শুক্রবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১২

নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যৌক্তিকতা প্রমাণিত



মুহাম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন চৌধুরী : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলের গ্রহণযোগ্য উপদেষ্টামন্ডলী ও নির্বাচন কমিশন ছাড়া ভোটারদের প্রকৃত রায়ের প্রতিফলন ঘটার কোন সম্ভাবনা নেই বলে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) নির্বাচনে আওয়ামী জোট সমর্থিত প্যানেলকে বিজয় করতে সিভিল সার্জনসহ পদস্থ কর্মকর্তাদের ব্যবহার করেও নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার নিশ্চয়তা না পেয়ে জোরপূর্বক ব্যালট ছিনতাই করে সীল মেরে নেয়ার চিত্র দেশের সিংহভাগ জেলার সাধারণ নাগরিক স্বচক্ষে দেখে তারা নিজেদের ভোট দিতে পারবে না এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছে। ২৬ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশে এই প্রথম দলীয়ভাবে প্যানেল দেয়ায় এখানকার ভোটাররা বিএমএ নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি হবে বলে আশংকা প্রকাশ করছে। ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের নির্বাচনে পেশী শক্তি ব্যবহারের গুঞ্জন প্রেস ক্লাবের সর্বত্র শোনা যাচ্ছে। প্রকৃত পেশাদার সাংবাদিকরা নিজ দলীয় সমর্থকদের জাতীয় প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার মানসিকতা পরিহার করার জন্য অভিমত প্রকাশ করতে শোনা যাচ্ছে। অপরদিকে অন্য গ্রুপ অভিমত প্রকাশ করছে ক্ষমতাসীনরা জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়ার মানসিকতা প্রকাশের  পেছনে কোন রহস্য নিহিত রয়েছে কিনা সে দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের সমর্থিত প্রার্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন না করায় নির্বাচিত কমিটির ক্ষমতা আইন করে খর্ব করায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হুমকির মুখোমুখি বলে সর্বত্র গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য প্রতিনিধিত্বকারী পেশাজীবী সংগঠন ও ক্লাবের নির্বাচন বিএমএ'র মতোই হবে কিনা তা নিয়ে অনেকে চিন্তিত। বিএমএ'র নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে দেশের সিংহভাগ মানুষ একমত আওয়ামী জোটের অধীনে নির্বাচন হলে তা শুধুই লোক দেখানো হবে বলে ধারণা করছে। কারণ সিংহভাগ আমজনতা উল্লেখ করছে আওয়ামী জোটের সশস্ত্র সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী আইনশৃক্মখলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতেই প্রতিপক্ষদের উপর হামলা করলেও তা বাধা দান করার এখতিয়ার তাদের নেই। অথচ প্রতিপক্ষরা আত্মরক্ষা করতে গেলেই তাদের আটক করে নির্যাতন শেষে আদালতে হাজির করে পুনরায় রিমান্ডে নিয়ে জুলুম-নির্যাতন চালানো হয়। প্রতিপক্ষ দলের নেতা-কর্মী  হিসেবে পরিচিত হলে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে এসে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দেয়ার রেওয়াজ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মসজিদে গিয়েও হুমকি প্রদানের অভিযোগ উঠেছে। সাদা পোশাকধারীরা সাধারণ মানুষের জন্য আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি সাদা পোশাকধারী শাসক দলের ক্যাডার কর্তৃক বাধাদানের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। সাংবাদিক সমাজও পেশাগত দায়িত্ব পালনে নানাভাবে হুমকি-ধমকি ও মিথ্যা মামলার শিকার হচ্ছে। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে দুই হাজারের ঊর্ধ্বে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীসহ এ যাবত প্রায় ১৮ জন সাংবাদিক হত্যা করা হয়েছে। ব্যঙ্গচিত্র ফেসবুকে দেয়ার কারণে গ্রেফতার হতে হয়েছে। দুইশ'র উপরে সংবাদপত্র নানা প্রক্রিয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সংবাদ প্রকাশের কারণে আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে পত্রিকা অফিস থেকে গ্রেফতার করে নির্যাতন শেষে আদালতে হাজির করে পুনরায় রিমান্ডে নিয়ে পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। যা বর্বর আদি যুগেও অকল্পনীয় ছিল। আমার দেশ পত্রিকা থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে পুলিশ নিয়ে আসতে গেলে গ্রেফতারি পরোয়ানা সহকর্মীরা চাওয়ার অপরাধে পত্রিকাটির বর্তমান নির্বাহী সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকসহ সকল সাংবাদিক স্টাফদের পুলিশী কাজে বাধাদানের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরবর্তীতে তদন্ত কর্মকর্তা অপূব্য হাসান জামিন বাতিল করে রিমান্ডের আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত তা খারিজ করে দেন। দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী প্রবীণ সাংবাদিক আবুল আসাদকে বাসা থেকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর একাধিকবার সংগ্রাম অফিস ও প্রেসে গোয়েন্দা তল্লাশীর নামে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। একজন প্রবীণ সাংবাদিকের কাছে নামাজ শিক্ষা পাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করে মামলা দিয়ে আদালতে চালান দিয়েছে। যা একমাত্র কলোনিয়াল দেশে ঘটে থাকে। বিচারকরা স্বচ্ছতার সাথে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে পারছে না। শাসক দলের নীতি নির্ধারক মহল যা বক্তব্যে বলে বিচারকের বিবেককে বিসর্জন দিয়ে অজ্ঞাত কারণে সেটাই করতে বাধ্য হতে হচ্ছে বলে প্রায়ই আইনজীবী মহল থেকে  অভিযোগ উঠে আসছে। আদালত প্রাঙ্গন থেকে সাক্ষী তুলে নিয়ে যাওয়া এবং সাফাই সাক্ষী  দানকারীদের বিচারক নিরাপত্তা দিতে পারছে না! শাসকদের বক্তব্য কার্যকর করতে গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদনকে সাক্ষীর জবানবন্দি হিসাবে গ্রহণের নজির সৃষ্টি হয়েছে। শাসকদলের প্রতিপক্ষ, রাজনীতিবিদ ও সমালোচক সাংবাদিকদের গ্রেফতার করলে রিমান্ড বাধ্যতামূলক! সৎ ও দক্ষ দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিরোধীদলের অনুসারী হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের ওএসডি করে রাখা হয়েছে। এদিকে অদক্ষ দুর্নীতিবাজ দর্বৃত্ত ও চাটুকার মানসিকতার কর্মকর্তাদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গুরুত্ব দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয় সদ্য বদলীকৃত কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বনিমালী ভৌমিক জেলা প্রশাসক চত্বরে ও লালন একাডেমীর সামনের মরা গড়াইয়ে জাল দিয়ে মাছ  ধরে নিয়ে তা কি করেছে এখনো কেউ জানে না। ত্রাণ পুনর্বাসন অধিদফতরসহ জেলার সর্বস্তরে অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করার গল্প শোনা যায়। তার এবং সাবেক এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বর্তমান যশোরে কর্মরত। যোগদানের পর জেলায় মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজিসহ ক্ষমতাসীন দলের উপর জনগণ ক্ষুব্ধ হয় এমন সব কাজই করেছে। বর্তমান সিভিল সার্জন একই পথ অনুসরণ করছে। পাসপোর্ট অফিস সাধারণ নাগরিকদের পকেট কাটতে অভিনব কায়দা অনুসরণ করছে। সহকারী পরিচালক ও অফিস সহকারীর নির্ধারিত দালাল ছাড়া ফরম পূরণ করে দিলে সঠিক হয়নি বলে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা ও ফরম দিলে আর হয়রানির শিকার হতে হয় না।  এটি শুধুই কুষ্টিয়া নয় দেশের অধিকাংশ জেলা ও প্রতিষ্ঠানের চিত্র। কিন্তু শাসকদলের লেবাস গায়ে থাকলে কোন অপরাধই অপরাধ বলে গণ্য হয় না। দুর্নীতি দমন কমিশনসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অধিকাংশ ক্ষেত্রে শাসক জোটের বাইরে যারা তাদের নাজেহাল করতে কার্পণ্য বোধ করে না। এক কথায় সেনাবাহিনী  ছাড়া বাকি রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই জ্বী-হুজুর আর আদেশ পালনে সদাপ্রস্তুত এমন অবস্থা বিরাজ করছে। এ কারণেই নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন মানেই তৈরি করা ফলাফল প্রকাশ। এদিকে আওয়ামী জোট জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলছে। খেলাফত মজলিশ দেশের সার্বিক অরাজক পরিস্থিতির আলোকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলছে। কিন্তু  কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার দাবি শুধু অগণতান্ত্রিকই নয় বরং  দেশকে অস্থির করার চক্রান্ত হিসেবে অনেকেই দেখছে। এছাড়াও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত কাউন্সিলর চৌধুরী আলম, সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি'র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ইলিয়াস, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন মেধাবী ছাত্রসহ অসংখ্য গুম, হত্যা, খুন ও অপহরণকারীদের সন্ধান দিতে আইনশৃক্মখলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতার কারণ ভুক্তভোগী পরিবার কার কাছে তাদের তথ্য জানতে চাইবে এ প্রশ্ন উঠে এসেছে। জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী একটি রাজনৈতিক দলের অফিসে দীর্ঘদিন ধরে নেতা-কর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি'র কার্যালয়ে ৭২ ঘণ্টা পুলিশ অবরোধ করে রাখে শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে। বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। তার পরিবারের সদস্যদের নামে একের পর এক হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হচ্ছে। বিরোধী দলের চীফ হুইপ জয়নাল আবদীন ফারুককে সংসদ এলাকায় পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে। সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীকে পিজি হাসপাতালের সামনে পুলিশের উপস্থিতিতে নিষ্ঠুরভাবে ক্যাডার বাহিনী প্রকাশ্যে দিবালোকে লাঠিপেটা করে। নাটোরের বরাই গ্রামের উপজেলা চেয়ারম্যানকে দিন দুপুরে পিটিয়ে পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়। সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে কারাগারে আটক রাখা হয়। ক্ষমতাসীনদের বক্তব্য বিবৃতি অনুযায়ী অধিকাংশ ক্ষেত্রে আবেদন খারিজ বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করার চক্রান্ত বলে অনেকেই অভিমত প্রকাশ করছে। এমন অবস্থায় আওয়ামী জোট যদি দাবি করে অনির্বাচিত ব্যক্তি দ্বারা জাতীয় নির্বাচন করা নীতি-নৈতিকতা বিরোধী। এক্ষেত্রে  জনগণের প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের চাইতে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পরিষদ বেশি ক্ষমতাধর। তাদের অধিকাংশই দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে অভিযুক্ত। ঢাকা সিটি কর্রোপরেশন ও জেলা পরিষদগুলো অনির্বাচিত প্রশাসক দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এটা কি নীতি-নৈতিকতা বিরোধী না? এমন অবস্থায় জনগণের আস্থা অর্জনের স্বার্থে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে আপত্তি কেন? অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে প্রধানমন্ত্রীসহ তার দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা দাবি করে তাদের শাসনামলে জনকল্যাণমূলক কাজ সবচেয়ে বেশি হয়েছে। যদি তাই হয় তাহলে ভোটারদের প্রতি অবিশ্বাস বা ভয় পাওয়ার পেছনে কি কারণ নিহিত। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে তাদের শাসনকালকে কতভাগ মানুষ সমর্থন করেছে তা পরিষ্কার করে দেখতে ভয় পাওয়ার কোন কারণ আছে বলে জনগণ মনে করেন। নির্বাচন কমিশন নতুন দল নিবন্ধনে কঠোর বিধি-বিধান আরোপ করেছে বলে প্রধান নির্বাচন কমিশন জানায়। কিন্তু রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন সহজ করলে দলগুলো জবাবদিহিতার মধ্যে আসতো। পর্যবেক্ষক মহল বলছে, নতুন দল আবেদন করলে সহজে নিবন্ধন দিয়ে পরপর দু'টি নির্বাচনে কমপক্ষে ৫ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে না পারলে দলের নিবন্ধন বাতিল করা উত্তম। এছাড়াও কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা অফিস ও সাইন বোর্ড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর কার্যালয় ক্ষমতাসীনদের হামলা থেকে রক্ষার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। নতুন দলগুলোর কার্যালয়ে হামলা হলে তাদের কিভাবে নিরাপত্তা দেবে! এ আইনগুলো সংবিধান পরিপন্থী। অসংখ্য মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক আইন এখন প্রয়োগ হচ্ছে। যা দেশের স্থিতিশীলতা ও শান্তি বিঘ্নের কারণ। সংগঠন করার অধিকার সংবিধান দিয়েছে। এ অধিকার খর্ব করতে জটিল আইন প্রয়োগ সংবিধান লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে। নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে সহজ শর্তে নিবন্ধন প্রদান ও নিবন্ধনকৃত দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মসূচির বাধা প্রদানকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার না থাকলে তাদের নিবন্ধন করার বিধান বৈধ অধিকার থাকে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনী ব্যয় বা জামানত কমিয়ে আনার গুরুত্ব আরোপ করছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত দলগুলো প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়ার উপর অনেকেই গুরুত্ব আরোপ করছে। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন চাইলেই কাউকে খুশী করা সংবিধান ও তাদের শপথ ভঙ্গ করার পর্যায়ে পড়ে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের মন্তব্য। জাতীয় নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন, জাতীয় গণমাধ্যম ও মফস্বল গণমাধ্যমের সম্পাদকের সাথে আলোচনা করলে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করা সম্ভব।  দেশের আইনশৃক্মখলা রক্ষাকারী বাহিনী আর সাধারণ নাগরিক কতখানি অসহায় খুব সাধারণ একটা ঘটনা উল্লেখ করলে বোঝা যাবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সহযোগিতা কামনার পর থেকে অধিকাংশ স্থানে তারা অপরাধের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৬ ডিসেম্বর তেজগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনের ফুটপাত দিয়ে একজন ছাত্র এবং ছাত্রী পায়ে হেঁটে যাচ্ছিল। মাঝপথে কতিপয় বখাটে যুবক মেয়েটিকে কটূক্তি করে। মেয়েটি তার প্রতিবাদ করায়  বখাটে যুবকরা খারাপ আচরণ করলে মেয়েটি একটি মিষ্টির দোকানে গিয়ে আশ্রয় নিলে বখাটে যুবকরা সেখানে থেকে টেনেহেঁচড়ে বের করে রাস্তার উপর নির্মম ও নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায়। কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না! এমন অবস্থায় ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন করলে তার ফলাফল কি হবে এ বিবেচনা সাধারণ মানুষ করতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট যদি ভালো কাজই করে থাকে তাহলে বিরোধী দলের বিক্ষোভ প্রতিবাদ সভা কিংবা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেখে ভয় পাচ্ছে কেন? তারাতো আগ্রহের সাথে জনগণের মুখোমুখি হওয়ার কথা! বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ঠেকাতে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাবেরই বা কারণ কি? পর্যবেক্ষক মহল মনে করে আরপিও সংশোধন করে ব্যবসায়ী, অবসরপ্রাপ্তদের শতকরা ৫ ভাগের বেশি নির্বাচনে অংশগ্রহণের এখতিয়ার নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। সহজ শর্তে নতুন দলের নিবন্ধন দিয়ে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন কর্তৃক রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে বাধাদান, অফিস ভাঙচুর ও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের শাস্তির বিধান করা প্রয়োজন। ক্ষমতাসীন হলেই জনগণের মুখোমুখি হতে এত ভয় কেন? কবি আব্দুল হাই শিকদার প্রায়ই বলেন, পলাশীতে যখন বিপর্যয় ঘটে তখন সকলেই স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে থাকায় সেদিন ফিরিঙ্গিরা স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত করতে পেরেছিল। এখনই সময় থাকতে সকলেই ঘুম ভাঙতে হবে প্রতিরোধের জন্য।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads