শনিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১৩

অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্য কি সরকারের?

বিএনপি  উন্মাদের দল, হরতাল ডাকা পাগলের সিদ্ধান্ত

একাধিক জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশন চ্যানেলের খবর অনুযায়ী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, বিএনপি হচ্ছে একটি উš§াদ দল। এরা দেশের কোনো উন্নয়নে সহযোগিতা না করে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে হরতাল ডাকায় বিরোধী দলের সমালোচনা করে মন্ত্রী আরো বলেছেন, দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে, বিরোধী দল তখন আন্দোলন-সংগ্রামের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। সিলেটের গোলাপগঞ্জে শুক্রবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, বিএনপি এবং খালেদা জিয়া দেশ চালিয়েছেন, তারা জানেন রাষ্ট্র কিভাবে চালাতে হয়। অথচ  জেনে-বুঝে তারা বিরোধিতা করছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশের বিরোধী দল খুবই দায়িত্বহীন বিরোধী দল।

আবুল মাল আব্দুল মুহিত সরকারের ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের তালিকায় দুই নম্বর ব্যক্তি। বয়সের দিক থেকেও সম্ভবত জ্যেষ্ঠতম তিনি। যত দূর জানা যায়, শিক্ষাজীবনের বেশির ভাগ কাসে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ক্যাডার সার্ভিস পরীক্ষায়ও তিনি অনুরূপ কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন। সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এরশাদের আমলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্র্রাপ্ত উপদেষ্টাও ছিলেন। এই গৌরবোজ্জ্বল পটভূমির সাথে তার বিরোধী দলকে উন্মাদের দল বলা অথবা  পাগলামি থেকে হরতালের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে মর্মে মন্তব্য মানানসই নয়। এর আগে অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য স্কুল খোলার ব্যাপারে তার আগ্রহের বিষয়টিও বহুল আলোচিত। কথায় কথায় ‘রাবিশ’, ‘বোগাস’ ইত্যাদি মন্তব্যে বিরক্ত হয়ে সরকারি দলেরই শীর্ষ নেতারা তাকে কম কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন। এর পর থেকে অর্থমন্ত্রী কথা কিছুটা কমিয়েও দিয়েছিলেন। কিন্তু জীবনের পড়ন্ত বেলায় টিভি-রেডিওর ক্যামেরা নিয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করায় তিনি হয়তো মনের ভেতরের কথাটি প্রকাশ না করে পারেননি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, হরতাল ডাকার কারণে বিরোধী দল যদি উন্মাদের দল হয়ে যায়, তাহলে পুরো দেশটাই তো কেবল বিকারগ্রস্তদের লোকালয় হয়ে যায়। কারণ বাংলাদেশে এমন দল সম্ভবত একেবারেই নেই, যারা হরতাল ডাকেনি অথবা হরতালে সরব নীরব সমর্থন দেয়নি। জনাব মুহিত যে দলের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য, সে দল বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি দিন হরতাল পালনের রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ডাকা একাধিক হরতালও রয়েছে। অর্থমন্ত্রী সম্ভবত এত সব ভেবে কথা বলার সুযোগ পাননি। কিন্তু তিনি যে পদে রয়েছেন সেটি এমনই যে, এখানে দায়িত্ব পালন করতে হলে ভেবেচিন্তে কথা বলতে হয় এবং সিদ্ধান্ত নিতে হয় চিন্তাভাবনা করে।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, হরতাল দেশের অর্থনীতির নানাভাবে ক্ষতি করে। হরতালে দেশের মানুষের ভোগান্তিও হয়। কিন্তু এটি তো প্রতিবাদ জানানোর আইনানুগ একটি কর্মসূচিও। এ কারণে বিরোধী দলে থেকেই শুধু নয়, সরকারে থাকা অবস্থায়ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনকে হরতাল পালন করতে দেখা গেছে। আর দেশের কথা ভেবে হরতালের কর্মসূচি বন্ধ করতে হলে এ ব্যাপারে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলকে একমত হতে হবে। তা না করে এক পক্ষের জন্য কর্মসূচিটি ঠিক অন্য পক্ষ করলে আপত্তিÑ এ দ্বিমুখী নীতি গ্রহণযোগ্য হবে না।
আমরা আশা করতে চাই, অর্থমন্ত্রী পুরো দেশটাকে পাগলের জনপদ হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য হরতালকারীদের উন্মাদ বলেননি। আর এটি তার দল বা জোটের কথাও নয়। এর পরও সরকারি দলের একটি ব্যাখ্যা দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য আসা প্রয়োজন। তা না হলে রাজনৈতিক দলের নেতাদের অবান্তর কথার কাদা ছোড়াছুড়ি একসময় এমনপর্যায়ে পৌঁছবে যে তখন এর সুযোগ নেবে অন্যরা, যারা রাজনীতিবিদদের ইমেজকে নানা কারণে কলুষিত করতে চান। সে অবস্থা কারো জন্যই কল্যাণকর হবে না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads