শুক্রবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১৩

এ সিদ্ধান্ত জনজীবন দুর্বিষহ করবে

আবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো

আবার সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে এক নির্বাহী আদেশে বর্ধিত দাম কার্যকর করা হয়েছে। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো জ্বালানি তেলের দাম বাড়াল বর্তমান সরকার। অজুহাত হিসেবে সরকারি তথ্য বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কথা। আবারো বলা হলো ভর্তুকি কমানোর কথা। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির কোনো খবর সম্প্রতি নেই। গত দুই বছর সরকার যখনই জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে, তখনই একই অজুহাত দেখিয়েছে। অর্থনৈতিক অব্যবস্থার ব্যয় সামাল দিতে না পেরে অন্যায়ভাবে তার ভার জনগণের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। সরকার নানা অপরিণামদর্শী কাজে জড়িয়ে এখন ব্যয় সঙ্কুলানে হিমশিম খাচ্ছে। সে ব্যয়ভার মেটানোর জন্য ভর্তুকি কমানোর নামে বিভিন্নভাবে জনগণের ওপর বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে।

এবার লিটারপ্রতি সবচেয়ে বেশি ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে কেরোসিন ও ডিজেলের দাম। আর পেট্রল ও অকটেন লিটারে বাড়ানো হয়েছে ৫ টাকা। দাম বৃদ্ধির ফলে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে হবে ৬৮ টাকা, অকটেন ৯৯ টাকা এবং পেট্রল ৯৬ টাকায়। বর্ধিত মূল্য বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর থেকে কার্যকর হয়েছে। সরকার গত দুই বছরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম সর্বাধিক লিটারে ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ৪৪ টাকা থেকে ৬৮ টাকা করেছে। অকটেনের দাম ২২ টাকা লিটারে বাড়িয়ে ৭৭ টাকা থেকে করা হয়েছে ৯৯ টাকা, গড়ে বেড়েছে প্রায় ২৯ শতাংশ। আর পেট্রলের দাম ৭৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৬ টাকা করা হয়েছে। গড়ে বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) থেকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার তা অনুমোদন দেন। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইন ২০০৩ অনুযায়ী, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সবধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে বিইআরসির কাছে প্রস্তাব পাঠাবে। বিইআরসি প্রস্তাবের ওপর গণশুনানির আয়োজন করবে। গণশুনানি শেষে সংশ্লিষ্ট পণ্যের যৌক্তিক দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিইআরসি রায় দেবে। একই সাথে আইন অনুসরণ করে কমিশন তা অনুমোদন দেবে। সরকার এ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি নিজেই ভেঙে চলেছে। এবারো সব ধরনের জ্বালানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে এ ধরনের কোনো নীতি অনুসরণ করেনি সরকার।
স্পষ্ট করে সরকার জানায়নি আন্তর্জাতিক বাজারে এসব জ্বালানি তেলের দাম কত। ভোক্তাদের কাছে পৌঁছা পর্যন্ত কত খরচ বাড়তি হয়। শুধু ডিজেল ও কেরোসিনে কত ভর্তুকি দিতে হবে তা উল্লেখ করেছে সরকারি তথ্যবিবরণীতে। অন্য জ্বালানি তেলে লাভ-ক্ষতি কত হচ্ছে, কেনই বা এগুলোর দাম বাড়ানো হলো তার ব্যাখ্যা নেই। জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে পরিবহন ভাড়া আরেক দফা বাড়বে। এর চাক্রাকার প্রভাব পড়বে সব ভোগ্যপণ্যের দামের ওপর। ফলে বাড়বে মূল্যস্ফীতি। ক্রয়ক্ষমতা কমবে স্থির আয়ের মানুষের। গরিব মানুষের ওপরই বর্ধিত দামের প্রভাব বেশি পড়বে। সবচেয়ে বেশি দাম বাড়ানো ডিজেল-কেরোসিনের ভোক্তা কৃষক ও গরিব জনগণ। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে কঠোর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে। সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভোগান্তির বিষয়টি একেবারেই আমলে নিচ্ছে না। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির একতরফা সিদ্ধান্ত জনগণের জীবনকে আরো দুর্বিষহ করবে। আমরা মনে করি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা উচিত। ব্যয়সঙ্কুুলানের জন্য গরিব জনগণের ওপর আগ্রাসী হওয়ার নীতি থেকে সরে আসা উচিত সরকারের। এর বদলে ব্যয় সঙ্কোচনের জন্য কৃচ্ছ্রতা সাধননীতি অবলম্বন করা যেতে পারে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads