এবার ১০ জনের নাম পেয়েছে দুদক
পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির বিষয়টি স্বীকার করার পর এবার দুর্নীতি দমন কমিশন সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশ করেছে। দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তারা ১০ জনকে দায়ী করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার সুপারিশ করলেও কমিশন আবার তিনজনকে মামলার বাইরে রেখে অভিযোগ দায়ের করতে চাইছে। তারা হলেনÑ সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান ও প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় নিক্সন চৌধুরী। এ তিনজনকে মামলার বাইরে রাখার প্রচেষ্টা দুদককে আবারো প্রশ্নবিদ্ধ করছে। প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবানদের প্রতি এ ধরনের নমনীয়তা মূলত অপরাধকে প্রশ্রয় দেয়ারই শামিল। দুদকের পক্ষ থেকে অজুহাত খাড়া করানোর চেষ্টা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করা যাবে না। অন্য সন্দেহভাজন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানকে প্রতিবেদনে রাখা হয়নি। বলা হয়েছে, আরো ১৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে; ওই ১৫ জনের মধ্যে মসিউর রহমান রয়েছেন।
গত মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদল দুদকে আসেন। দুদকের কর্মকর্তারা এ প্রতিবেদন তাদের সামনে তুলে ধরেন। প্রভাবশালীদের বাইরে রেখে মামলা করতে চায় কমিশন। এর সাথে একমত হতে পারেনি বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলে ছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সাবেক প্রধান আইনজীবী লুই গ্যাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পো, হংকংয়ে দুর্নীতিবিরোধী স্বাধীন কমিশনের সাবেক কমিশনার টিমোথি টং এবং যুক্তরাজ্যের সিরিয়াস ফ্রড কার্যালয়ের সাবেক পরিচালক রিচার্ড অল্ডারম্যান। বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ প্রধান অ্যালেন গোল্ডস্টেইনও তাদের সাথে ছিলেন। তারা বলছেন, মূল নাম বাদ দিলে তা বিশ্বব্যাংকের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। তাদের এ ধরনের অবস্থান ন্যায়সঙ্গত। প্রয়োজন হচ্ছে অপরাধী চিহ্নিত করা এবং তাদের আইনের আশ্রয়ে সোপর্দ করা। দুদক এ ক্ষেত্রে যেন সহযোগিতা করতে চাইছে না। প্রথমে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ আমলে নিতে চাননি তারা। উল্টো অভিযুক্তকে দিয়েছিলেন নির্দোষ হওয়ার সনদ। এখন নিজেরাই তদন্তে নিজেদের অবস্থানের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন। আবার অবস্থান পরিবর্তন করে যেন থাকতে চাইছেন সম্ভাব্য অপরাধীদের পক্ষে।
তদন্ত প্রতিবেদনে পরিষ্কার হয়েছে দুর্নীতি কোথায় হয়েছে। যদিও দুদক সরকারের সমান্তরালে থেকে প্রথম থেকে বলার চেষ্টা করেছে, অর্থ তো ছাড় দেয়া হয়নি, তাহলে দুর্নীতি কোথা থেকে হলো। সেতুর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগে মূল্যায়ন কমিটি চারবার গঠন করা হয়। কোনো ধরনের যৌক্তিক কারণ ছাড়া বারবার কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব। তদন্ত প্রতিবেদনে এসছে তারা মূলত যে করেই হোক কানাডিয়ান কোম্পানি লাভালিনকে কাজটি পাইয়ে দিতে চাচ্ছিলেন। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের ১০ শতাংশ অর্থ পাইয়ে দেয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে আসা অভিযুক্তরা অপরাধ করছেন কি না, সেটা আদালতে প্রমাণসাপেক্ষ। দুদকের কাজ হচ্ছে এটিকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সামনে এগিয়ে নেয়া। তাদের এমন কোনো অবস্থান গ্রহণ করা উচিত হবে না, যা একই সাথে অপরাধের পক্ষে এবং বিশ্বব্যাংকের অবস্থানের বিপরীতে যায়। এর সাথে দুটো জিনিস আমরা পেতে পারি। একটি হচ্ছে বাংলাদেশ দুর্নীতির পক্ষে নয়Ñ এই সুনাম; অন্যটি হচ্ছে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন, দণিাঞ্চলের মানুষ যার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করছেন। আমরা মনে করি, দুদক আর চোখ বন্ধ করে থাকবে না। এবার তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে নীতিনিষ্ঠ হয়েই দাঁড়াবে। পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে রাখবে কাক্সিত ভূমিকা।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন