১৮ দলের রাজপথ অবরোধ কর্মসূচি
গতকাল রাজধানীসহ সারা দেশে সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত আট ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের দাবিসহ সরকারের দুর্নীতি ও পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালন করে ১৮ দলীয় জোট। জোটের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল, তাদের নেতাকর্মীরা এই অবরোধ কর্মসূচির সময় রাজপথে থাকবেন। অপর দিকে আওয়ামী লীগ বলেছিল, এই অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে দলটি অবজারভেশন মুডে থাকবে। রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও পাড়া-মহল্লায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশে থাকবে এই দলের নেতাকর্মীরা। বলা হয়েছিল, সরাসরি বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষে জড়ানোর কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই, তবে কোথাও গাড়ি ভাঙচুর বা বাধা দেয়া হলে এরা এর পাল্টা মোকাবেলা করবে।
কর্মসূচি পালন শেষে জানা গেছে, সারা দেশে অবরোধবিরোধী ও পুলিশের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, হত্যা, অগ্নিসংযোগের মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত গতকাল এই আধা বেলার অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সিরাজগঞ্জে অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার পর ফেরার পথে অবরোধবিরোধীদের হামলার শিকার হয়ে একজন জামায়াতকর্মী নিহত হন। আহত হন আরো ২০ জনের মতো। অপর দিকে পুরান ঢাকার জজ কোর্ট এলাকায় অবরোধ কর্মসূচি-বিরোধীদের গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন বিশ্বজিত নামের একজন। অবরোধের আগের দিন রাত ১১টার দিকে নাটোরের আলালপুর এলাকায় জেলা বিএনপি সভাপতি রুহুল কুদ্দুস তালুকদারের বাসার মূল ফটকের সামনে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনার জের ধরে পুলিশ রুহুল কুদ্দুস তালুকদারকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং রুহুল কুদ্দুস দুলুর মুক্তি দাবিতে আজ সোমবার ওই জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ঢেকেছে জেলা বিএনপি।
বিএনপি জানিয়েছে, এই কর্মসূচি চলাকালে চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ছয় শতাধিক। এ সময় পুলিশ প্রায় সাড়ে ৪ শ’ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বেশ কয়েকজন। অবরোধ কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নেয়ার জন্য বিএনপি জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
বলার অপেক্ষা রাখে না, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার দাবিতে ডাকা এই অবরোধ কর্মসূচি পালনে বিরোধী দল অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। এই অবরোধ কর্মসূচিকে ঠেকানোর জন্য সরকারি দলের কোনো কৌশলই যেন আর কাজে আসছে না। এর একটি মাত্র কারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার দাবি ইতোমধ্যে একটি জনদাবিতে রূপ নিয়েছে। সরকারি জোটে থাকা অনেক দলও মনে করে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ এ দেশে এখনো সৃষ্টি হয়নি। ১৮ দলীয় জোট তো বটেই, এই জোটের বাইরে থাকা অন্যান্য বিরোধী দলও খোলাখুলি একাধিকবার এ অভিমতই প্রকাশ করে আসছে। সুশীলসমাজও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পক্ষে তাদের অভিমত প্রকাশ করে আসছে। সাধারণ মানুষ মনে করে দেশে অসহিষ্ণু রাজনৈতিক পরিবেশে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন একেবারেই অসম্ভব। কিন্তু আওয়ামী লীগ জনদাবির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে অব্যাহতভাবে এই সত্য উপলব্ধি না করে, দেশকে একটি রাজনৈতিক সঙ্ঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাই বিবেকবান মানুষের প্রশ্নÑ আমরা কি নতুন কোনো এক-এগারোর পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি?
বিদ্যমান এই পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জনদাবির প্রতি ইতিবাচক সাড়া দিয়ে দেশকে সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের কবল থেকে রক্ষা করে দেশের অন্য সব সমস্যা সমাধানে মনোযোগী হওয়া। এতে কল্যাণ সব পক্ষের। ক্ষতি নেই কোনো পক্ষেরই। এ লক্ষ্যে অবিলম্বে সরকারকে আলোচনায় বসতে হবে বিরোধী দলের সাথে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন