রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১২

কোনো কামারতো ওদের হাতে চাপাতি তুলে দেয়নি



এখন অনেকেই বলছেন, ছাত্রলীগের চাপাতির আঘাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ক্ষতবিক্ষত। বিজয়ের মাসে প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশের দৃষ্টির সীমানায় মানুষকে কুপিয়ে হত্যার দৃশ্য শুধু পৈশাচিক নয়, জাতির জন্য লজ্জার বিষয়ও বটে। এমন ঘটনা জনমনে সৃষ্টি করেছে নানা প্রশ্ন। বিশ্বজিৎ হত্যা প্রসঙ্গে আমরা রাজনৈতিক বক্তব্য ও বিশ্লেষণ শুনেছি। আসলে হত্যাকান্ডটি এতটাই স্পষ্ট এবং অপরাধীরা এতই পরিচিত যে এ নিয়ে বেশিকিছু না বললেও চলে। তবে বলার বিষয় অন্য জায়গায়। বিজয়ের মাসে ঐ হত্যাকান্ডের বিশ্লেষণে আমরা মানবিক ও নৈতিক দিক থেকে কতটা সততার পরিচয় দিতে পেরেছি।
রাজনৈতিক অঙ্গনে আমরা প্রায়ই শুনে থাকি যে, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চাইতে দেশ বড়। কিন্তু বিজয়ের এই ৪১তম বার্ষিকীতে এসেও আমরা দেখছি উল্টো চিত্র। এখনো লক্ষ্য করা যাচ্ছে দেশের চাইতে দল বড়, আর দলের চাইতে ব্যক্তি বড়। ফলে আমাদের প্রিয় স্বদেশে মানবিক ও নৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী হতে পারেনি। মানবিক ও নৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী না হলে দেশের মর্যাদা উজ্জ্বল হয় না, হয় না জনগণের কাঙ্ক্ষিত দিনবদলও। বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডের ঘটনায়ও আমরা সেই চিত্রই লক্ষ্য করলাম। এই ঘটনায় সরকারের দলবাজি আচরণ বিশ্বদরবারে দেশের ইমেজ ক্ষুণ্ণ করেছে এবং আহত করেছে জনগণকে। তাইতো হিন্দু মহাজোটের সমাবেশে বিশ্বজিতের হত্যাকান্ডে ছাত্রলীগকে দায়ী করা হয় এবং তার পরিবার থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ ও রিমান্ড দাবি করা হয়। বলা হচ্ছে, ছাত্রলীগের চাপাতির আঘাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এখন ক্ষতবিক্ষত। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ছাত্রলীগ এই ‘চাপাতি' কোথায় পেল? কোনো কামার কি এই চাপাতি ছাত্রলীগের হাতে তুলে দিয়েছে? কিন্তু যে কোনো নাগরিকই এই সত্যটি জানেন যে, ছাত্রলীগের হাতে ‘রাজনৈতিক চাপাতি' তুলে দেয়ার সামর্থ্য কোনো কামারের নেই। কারো হাতে রাজনৈতিক চাপাতি তুলে দিতে পারেন শুধু মাত্র রাজনীতিবিদরাই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন প্রকাশ্য সমাবেশে ছাত্রলীগ-যুবলীগকে প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করার জন্য উস্কে দেন, তখন কি তিনি রাজনৈতিক চাপাতি তুলে দেয়ার কাজটি করেন না? বিজয়ের মাসে এই প্রশ্নের জবাব জাতির কাছে খুবই জরুরি হয়ে উঠেছে।
বলা হচ্ছে, চাপাতির আঘাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এখন ক্ষতবিক্ষত। দৃশ্যত এমন বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণের কারণ নেই। তবে এই সত্যটি আজ স্পষ্ট করেই বলা প্রয়োজন যে, ঐ চাপাতিকে স্পর্ধা দিয়েছে ক্ষমতায় যাওয়ার ও টিকে থাকার রাজনীতি। আদর্শের রাজনীতির বদলে যতদিন ক্ষমতাকেন্দ্রিক এই রাজনীতি সক্রিয় থাকবে, ততদিন চাপাতির কদর ও স্পর্ধা কমবে না। তাই বিবেকবান যে কোনো নাগরিকই আজ এ কথা উপলব্ধি করেন যে, ঐ ধারার রাজনীতির মাধ্যমে কখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। মুক্তিযুদ্ধের মূলচেতনা ছিল অন্যায়ের কাছে মাথানত না করা এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশে জনগণের জীবনমান উন্নয়ন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজীতির অপআচরণের কারণে আমরা এখনো ঐ লক্ষ্যে পৌঁছতে পারিনি। ফ্যাসিবাদী মানসিকতা পদে পদে গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং মানবিক ও নৈতিক চেতনার অভাবে দুর্নীতি ও নির্মমতার মাত্রা বেড়েই চলেছে। এমন বাস্তবতায় জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন তো সম্ভব নয়। তাই বিজয়ের ৪১তম বার্ষিকীতে এসেও আমাদের আজ বিজয়ের অর্থ খুঁজতে হচ্ছে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads