শনিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১২

শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশের মুক্তি, দায়ভার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিতে হবে


দেশে আইনের শাসন ভেঙে পড়েছে। ধীরে ধীরে দেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসীদের রাজত্ব কায়েম হওয়ার আলামতগুলো দিন দিন আরো সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে দেশের একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গোপনে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে। এ ধরনের সন্ত্রাসীদের মুক্তি দেয়ার আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে জানানো হয়। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তিনি যাতে নিরাপদে জেলগেট ত্যাগ করতে পারেন সেজন্য পুলিশের দুই জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে পাহারায় রাখা হয়েছিল।

বিকাশ কুমার বিশ্বাস নামে এই শীর্ষ সন্ত্রাসী অতিগোপনীয়তার সাথে গত শুক্রবার মুক্তি পেয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এই শীর্ষ সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে হত্যাসহ ১২টি মামলা রয়েছে। ১৫ বছর ধরে তিনি জেলে ছিলেন। তাকে মুক্তি দেয়ার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায় থেকে তৎপরতা চালানো হয়, এমনকি কারা কর্তৃপক্ষকে ডেকে তার মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়। এ ধরনের শীর্ষ সন্ত্রাসী মুক্তি দেয়ার আগে কারা কর্তৃপক্ষের স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাকে জানানোর নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি। অর্থাৎ সরকারের শীর্ষপর্যায়ের ব্যক্তিদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি যাতে নির্বিঘেœ মুক্তি পান তার সব ব্যবস্থা করা হয়।
আমরা লক্ষ করছি বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের সন্ত্রাসের অভিযোগ এনে মাসের পর মাস তাদের কারাগারে আটকে রাখা হচ্ছে। আর প্রকৃত সন্ত্রাসী ও খুনের মামলার আসামিদের মুক্তি দেয়া হচ্ছে। বিরোধী দলের ডাকা অবরোধের দিন একজন যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছিল ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। কিন্তু তাদের রক্ষার জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালানো হয়। গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মুখে তাদের গ্রেফতার করা হলেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ক্ষমতাসীন দলের সাথে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। অথচ এরা সবাই ছাত্রলীগের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং মিছিল থেকে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছিল। এভাবে নানা প্রক্রিয়ায় সন্ত্রাসীদের রক্ষার বা আড়াল করার চেষ্টা চালানে হচ্ছে। এর আগে ফাঁসির আসামিদের রাষ্ট্রপতি ক্ষমতা করে দিয়েছিলেন।
সর্বশেষ শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশের মুক্তির মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো, অপরাধীদের সাথে সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের সম্পর্ক রয়েছে। বিকাশের মুক্তি নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা হয়েছে। কোনো কোনো সংবাদপত্রে খবর এসেছে, দুইজন মন্ত্রী তার মুক্তির জন্য প্রভাব খাটিয়েছেন।  সরকার যদি এভাবে সন্ত্রাসীদের মুক্তির ব্যবস্থা করে তাহলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। এই সন্ত্রাসীদের যে বিরোধী রাজনৈতিক দল দমনের কাজে ব্যবহার করা হবে না, তাও নিশ্চিত করে বলা যায় না। আমরা মনে করি, আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হলে প্রথমে এই শীর্ষ সন্ত্রাসী কিভাবে মুক্তি পেল তা তদন্ত করে দেখা দরকার। যারা এই মুক্তি প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সাথে এই শীর্ষ সন্ত্রাসীর মুক্তি ও ভবিষ্যতে তার অপরাধের দায় ভার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিতে হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads