১৮ ডিসেম্বর এবং ২০ ডিসেম্বর। মাত্র একদিনের ব্যবধানে দুটি হরতাল। অথচ দুটি হরতালে কি আকাশ পাতাল প্রভেদ। ১৮ তারিখের হরতালটি ছিল কয়েকটি খুচরা বাম দলের ডাকা হরতাল। পক্ষান্তরে ২০ তারিখের হরতাল ডেকেছিল ১২টি ছোট ছোট ইসলামী রাজনৈতিক দল। দুইটি হরতালে আওয়ামী সরকারের দুই রকম ভূমিকা। এটিকেই বলে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড। আর সরকার কি নির্লজ্জভাবে তার স্ট্যান্ডার্ড প্রকাশ করলো। ১৮ তারিখের খুচরা বাম দলের হরতালের মূল দাবি ছিল জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি তথা ইসলামী রাজনীতিক নিষিদ্ধ করা। এই হরতালকে সরকার শুধু সমর্থনই করেনি, বরং পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতি ক্যাডারের মতো মাঠে নামিয়ে সেই হরতালকে সফল করার ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পক্ষে সরকার তথা আওয়ামী লীগ অবস্থান নিয়েছে। পক্ষান্তরে ২০ তারিখের হরতালে সরকার রণরঙ্গি মূর্তিতে ফিরে গেছে। ইসলামী দলগুলোর কর্মীদের মিছিল করতে দেয়া হয়নি, এমনকি রাস্তাতেও দাঁড়াতে দেয়া হয়নি। কামরাঙ্গির চরের মাদরাসার ছাত্রদেরকে বের হতেও দেয়া হয়নি। তাদের পিকেটারকে রাস্তায় দেখা যায়নি। তারা কোন গাড়ি-ঘোড়া ভাঙচুর করেনি। কোন ককটেলও ফাটায়নি। তারপরেও সরকার তাদের ২০ জন কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। আওয়ামী সরকারের দমননীতি সত্ত্বেও এবং রাস্তাঘাটে কোন পিকেটার না থাকা সত্ত্বেও তাদের হরতাল সফল হয়েছে। তাদের দাবি ছিল ইসলামী রাজনীতি বহাল রাখা এবং কমিউনিস্ট রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। তাদের বিরুদ্ধে দমননীতি চালিয়ে আওয়ামী সরকার প্রমাণ করলো যে সরকার এবং সেই সুবাদে আওয়ামী লীগ দেশে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করে কমিউনিস্ট রাজনীতি বহাল রাখতে চায়। তাদের অবস্থান সরাসরি প্রকাশ না করে সরকার ঘুরিয়ে প্রকাশ করলো মাত্র।
অথচ জনগণ এই দুটি হরতালের মাধ্যমে এই মর্মে তাদের মতামত জানিয়ে দিয়েছেন যে, তারা ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ঘোরতর বিপক্ষে। জনগণ কমিউনিস্ট রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে অতীতেও কিছু বলেনি, এবারে কিছু বলতে চায়নি। কারণ জনগণ জানেন যে, দেশে যদি নির্ভেজাল গণতন্ত্র চালু থাকে তাহলে জনগণ তাদেরকে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করবে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কমিউনিস্টরা আপনা থেকেই ঝরে যায়। সেই জন্য কমিউনিস্ট রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়টিকে জনগণ কোনদিন তাদের রাজনীতি বা আন্দোলনের ফোরফ্রন্টে নিয়ে আসেনি। কিন্তু সরকার যখন খুচরা বামদলসমূহকে সরাসরি সমর্থন দিয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে তখন জনগণকেও এই সরকারের ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
জনগণ অবশ্য তাদের সিদ্ধান্ত সাধারণত জানিয়ে থাকেন নির্বাচন বা ভোটের মাধ্যমে। আগামী নির্বাচন যদি অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় এবং সেটি যদি অনুষ্ঠিত হয় একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে তাহলে অবশ্যই জনগণের রায়টি পাওয়া যাবে।
অবশ্য জনগণ কিন্তু অন্যান্য ফোরামে ইতোমধ্যেই তাদের রায়টি দিয়েছেন। সমমনা ইসলামী রাজনীতিক দলগুলো ছাড়াও এ মাসে আরো দু'টি হরতাল হয়ে গেল। হরতালগুলো ছিল সর্বাত্মক এবং সম্পূর্ণ সফল। এছাড়া ১৮ দলীয় জোটনেত্রী ঢাকাসহ যেখানেই জনসভা করেছেন সেখানেই লাখ লাখ মানুষ উপচে পড়েছে। এরা কোন ভাড়াটিয়া মানুষ নন। এসব জনসমুদ্রে তাদের উপস্থিতি স্বতঃস্ফূর্ত। তারা হৃদয়ের কথা বলতে ব্যাকুল। ১৮ দলীয় জোটের বিশাল বিশাল জনসভায় হাজির হয়ে এবং বজ্রমুষ্ঠি উত্তোলন করে বজ্রের ধ্বনি কেড়ে নিয়ে তারা যে সরকার বিরোধী স্লোগান দেন সে স্লোগানের মাধ্যমেই তারা সরকারের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন। সেই রায় দেয়ালের গায়ে উৎকীর্ণ হয়ে আছে। সরকার চোখ থাকতেও অন্ধ। হয় তারা দেয়ালের লিখন পড়তে পারে না অথবা পড়তে পারলেও পড়েন না।
\ দুই\
ফিরে আসছি ১৮ তারিখ এবং ২০ তারিখে অনুষ্ঠিত হরতাল নিয়ে। কমিউনিস্টদের যেমন হরতাল ডাকার অধিকার রয়েছে, তেমনি ইসলামপন্থী দলগুলোরও হরতাল ডাকার অধিকার রয়েছে। অবশ্য এখানে একটি কথা না বললেই নয়। কমিউনিজম কিন্তু গণতন্ত্রের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। কার্লমার্কসের দর্শন এবং কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোতে রয়েছে একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার আহবান। কুইনাইনের মতো তিতা বড়ি গেলানোর জন্য সেটিকে যেমন সুগার কোটেড করা হয়, অর্থাৎ তিতার ওপর যে মিষ্টি প্রলেপ দেয়া হয়, কমিউনিস্টরা তেমনি এক নায়কত্বের ওপর সর্বহারার প্রলেপ দিয়ে দেন। বলেন, সর্বহারার একনায়কত্ব। ইংরেজিতে বলে Dictatorship of the proletariat. গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনগণের রায় বা ভোটের মাধ্যমে তারা সেই সর্বহারার একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী নয়। তারা শ্রমিক শ্রেণীর সশস্ত্র রক্তাক্ত শ্রেণী সংগ্রামের মাধ্যমে কমিউনিস্ট রাজ প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী। কমিউনিস্টরা ধর্মে বিশ্বাসী নয়। ধর্মকে তারা মনে করে আফিম। আফিম বা গাঁজা ভাঙ খেয়ে মানুষ যেমন নেশায় চুর হয়ে পড়ে থাকে কমিউনিস্টরা তেমনি মনে করে যে ধর্ম বিশ্বাসে মানুষ নেশাগ্রস্তের মতো অন্ধ হয়ে যায়।
নির্বাচন কমিশনে যে সব দল নিবন্ধিত একমাত্র তাদেরই এদেশে রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে। এই নিবন্ধনের শর্ত এই যে, সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলটির আদর্শ উদ্দেশ্য ও ঘোষণাপত্র এবং গঠনতন্ত্র যেনো বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়। কমিউনিস্ট দর্শন এবং ম্যানিফেস্টো একটু আগেই আলোচনা করেছি। এটি এখন স্পষ্ট হয়ে যায় সে কমিউনিস্টদের আদর্শ এবং দর্শন বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। কারণ বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো হলো বহুদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্র। বহুদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্রে সর্বহারার একনায়কত্বের কোনো স্থান নাই। কমিউনিজমে একটি মাত্র দল থাকবে। সেটি হলো কমিউনিস্ট পার্টি। সোভিয়েত ইউনিয়নে তাই ছিল। এখনও গণচীনেও তাই আছে। কিউবাতেও সেটিই আছে। তাহলে তারা নিবন্ধন পায় কিভাবে? দ্বিতীয়ত, আমাদের রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম। পঞ্চদশ সংশোধনীতেও সেটিই বহাল রয়েছে। কমিউনিজম ধর্মে বিশ্বাস করে না, ঈশ্বর বা আল্লাহ তায়ালায় বিশ্বাস করে না। তাই তারা ধর্মদ্রোহী এবং খোদাদ্রোহী। যেখানে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম সেখানে ধর্মদ্রোহিতা এবং খোদাদ্রোহিতা সরাসরি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। তেমন একটি দলের নিবন্ধন থাকে কিভাবে?
জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার দাবি কেউ তুলতেই পারেন। সেটি কিন্তু ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির কারণে তুলতে পারবেন না। জামায়াতের বিরুদ্ধে যদি এমন কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয় যে অভিযোগটি সংবিধানকে অস্বীকার করে তাহলে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্ন আসতে পারে। কিন্তু তাই বলে যদি ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রশ্ন দাবি ওঠে তাহলে এই ১২টি ইসলামী দলকেওতো নিষিদ্ধ করতে হবে। তাহলে ব্যাপারটি কি দাঁড়াচ্ছে? একজন সাবেক আমলা এবং বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী একাধিকবার টেলিভিশন টক শোতে বলেছেন যে, আমাদের রাজনীতিতে ‘মার্কস' থাকবে কিন্তু মোহাম্মদ (সাঃ) থাকবেন না, সেটি হতে দেয়া যায় না। সিপিবি এবং বাসদ যে দাবি তুলেছেন সেটি মোহাম্মদ (সাঃ)কে নিষিদ্ধ করে মার্কসকে ওপরে আনার শামিল। নিবন্ধন যদি বাতিল করতে হয় তাহলে সর্বাগ্রে কমিউনিস্টদের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। ইসলামপন্থীদের নিবন্ধন বাতিল প্রশ্ন পরবর্তিতে আসবে। আর সেটি করতে হলে কর্তৃপক্ষকে অনেক ভেবে-চিন্তে এবং অগ্রপশ্চাৎ দেখে করতে হবে।
এই পটভূমিতে সিপিবি হরতাল ডেকেছে শুনে যারপরনাই বিস্মিত হই। তার পরেও বলবো, আমি গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। তাদেরও হরতাল ডাকার অধিকার আছে। তর্কের খাতিরে বলতে গেলে বলতে হয় যে, তারা যদি কোনোদিন ক্ষমতায় যান (যে সম্ভাবনা এই মুহূর্তে মোটেই দেখা যাচ্ছে না) তাহলে তারা গণতান্ত্রিক অধিকারের সুযোগ নিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে গণতন্ত্রকেই হত্যা করবেন, সেটা মেনে নেয়া যায় না। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত, সিপিবি এবং অন্যান্য কমিউনিস্ট বা সমাজতান্ত্রিক দলগুলোর ম্যানিফেস্টো এবং গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য তাদের প্রতি আহবান জানানো। সেই আহবান জানানোর পরেও যদি তারা সেটি করতে রাজি না হয় তাহলে সংবিধান মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কমিউনিস্টরা যখন হরতাল ডাকেন তখন এই পয়েন্টটি তারা খেয়াল রাখবেন বলে আশা করি।
\ তিন\
এবার ভিন্ন প্রসঙ্গ। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মি. সনদ্বীপ চক্রবর্তী যে স্পর্ধিত উক্তি করেছেন, তার ফলে বাংলাদেশের মানুষ যুগপৎ বিস্মিত এবং ক্রুব্ধ হয়েছেন। তিনি বলেছেন, যারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধী ছিল তাদের ভারত সরকার কখনো সমর্থন দেবে না। আরও ১ ডিগ্রি আগ বাড়িয়ে তিনি বলেছেন, এটি তার বক্তব্য নয়, এটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্টেরও বক্তব্য। গত বুধবার সন্ধ্যায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্মিত বিজয় মঞ্চে আওয়ামী লীগের বিজয় দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে সনদ্বীপ চক্রবর্তী এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন যে, এটি যে তার বক্তব্যই নয়, এটি যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্টেরও বক্তব্য, সেটি তিনি অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ও শ্রোতাদের জানিয়ে দিলেন। বাবু সনদ্বীপ চক্রবর্তী এবং সেই সুবাদে ভারত সরকারের কাছে বাংলাদেশের জনগণের প্রশ্ন : বাংলাদেশে কারা স্বাধীনতা বিরোধী এবং কারা স্বাধীনতা বিরোধী নয়, সে ব্যাপারে ভারত কথা বলার কে? এটি বাংলাদেশের নিজস্ব ব্যাপার। এ ব্যাপারে কথা বলে ভারতীয় ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নির্লজ্জভাবে হস্তক্ষেপ করেছেন। আর সেই হস্তক্ষেপ করে তিনি ভিমরুলের চাকে ঢিল দিয়েছেন। স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তি নিয়ে কথা বলাটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির একটি বিতর্কিত ইস্যু। এই ইস্যুর পক্ষে যেমন রয়েছে শক্তিশালী মহল ও রাজনৈতিক দল, তেমনি বিপক্ষেও রয়েছে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল ও মহল। স্বাধীনতার পর থেকেই এই বিতর্ক শুরু হয়েছে এবং আজও সেই বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। নিকট ভবিষ্যতেও সেটি থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। যে ইস্যুতে সারাদেশে রয়েছে সুতীব্র রাজনৈতিক বিভাজন, সেই বিভাজনে এমন অবাঞ্ছিত উক্তি করে সনদ্বীপ বাবু তথা ভারতের বর্তমান কংগ্রেস সরকার সুস্পষ্টভাবে একটি পক্ষ অবলম্বন করেছেন। আমরা আগেও বলেছি এবং এখনো বলছি যে, স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষের বিষয়টি একান্তভাবেই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ইস্যু। সেখানে কে স্বাধীনতার পক্ষে আর কে স্বাধীনতার বিপক্ষে সে ব্যাপারে সার্টিফিকেট দেয়ার অধিকার এবং কর্তৃত্ব ভারতকে কে দিল?
ভারতের অব্যাহত দাদাগিরির ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকায় মানুষ তাজ্জব হন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তি ইস্যুটি বিগত ৪০ বছর ধরেই একটি হট ইস্যু হয়ে আছে। তাই বলে সেই ইস্যুতে একটি তৃতীয় পক্ষ অর্থাৎ বাইরের শক্তিকে আমাদের সরকার নাক গলাতে দিচ্ছে কেন? আজ যারা ক্ষমতায় আছেন তারা কিন্তু বিলক্ষণ জানেন যে, স্বাধীনতাবিরোধী ও স্বাধীনতার পক্ষ ইস্যুটি শেখ মুজিবের আমলেই চূড়ান্তভাবেই ফায়সালা হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করেছিলেন তাদের সকলকে শেখ মুজিব বলেছিলেন যে, অতীত মরে যাক। যারা বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতাকে মেনে নেবে অর্থাৎ যারা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করবে তারা এখন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীন নাগরিকের মর্যাদা ও অধিকার ভোগ করবে। যারা মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেছিলেন তারা বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। তৎকালীন সরকার তাদেরকে ক্ষমা করেছেন। এরপর দালাল আইনে আটক ও বিচারাধীন সকলকে ক্ষমা করে ঐ সরকার তাদের বৃহত্তর বাংলাদেশী জাতি গঠনে নিয়োজিত হওয়ার আহবান জানালে তারাও তার আহবানে সাড়া দেন।
এরপর থেকে সেই ইস্যুটি তাত্ত্বিকভাবে সমাধিস্থ হয়েছে। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর এদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারকে বহাল রেখেছেন। এতো কিছুর পর বাংলাদেশের একশ্রেণীর জনগোষ্ঠীকে একটি বিদেশী রাষ্ট্র যদি স্বাধীনতাবিরোধী বলে তাহলে তার সমুচিত জবাব দেয়া বাংলাদেশ সরকারের কর্তব্য। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলিয়ে ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার যে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন, সে ব্যাপারটিকে এতো হালকাভাবে গ্রহণ করা যায় না। কেন তিনি এমন কথা বলেছেন, সেই ব্যাখ্যা তাকে বাংলাদেশীদের সামনে দিতে হবে। কূটনীতির ক্ষেত্রে এটি একটি গর্হিত অপরাধ। সে কারণে তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমাও চাইতে হবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন