মনিরুজ্জামান মনির
সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যশোরের জনসভায় আগামীতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে তাকে পুনর্নির্বাচিত করার জন্য ভোট চেয়েছেন জনগণের কাছে। অবশ্য যখন ভোট চাওয়া হয়েছে তখনও আগামী জাতীয় নির্বাচন বিরোধী দল বিএনপিসহ ১৮ দলের দাবি অনুযায়ী নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান মেনে নেয়া হয়নি। তাহলে কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদ্য সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন করবেন? কিন্তু কী করে হবে। দেশকে অশান্ত করে, বিরোধী দলকে আন্দোলনমুখর করে, জাতীয় পার্টির এরশাদকে প্রধান বিরোধী দলের বিকল্প নায়ক বানিয়ে? দেশ অনিবার্য মহা রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়বে। দেশের জনগণ সংঘাত-সংঘর্ষ-অশান্তির মাঝে নিরাপত্তাহীন জীবন যাপন করবে। এভাবে চললে তৃতীয় শক্তির আবির্ভাবের আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাবে না। সমকালীন সময়ে সেই একটি দাবিতে প্রধান বিরোধী দল আন্দোলন চাঙ্গা করছে। লাগাতার সমাবেশ-মহাসমাবেশ, মানববন্ধন, গণমিছিল, বিক্ষোভ করছে। এমনকি আগামীতে লাগাতার ধর্মঘটও দিতে পারে। সরকারও সমঝোতার পরিবর্তে পুলিশ বাহিনী, আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ক্যাডার দ্বারা স্বৈরতান্ত্রিক উপায়ে নিপীড়ন-নির্যাতন, হামলা-মামলা, গ্রেফতার-জেলহাজতে প্রেরণের মাধ্যমে বিরোধী দলকে দমন করছে। এতে অবশ্য আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ছে বৈ কমছে না। এরই মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ সারাদেশের বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী-নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বা হচ্ছে। এখনও রুহুল কবির রিজভীকে দলীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে। সরকারি দলের লোকেরা এমনকি তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় বিরোধী দলের চেয়ারপার্সনকে, জনগণ যাকে আপসহীন দেশনেত্রী খেতাবে ভূষিত করেছে, সেই বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের আগাম হুঙ্কার দিচ্ছে। এসব অনাচার নিপীড়ন নির্যাতন বিরোধী দল দমনের পরিকল্পনা দেখে মনে হয় সরকারি দল প্রধান বিরোধী দলকে হাতে-পায়ে বেঁধে নির্জন কারাবাসে রেখে আগামীতে প্রশ্নবিদ্ধ পুতুল নির্বাচন করে দলীয় সরকারের অধীনে পুনর্বার ক্ষমতায় আসীন হতে চায়।
এই অগণতান্ত্রিক দুঃস্বপ্ন কি বাস্তবায়ন হবে? দেশের জনগণ এবং বিদেশি পর্যবেক্ষক দল কি ওই অবৈধ ফলাফল মেনে নেবে? এটা সত্যি কথা, দেশে বিপর্যয় দেখা যাবে। অবশ্য এখনই অশান্তির সুপ্ত আগ্নেয়গিরি থেকে গলিত উত্তপ্ত লাভা নির্গত হচ্ছে ধীরে ধীরে। আওয়ামী লীগ সরকার প্রধান থেকে আরম্ভ করে সদ্য ওকালতি থেকে দলে আসা এবং ভাগ্যের এক ঝটকায় এমপি বা মন্ত্রী হওয়া মধ্যবয়সী কথিত নেতারা সরকারের শাসনকালের বিগত চার বছর অতীতের বিএনপি সরকারের প্রধান, তার পরিবার এবং মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতির কল্পিত কিচ্ছাকাহিনী বর্ণনা করেছেন অনর্গল। কথায় বলে, আল্লাহর ঢোল বাতাসে বাজে। ওদের দুর্নীতির বয়ান বর্ণনা করতে করতে নিজেদের দুর্নীতি-সন্ত্রাসের ঘটনা জনসমক্ষে প্রকাশ পেয়ে গেল অবলীলাক্রমে। জনগণও সেসব ঘটনা বিশ্বাস করল। আবুলের পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি, সুরঞ্জিতের রেলের কালো বিড়াল, উপদেষ্টা মোদাচ্ছেরের সোনালী ব্যাংক হলমার্ক কেলেঙ্কারি সরকারের সাফল্যের গলাবাজিকে স্তব্ধ করে দিল। সর্বশেষ স্কাইপ সংলাপ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী আদালতের বিচারককে প্রশ্নবিদ্ধ করল। অবশ্য সত্য প্রকাশে অকুতোভয় সাংবাদিক লেখক ‘আমার দেশ’ সম্পাদক জনগণের অকুণ্ঠ প্রশংসা পেলেও সরকারের পুলিশ বাহিনী তাকে নিজস্ব কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। এটা কি সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলা যায় না? সরকার কত বড় অসহায় নিজের কাছে হয়তোবা অন্য কোনো শক্তির কাছে, চৌকস র্যাব থাকা সত্ত্বেও সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আজও উদ্ঘাটন করতে পারেনি। গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা আমিনুল ও বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর গুম রহস্যের কূলকিনারা করতে পারেনি। ইদানীং মনে হয় বিরোধী দল ও নিরীহ জনগণকে নতুন স্টাইলে নির্যাতন করতে এবং বিরোধীদলীয় নেত্রীকে গ্রেফতার করার দুঃসাহস দেখাতেই বেগম সাহারা খাতুনকে পাল্টিয়ে মখা আলমগীরকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে। জনাব আলমগীর এসেই উপহার দিলেন দক্ষিণ ভারতের তেলেগু চলচ্চিত্রের মারপিটের দৃশ্যের মতো চিত্রায়িত ছাত্রলীগের ক্যাডার দ্বারা বিশ্বজিত্ হত্যার দৃশ্য! আচ্ছা সেই বিশ্বজিত্ কি বিএনপি করত, নাকি ছাত্রশিবিরের কর্মী ছিল? তার বাড়ি কি নোয়াখালী, নাকি বগুড়ায়? এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি বর্তমান সরকার।
অতীতে এই সরকার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কেন? শেয়ারবাজারে ধস কেন? সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণ কেন?—এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। বিগত বিএনপি সরকারের তেল-গ্যাস-বিদ্যুত্ দুর্নীতির উপাখ্যান আমরা শুনেছি। কিন্তু এখন কেন তারা কলে-কারখানায়-আবাসস্থলে গ্যাস-বিদ্যুত্ দিতে পারছে না? উল্টো রেন্টাল-কুইক রেন্টাল পদ্ধতির মাধ্যমে দুর্নীতি করেছে। তবে বিদেশি প্রেসক্রিপশনে নিয়োজিত উপদেষ্টাদের একজন বিদ্যুত্ বিল নিয়মিত বাড়িয়ে জনগণকে দুর্ভোগে ফেলছেন। আসলে এই সরকার তাদের জনপ্রিয়তা সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে বলেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন করতে চায় না, চায় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক!
জনগণ আশা করে, জাতিকে সঙ্কটে না ফেলে বিরোধী দলের দাবি মেনে নিন, তাদের আন্দোলনে উত্সাহিত করবেন না, এতে দেশের রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক অবস্থা বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
এমনি তো আপনাদের সোনার তরীতে ক্রমেই ফুটো বাড়ছে। এক সময় ডুবে যেতে পারে। তাই কবি নজরুলের উপদেশবাণী শুনুন—‘ওগো নাইয়া ধীরে চালাও তরণী।’
monirlyic@gmail.com
এই অগণতান্ত্রিক দুঃস্বপ্ন কি বাস্তবায়ন হবে? দেশের জনগণ এবং বিদেশি পর্যবেক্ষক দল কি ওই অবৈধ ফলাফল মেনে নেবে? এটা সত্যি কথা, দেশে বিপর্যয় দেখা যাবে। অবশ্য এখনই অশান্তির সুপ্ত আগ্নেয়গিরি থেকে গলিত উত্তপ্ত লাভা নির্গত হচ্ছে ধীরে ধীরে। আওয়ামী লীগ সরকার প্রধান থেকে আরম্ভ করে সদ্য ওকালতি থেকে দলে আসা এবং ভাগ্যের এক ঝটকায় এমপি বা মন্ত্রী হওয়া মধ্যবয়সী কথিত নেতারা সরকারের শাসনকালের বিগত চার বছর অতীতের বিএনপি সরকারের প্রধান, তার পরিবার এবং মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতির কল্পিত কিচ্ছাকাহিনী বর্ণনা করেছেন অনর্গল। কথায় বলে, আল্লাহর ঢোল বাতাসে বাজে। ওদের দুর্নীতির বয়ান বর্ণনা করতে করতে নিজেদের দুর্নীতি-সন্ত্রাসের ঘটনা জনসমক্ষে প্রকাশ পেয়ে গেল অবলীলাক্রমে। জনগণও সেসব ঘটনা বিশ্বাস করল। আবুলের পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি, সুরঞ্জিতের রেলের কালো বিড়াল, উপদেষ্টা মোদাচ্ছেরের সোনালী ব্যাংক হলমার্ক কেলেঙ্কারি সরকারের সাফল্যের গলাবাজিকে স্তব্ধ করে দিল। সর্বশেষ স্কাইপ সংলাপ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী আদালতের বিচারককে প্রশ্নবিদ্ধ করল। অবশ্য সত্য প্রকাশে অকুতোভয় সাংবাদিক লেখক ‘আমার দেশ’ সম্পাদক জনগণের অকুণ্ঠ প্রশংসা পেলেও সরকারের পুলিশ বাহিনী তাকে নিজস্ব কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। এটা কি সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলা যায় না? সরকার কত বড় অসহায় নিজের কাছে হয়তোবা অন্য কোনো শক্তির কাছে, চৌকস র্যাব থাকা সত্ত্বেও সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আজও উদ্ঘাটন করতে পারেনি। গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা আমিনুল ও বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর গুম রহস্যের কূলকিনারা করতে পারেনি। ইদানীং মনে হয় বিরোধী দল ও নিরীহ জনগণকে নতুন স্টাইলে নির্যাতন করতে এবং বিরোধীদলীয় নেত্রীকে গ্রেফতার করার দুঃসাহস দেখাতেই বেগম সাহারা খাতুনকে পাল্টিয়ে মখা আলমগীরকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে। জনাব আলমগীর এসেই উপহার দিলেন দক্ষিণ ভারতের তেলেগু চলচ্চিত্রের মারপিটের দৃশ্যের মতো চিত্রায়িত ছাত্রলীগের ক্যাডার দ্বারা বিশ্বজিত্ হত্যার দৃশ্য! আচ্ছা সেই বিশ্বজিত্ কি বিএনপি করত, নাকি ছাত্রশিবিরের কর্মী ছিল? তার বাড়ি কি নোয়াখালী, নাকি বগুড়ায়? এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি বর্তমান সরকার।
অতীতে এই সরকার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কেন? শেয়ারবাজারে ধস কেন? সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণ কেন?—এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। বিগত বিএনপি সরকারের তেল-গ্যাস-বিদ্যুত্ দুর্নীতির উপাখ্যান আমরা শুনেছি। কিন্তু এখন কেন তারা কলে-কারখানায়-আবাসস্থলে গ্যাস-বিদ্যুত্ দিতে পারছে না? উল্টো রেন্টাল-কুইক রেন্টাল পদ্ধতির মাধ্যমে দুর্নীতি করেছে। তবে বিদেশি প্রেসক্রিপশনে নিয়োজিত উপদেষ্টাদের একজন বিদ্যুত্ বিল নিয়মিত বাড়িয়ে জনগণকে দুর্ভোগে ফেলছেন। আসলে এই সরকার তাদের জনপ্রিয়তা সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে বলেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন করতে চায় না, চায় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক!
জনগণ আশা করে, জাতিকে সঙ্কটে না ফেলে বিরোধী দলের দাবি মেনে নিন, তাদের আন্দোলনে উত্সাহিত করবেন না, এতে দেশের রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক অবস্থা বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
এমনি তো আপনাদের সোনার তরীতে ক্রমেই ফুটো বাড়ছে। এক সময় ডুবে যেতে পারে। তাই কবি নজরুলের উপদেশবাণী শুনুন—‘ওগো নাইয়া ধীরে চালাও তরণী।’
monirlyic@gmail.com
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন