আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি, নিরাপত্তাহীনতার লাগাতার উদ্বেগ এবং গুম-হত্যার বিস্তর সাক্ষ্য রেখে বিদায় নিচ্ছে ২০১২ সাল। বছরভর সংশয় ও আতঙ্ক বিরাজ করেছে সারাদেশে। আততায়ী ও যুদ্ধংদেহী দুর্বৃত্তদের প্রকাশ্য ও গোপন হানায় লাশ হয়েছে অসংখ্য নারী-পুরুষ। যেন সর্বত্র ওঁত্ পেতে রয়েছে মৃত্যু। স্বাভাবিক মৃত্যুর কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ অবস্থা কমবেশি বিরাজমান ছিল মহাজোট সরকারের পুরো শাসনকালব্যাপী। বিশেষত রাজনৈতিক অঙ্গনে গুম ও হত্যার ঘটনা শুধু দেশেই চরম আতঙ্কের আবহ সৃষ্টি করেনি, দেশের বাইরেও এ নিয়ে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা প্রকাশ করেছে একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্ব-সংস্থা-সংগঠন। কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে কোনো কিনারা করার নিদর্শন রাখতে পারেনি।
পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, মহাজোট সরকারের জমানায় এ নাগাদ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় দুই নেতাসহ দেড় শতাধিক ব্যক্তি গুম-গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন। এদিকে হিউম্যান রাইটস ফোরাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে গুম হয়েছে ১৫৬ জন। এর মধ্যে পাওয়া গেছে ২৮ জনের মৃতদেহ। গুম হওয়ার পর কারও লাশ পাওয়া গেছে নদীতে, ডোবায়, জঙ্গলে, ঝোপের মধ্যে। গুমের তালিকায় রয়েছেন ছাত্রদল, যুবদল, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও বিরোধী মতের মানুষ। সরকারি দলের লোকও বাদ যায়নি। চলতি বছর জানুয়ারিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরেক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দেশ-বিদেশে সমালোচনার মুখে বাংলাদেশে র্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমলেও গুমের ঘটনা অনেক বেড়েছে। নিউইয়র্কভিত্তিক এই মানবাধিকার সংস্থাটির মতে, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নিরাপত্তা তদন্ত এবং বিচারে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়নি বাংলাদেশ সরকার। ফলে স্বভাবতই উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এত সবের পরেও সরকারের সাবেক ও বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাজ্বল্যমান অভিযোগকে যথাযথভাবে আমলে নেননি। বরং দফায় দফায় বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো। সেই একই সুরে সুর মিলিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে, তা অস্বীকার করে আসছেন। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, পুলিশ-র্যাবের নাম করে অপহরণের ঘটনা ঘটছে। তবে এসব ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত নয়। অপরাধীরাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নাম ব্যবহার করছে। অর্থাত্ পক্ষান্তরে তিনি অপরাধ বৃদ্ধির কথাই স্বীকার করেছেন, আর তাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অপারগতাই প্রকাশ পেয়েছে।
সবাই জানেন, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাস এবং আদালতের নির্দেশ থাকার পরও গুম হয়ে যাওয়া বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারেনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। ঘটনাটি এখন তদন্তের আওতায় আছে কিনা তা নিয়েও সংশয় পোষণ করছেন অনেকে। জানা গেছে, ইলিয়াস আলী গুম তদন্তে একচুলও অগ্রগতি নেই। বহুল আলোচিত শ্রমিক নেতা আমিনুল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করে একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন, শ্রমিক আন্দোলন, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র থেকেও বিচার দাবি করা হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সরকার এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এছাড়া বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম নিখোঁজ রয়েছেন আটাশ মাস ধরে। সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিদের হাতে আটক হন তিনি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নিখোঁজ ছাত্রের খোঁজ মেলেনি গত এগারো মাসেও। র্যাবের পোশাক ও সাদা পোশাকধারীরা তাকে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ আছে। তবে র্যাব তাদের আটকের বিষয় অস্বীকার করেছে। এভাবে নিজেদের পুলিশ ও ডিবি পরিচয় দিয়ে এবং অন্য প্রক্রিয়ায় যারা গুম হয়েছেন তাদের জীবন্ত ফিরিয়ে আনার বেলায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কোনো সাফল্য দেখাতে পারেনি। ক্ষেত্রবিশেষে পুলিশ উদ্ধার করেছে লাশ। উল্লেখ্য, গুমের তালিকায় বিরোধী দলের লোকজন ছাড়াও সরকারি দল আওয়ামী লীগের একজন নেতাও রয়েছেন। সেক্ষেত্রেও একই ফলাফল।
এ অবস্থায় উদ্বেগ-আশঙ্কা খুবই স্বাভাবিক যে, ঘরে-বাইরে কোথাও কেউ নিরাপদ নন। কে কখন গুম হয়ে যায়—এই ভয়ে দিন কাটছে মানুষের। এদিকে গুম তথা নিখোঁজ হওয়া লোকদের ফিরে পেতে অনেকের পরিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে আদালত ও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ক্লান্ত হচ্ছে। নিমজ্জিত হচ্ছে গভীর হতাশায়। এহেন পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ যদি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অভিযোগ অস্বীকার করেন কিংবা অনিশ্চিত দুষ্কৃতকারীদের ওপর ঘটনার দায় চাপিয়ে নিজেদের দায়ভাগ হালকা করতে চান, তাহলে হতাশা আরও বেড়ে যায় বৈকি। এসব দুঃখজনক-বেদনাদায়ক অমীমাংসিত ঘটনাবলীর বোঝা নিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে নতুন ইংরেজি বছর। সবার প্রত্যাশা, সরকার বছরের সূচনা পর্বেই এসব গুম-হত্যার সুরাহা করতে সক্ষম হবে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার অপারগতার গ্লানি মোচন করে দেশবাসীর উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা হালকা করবে।
পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, মহাজোট সরকারের জমানায় এ নাগাদ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় দুই নেতাসহ দেড় শতাধিক ব্যক্তি গুম-গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন। এদিকে হিউম্যান রাইটস ফোরাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে গুম হয়েছে ১৫৬ জন। এর মধ্যে পাওয়া গেছে ২৮ জনের মৃতদেহ। গুম হওয়ার পর কারও লাশ পাওয়া গেছে নদীতে, ডোবায়, জঙ্গলে, ঝোপের মধ্যে। গুমের তালিকায় রয়েছেন ছাত্রদল, যুবদল, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও বিরোধী মতের মানুষ। সরকারি দলের লোকও বাদ যায়নি। চলতি বছর জানুয়ারিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরেক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দেশ-বিদেশে সমালোচনার মুখে বাংলাদেশে র্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমলেও গুমের ঘটনা অনেক বেড়েছে। নিউইয়র্কভিত্তিক এই মানবাধিকার সংস্থাটির মতে, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নিরাপত্তা তদন্ত এবং বিচারে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়নি বাংলাদেশ সরকার। ফলে স্বভাবতই উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এত সবের পরেও সরকারের সাবেক ও বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাজ্বল্যমান অভিযোগকে যথাযথভাবে আমলে নেননি। বরং দফায় দফায় বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো। সেই একই সুরে সুর মিলিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে, তা অস্বীকার করে আসছেন। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, পুলিশ-র্যাবের নাম করে অপহরণের ঘটনা ঘটছে। তবে এসব ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত নয়। অপরাধীরাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নাম ব্যবহার করছে। অর্থাত্ পক্ষান্তরে তিনি অপরাধ বৃদ্ধির কথাই স্বীকার করেছেন, আর তাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অপারগতাই প্রকাশ পেয়েছে।
সবাই জানেন, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাস এবং আদালতের নির্দেশ থাকার পরও গুম হয়ে যাওয়া বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারেনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। ঘটনাটি এখন তদন্তের আওতায় আছে কিনা তা নিয়েও সংশয় পোষণ করছেন অনেকে। জানা গেছে, ইলিয়াস আলী গুম তদন্তে একচুলও অগ্রগতি নেই। বহুল আলোচিত শ্রমিক নেতা আমিনুল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করে একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন, শ্রমিক আন্দোলন, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র থেকেও বিচার দাবি করা হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সরকার এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এছাড়া বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম নিখোঁজ রয়েছেন আটাশ মাস ধরে। সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিদের হাতে আটক হন তিনি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নিখোঁজ ছাত্রের খোঁজ মেলেনি গত এগারো মাসেও। র্যাবের পোশাক ও সাদা পোশাকধারীরা তাকে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ আছে। তবে র্যাব তাদের আটকের বিষয় অস্বীকার করেছে। এভাবে নিজেদের পুলিশ ও ডিবি পরিচয় দিয়ে এবং অন্য প্রক্রিয়ায় যারা গুম হয়েছেন তাদের জীবন্ত ফিরিয়ে আনার বেলায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কোনো সাফল্য দেখাতে পারেনি। ক্ষেত্রবিশেষে পুলিশ উদ্ধার করেছে লাশ। উল্লেখ্য, গুমের তালিকায় বিরোধী দলের লোকজন ছাড়াও সরকারি দল আওয়ামী লীগের একজন নেতাও রয়েছেন। সেক্ষেত্রেও একই ফলাফল।
এ অবস্থায় উদ্বেগ-আশঙ্কা খুবই স্বাভাবিক যে, ঘরে-বাইরে কোথাও কেউ নিরাপদ নন। কে কখন গুম হয়ে যায়—এই ভয়ে দিন কাটছে মানুষের। এদিকে গুম তথা নিখোঁজ হওয়া লোকদের ফিরে পেতে অনেকের পরিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে আদালত ও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ক্লান্ত হচ্ছে। নিমজ্জিত হচ্ছে গভীর হতাশায়। এহেন পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ যদি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অভিযোগ অস্বীকার করেন কিংবা অনিশ্চিত দুষ্কৃতকারীদের ওপর ঘটনার দায় চাপিয়ে নিজেদের দায়ভাগ হালকা করতে চান, তাহলে হতাশা আরও বেড়ে যায় বৈকি। এসব দুঃখজনক-বেদনাদায়ক অমীমাংসিত ঘটনাবলীর বোঝা নিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে নতুন ইংরেজি বছর। সবার প্রত্যাশা, সরকার বছরের সূচনা পর্বেই এসব গুম-হত্যার সুরাহা করতে সক্ষম হবে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার অপারগতার গ্লানি মোচন করে দেশবাসীর উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা হালকা করবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন