আবদুল হাই শিকদার
সেই কোন শৈশবে ছড়ায় পড়েছিলাম—‘রাম ছাগলে/গামছা গলে/ঘাস দখলে যায়/মরি হায়রে হায়।’ সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর করুণাধন্য, একদার ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের’ সশস্ত্র ‘কমরেড’ তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর মহা মহা বীরত্বপূর্ণ কাণ্ডকারখানা দেখে বহুদিন পর সেই পুরনো কথাগুলো মনে এলো।
আভিধানিক অর্থে রামছাগল চতুষ্পদবিশিষ্ট প্রাণী। তৃণভোজী। একথা সবাই জানি। কিন্তু অতীতের মাংসাশী কমরেডদের অনেকে যে জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত, ধিকৃত ও পরিত্যক্ত হয়ে, রাজনৈতিক বর্জ্য থেকে ধীরে ধীরে দ্বিপদবিশিষ্ট মনুষ্যরূপী রামছাগলে পরিণত হয়ে, এর-ওর নৌকায় চেপে ‘খুঁটির জোরে পাঁঠা কুঁদে’ পাড়া মাথায় নিয়ে, বেহায়ার মতো নিজেদের বীর হিসেবে জাহির করে, বত্রিশ পাটি দন্ত বিকশিত করে আত্মতৃপ্তি লাভ করে, তার নজির আমাদের দেশে ভূরি ভূরি। চামচাগিরি আর দালালি করে, মোসাহেবি আর ষড়যন্ত্র করে যাদের জীবন কাটে, সেসব লোকজন উপস্থাপিত হন ‘স্বঘোষিত বীর’ হিসেবে। এরা এতটাই নির্লজ্জ যে এদের এই ভণ্ডামি, ডিগবাজি যে জনগণ বোঝে—এরা তাও বোঝে না। অথবা বুঝেও ভাঙা রেকর্ডের মতো কর্তার ইচ্ছায় কীর্তন গাইতেই থাকেন।
ওইজাতীয় ‘স্বঘোষিত বীর’দের নামে ডাকে গগন ফাটে। অথচ এদের হাঁড়ির ভাত চাটে সারমেয়কুল। এসব ‘মহাবীর দুর্বল সিং’দের অন্যতম হাসানুল হক ইনু। বিরাট বিপ্লবী, বিরাট কমরেড—ছাল নেই কুকুরের বাঘা নাম। ইনুর লমম্ফঝমেম্ফ ইদানীং জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। লোকে বলে, ‘ভাইরে আওয়ামী লীগের নেতারা যখন লম্বা লম্বা বাণী দেন, তখন ভালো না লাগলেও সেটা সহ্য হয়। আফটার অল আওয়ামী লীগ একটা বড় দল। তাদের নেতাদের কথাবার্তা একটু চাওড়া হতেই পারে। কিন্তু ইনুর কথাবার্তা শুনে প্রাণ ত্যক্ত, বিরক্ত। সিংহের গর্জনের একটা মর্যাদা আছে, কিন্তু বাঁদরের ভেংচি কার সহ্য হয় বলুন?’
ইনু সাহেবের কীর্তির অন্ত নেই। সর্বশেষ বাংলাদেশের প্রকৌশলীদের জাতীয় সংগঠন ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশের (আইইবি) কার্যকরী পরিষদ নির্বাচনে গোহারা হেরে তিনি এক অনন্য কীর্তি স্থাপন করেছেন। ইনু সাহেবরা তো আগারটাও খান, গোড়ারটাও খান। খাওয়া কোন কোন পদের কোন পর্যায়ের সে হুঁশ তো তার নেই। খাওয়া হলেই হলো, থালি হাতে নিয়ে বসে পড়লেন।
আক্কেল যার নেই, কোন কাজটি করা উচিত আর কোনটি করা উচিত নয়, এই বোধ যাদের নেই তাদের গু লাগে নাকি তিন স্থানে। পায়ে, হাতে তারপর নাকে। ইনু সাহেবের হলো সেই কেস। মন্ত্রী মানুষ, ভোট না দিয়ে ইঞ্জিনিয়াররা যাবে কোথায়? হয়তো ভেবেছিলেন, এখানেও হয়তো একজন মাহবুবউল আলম হানিফ আছেন। তিনি তরী পার করে দেবেন। অতএব ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে (বঙ্গবন্ধুর নাম আওয়ামী লীগারদের চাইতেও ইনু সাহেব বেশি নেন। কারণ নও মুসলিম নাকি গরু খাওয়ার যম) দাঁড়িয়ে গেলেন ভোটে। ব্যানার যথারীতি বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ।
তো ২৬টি সদস্যপদের মধ্যে তিনি পাননি একটিও। তিনি নাকি শতাধিক প্রার্থীর মধ্যে পেয়েছেন সর্বনিম্ন ভোট। ফলে এই ২৬ জনের মধ্যে তিনি রাখতে পারেননি নিজের অবস্থান। প্রকৌশলীরা ছেঁড়া কাগজের মতো এই অন্তঃসারশূন্য আস্ফাালনকারীকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে গ্লানির মধ্যে।
দুই.
শেখ মুজিবের চামড়া দিয়ে দিনে তিনবার যারা ডুগডুগি বাজানোর স্বপ্ন দেখতেন, ইনু সাহেব তাদের একজন। শেখ মুজিবের শাসন তখন তার ও তার দলের কাছে ছিল চরম ফ্যাসিবাদী শাসন। হিটলার-চেঙ্গিস খানের চাইতেও এরা বেশি ঘৃণা করতেন শেখ মুজিবকে। শেখ মুজিব অগণতান্ত্রিক, শেখ মুজিব প্রতিক্রিয়াশীল, শেখ মুজিব গণশত্রু—এই ধরনের শব্দ তখন ইনু সাহেবের দল থেকে অহরহ উচ্চারিত হতো।
সেই জন্যই তারা ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের’ সস্তা চকটদার স্লোগান নিয়ে স্বৈরাচারী শেখ মুজিব সরকারকে ক্ষমতা থেকে উত্খাতের জন্য প্রয়োগ করেন সর্বশক্তি। যে কোনো পথে শেখ মুজিবকে ‘মাইনাস’ করার জন্য ইনু সাহেবরা তখন মরিয়া। বিপ্লব আসন্ন বলে গঠন করেন গণবাহিনী। তারপর এই সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর। প্রচুর আওয়ামী লীগার সে সময় ইনু সাহেবদের গণবাহিনীর হাতে নিহত হয়।
শেখ মুজিবও এই জাসদ ও গণবাহিনীর মোকাবিলায় লেলিয়ে দেন রক্ষীবাহিনী ও পুলিশ। হাজার হাজার তরুণ, যারা ইনু সাহেবদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, উদ্বুদ্ধ হয়ে সমাজতন্ত্র কায়েমের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম করছিলেন, তারা নির্মমভাবে নিহত হন। এই সংখ্যা আনুমানিক ২৭ হাজার। এই যুবকরা ভেবেছিল ইনু সাহেবরা সত্যি সত্যি ‘বীর’। সত্যি তারা শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চান। ফলে তারা জীবনকে তুচ্ছ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মরণপণ সংগ্রামে।
রক্ষীবাহিনীর অমানুষিক নির্যাতনে আরও কত তরুণ-যুবক যে পঙ্গু হয়ে গেছে, গুম হয়ে গেছে, সর্বহারা হয়ে গেছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেয়ারও গরজ বোধ করেনি কেউ। ইনু সাহেবরা তো করেনইনি।
আজ ক্ষমতার লোভে, গদির মোহে, প্রতিপত্তির লালসায়, হিতাহিত বোধবর্জিত অন্ধের মতো, গোঁয়ারের মতো ইনু সাহেবরা সেই সব শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করে, বিশ্বাসঘাতকতা করে আওয়ামী লীগের নৌকায় চেপে অষ্টপ্রহর জপছেন ‘বঙ্গবন্ধু’ নামের তসবিহ।
কার্ল মার্কসের বাণীকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করে ইনু সাহেবরা তখন শেখ মুজিবের পার্লামেন্টকে বলতেন ‘শুয়োরের খোঁয়াড়’। ভাগ্যের পরিহাস, এখন শিং, নখ ভেঙে সেই খোঁয়াড়ে ঢুকে মুজিবের অধস্তনদের পাদুকা চুম্বন করে ঠেকা দিচ্ছেন নিজেদের মাইনাস হওয়ার আতঙ্ক। বাঁচাচ্ছেন পিঠের চামড়া আর রাতারাতি হয়ে উঠছেন ধনবান। আর ঢেঁকুর তুলছেন আত্মপ্রসাদের।
ইনু সাহেব যখন ‘বঙ্গবন্ধু’ নাম জপেন, তখন ওইসব শহীদের আত্মাগুলো তাকে ‘গাদ্দার’, ‘বিশ্বাসঘাতক’ ও ‘বেঈমান’ বলে অভিশাপ দেয়। তিনি আজ প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা-বধির বলে শুনতে পান না তাদের রোদন। কিন্তু রাজা ডানকানের রক্তের মতোই ওই শহীদদের রক্তও তাকে ছাড় দেবে না। তাকে আজীবন, এমন কি মৃত্যুর পরও তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াবে প্রেতের মতো। মীরজাফর কিংবা কুইসলিঙের মতোই ঘৃণার স্থান তার জন্য নির্ধারণ করবে ইতিহাস।
তিন.
আওয়ামী লীগের খোঁয়াড়ে পর্যাপ্ত ঘাস, বিচালি পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতায় অধীর হয়ে পড়েছেন ইনু সাহেব। চেহারাও মাশাল্লাহ নাদুস-নুদুস হয়ে পড়েছে। তো তার এখন প্রধান কাজ হলো শেখ হাসিনার মনোরঞ্জন করা। তাকে খুশি রাখা। এটা অবশ্য গদির মহিমা। এই খুশি রাখার কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছেন বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে গালাগাল করার কাজটি। ইনু তার মুরোদ সম্পর্কে জানেন না তা নয়। এও জানেন, খোঁয়ারে থাকা-খাওয়ার সব দায়িত্ব যেমন নিয়েছে আওয়ামী লীগ, তেমনি তার নিরাপত্তার দেখভালও তারাই করবে। অতএব চোয়ালকে দিয়েছেন অর্গলমুক্ত করে।
এই গ্যারান্টি থেকে ইনু মাঝে মধ্যেই হুঙ্কার ছাড়ছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করা হবে। তাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করা হবে। শেখ মুজিবের পর এই ইনু চক্র এখন অস্থির খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার জন্য।
যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা যখন কেউ বলে তখন লোকে তাকে বলে বেআক্কেল। বলে বেয়াদব। গাড়ির ইঞ্জিন হলো ভাঙা বেবি ট্যাক্সির, সেই গাড়ি যখন বেড ফোর্ড গাড়ির মতো আওয়াজ করে তখন লোকে কৌতুক অনুভব করে। প্রশ্ন তোলে কাণ্ডজ্ঞান নিয়ে। ছাগলের তিন বাচ্চার কারবার দেখে শিশুরাও অনুভব করে অপার আনন্দ।
বেগম খালেদা জিয়ার দলের যে কোনো একটা থানা কমিটিতে যত লোক আছে, ইনু সাহেবের পুরো দলেও তো অতজন লোক নেই। সেই কথাটা যদি এই রাজনীতিবিদের মনে থাকতো, তাহলে হয়তো তিনি গলা নামিয়ে সমীহ করে কথা বলতেন।
বিএনপির কর্মী ভেড়ামারার নেতা শহীদুল ইসলামের কাছে সারা জীবন পরাজিত হয়ে যিনি রেকর্ড স্থাপন করেছেন, সেই ইনু খালেদা জিয়াকে ধমক দিয়ে কথা বলেন। আওয়ামী লীগের নেতা হানিফ সাহেবের দয়ায় এমপি হয়ে ইনু সাহেব ধরে নিয়েছেন ‘মুই কি হনুরে’।
শেখ মুজিব ইনুর মাইনাস থিওরির হাড়-হাড্ডি ভেঙে দিয়েছিলেন পিটিয়ে; জান কবচ করেছিলেন এদের গালভরা তত্ত্বের; ফলে ভিটেছাড়া ইনুরা পরিণত হয়েছিল রাজনৈতিক এতিমে।
এবার খালেদা মাইনাস তত্ত্ব জাহির করতে গিয়ে তাদের কোন শিক্ষা হয়, সেটা দেখার জন্য বসে আছি।
নাকি আপন স্বভাব অনুযায়ী ‘মাইনাস-ফাইনাস’ শিকায় তুলে, মওকা বুঝে খালেদা জিয়ার পায়ের নিচে জায়গা নেয়ার জন্য ছুটবেন? দেখা যাক।
আওয়ামী নৌকায় চেপেছে আরেক সর্বহারা দিলীপ বড়ুয়া। সারা জীবনে যিনি সব মিলিয়ে ভোট পেয়েছেন ১২০০। সেই লোক বাংলাদেশের গর্ব প্রফেসর ইউনূসকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মারে। বলে, আমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে জনপ্রিয়তা যাচাই করুন!—বুঝুন ঠেলা।
চার.
এক ব্যবসায়ী বিয়ে করবেন আরেকটি। কোর্টে গিয়ে বললেন, আমার প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে দিন। কোর্ট বললো, কেন বিয়ে করবেন আরেকটা? লোকটি বললো, হুজুর, আমার বিরাট ব্যবসা। কিন্তু আমার প্রথম স্ত্রী আমাকে এক এক করে ৪টি মেয়ে উপহার দিয়েছে। আরেকটি আসছে। আমি সিওর এটিও মেয়েই হবে। তো আমার ব্যবসা দেখাশোনা করার জন্য একটা ছেলে চাই। সেজন্যই দ্বিতীয় বিয়ে করবো।
কোর্ট ডাকলো তার প্রথম স্ত্রীকে। প্রথম স্ত্রী সব শুনে হো হো করে হাসলো। বললো, জজ সাহেব, আপনে আমারে হাসাইলেন। ওর পোলার বাপ হইবার খায়েশ হইছে? আরে ওর মুরোদ আমার জানা আছে। জানা আছে। ও হইবো পোলার বাপ! আরে ওর আশায় বইসা থাকলে আমার মেয়ে ৪টাও তো হইতো না!
পাঁচ.
জেল থেকে বের হয়ে এরশাদ সাহেব বলেছিলেন, ইনু-মেননরা আমার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে কেন? অবাক ব্যাপার! আরে ওদের তো আমি নিয়মিত মাসোহারা দিতাম।
রেগেমেগে এরশাদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকলেন ইনু সাহেবরা। এরশাদ বিশ্ব বেহায়া; এরশাদ স্বৈরাচারী। এরশাদ নূর হোসেনের হত্যাকারী। এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করেছে। ইত্যাদি আরও কত কী!
এখন সেই এরশাদকে বুকে নিয়ে, তাকে বাহুলগ্ন করে, আরামছে মহাজোট করছেন ইনুরা।
ছয়.
আমি অতি বিনয়ের সঙ্গে জানাচ্ছি, হাসানুল হক ইনু সাহেব যে লেখাপড়া জানেন, এটা আমি ভুলে গিয়েছিলাম। এই ভোলার জন্যও অবশ্য তিনিই দায়ী। কারণ, তিনি অহরহ যেসব বক্তব্য দেন, যেসব ভাষা তিনি ব্যবহার করেন, যেরকম আচরণ তাকে করতে দেখি—তাতে আমি কেন, যে কারোরই মনে হতে পারে তিনি একটা অকাট মূর্খ। রাজনৈতিক শিষ্টাচার, শালীনতা, ভদ্রতা, সভ্যতা, পরিমিতিবোধ, কাণ্ডজ্ঞান-এর অভাবই তাকে বাজে মানুষ হিসেবে তুলে ধরেছে। এখানে আমার দোষ কোথায়?
কিন্তু এবারের ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের নির্বাচনের মাধ্যমে আবার নতুন করে মনে হলো, আরে ইনু সাহেব তো ইঞ্জিনিয়ার! তাও আবার কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, যে বিভাগ থেকে আমার দেশ-এর সত্যনিষ্ঠ সাহসী সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সাহেবের মতো মানুষ সাফল্যের সঙ্গে বেরিয়ে এসেছেন। তো মাহমুদুর রহমানের বিভাগ থেকে তাহলে ইনু সাহেবের মতো ‘জিনিস’ বেরিয়েছে! বিষয়টা আমাকে বেশ অবাক করেছে।
তাছাড়া মূল নামের সঙ্গে যারা ‘ঘরের ডাকনাম’ লাগিয়ে কৃতিত্ব জাহির করেন, তাদেরকে আমার সবসময়ই ‘অর্বাচীন’ মনে হয়। কারণ, আমার ধারণা, যাদের মানসিক বয়স বাড়ে না, বিচক্ষণতা থাকে না, তারাই নামের শেষে ডাকনাম ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ডাকনাম হাসু। বেগম খালেদা জিয়ার ডাকনাম পুতুল। রবীন্দ্রনাথের রবি, নজরুলের দুখু মিয়া। মওলানা ভাসানীর ডাকনাম চ্যাকা মিয়া। কই তারা তো ডাকনামের লেজ মূল নামের সঙ্গে কখনোই লাগাননি। কিন্তু আমাদের হাসানুল হক সাহেব দিব্যি ‘ইনু’ লেজ ঝুলিয়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এটা কি বালসুলভ চপলতা নয়? গভীরতাহীনতার লক্ষণ নয়?
সাত.
জামায়াত নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে করমর্দনরত ইনুর একটা ছবি গত ২৬ ডিসেম্বর যাত্রাবাড়ীর পথসভায় জনসমক্ষে তুলে ধরে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু করজোড়ে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে হ্যান্ডশেক করছেন। এই ইনু ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের সদস্যপদে দাঁড়িয়ে হেরে গেছেন।’
বেগম জিয়া যে ছবিটি দেখান তাতে দেখা যায়, মাওলানা নিজামী সোফায় বসে আছেন। আর ইনু সাহেব অনেকটা ঝুঁকে পড়ে তার সঙ্গে করমর্দন করছেন।
বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যে নিজেদের থলে থেকে ভণ্ডামী আর মুনাফেকির বিড়াল বেরিয়ে গেলে বেসামাল হয়ে পড়েন হাসানুল হক ইনু। তিনি এর জবাবে বলেন, ‘নিজামী আমার পা ধরতে চেয়েছিল। তবে আমি তাকে আমার পা ধরতে দিইনি। পরে হাত ধরে মাফ চেয়েছিল। আমি মাফ করিনি।’
সহযোগী পত্রিকা যুগান্তর লিখেছে, তথ্যমন্ত্রীর এই ব্যাখ্যায় কেউ সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। কেউ ইনু সাহেবকে বিশ্বাসও করছেন না। তাদের কাছে ব্যাখ্যাটি নিতান্তই বালখিল্যতাপূর্ণ ও অসৌজন্যমূলক মনে হয়েছে। এ ব্যাপারে বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলাম বলেছেন, ইনু তখন (ছবি তোলার সময়) কোন অবস্থানে ছিলেন যে উনি নিজামীকে মাফ করে দিলে মাফ পেয়ে যাবেন? ইনু তো জীবনে এই প্রথম মন্ত্রী হলেন। সেই সময় তার কাছে নিজামী মাফ চাইতে যাবেন কেন? তাছাড়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে নিজামী সোফায় বসে আছেন। আর ইনু কুর্নিশ করার মতো ঝুঁকে পড়ে তার সঙ্গে করমর্দন করছেন। পায়ে হাত দিয়ে মাফ চাইতে হলে তো নিজামীকেই উঠে দাঁড়াতে হতো। আসলে দুর্বৃত্তের ছলনার অভাব হয় না।
অর্থাত্ একথা দিবালোকের মতো পরিষ্কার, ইনু মিথ্যা কথা বলছেন। এই মিথ্যা কথার ভেতর দিয়ে তিনি নিজেদের দেউলিয়াত্ব আবারও প্রকাশ করে মন্ত্রিত্ব করার যোগ্যতা হারিয়েছেন। অবশ্য কান যাদের দুটোই কাটা, তাদের হিতোপদেশ দিয়ে লাভ নেই। এদের ভদ্রতা সভ্যতার কথা শোনানোও অর্থহীন।
আট.
ভাতিজা কাজ করে রেলের গুমটি ঘরে। গেটম্যানের কাজ। দেশ থেকে চাচা এসেছেন বেড়াতে। রাতে ভাতিজা চাচাকে বললো, জান চাচা, আমার না অনেক পাওয়ার। চাচা বললো, দেখা। ভাতিজা বললো সকালে দেখাব।
সকালে আসছে মেইল ট্রেন। ভাতিজা ট্রেনকে লাল পতাকা দেখালো। ট্রেন থেমে গেল। গার্ড দ্রুত নেমে এলেন। কী ব্যাপার। কোনো দুর্ঘটনা? ভাতিজা বললো, না স্যার, আমার চাচা আমার পাওয়ার দেখতে চেয়েছিল। তাই দেখালাম। শুনে গার্ড কষে এক চড় কষলো গেটম্যানকে। হুশিয়ার করলো আর কখনও এরকম না করতে।
ট্রেন চলে গেল। হতভম্ব চাচা বললো, ভাতিজা, এটা কী হলো, চড় মারলো তোকে?
ভাতিজা নির্বিকারভাবে বললো, বুঝলে চাচা, এটা হলো পাওয়ারের ব্যাপার। যার যার পাওয়ার তার তার। আমি আমার পাওয়ার দেখিয়েছি। গার্ড সাহেব তার পাওয়ার দেখিয়েছেন। এ আর এমন কী!
ইনু সাহেবরা বাংলাদেশের মানুষকে পাওয়ার দেখাচ্ছে। কিন্তু প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটা সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। বাংলাদেশের মানুষও অচিরেই তাকে নিজেদের পাওয়ার দেখাবে। তখন যেমন পালিয়েও যেতে পারবেন না, তেমনি কেঁদেও কূল পাবেন না।
a_hyesikder@yahoo.com
আভিধানিক অর্থে রামছাগল চতুষ্পদবিশিষ্ট প্রাণী। তৃণভোজী। একথা সবাই জানি। কিন্তু অতীতের মাংসাশী কমরেডদের অনেকে যে জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত, ধিকৃত ও পরিত্যক্ত হয়ে, রাজনৈতিক বর্জ্য থেকে ধীরে ধীরে দ্বিপদবিশিষ্ট মনুষ্যরূপী রামছাগলে পরিণত হয়ে, এর-ওর নৌকায় চেপে ‘খুঁটির জোরে পাঁঠা কুঁদে’ পাড়া মাথায় নিয়ে, বেহায়ার মতো নিজেদের বীর হিসেবে জাহির করে, বত্রিশ পাটি দন্ত বিকশিত করে আত্মতৃপ্তি লাভ করে, তার নজির আমাদের দেশে ভূরি ভূরি। চামচাগিরি আর দালালি করে, মোসাহেবি আর ষড়যন্ত্র করে যাদের জীবন কাটে, সেসব লোকজন উপস্থাপিত হন ‘স্বঘোষিত বীর’ হিসেবে। এরা এতটাই নির্লজ্জ যে এদের এই ভণ্ডামি, ডিগবাজি যে জনগণ বোঝে—এরা তাও বোঝে না। অথবা বুঝেও ভাঙা রেকর্ডের মতো কর্তার ইচ্ছায় কীর্তন গাইতেই থাকেন।
ওইজাতীয় ‘স্বঘোষিত বীর’দের নামে ডাকে গগন ফাটে। অথচ এদের হাঁড়ির ভাত চাটে সারমেয়কুল। এসব ‘মহাবীর দুর্বল সিং’দের অন্যতম হাসানুল হক ইনু। বিরাট বিপ্লবী, বিরাট কমরেড—ছাল নেই কুকুরের বাঘা নাম। ইনুর লমম্ফঝমেম্ফ ইদানীং জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। লোকে বলে, ‘ভাইরে আওয়ামী লীগের নেতারা যখন লম্বা লম্বা বাণী দেন, তখন ভালো না লাগলেও সেটা সহ্য হয়। আফটার অল আওয়ামী লীগ একটা বড় দল। তাদের নেতাদের কথাবার্তা একটু চাওড়া হতেই পারে। কিন্তু ইনুর কথাবার্তা শুনে প্রাণ ত্যক্ত, বিরক্ত। সিংহের গর্জনের একটা মর্যাদা আছে, কিন্তু বাঁদরের ভেংচি কার সহ্য হয় বলুন?’
ইনু সাহেবের কীর্তির অন্ত নেই। সর্বশেষ বাংলাদেশের প্রকৌশলীদের জাতীয় সংগঠন ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশের (আইইবি) কার্যকরী পরিষদ নির্বাচনে গোহারা হেরে তিনি এক অনন্য কীর্তি স্থাপন করেছেন। ইনু সাহেবরা তো আগারটাও খান, গোড়ারটাও খান। খাওয়া কোন কোন পদের কোন পর্যায়ের সে হুঁশ তো তার নেই। খাওয়া হলেই হলো, থালি হাতে নিয়ে বসে পড়লেন।
আক্কেল যার নেই, কোন কাজটি করা উচিত আর কোনটি করা উচিত নয়, এই বোধ যাদের নেই তাদের গু লাগে নাকি তিন স্থানে। পায়ে, হাতে তারপর নাকে। ইনু সাহেবের হলো সেই কেস। মন্ত্রী মানুষ, ভোট না দিয়ে ইঞ্জিনিয়াররা যাবে কোথায়? হয়তো ভেবেছিলেন, এখানেও হয়তো একজন মাহবুবউল আলম হানিফ আছেন। তিনি তরী পার করে দেবেন। অতএব ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে (বঙ্গবন্ধুর নাম আওয়ামী লীগারদের চাইতেও ইনু সাহেব বেশি নেন। কারণ নও মুসলিম নাকি গরু খাওয়ার যম) দাঁড়িয়ে গেলেন ভোটে। ব্যানার যথারীতি বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ।
তো ২৬টি সদস্যপদের মধ্যে তিনি পাননি একটিও। তিনি নাকি শতাধিক প্রার্থীর মধ্যে পেয়েছেন সর্বনিম্ন ভোট। ফলে এই ২৬ জনের মধ্যে তিনি রাখতে পারেননি নিজের অবস্থান। প্রকৌশলীরা ছেঁড়া কাগজের মতো এই অন্তঃসারশূন্য আস্ফাালনকারীকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে গ্লানির মধ্যে।
দুই.
শেখ মুজিবের চামড়া দিয়ে দিনে তিনবার যারা ডুগডুগি বাজানোর স্বপ্ন দেখতেন, ইনু সাহেব তাদের একজন। শেখ মুজিবের শাসন তখন তার ও তার দলের কাছে ছিল চরম ফ্যাসিবাদী শাসন। হিটলার-চেঙ্গিস খানের চাইতেও এরা বেশি ঘৃণা করতেন শেখ মুজিবকে। শেখ মুজিব অগণতান্ত্রিক, শেখ মুজিব প্রতিক্রিয়াশীল, শেখ মুজিব গণশত্রু—এই ধরনের শব্দ তখন ইনু সাহেবের দল থেকে অহরহ উচ্চারিত হতো।
সেই জন্যই তারা ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের’ সস্তা চকটদার স্লোগান নিয়ে স্বৈরাচারী শেখ মুজিব সরকারকে ক্ষমতা থেকে উত্খাতের জন্য প্রয়োগ করেন সর্বশক্তি। যে কোনো পথে শেখ মুজিবকে ‘মাইনাস’ করার জন্য ইনু সাহেবরা তখন মরিয়া। বিপ্লব আসন্ন বলে গঠন করেন গণবাহিনী। তারপর এই সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর। প্রচুর আওয়ামী লীগার সে সময় ইনু সাহেবদের গণবাহিনীর হাতে নিহত হয়।
শেখ মুজিবও এই জাসদ ও গণবাহিনীর মোকাবিলায় লেলিয়ে দেন রক্ষীবাহিনী ও পুলিশ। হাজার হাজার তরুণ, যারা ইনু সাহেবদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, উদ্বুদ্ধ হয়ে সমাজতন্ত্র কায়েমের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম করছিলেন, তারা নির্মমভাবে নিহত হন। এই সংখ্যা আনুমানিক ২৭ হাজার। এই যুবকরা ভেবেছিল ইনু সাহেবরা সত্যি সত্যি ‘বীর’। সত্যি তারা শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চান। ফলে তারা জীবনকে তুচ্ছ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মরণপণ সংগ্রামে।
রক্ষীবাহিনীর অমানুষিক নির্যাতনে আরও কত তরুণ-যুবক যে পঙ্গু হয়ে গেছে, গুম হয়ে গেছে, সর্বহারা হয়ে গেছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেয়ারও গরজ বোধ করেনি কেউ। ইনু সাহেবরা তো করেনইনি।
আজ ক্ষমতার লোভে, গদির মোহে, প্রতিপত্তির লালসায়, হিতাহিত বোধবর্জিত অন্ধের মতো, গোঁয়ারের মতো ইনু সাহেবরা সেই সব শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করে, বিশ্বাসঘাতকতা করে আওয়ামী লীগের নৌকায় চেপে অষ্টপ্রহর জপছেন ‘বঙ্গবন্ধু’ নামের তসবিহ।
কার্ল মার্কসের বাণীকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করে ইনু সাহেবরা তখন শেখ মুজিবের পার্লামেন্টকে বলতেন ‘শুয়োরের খোঁয়াড়’। ভাগ্যের পরিহাস, এখন শিং, নখ ভেঙে সেই খোঁয়াড়ে ঢুকে মুজিবের অধস্তনদের পাদুকা চুম্বন করে ঠেকা দিচ্ছেন নিজেদের মাইনাস হওয়ার আতঙ্ক। বাঁচাচ্ছেন পিঠের চামড়া আর রাতারাতি হয়ে উঠছেন ধনবান। আর ঢেঁকুর তুলছেন আত্মপ্রসাদের।
ইনু সাহেব যখন ‘বঙ্গবন্ধু’ নাম জপেন, তখন ওইসব শহীদের আত্মাগুলো তাকে ‘গাদ্দার’, ‘বিশ্বাসঘাতক’ ও ‘বেঈমান’ বলে অভিশাপ দেয়। তিনি আজ প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা-বধির বলে শুনতে পান না তাদের রোদন। কিন্তু রাজা ডানকানের রক্তের মতোই ওই শহীদদের রক্তও তাকে ছাড় দেবে না। তাকে আজীবন, এমন কি মৃত্যুর পরও তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াবে প্রেতের মতো। মীরজাফর কিংবা কুইসলিঙের মতোই ঘৃণার স্থান তার জন্য নির্ধারণ করবে ইতিহাস।
তিন.
আওয়ামী লীগের খোঁয়াড়ে পর্যাপ্ত ঘাস, বিচালি পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতায় অধীর হয়ে পড়েছেন ইনু সাহেব। চেহারাও মাশাল্লাহ নাদুস-নুদুস হয়ে পড়েছে। তো তার এখন প্রধান কাজ হলো শেখ হাসিনার মনোরঞ্জন করা। তাকে খুশি রাখা। এটা অবশ্য গদির মহিমা। এই খুশি রাখার কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছেন বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে গালাগাল করার কাজটি। ইনু তার মুরোদ সম্পর্কে জানেন না তা নয়। এও জানেন, খোঁয়ারে থাকা-খাওয়ার সব দায়িত্ব যেমন নিয়েছে আওয়ামী লীগ, তেমনি তার নিরাপত্তার দেখভালও তারাই করবে। অতএব চোয়ালকে দিয়েছেন অর্গলমুক্ত করে।
এই গ্যারান্টি থেকে ইনু মাঝে মধ্যেই হুঙ্কার ছাড়ছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করা হবে। তাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করা হবে। শেখ মুজিবের পর এই ইনু চক্র এখন অস্থির খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার জন্য।
যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা যখন কেউ বলে তখন লোকে তাকে বলে বেআক্কেল। বলে বেয়াদব। গাড়ির ইঞ্জিন হলো ভাঙা বেবি ট্যাক্সির, সেই গাড়ি যখন বেড ফোর্ড গাড়ির মতো আওয়াজ করে তখন লোকে কৌতুক অনুভব করে। প্রশ্ন তোলে কাণ্ডজ্ঞান নিয়ে। ছাগলের তিন বাচ্চার কারবার দেখে শিশুরাও অনুভব করে অপার আনন্দ।
বেগম খালেদা জিয়ার দলের যে কোনো একটা থানা কমিটিতে যত লোক আছে, ইনু সাহেবের পুরো দলেও তো অতজন লোক নেই। সেই কথাটা যদি এই রাজনীতিবিদের মনে থাকতো, তাহলে হয়তো তিনি গলা নামিয়ে সমীহ করে কথা বলতেন।
বিএনপির কর্মী ভেড়ামারার নেতা শহীদুল ইসলামের কাছে সারা জীবন পরাজিত হয়ে যিনি রেকর্ড স্থাপন করেছেন, সেই ইনু খালেদা জিয়াকে ধমক দিয়ে কথা বলেন। আওয়ামী লীগের নেতা হানিফ সাহেবের দয়ায় এমপি হয়ে ইনু সাহেব ধরে নিয়েছেন ‘মুই কি হনুরে’।
শেখ মুজিব ইনুর মাইনাস থিওরির হাড়-হাড্ডি ভেঙে দিয়েছিলেন পিটিয়ে; জান কবচ করেছিলেন এদের গালভরা তত্ত্বের; ফলে ভিটেছাড়া ইনুরা পরিণত হয়েছিল রাজনৈতিক এতিমে।
এবার খালেদা মাইনাস তত্ত্ব জাহির করতে গিয়ে তাদের কোন শিক্ষা হয়, সেটা দেখার জন্য বসে আছি।
নাকি আপন স্বভাব অনুযায়ী ‘মাইনাস-ফাইনাস’ শিকায় তুলে, মওকা বুঝে খালেদা জিয়ার পায়ের নিচে জায়গা নেয়ার জন্য ছুটবেন? দেখা যাক।
আওয়ামী নৌকায় চেপেছে আরেক সর্বহারা দিলীপ বড়ুয়া। সারা জীবনে যিনি সব মিলিয়ে ভোট পেয়েছেন ১২০০। সেই লোক বাংলাদেশের গর্ব প্রফেসর ইউনূসকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মারে। বলে, আমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে জনপ্রিয়তা যাচাই করুন!—বুঝুন ঠেলা।
চার.
এক ব্যবসায়ী বিয়ে করবেন আরেকটি। কোর্টে গিয়ে বললেন, আমার প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে দিন। কোর্ট বললো, কেন বিয়ে করবেন আরেকটা? লোকটি বললো, হুজুর, আমার বিরাট ব্যবসা। কিন্তু আমার প্রথম স্ত্রী আমাকে এক এক করে ৪টি মেয়ে উপহার দিয়েছে। আরেকটি আসছে। আমি সিওর এটিও মেয়েই হবে। তো আমার ব্যবসা দেখাশোনা করার জন্য একটা ছেলে চাই। সেজন্যই দ্বিতীয় বিয়ে করবো।
কোর্ট ডাকলো তার প্রথম স্ত্রীকে। প্রথম স্ত্রী সব শুনে হো হো করে হাসলো। বললো, জজ সাহেব, আপনে আমারে হাসাইলেন। ওর পোলার বাপ হইবার খায়েশ হইছে? আরে ওর মুরোদ আমার জানা আছে। জানা আছে। ও হইবো পোলার বাপ! আরে ওর আশায় বইসা থাকলে আমার মেয়ে ৪টাও তো হইতো না!
পাঁচ.
জেল থেকে বের হয়ে এরশাদ সাহেব বলেছিলেন, ইনু-মেননরা আমার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে কেন? অবাক ব্যাপার! আরে ওদের তো আমি নিয়মিত মাসোহারা দিতাম।
রেগেমেগে এরশাদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকলেন ইনু সাহেবরা। এরশাদ বিশ্ব বেহায়া; এরশাদ স্বৈরাচারী। এরশাদ নূর হোসেনের হত্যাকারী। এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করেছে। ইত্যাদি আরও কত কী!
এখন সেই এরশাদকে বুকে নিয়ে, তাকে বাহুলগ্ন করে, আরামছে মহাজোট করছেন ইনুরা।
ছয়.
আমি অতি বিনয়ের সঙ্গে জানাচ্ছি, হাসানুল হক ইনু সাহেব যে লেখাপড়া জানেন, এটা আমি ভুলে গিয়েছিলাম। এই ভোলার জন্যও অবশ্য তিনিই দায়ী। কারণ, তিনি অহরহ যেসব বক্তব্য দেন, যেসব ভাষা তিনি ব্যবহার করেন, যেরকম আচরণ তাকে করতে দেখি—তাতে আমি কেন, যে কারোরই মনে হতে পারে তিনি একটা অকাট মূর্খ। রাজনৈতিক শিষ্টাচার, শালীনতা, ভদ্রতা, সভ্যতা, পরিমিতিবোধ, কাণ্ডজ্ঞান-এর অভাবই তাকে বাজে মানুষ হিসেবে তুলে ধরেছে। এখানে আমার দোষ কোথায়?
কিন্তু এবারের ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের নির্বাচনের মাধ্যমে আবার নতুন করে মনে হলো, আরে ইনু সাহেব তো ইঞ্জিনিয়ার! তাও আবার কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, যে বিভাগ থেকে আমার দেশ-এর সত্যনিষ্ঠ সাহসী সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সাহেবের মতো মানুষ সাফল্যের সঙ্গে বেরিয়ে এসেছেন। তো মাহমুদুর রহমানের বিভাগ থেকে তাহলে ইনু সাহেবের মতো ‘জিনিস’ বেরিয়েছে! বিষয়টা আমাকে বেশ অবাক করেছে।
তাছাড়া মূল নামের সঙ্গে যারা ‘ঘরের ডাকনাম’ লাগিয়ে কৃতিত্ব জাহির করেন, তাদেরকে আমার সবসময়ই ‘অর্বাচীন’ মনে হয়। কারণ, আমার ধারণা, যাদের মানসিক বয়স বাড়ে না, বিচক্ষণতা থাকে না, তারাই নামের শেষে ডাকনাম ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ডাকনাম হাসু। বেগম খালেদা জিয়ার ডাকনাম পুতুল। রবীন্দ্রনাথের রবি, নজরুলের দুখু মিয়া। মওলানা ভাসানীর ডাকনাম চ্যাকা মিয়া। কই তারা তো ডাকনামের লেজ মূল নামের সঙ্গে কখনোই লাগাননি। কিন্তু আমাদের হাসানুল হক সাহেব দিব্যি ‘ইনু’ লেজ ঝুলিয়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এটা কি বালসুলভ চপলতা নয়? গভীরতাহীনতার লক্ষণ নয়?
সাত.
জামায়াত নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে করমর্দনরত ইনুর একটা ছবি গত ২৬ ডিসেম্বর যাত্রাবাড়ীর পথসভায় জনসমক্ষে তুলে ধরে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু করজোড়ে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে হ্যান্ডশেক করছেন। এই ইনু ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের সদস্যপদে দাঁড়িয়ে হেরে গেছেন।’
বেগম জিয়া যে ছবিটি দেখান তাতে দেখা যায়, মাওলানা নিজামী সোফায় বসে আছেন। আর ইনু সাহেব অনেকটা ঝুঁকে পড়ে তার সঙ্গে করমর্দন করছেন।
বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যে নিজেদের থলে থেকে ভণ্ডামী আর মুনাফেকির বিড়াল বেরিয়ে গেলে বেসামাল হয়ে পড়েন হাসানুল হক ইনু। তিনি এর জবাবে বলেন, ‘নিজামী আমার পা ধরতে চেয়েছিল। তবে আমি তাকে আমার পা ধরতে দিইনি। পরে হাত ধরে মাফ চেয়েছিল। আমি মাফ করিনি।’
সহযোগী পত্রিকা যুগান্তর লিখেছে, তথ্যমন্ত্রীর এই ব্যাখ্যায় কেউ সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। কেউ ইনু সাহেবকে বিশ্বাসও করছেন না। তাদের কাছে ব্যাখ্যাটি নিতান্তই বালখিল্যতাপূর্ণ ও অসৌজন্যমূলক মনে হয়েছে। এ ব্যাপারে বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলাম বলেছেন, ইনু তখন (ছবি তোলার সময়) কোন অবস্থানে ছিলেন যে উনি নিজামীকে মাফ করে দিলে মাফ পেয়ে যাবেন? ইনু তো জীবনে এই প্রথম মন্ত্রী হলেন। সেই সময় তার কাছে নিজামী মাফ চাইতে যাবেন কেন? তাছাড়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে নিজামী সোফায় বসে আছেন। আর ইনু কুর্নিশ করার মতো ঝুঁকে পড়ে তার সঙ্গে করমর্দন করছেন। পায়ে হাত দিয়ে মাফ চাইতে হলে তো নিজামীকেই উঠে দাঁড়াতে হতো। আসলে দুর্বৃত্তের ছলনার অভাব হয় না।
অর্থাত্ একথা দিবালোকের মতো পরিষ্কার, ইনু মিথ্যা কথা বলছেন। এই মিথ্যা কথার ভেতর দিয়ে তিনি নিজেদের দেউলিয়াত্ব আবারও প্রকাশ করে মন্ত্রিত্ব করার যোগ্যতা হারিয়েছেন। অবশ্য কান যাদের দুটোই কাটা, তাদের হিতোপদেশ দিয়ে লাভ নেই। এদের ভদ্রতা সভ্যতার কথা শোনানোও অর্থহীন।
আট.
ভাতিজা কাজ করে রেলের গুমটি ঘরে। গেটম্যানের কাজ। দেশ থেকে চাচা এসেছেন বেড়াতে। রাতে ভাতিজা চাচাকে বললো, জান চাচা, আমার না অনেক পাওয়ার। চাচা বললো, দেখা। ভাতিজা বললো সকালে দেখাব।
সকালে আসছে মেইল ট্রেন। ভাতিজা ট্রেনকে লাল পতাকা দেখালো। ট্রেন থেমে গেল। গার্ড দ্রুত নেমে এলেন। কী ব্যাপার। কোনো দুর্ঘটনা? ভাতিজা বললো, না স্যার, আমার চাচা আমার পাওয়ার দেখতে চেয়েছিল। তাই দেখালাম। শুনে গার্ড কষে এক চড় কষলো গেটম্যানকে। হুশিয়ার করলো আর কখনও এরকম না করতে।
ট্রেন চলে গেল। হতভম্ব চাচা বললো, ভাতিজা, এটা কী হলো, চড় মারলো তোকে?
ভাতিজা নির্বিকারভাবে বললো, বুঝলে চাচা, এটা হলো পাওয়ারের ব্যাপার। যার যার পাওয়ার তার তার। আমি আমার পাওয়ার দেখিয়েছি। গার্ড সাহেব তার পাওয়ার দেখিয়েছেন। এ আর এমন কী!
ইনু সাহেবরা বাংলাদেশের মানুষকে পাওয়ার দেখাচ্ছে। কিন্তু প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটা সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। বাংলাদেশের মানুষও অচিরেই তাকে নিজেদের পাওয়ার দেখাবে। তখন যেমন পালিয়েও যেতে পারবেন না, তেমনি কেঁদেও কূল পাবেন না।
a_hyesikder@yahoo.com
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন