শনিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১২

২০ নারী গ্রেফতার, রিমান্ড, ৫৪ ধারার অপব্যবহার\ মানবাধিকার সংস্থা নীরব



খান মুহাম্মদ ইয়াকুব আলী : আমাদের সুশীল সমাজ আমাদের মানবাধিকার সংস্থা দেশের সঙ্কটময় সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। দেশের জরুরি ব্যবস্থার সময়ও কিছু কিছু মানবাধিকার সংস্থা জনস্বার্থে কথা বলেছেন। তাদের প্রতি রয়েছে আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। যখন মানুষ কোথাও আশ্রয় পায় না তখন মানবাধিকার সংস্থার আশ্রয় গ্রহণ করে। নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষ যারা আত্মপক্ষ সমর্থনের যোগ্যতা রাখে না, হোক অর্থের অভাবে কিংবা বুদ্ধির অভাব বা কোন পেশীশক্তির ভয়ে সেসব অসহায় মানুষের জন্য আইনী সহায়তা দানের উদ্দেশ্যে দেশের প্রখ্যাত আইনজীবী এডভোকেট এলিনা খান গড়ে তোলেন ‘বাংলাদেশ হিউম্যান ফাউন্ডেশন'। এ সংস্থার মাধ্যমে অসংখ্য মানুষকে আইনী সহায়তা দেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এডভোকেট এলিনা খানের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ অনেক গুণে বেড়ে গিয়েছে। হাসি-খুশি ও স্পষ্টভাষী এ ভদ্র মহিলার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পায় যখন পিরোজপুরে কয়েকজন বোরখা পরা নারীকে ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা ধরে পুলিশের কাছে দেয় তখন টিভির পর্দায় এ এলিনা খান বলিষ্ঠভাবে এর প্রতিবাদ করেন। তিনি একজন নিরপেক্ষ মানবাধিকার নেত্রী- এটা তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ব্যথিত হই যখন দেখি মানবাধিকার সংস্থাগুলো একপেশে ভূমিকা পালন করে। যেমন ১৯ ডিসেম্বর ২০১২ দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় একটি রিপোর্ট ছাপা হয় ‘৫৪ ধারায় গ্রেফতার ২০ নারী ২ দিনের রিমান্ডে : অন্তঃস্বত্বাকে নির্যাতন; মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন' এ শিরোনামে। এখানে বিভিন্ন মানবাধিকার কর্মীরা ৫৪ ধারার সমালোচনা করে বলেন, এটি বৃটিশদের তৈরি একটি আইন। সব সরকারই এ আইন দিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল করে। আসামী পক্ষের আইনজীবী বলেছেন, এ আইনটির বিরোধিতা করে আসছি আমরা। এটি কোন আইনই নয়, এটি একটি কালো আইন। সেখানে প্রখ্যাত আইনজীবী ও মানবাধিকার নেত্রী এডভোকেট এলিনা খান ৫৪ ধারার ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি শুনে খুবই ব্যথিত হয়েছি। কেন তবে কি কবি এখানে নীরব?
বর্তমান সরকার মাইন্ড করবেন সে কারণে ২০ জন নারীকে বেআইনীভাবে গ্রেফতার করার পরেও এলিনা আপার মুখ থেকে কোন কথা বের হয়নি। মানবাধিকারের আরেক সম্মানিত ব্যক্তিত্ব ড. মিজানুর রহমান সাহেব। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে বেশ গঠনমূলক ও বলিষ্ঠ বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এই যে ২০ জন নিরীহ নারীকে বেআইনীভাবে গ্রেফতারই শুধু নয় তাদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির না করে দুইদিন থানায় অমানবিকভাবে কষ্ট দেয়া হলো। এ বিষয়ে জনাব মিজানুর রহমানের কোন বক্তব্য শুনতে পেলাম না। সঙ্গত কারণেই একটি গল্প মনে পড়ে ‘একজন সাধারণ লোক এক অফিস কর্মকর্তাকে ঘুষ দিতে চাইলে ঐ কর্মকর্তা রেগে বলে, জানেন না আমি ঘুষ খাই না, তখন ঘুষদাতা জিজ্ঞেস করলো, স্যার কত পর্যন্ত খান না।' এখন আমার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, এই যে মানবাধিকার সংস্থার কর্তা ব্যক্তিরা দুঃখী মানুষের পক্ষে কথা বলেন, অধিকার বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। তারা কোন মানুষ? সর্বস্তরের মানুষ যদি হয় তবে এই ২০ জন নারী কি সে মানুষের পর্যায়ে পড়ে না? এলিনা খান ও ড. মিজানুর রহমান যে মানবাধিকার রক্ষায় ব্যস্ত এ ২০ জন নারী কি সে সংজ্ঞায় পড়ে না? ধন্যবাদ জানাই অন্য এক মানবাধিকার নেতাকে যিনি অন্তত বিবেকের তাড়ণায় আমার দেশকে বলেছেন ৫৪ ধারায় কাউকে গ্রেফতার করতে হলে সুনির্দিষ্ট কারণ থাকতে হবে। এ ব্যক্তি হলেন মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন। তিনি বলেন, ‘‘ঢালাওভাবে গ্রেফতার করে রাষ্ট্রদ্রোহিতায় অভিযোগ এনে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার কর্মীদের রিমান্ডে নেয়া কতটুকু যৌক্তিক হয়েছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। এটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কথাই মনে করিয়ে দেয়।’’ যাই হোক সরকার কখনও কখনও পথভ্রষ্ট হয়ে যায় ক্ষমতার কারণে এটা হওযা একেবারেই স্বাভাবিক বিষয়। এমন অবস্থায় সরকারের জন্য বিরোধীদল ও সুশীল সমাজ এবং মানবাধিকার সংস্থাসহ অন্যান্য বে-সরকারি সংস্থাই সরকারকে সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। সরকারের চামড়া বেশি মোটা হলে এ পরামর্শকে কোন পাত্তাই দেয় না আর যদি চামড়া কিছুটা হলে বোধশক্তি অনুভব করার মত হয় তবে পরামর্শ গ্রহণ করে। তাই বিবেকের তাড়ণায় হোক আর নিরপেক্ষ দায়িত্বশীলতার প্রয়োজনেই হোক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উচিত বর্তমানে দেশে যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে সে বিষয়ে সোচ্চার হওয়া। অন্যথায় এসব সংস্থার প্রতি মানুষের অনেক কিছু জানার থাকবে, অনেক কৌতূহলের জন্ম দিবে, আসলে এরা কারা। আমাদের এখনো বুঝে আসে না বর্তমানে বাংলাদেশে যে পরিমাণ মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে এর চাইতে বেশি আর কিভাবে হয়? দেশের আলেম-উলামা, সহজ-সরল মানুষগুলোকে যেভাবে কোন কারণ ছাড়াই জেলে আবদ্ধ করা হল তাদের সাথে যে আচরণ করা হচ্ছে এটাও নাকি মানবাধিকারের লঙ্ঘন হচ্ছে না। আমাদের দেশের সরকার যেভাবে কথা-বার্তা বলে তাতে মনে হয় দেশে শান্তির সুবাতাস বইছে। অথচ আজ মানবতার চরম ভোগান্তি আর স্মরণকালের সর্বাপেক্ষা মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। বিনা বিচারে কারাবরণ, কারণ ছাড়া গ্রেফতার, হত্যা, গুম, জবরদখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভাগা-ভাগি নিয়ে কোন্দলে লাশ হওয়া অতীতে আর কখনও এমনটি হয়নি। কোথায় মানবাধিকার কোথায় আজ বুদ্ধিজীবী কোথায়ইবা সুশীল সমাজ? তাদের মনে হয় বিবেকটা নাড়া দিচ্ছে না, হৃদয় মাঝে ব্যথা অনুভব হচ্ছে না। মানবাধিকার সংস্থার প্রতি তাই আবেদন নিরপেক্ষ ও মুক্ত মনে সঠিক কথাবার্তা বলুন। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে তা কোন মানুষ সে বিষয়ে বিবেচনা করা যাবে না যে তারা মানুষ এটাই বড় বিষয়। আশা করি একটু ভেবে দেখবেন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads