শুক্রবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১২

খুনিদের দলীয় পরিচয় থাকতে পারে না


শ্বজিৎকে কারা হত্যা করেছেÑ এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। টেলিভিশনের চিত্র এবং পত্রিকাগুলোর খবরে নামধামসহ তাদের পরিচয় শতভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একজন মানুষকে রাস্তায় কুপিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। হত্যাকারীদের চেহারায় কোনো মুখোশ ছিল না। দৈনিক পত্রিকাগুলো ধারাবাহিক হত্যাচিত্র প্রকাশ করে খুনিদের পরিচয় আরো নিশ্চিত করেছে। বরং এরা অ্যাকশনের ছবির মধ্যেই হত্যাকারীদের নাম ও পরিচয় স্পষ্ট করে দিয়েছে। দেশের সব জাতীয় দৈনিক কয়েক দিন ধরে খুনিদের দলীয় (হত্যাকাণ্ডের সময়ের) ও আলাদা আলাদা ছবি ছেপেছে। এরা সবাই জাগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এদের বিরুদ্ধে আরো নানা অপরাধের অভিযোগ আগে থেকেই ছিল। আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে এলোপাতাড়ি বক্তব্য আসছে এ নিয়ে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন এক কথা, বনমন্ত্রী বলছেন অন্যরকম, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আরেক রকম কথা। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের দায় স্পষ্টভাবে বিএনপি-জামায়াতের ওপর চাপিয়ে দিলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, অপরাধীদের ব্যাপারে এ লুকোচুরি কেন?

এর মধ্যে হত্যাকারীদের তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এখন অন্যদের গ্রেফতার করে আইনের হাতে সোপর্দ করাই সরকারের কাজ। আমরা দেখলাম প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব পুরো উল্টো বক্তব্য দিচ্ছেন। বিশ্বজিতের হত্যাকারীরা ছাত্রলীগ নয় বলে জোর দিয়ে জানালেন। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের দায় বিএনপি-জামায়াতের ওপর চাপিয়েছেন। তিনি বলেন, মানুষ হত্যা করে তার দায় অন্যদের ওপর চাপানো তাদের (বিএনপি-জামায়াত) ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বিশ্বজিৎ হত্যা নিয়ে এসব মন্তব্য করেন।
তিনি আসলে বিরোধী দলের সমালোচনা করতে গিয়ে বিশ্বজিৎ হত্যার বিষয়টি গুলিয়ে ফেলেছেন। যেখানে ছাত্রলীগ সভাপতি দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন হত্যাকারীদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার জন্য, সেখানে এ ধরনের বক্তব্য লজ্জাকর। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টার মুখ থেকে এ ধরনের ডাহা মিথ্যা জাতি কখনো প্রত্যাশা করে না। হত্যাকারীরা ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আগেই দলীয় দায় এড়াতে চেয়েছেন। বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদও এলোমেলো বক্তব্য দিয়েছেন। ছাত্রলীগ সভাপতি অনেকটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কণ্ঠের সুর মিলিয়েছেন। কিন্তু তারা কেউ প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিবের মিথ্যাচার করেননি।
সম্প্রতি অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটলেও বিশ্বজিতের হত্যাকাণ্ডটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে। এর অন্যতম কারণ আওয়ামী লীগের একটি দাবি। দলটি বলে থাকে তারা সংখ্যালঘুদের রক্ষক। বিশ্বজিৎ চাপাতির নিচে থেকে আকুতি জানিয়েছিলেন, ‘আমি হিন্দু’। অর্থাৎ তার আশা ছিল ধর্মীয় পরিচয় দিলে আওয়ামী লীগের এ অঙ্গসংগঠনটির খুনিদের হাত থেকে তিনি অন্তত বেঁচে যেতে পারবেন। কিন্তু না, তিনি বাঁচেননি। পাষণ্ডরা শেষ পর্যন্ত তাকে কুপিয়েছে। তার মৃত্যু নিশ্চিত করে তবেই এরা ক্ষান্ত হয়েছে। খুনিদের দলীয় পরিচয় থাকতে পারে। দলীয় পরিচয়ের কারণে এরা হয়তো বিচার এড়িয়ে যেতেও পারে। কিন্তু খুনিরা আসলে খুনি। তাদের দলীয় পরিচয় একটা সাইন বোর্ড হতে পারে। কিন্তু এ পরিচয় মানুষ খুনের পথে কোনো বাধা নয়। বিশ্বজিৎ খুন হয়ে তা আবারো প্রমাণ করলেন।
ক্ষমতাসীন শীর্ষ দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে এলোমেলো বক্তব্য সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে কেন তাদের এই লুকোচুরি। তারা কি খুনিদের বাঁচাতে চান? এতে তাদের লাভটা কোথায়। বিশেষ করে তাদের পরিচয় প্রকাশ্য দিবালোকে চলে এসেছে। আমরা এ ধরনের ডাহা মিথ্যাচারকে আইনের শাসনের পরিপন্থী মনে করি। সরকারের উচিত চিন্তাভাবনা করে সঠিক বক্তব্য রাখা। সবাই মিলে নানা রকম বক্তব্য না দিয়ে তারা খুনিদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। তাদের বিচারের আওতায় আনার বিরুদ্ধে নয়, পক্ষে অবস্থান নেবেন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads