সোমবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১২

বিগত বছরের সব গ্লানি মুছে যাক

নতুন বছরের শুভেচ্ছা

আমাদের সামগ্রিক জীবন থেকে আরো একটি বছর বিদায় নিলো। শুরু  হলো নতুন সৌরবর্ষ দুই হাজার তেরো সাল। বিগত বছরটা ছিল খুন, গুম, হামলা, মামলা ও কেলেঙ্কারির বছর। সেই সাথে বাড়তি বিড়ম্বনা ছিল আইনের শাসনের বিপর্যয়। দুর্নীতির প্রসার ঘটেছে রন্ধ্রে রন্ধ্রে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রেও দুই হাজার বারো সাল ছিল আলোচিত বছর। রাজনৈতিক নিপীড়নের মাত্রা ছিল সীমাহীন। প্রশাসন দলীয়করণের নেতিবাচক প্রভাবে ছিল আড়ষ্ট। শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা ছিল সীমাহীন। নিত্যপণ্যের দাম বাড়া ও জ্বালানির বারবার বাড়তি মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি ছিল অসহনীয়। ব্যাংক খাত মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। উৎপাদনের চাকা ছিল স্থবির। তার ওপর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের প্রত্যাশা পূরণে শুধু ব্যর্থই হয়নি, সরকারি চাপে ছিল নতজানু। বিচার বিভাগ যতটা না ইতিবাচক আলোচনার বিষয় ছিল, তার চেয়ে হাজার গুণ ছিল বিভিন্ন ধরনের গ্লানিতে ভরা। আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গায় শুধু চিড় ধরেনিÑ বিচারক নিয়োগ, পদোন্নতি ও বিচারিক কাজ নিয়ে সমালোচনা ছিল অধিকতর আলোচ্য বিষয়।

অসংখ্য ব্যর্থতার গ্লানি ও হতাশার মাঝে হারিয়ে গেছে সামান্য কিছু সাফল্য ও অগ্রগতি। অর্থনৈতিক বিবেচনায় বিগত বছরটি ছিল আশাহত হওয়ার মতো। শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়ায়নি, ব্যাংক কেলেঙ্কারির প্রসার ঘটেছে, রাজনৈতিকভাবে দেশ আবার শঙ্কা ও হতাশার গহ্বরে পড়েছে। গণতন্ত্র চর্চায় সরকার সামান্যতম সহিষ্ণুতাও প্রদর্শন করেনি। অর্থনৈতিক শোষণের সাথে রাজনৈতিক নিপীড়ন যোগ হয়ে দেশে একধরনের ছদ্মবেশী স্বৈরাচারের আলামত স্পষ্ট করেছে। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আধিপত্যবাদী ধারাকে সরকারই পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। সামাজিক মূল্যবোধগুলো যেন ধসিয়ে দেয়া হয়েছে। নৈতিক মানদণ্ডের বিবেচনায় অবক্ষয় ঠেকানো এবং জাতীয় চেতনাকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সরকার কোনো ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেনি। প্রতিবেশী দেশের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের কথা বলা হলেও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারতীয় স্বার্থ প্রাধান্য পেয়েছে। অপর দিকে কূটনৈতিক ব্যর্থতায় পররাষ্ট্রনীতি হয়ে পড়েছে একঘরে। দূরত্ব বেড়েছে দাতা সংস্থা, বিশ্বব্যাংক, মুসলিম বিশ্ব, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে। আমাদের জাতীয় জীবনের মতোই আন্তর্জাতিক বিশ্ব ছিল অনেক আলোচনায় মুখর। তবে বিদায়ী বছরে বিশ্বজুড়ে কিছু নেতিবাচক দুঃসংবাদের পাশাপাশি বেশ কিছু ইতিবাচক ঘটনাও ঘটেছে। মিসর ও ফিলিস্তিনের অগ্রগতি সন্তোষজনক হলেও সিরিয়ায় রক্তক্ষরণ ছিল অনেক ব্যথাতুর।
এত সব নেতিবাচক সমস্যা, সঙ্কট ও শঙ্কা নিয়েও আমরা নতুন বছরকে আশাবাদের স্বপ্নে রাঙাতে চাই। আশা করতে চাই, জনগণের বিজয়ের পথে অনেক অগ্রগতিই প্রত্যক্ষ করা যাবে। রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবে। অর্থনীতি বাঁক ঘুরে দাঁড়াবে। সাংস্কৃতিক দেউলিয়াত্ব ঘুচে যাবে। হতাশার কালো চাদর ভেদ করেই আশার আলো জ্বলে উঠবে। আশা করা যায়, সরকার জনগণের হৃৎস্পন্দন বুঝতে সক্ষম হবে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে একটি শুভ দিনের আশায় সবাই প্রহর গুনতে চান। এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে সর্বত্র। তবেই একটি নববর্ষকে স্বাগত জানানোর রেওয়াজ সার্থকতা পাবে। তাই জোর দিয়ে বলবÑ গণতন্ত্র সত্যিকার অর্থে মুক্তি পাক, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক। ন্যায়, ইনসাফ ও স্বচ্ছতা সব গ্লানি মুছে দিক। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads