সারা দেশের মানুষ বলা যায় বিরোধী দলের ভিন্ন রূপ এক গণসংযোগদৃশ্য প্রত্যক্ষ করল। রাজধানীর গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে ভাটারা পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার পথে জনসংযোগ করেছেন বিরোধী দলের নেত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিভাগীয় শহরগুলোতেও একই ধরনের জনসংযোগ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে সম্পন্ন হলো সম্পূর্ণ অহিংস উপায়ে। রাজধানীতে মুহুর্মুহু স্লোগানে মুখরিত রাজপথে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে এ গণসংযোগ করেন ১৮ দলীয় জোটের নেতা বেগম খালেদা জিয়া। তিনি দিনব্যাপী গণসংযোগের অংশ হিসেবে বিভিন্নস্থানে পথসভায় বক্তব্য রাখেন।
বেগম খালেদা জিয়ার এই গণসংযোগ দৃশ্য ছিল অভাবনীয়। আগে-পিছে ছুটেছে হাজারো মোটরসাইকেল ও গাড়ি। দুই পাশে মানুষের ঢল। হাত নেড়ে বিরোধী দলের নেতার প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন, উচ্ছ্বাস। নেই জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর-সংঘর্ষ। নেই পুলিশের তাণ্ডব লাঠিসোঁটা, পিস্তল-চাপাতি নিয়ে পুলিশের আশপাশে দেখা যায়নি সরকারি দলের বা তাদের অঙ্গসংগঠনের কোনো ক্যাডারকে। নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ অংশগ্রহণে প্রশাসনের সদস্যরা পালন করেছেন সহযোগিতামূলক ভূমিকা। কর্মসূচি নির্বিঘœ করতে পুলিশ সদস্যরা ছিলেন সদাতৎপর। প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করলে বিরোধী দলের প্রতিটি কর্মসূচি সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ হতে পারে, গতকালের এই ঘটনা তারই প্রমাণ। দেশের মানুষ চায় বিরোধী দলের ওপর অমানবিক দমন-পীড়নের পথ অবলম্বন না করে সরকার এখন থেকে তাদের কর্মসূচি পালনে এ ধরনের সহযোগিতামূলক ভূমিকা পালন করবে। তা না করে কোনো রাজনৈতিক দল রাস্তায় নামলেই পুলিশ ও সরকারি দলের সশস্ত্র ক্যাডারদের ঘোষণা দিয়ে প্রতিরোধে নামানোর সংস্কৃতি থেকে সরকারকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিরোধী দলগুলোকেও পালন করতে হবে দায়িত্বশীল ভূমিকা। গত বুধবার যেভাবে দায়িত্বশীলতার সাথে তাদের গণসংযোগ কর্মসূচি পালনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে, তা আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত রাখতে হবে।
বিরোধী দলের কর্মসূচিতে জনগণের ব্যাপক ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আবারো প্রমাণিত হয়েছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বিরোধীদলীয় দাবি এখন জাতীয় দাবির রূপ নিয়েছে। শুধু বিরোধী দল নয়, সরকারি জোটে থাকা অনেক দলসহ দেশের সুশীলসমাজ বারবার বলে আসছে, দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সরকারপক্ষকে এই বাস্তবতা উপলব্ধি করতে হবে। জনগণের মনমানসিকতা পাঠ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ‘আগামী নির্বাচন জননেত্রী শেখ হাসিনার দলীয় সরকারের অধীনেই হবে, হবে, হবে’Ñ এ ধরনের অনড় অবস্থান থেকে সরকারি দলকে সরে আসতে হবে। বেগম জিয়া এই গণসংযোগকালে সুস্পষ্টভাবে বলেই দিয়েছেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল আনুন, আমরাও সংসদে যাবো। সবাই মিলে আলোচনা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করব। তখন আন্দোলনের আর প্রয়োজন হবে না।’
আমরা মনে করি, সরকারকে বেগম জিয়ার এই প্রস্তাব মেনে নিয়ে আগামী সংসদ অধিবেশনেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কিত বিল এনে বিরোধী দলকে সাথে নিয়ে উদ্ভূত সঙ্কট নিরসন করতে হবে। দেশবাসী এতে মুক্ত হবে সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের রাজনীতি থেকে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন