাঙন ধরানো সম্ভব হচ্ছে না। একই কারণে নির্বাচনে বিজয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছেন না তারা। এজন্যই কৌশল হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াকে জামায়াতের ‘সঙ্গ' ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের চুনোপুঁটিরা পর্যন্ত আজকাল বিএনপির দরদে নৃত্য করতে শুরু করেছেন। বলে চলেছেন, জামায়াতের ‘সঙ্গ' না ছাড়লে বিএনপির ভোট নাকি শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে! অতি চমৎকার বিশ্লেষণই বটে! মাথা বিএনপির কিন্তু ব্যথায় মরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীনরা! ব্যাপারটাকে হাস্যকর না বলে উপায় থাকে না। কারণ প্রধান প্রতিদ্বনদ্বী দল বলে বিএনপির ভোট যদি সত্যিই ‘শূন্যের কোঠায়' নেমে আসে তাহলে তো আওয়ামী লীগেরই বেশি খুশি হওয়ার কথা! অন্যদিকে বিএনপির জন্য ক্ষমতাসীনদের ঘুম একেবারে হারাম হয়ে গেছে!
জামায়াতের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান চালানোর এবং মির্জা আলমগীরের মতো বিএনপির সংগ্রামী নেতাদের জেলের ভাত খাওয়ানোর পাশাপাশি ঘটনাপ্রবাহে এমন এক প্রচারণাকেও শক্তিশালী করা হয়েছে যে, ‘তলে তলে' নাকি সমঝোতার চেষ্টা চলছে এবং সে চেষ্টা নাকি এরই মধ্যে বহুদূর সফলও হয়েছে। অর্থাৎ বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে সমঝোতায় পৌঁছে গেছে। তবে প্রকাশ্যে নয়, ‘তলে তলে'- অর্থাৎ অতি গোপনীয়তার সঙ্গে। কথাটা সম্প্রতি একাধিক উপলক্ষে শুনিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। বলা বাহুল্য, অন্য কোনো নেতা বললে হয়তো ভিন্ন রকম অর্থ করা হতো কিন্তু লন্ডনকেন্দ্রিক ষড়যন্ত্রের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত নেতা সৈয়দ আশরাফ বলেছেন বলেই সচেতন মানুষের মধ্যে স্বস্তির পরিবর্তে ভীতি-আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। কেন- সে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে এখানে বেগম খালেদা জিয়ার প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যের উল্লেখ করা দরকার। ১ জানুয়ারি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে তিনি বলেছেন, ‘তলে তলে' আলোচনা বা সমঝোতা নয়, ষড়যন্ত্র হচ্ছে। অমন মন্তব্যের কারণও জানিয়েছেন বেগম জিয়া। বলেছেন, আলোচনা হলে অবশ্যই প্রথমে তিনি জানতেন। আর সে আলোচনার উদ্দেশ্য যদি সংকট কাটিয়ে ওঠা হয় তাহলে সেটা হতে হবে প্রকাশ্যে। অন্যদিকে বিরোধী দলের নেতা হয়েও যেহেতু তিনি জানেন না বা তাকে জানানো হয়নি সেহেতু যা হচ্ছে তা আলোচনা নয়, চলছে আসলে ষড়যন্ত্র। খালেদা জিয়া আরো বলেছেন, ষড়যন্ত্র বা গোপনে প্রণীত কোনো ফর্মুলায় কাজ হবে না। নির্বাচন দিতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে। সে সরকারের ব্যাপারেই শুধু আলোচনা চলতে পারে।
এবার সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের দিকে চোখ ফেরানো যাক। অকারণে তাকে লন্ডনকেন্দ্রিক ষড়যন্ত্রের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। তথ্য বোমার আকারে কথাটা প্রথমে জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল। পাঠকদেরও নিশ্চয়ই মনে পড়বে, ১/১১-এর প্রাক্কালে কতটা ভয়ংকর তৎপরতা চালিয়েছিলেন আবদুল জলিল। লগি-বৈঠার হত্যা-সন্ত্রাসে ভরা ওই দিনগুলোতে কথায় কথায় গৃহযুদ্ধের ভয় দেখাতেন তিনি। তার মতো নেতাদের কারণেই দেশ আরো একবার গণতন্ত্রহীন অবস্থার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু নটরাজের ভূমিকা পালন করলেও আবদুল জলিলরা বুঝতেই পারেননি যে, ‘রোডম্যাপ' বাস্তবায়নের জন্য আবদুল জলিলদের আসলে ছেলেপেলেদের ‘ঘুড্ডি' বানানো হয়েছিল। ‘লাটাই' অন্যদের হাতে ছিল, তাদের শুধু ওড়ানো হয়েছে। তারপর ‘রোডম্যাপের' বিশেষ পর্বের খেলা যখন সাঙ্গ হয়েছে তখন ‘লাটাইওয়ালারা' সুতা কেটে ফেলেছে। ‘রোডম্যাপের' অন্তরালের শক্তি তথা লাটাইওয়ালাদের কাছে আবদুল জলিলদের প্রয়োজন একেবারে ফুরিয়ে গেছে। আবদুল জলিল এমনকি মন্ত্রীও হতে পারেননি। তাকে বরং সাধারণ সম্পাদকের পদও হারাতে হয়েছে।
সে রাগের কারণেই কি না সেটা একটি প্রশ্ন বটে, তবে ২০০৯ সালের এপ্রিলে এসে একের পর এক তথ্য বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন আবদুল জলিল। ২১ এপ্রিল সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, ওয়ান-ইলেভেনে ডিজিএফআইয়ের দালালি করে যারা সুবিধা নিয়েছিল, তারাই এখনো সুবিধা নিচ্ছে। বর্তমান মন্ত্রিসভার অনেকেই ডিজিএফআইয়ের ‘পেইড এজেন্ট'। মন্ত্রীদের কারো নাম না বললেও আবদুল জলিল বলেছিলেন, ‘সব ব্যাটা' ওই সময় ডিজিএফআইয়ের দালালি করেছে। সৈয়দ আশরাফুলের প্রতি ইঙ্গিত করে আবদুল জলিল বলেছিলেন, প্রথমে পালিয়ে লন্ডন চলে যাওয়ার পর কোন নিশ্চয়তা পেয়ে তিনি দেশে ফিরে এসেছিলেন তা কি দেশের মানুষ জানে না? আবদুল জলিল আরো বলেছিলেন, ষড়যন্ত্রে সম্মত হননি বলেই তাকে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে অন্যদিকে সৈয়দ আশরাফের মতো যারা ডিজিএফআইয়ের দালালি করে সুবিধা নিয়েছিলেন তারাই এখনো সুবিধা নিচ্ছেন। মন্ত্রিত্ব পাচ্ছেন।
এসব কথার অর্থ নিশ্চয়ই বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। আবদুল জলিল আসলে বলেছিলেন, জেনারেল মইন উ আহমেদের নেতৃত্বাধীন সামরিক জান্তার দালালি করেছিলেন বলেই সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মন্ত্রী হতে পেরেছিলেন। তারও আগে লন্ডনে পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে তাকে ‘নিশ্চয়তা' দেয়া হয় এবং তিনি লন্ডন থেকে আবারও ঢাকায় ফিরে আসেন। ‘নিশ্চয়তা' দেয়ার পেছনেই ছিল লন্ডনকেন্দ্রিক ষড়যন্ত্র। উল্লেখ্য, আবদুল জলিল যে সময়ের কথা বলেছিলেন সে সময়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও লন্ডনে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে তিনি বলেছিলেন, শেখ হাসিনা তাকে ভাই ডেকেছেন এবং ভাই-বোনের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে, তাকে রাষ্ট্রপতি বানানো হবে। এরশাদকে পরবর্তীকালে আরেক বৃদ্ধ নেতা জিল্লুর রহমানের কাছে পরাস্ত হতে হলেও ডিজিটাল নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়া পর্যন্ত সবকিছুর পেছনে ছিল লন্ডনকেন্দ্রিক আয়োজন-যাকে সঠিকভাবেই ষড়যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মূলত এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই বর্তমান পর্যায়ে সৈয়দ আশরাফুলের বক্তব্য ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। স্বয়ং খালেদা জিয়া সোচ্চার হয়ে ওঠার ফলেও বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব অর্জন করেছে। বোঝাই যাচ্ছে, জামায়াতে ইসলামীকে তো বটেই, বেগম খালেদা জিয়ার মতো প্রধান জাতীয় নেত্রীকে পর্যন্ত পাশ কাটিয়ে লন্ডনে কিছু একটা ‘ঘোঁট' পাকানো হচ্ছে। প্রকাশ্যে না করে ‘তলে তলে' করা হচ্ছে বলেই বেগম জিয়া বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে জনগণের মধ্যেও জোর আলোচনা চলছে আগামী দিনের সম্ভাবনা নিয়ে। প্রশ্ন উঠেছে, উস্কানিমূলক বক্তব্য ও দমন-নির্যাতনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা পরিস্থিতিকে আসলে এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন কি না, যখন সুষ্ঠু নির্বাচনসহ গণতান্ত্রিক রাজনীতির সব পথই বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। অর্থাৎ নিজেরা জিততে না পারলে নির্বাচনই করতে দেবেন না তারা। কথাটা বলার কারণ, লগি-বৈঠার হত্যা-সন্ত্রাস ও ১/১১ থেকে ডিজিটাল নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনা পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহে শুধু নয়, চলমান দমন-নির্যাতনের মধ্য দিয়েও প্রমাণিত হয়েছে, গণতন্ত্রের জন্য আওয়ামী লীগের কোনো ভালোবাসা নেই। বর্তমান পর্যায়েও দলটির একই চরিত্রের প্রকাশ ঘটে চলেছে। পাঠকরা পুরনো ঢাকায় বিশ্বজিৎ দাসের হত্যাকান্ডের সঙ্গে ২০০৬ সালের লগি-বৈঠার নৃশংসতাকে মিলিয়ে দেখতে পারেন। এ ধরনের নিষ্ঠুরতার মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে তৃতীয় কোনো শক্তির জন্যই রাস্তা তৈরি করা হয়। আর অমন রাস্তা কোনো দল তখনই তৈরি করে যখন দলটির পক্ষে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কে জানে, সেজন্যই সৈয়দ আশরাফরা ‘তলে তলে' বিশেষ কোনো আয়োজন সেরে নিচ্ছেন কি না- বেগম খালেদা জিয়া যাকে ‘ষড়যন্ত্র' হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বলা বাহুল্য, সদিচ্ছা থাকলে প্রকাশ্যেই সমঝোতার উদ্যোগ নেয়া হতো। বেগম জিয়া তো আলোচনার দরজা খোলাও রেখেছেন। কিন্তু একদিকে জামায়াতসহ বিরোধী দলের ওপর প্রচন্ড দমন-নির্যাতন চালানো হচ্ছে এবং অন্যদিকে প্রধান নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পাশ কাটিয়ে সমঝোতার নামে ‘তলে তলে' গোপন কোনো আয়োজন সেরে নেয়া হচ্ছে। এসবের পেছনে আর যা-ই হোক গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার ও সংহত করার উদ্দেশ্য থাকতেই পারে না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads