বৃহস্পতিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৩

নিষ্ক্রিয় জনসমর্থন কারোরই কোনো কাজে লাগে না



সিরাজুর রহমান
চলে গেল ২০১২। এসেছে ২০১৩। পুরনো বছরে কী পেলাম আর নতুন বছরেই প্রত্যাশা কী, কলামিস্ট-গবেষকেরা ইতোমধ্যেই বিস্তর আলোচনা করেছেন সে বিষয়ে। বিদায়ী বছরটায় আমার মনে স্থায়ী রেখাপাত করেছে দু’টি ঘটনা। সাংবাদিক দম্পতি রুনি ও সাগর সরওয়ার ঘুমোচ্ছিলেন নিজেদের শোবার ঘরে। মর্মান্তিকভাবে খুন হলেন তারা। তাদের পাঁচ বছরের ছেলেটির চোখের সামনে ঘটল ব্যাপারটা। সে ছেলে বড় হবে। কোনো স্মৃতি কি ভাস্বর থাকবে তার মনে? অথবা কোনো প্রতিশোধ বাসনা? দেশ চালানোর, আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব যাদের কাঁধে ছিল, সে কি কোনো দিন তাদের ক্ষমা করতে পারবে?
এই একটি ঘটনার মধ্যে বর্তমান বাংলাদেশের যে সার্বিক চিত্রটি ফুটে ওঠে, সে জন্য ইতিহাস কিংবা ভবিষ্যৎ প্রজন্মগুলো কোনো দিন বর্তমান শাসকদের ক্ষমা করবে না। প্রথম কথা হলো বাংলাদেশে প্রতিদিন যে বহু মানুষ খুন হচ্ছে, নিজের বাড়িতে এবং নিজের শোবার ঘরেও যে নাগরিকের জীবন নিরাপদ নয়, সারা বিশ্বের মানুষ সেটা দেখল এই একটি ঘটনার মধ্যে। দ্বিতীয়ত, প্রমাণ হলো সরকার যখন গলাবাজি করে বিশ্ববাসীকে বলতে চায় তারা সংবাদের স্বাধীনতার ঢল বইয়ে দিয়েছে দেশে, তখন তারা ডাহা মিথ্যা কথা বলে। এ সরকারের আমলে সাংবাদিকেরা প্রতিদিন নির্যাতিত ও নিগৃহীত হচ্ছেন। শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক তিন সপ্তাহ ধরে নিজের অফিসের বাইরে যাওয়া নিরাপদ বিবেচনা করেন না। এ সরকারের চার বছরে যে ১৪ জন সাংবাদিক সরকারের আশপাশের দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হয়েছেন, রুনি ও সাগর তাদেরই দু’জন।
তৃতীয় ব্যাপারটা বর্তমান সরকারের চরিত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এ সরকার দুর্নীতি আর সন্ত্রাসের গডফাদার। সরকারের যারা ভেতরের লোক এবং সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি, বড় দুর্নীতিগুলো করছে তারাই। নাগরিক ও সাংবাদিক হিসেবে রুনি ও সাগরের বিবেক ও কর্তব্যবোধ জাগ্রত হয়েছিল। তারা বিনা টেন্ডারে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ নাম দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে উদ্যত হয়েছিলেন। তাদের প্রতিবাদের ‘ধৃষ্টতা‘ গডফাদারদের সহ্য হয়নি। দুটো প্রতিশ্রুতিশীল সাংবাদিক কণ্ঠকে তারা বরাবরের জন্য নীরব করে দিলো।
চতুর্থ ব্যাপারটা আরো ভয়াবহ। দেশে পুলিশ আছে, র‌্যাব আছে; কিন্তু তারা শাসক দলের ও সরকারের পকেটে থাকে, হুকুম পেলে তারা বিরোধীদের মাথা ফাটায়, তাদের জেলে পোরে, তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা সাজায়। হত্যা-দুর্নীতি যখন সরকারি ইঙ্গিতে ঘটে তখন যে দূরে দূরে থাকাই ভালো সেটা তারা বোঝে। প্রধানমন্ত্রী তার রাজনৈতিক রীতি অনুসারে মন্ত্রী নিয়োগ করেন। একজন অপদার্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছিল। শুনেছি মইন-ফখরুদ্দীন বর্ণচোরা সেনা শাসনামলে নেত্রী যখন অন্তরীণ ছিলেন, ওই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তখন নেত্রীর জন্য মাছ-ভাত রান্না করে নিয়ে যেতেন। সে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর লোক-হাসানো ভাঁড়ামোয় যখন খোদ প্রধানমন্ত্রীই বিব্রত বোধ করতে শুরু করেন তখন আমদানি করা হয় নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এর ‘যোগ্যতাই’ বা কম কিসে? একাত্তরে তিনি ছিলেন ‘কোলাবোরেটর’। ‘জনতার মঞ্চ’ গড়ে আর সরকারি কর্মচারীদের অবাধ্য হওয়ার উসকানি দিয়ে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহিতা করেছেন, দুর্নীতির দায়ে কিছুকাল জেল খেটেছেন। সে ‘গুণধর’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিরোধী দলের কর্মীদের খুন-জখম করার প্রকাশ্য নির্দেশ দিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে সড়কে নামিয়েছিলেন। কিন্তু ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। তারা খুন করল সরকারের ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্য বিশ্বজিৎকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে খুনের দায়ে হুকুমের আসামি করে পুলিশ কোনো মামলা করেছে বলে শুনিনি এখনো।
 ইলিয়াস আলী কোথায় এখন?
দ্বিতীয় যে ঘটনা আমার স্মৃতিতে গাঁথা হয়ে থাকবে, সেটা ইলিয়াস আলীকে গুম করা। বাংলাদেশের রাজধানীতে নিজের গাড়ির ভেতরেও যে মানুষ নিরাপদ নয় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে, এ ঘটনা তারই স্থায়ী সাক্ষী হয়ে থাকবে। বিগত চার বছরে দুই শতাধিক মানুষ এভাবে গুম হয়েছে। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় কারো কারো লাশ কিংবা কঙ্কাল নদী-নালা ও জলাভূমিতে পাওয়া গেছে। অন্যদের কোনো হদিস আজো মেলেনি। একাত্তরে ঠিক এ ব্যাপারটাই ঘটেছিল। ধরে ধরে বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে গিয়ে গুম করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে বিবিসির সংবাদদাতা নিজামুদ্দিন আহমেদ, আমার বন্ধু সিরাজুদ্দিন হোসেন এবং আমার শ্রদ্ধাভাজন বেশ কিছু বুদ্ধিজীবী এভাবে নিখোঁজ হয়েছিলেন। স্বাধীনতার পরপরই একাধিক স্থানে ধবধবে সাদা নরকঙ্কালের স্তূপ আমিও দেখেছি। কিন্তু সবাইকে শনাক্ত করা গেছে কি?
শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান থেকে ফিরে এসে প্রধানমন্ত্রী হলেন। দুটো কাজকে তিনি অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। প্রথমত, তার রাজনৈতিক বিরোধী ও সমালোচকদের নির্মূল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল রক্ষী বাহিনীকে। তারা ৪০ হাজার মানুষ খুন করেছে। রাজাকারদের আর রক্ষী বাহিনীর মধ্যে তফাৎ আমি তো দেখি না। উপমহাদেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে মুজিব ৯৩ হাজার হানাদার পাকিস্তানি সৈন্যকে মুক্তি দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ছিল সবচেয়ে জঘন্য যুদ্ধাপরাধী হিসেবে শনাক্ত করা ১৯৫ জন পাকিস্তানি সৈন্যও।
বর্তমান সরকারের আমলে (রক্ষী বাহিনীর পরিবর্তে) ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও ‘সোনার ছেলে’ হিসেবে পরিচিত ক্যাডাররা সরকারের অসংখ্য বিরোধী ও সমালোচককে হত্যা করেছে। ‘ক্রসফায়ারের’ নামে অনেকগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং গুম-খুনের ঘটনাগুলো (বিশেষত ইলিয়াস আলী হত্যার ঘটনাটি) পুলিশের বিশেষ বাহিনী ঘটিয়েছে বলে দেশের বেশির ভাগ মানুষের বিশ্বাস এবং কিছু কিছু প্রমাণও আছে। এই ঘটনাগুলোর সাথে একাত্তরে রাজাকার-আলবদরদের গুম ও হত্যার তফাৎ কোথায় আমি বুঝতে পারছি না। চল্লিশ বছর আগের ঘটনার বিচার হবে অথচ বিগত চার বছরের ঘটনাগুলোর বিচার কি কখনো হবে না?
ইলিয়াস আলী শক্তিধর রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে তার সাফল্য উল্লেখযোগ্য। সিলেট অঞ্চলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নির্বাচনে বিজয় তিনি প্রায় অসম্ভব করে তুলেছিলেন। তা ছাড়া ভারতকে অবাধে করিডোর দান এবং টিপাইমুখে বাঁধ তৈরির তিনি সক্রিয় বিরোধী ছিলেন। সরকার ও শাসক দল অবশ্যই তাকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করত। তাই বলে লোকটাকে তারা এভাবে গুম এবং হয়তো খুন করে ফেলবে? অথচ এটাই হচ্ছে বর্তমান সরকার এবং আওয়ামী লীগের স্টাইল। তারা চিরস্থায়ীভাবে গদি দখল করে থাকতে চায় এবং কথায় কথায় তারা পথের কাঁটা সরানোর লক্ষ্যে খুনখারাবিতেও পিছপা হয় না।
 অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষ
বিগত বছরে দেশের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালোর বদলে খারাপের দিকেই গেছে। সরকারের ইসলামবিরোধী নীতির ফলে মুসলিম দেশগুলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ক্রুদ্ধ। অর্থনীতিতে তার প্রভাব অত্যন্ত স্পষ্ট। কুয়েত, লিবিয়া, সৌদি আরব, আমিরাত আর মালয়েশিয়া থেকে উচ্ছেদ হয়ে কয়েক লাখ শ্রমিক দেশে ফিরেছেন। তাদের রেমিট্যান্স হারিয়েছে দেশ। এবং দেশের ভেতরে তাদের কর্মসংস্থান করতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। সামাজিক অশান্তির সেটা একটা বড় কারণ। প্রবাসী শ্রমিকেরা বাংলাদেশের এক নম্বর রফতানি। সরকারের অন্যায় নীতির ফলে সে বাজার এখন বিপন্ন।
দ্বিতীয় বড় রফতানি বাজার বাংলাদেশের তৈরী পোশাকের। এ শিল্পের ভবিষ্যৎ বিগত বছরে অন্ধকার মনে হয়েছে। শ্রম অশান্তি লেগেই আছে। ধারণা, এই যে যারা এ বাজার হাতিয়ে নিতে চায় তারা ভেতরে ভেতরে উসকানি দিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করছে। কারখানায় আগুন লাগা নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শ্রমিকেরা দোষ দিচ্ছে মালিকপক্ষকে। কেউ কেউ বলেছেন কোনো কোনো মালিকপক্ষ বিদেশে অর্থের পাহাড় গড়ে তোলার বদলে বাংলাদেশে পাততাড়ি গোটানোর পরিকল্পনা করছেন। এ শিল্পের ভবিষ্যৎ খুবই অনিশ্চিত মনে হচ্ছে এখন।
দ্রব্যমূল্যের বেসামাল ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। অথচ তাদের আয়-উপার্জন সীমিত। মাঝে মাঝেই জ্বালানি ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি সার্বিকভাবে অর্থনীতির ওপর অপপ্রভাব ফেলছে। কৃষক প্রয়োজন অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা বিনামূল্যে সার সরবরাহ করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সে প্রতিশ্রুতি এখনো তাদের পাঁজরে ছুরির আঘাতের মতো মনে হয়। সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতি আর স্বৈরতন্ত্রী মনোভাবের প্রতিবাদে হরতাল-সমাবেশ বেড়েই চলেছে। অর্থনীতির ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব উল্লেখযোগ্য হতে বাধ্য। কথিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল বিতর্কিত পন্থায় এবং বিতর্কিত রায় দিলে দেশে অশান্তির আগুন জ্বলে উঠতে বাধ্য। দেশের অর্থনীতিতে তার মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
নতুন বছরে অর্থনীতির সমস্যাগুলো বেড়েই যাবে। কেননা সরকারের নীতি ও রাজনীতি সম্পূর্ণ উল্টো মোড় না নিলে অবস্থার উন্নতির আশা নেই। সেটা যখন সম্ভব নয়, তখন সরকার পরিবর্তন ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। এই সরকারের মেয়াদ আছে আর মাত্র বর্তমান বছরটি। গদি স্থায়ী করতে অবশ্যই তারা আরো মরিয়া হয়ে উঠবে। মরিয়া হয়ে উঠলে সাপ কেমন মরণকামড় বসিয়ে দেয়, সবার হয়তো ধারণা নেই। সে সুযোগ তাকে না দেয়াই হচ্ছে দেশপ্রেমিক ও সচেতন মানুষের কর্তব্য। খালেদা জিয়া বাংলাদেশে গণতন্ত্রের দাবি সমুন্নত রাখার জন্য এরশাদের ৯ বছরের সামরিক স্বৈরতন্ত্রের (যখন অন্য নেত্রী এরশাদকে গদিতে বহাল রাখতে সর্বপ্রকার মদদ দিয়েছিলেন) বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম করেছেন।
 খালেদা জিয়ার সংগ্রাম
বিগত দেড় বছরে সে সংগ্রাম তিনি আবার শুরু করেছেন। অনেক আগেই প্রমাণ হয়েছে যে, এ সংগ্রামেও দেশের মানুষ তার পেছনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। খালেদা জিয়া এখন আর শুধু বিএনপিরই নন, মোট ১৮টি দলের একটা ঐক্যজোটের নেতা। তার নেতৃত্বে ঐক্যজোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে, জনসংযোগ করছে, কিন্তু সরকারকে গণদাবি মেনে নেয়ার জন্য যে শেষ আঘাত অথবা ঠেলে ফেলে দেয়ার জন্য যে চূড়ান্ত ধাক্কা, সেটা আসছে না। একটা উপমা আমার প্রায়ই মনে হয়। যে লোকটি তার বাহুবলের শক্তি নিয়ে বড়াই করে অথচ সে পেশি ‘দুর্বলের রক্ষা’ কিংবা ‘দুর্জনকে’ ঘায়েল করতে ব্যবহার করছে না, যার বাহুর সুগঠিত মাসল শার্টের আস্তিনের নিচেই লুকানো থাকে, তার বাহুবলে কারো কি কোনো লাভ হচ্ছে? এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার দল অথবা তার আন্দোলনের প্রতি জনসমর্থন কত দিন বজায় থাকবে? জনসাধারণ কত দিন আর ধৈর্য ধরে নিষ্ক্রিয় একটা আন্দোলনের পেছনে ছুটে বেড়াবে?
একমাত্র ভারত ছাড়া বিদেশীরাও এখন আর শেখ হাসিনা অথবা তার সরকারকে সমর্থন করছে না। বাংলাদেশে সেসব দেশের রাষ্ট্রদূতদের বক্তৃতা-বিবৃতি থেকেও সেটা জানা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, খালেদা জিয়া আশা করেন যে বিদেশীদের চাপে সরকার শেষ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির অধীনেই নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। বিএনপি নেত্রী বিগত দেড় বছর সে আলেয়ার পেছনে ছুটেছেন। কিন্তু এখন আর দেড় বছর, এমনকি এক বছরও সময় নেই। ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ইলিয়াস আলী অথবা পদ্মা সেতু ইত্যাদি কোনো বিষয়ে শেখ হাসিনা বিদেশী চাপের মুখে নতি স্বীকার করেছেন? তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির ব্যাপারেও যে তিনি নতি স্বীকার করবেন তার গ্যারান্টি কোথায়?
ইতোমধ্যে সরকার মাঝে মাঝে অত্যন্ত একটা ঝাপসা সংলাপ সংলাপ খেলার কথা বলছে। এটা যে ভাঁওতাবাজি সেটা খালেদা জিয়াও এখন বুঝতে পেরেছেন বলে মনে হয়। খালেদা জিয়া এবং ১৮ দলের জোটের একমাত্র দাবিÑ নির্বাচনের তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি ফিরিয়ে আনতে হবে। সবার কাছেই এটা পরিষ্কার, এই সরকার যেহেতু অত্যন্ত সন্দেহজনক পদ্ধতিতে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করেছে, সেহেতু তাদের কর্তব্য হচ্ছে সে পদ্ধতি আবার ফিরিয়ে আনার জন্য সংসদে একটা সংক্ষিপ্ত বিল উত্থাপন। এ ব্যাপারে সংলাপের কোনো অবকাশ কিংবা প্রয়োজন নেই। তত্ত্বাবধায়ক কথাটিতে সরকারের আপত্তি প্রবল হলে নির্দলীয় অথবা সে রকম কিছু একটা নাম বিরোধী দলগুলোর গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত। নির্দলীয় সরকারে কারা অন্তর্ভুক্ত হবেন ইত্যাদি খুঁটিনাটি বিষয়ে সংলাপ প্রয়োজনীয় হতে পারে।
আমার সন্দেহ হয়, বিরোধী দলগুলোর সাথে সমঝোতার কোনো মতলব সরকারের নেই। সম্ভবত তারা আকস্মিক ঘোষণা দিয়ে এপ্রিল কিংবা মে মাসেই নির্বাচন ডাকবে। তেমন অবস্থায় কী করবেন খালেদা জিয়া? তিনি কি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেবেন? সরকার ও তাদের পেশিশক্তি কি তাতে বিরত হবে? তা ছাড়া যেনতেন প্রকারের একটা নির্বাচন করে ফেলতে পারলে তারা গায়ের জোরে গদি দখল করে থাকবে, খালেদার প্রতিবাদ বিগত দেড় বছরে তার আন্দোলনের মতোই রাষ্ট্রদূতদের সহানুভূতি পাবে, কাজের কাজ কিছু হবে না। শেখ হাসিনা বিদেশীদের পরামর্শে তার সাজানো নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন করতে রাজি হবেন বলে কল্পনা করা যায় না। বিএনপি নেত্রী ও তার উপদেষ্টাদের বিষয়গুলো গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে।
(লন্ডন, ০২.০১.১৩)
serajurrahman34@gmail.com

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads