মঙ্গলবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১২

মির্জা ফখরুলসহ গ্রেফতার ২৫ হাজার : আগুন নিয়ে বেশি খেলতে নেই


চনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে সরকার যে আসলেও হার্ডলাইনেই এগোচ্ছে তার প্রমাণ দেয়ার জন্য এখন আর কয়েকটি মাত্র ঘটনার উল্লেখ যথেষ্ট নয়। এ সম্পর্কে সর্বশেষ প্রমাণ ৯ ডিসেম্বর অবরোধ চলাকালে যেমন পাওয়া গেছে, তেমনি পাওয়া গেছে ১১ ডিসেম্বর হরতাল উপলক্ষেও। দেশব্যাপী অবরোধের প্রচণ্ড চাপে কুপোকাত হই-হই অবস্থায় এসে যাওয়া সরকার হরতাল প্রতিহত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। পুলিশকে দিয়ে সারা দেশে দমন ও গ্রেফতারের অভিযান চালিয়েছে সরকার। আটক নেতাকর্মীদের সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আগের দিন সন্ধ্যায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নাকি সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি ভাংচুর করেছেন! মামলা তাই বলে একটি দেয়া হয়নি। মির্জা আলমগীরের বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে ৩৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং আইন প্রতিমন্ত্রীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফসহ ক্ষমতাসীন নেতারা বিরোধী দলের সিনিয়র সব নেতাকেই গ্রেফতারের হুমকি দিয়েছেন। ‘যত বড় নেতাই হোন না কেন’ কথাটার মধ্য দিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার দিকেও আঙুল তুলেছেন তারা। কারণ তার নির্দেশেই নাকি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে! 

আমরা মির্জা আলমগীরসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা করি এবং প্রত্যেককে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার দাবি জানাই। আপত্তির কারণ হলো, ক্ষমতাসীনরা বহুদিন ধরেই হার্ডলাইনে এগিয়ে চলেছেন। পুলিশকে দিয়ে লাঠিপেটা ও গ্রেফতার করানোর পাশাপাশি দলীয় গুণ্ডা-সন্ত্রাসীদেরও মাঠে নামিয়েছে সরকার। বিগত কিছুদিনে বিরোধী দল এমনকি মিছিল-সমাবেশ করার সুযোগটুকুও পাচ্ছে না। পুলিশ শুধু মিছিল-সমাবেশই ভণ্ডুল করছে না, নেতাকর্মীদেরও যথেচ্ছভাবে লাঠিপেটা করছে। মুড়ি-মুড়কির মতো টিয়ার গ্যাসের শেলও ছুড়ছে। ‘অজ্ঞাতনামা’ হাজার-হাজার জনকে আসামি করে মামলা ঠুকছে পুলিশ। তারপর রিমান্ডে নিচ্ছে। পুলিশ ও ডিবির লোকজন নেতাকর্মীদের এমনভাবে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, যা দেখে মনে হচ্ছে যেন তারা খুনি-সন্ত্রাসী ধরনের ভয়ঙ্কর অপরাধী! অথচ যাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের প্রত্যেকেই আইন ও সংবিধানসম্মত রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী। প্রসঙ্গক্রমে ‘নতুন’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের একটি হুকুমের কথা স্মরণ করতেই হয়। বেশ ক’টি উপলক্ষে তিনি ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আন্দোলন প্রতিহত করার এবং আন্দোলনকারীদের পাকড়াও করার হুকুম জারি করেছেন। নিঃসন্দেহে এটা একটা ভয়ঙ্কর হুকুম। কারণ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যাদের পাকড়াও ও প্রতিহত করতে বলেছেন, তারা বুড়িগঙ্গার পানিতে ভেসে আসেননি। তারাও মখা সাহেবের মতো বাংলাদেশেরই নাগরিক। তাদের আত্মীয়-স্বজন যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে জনসমর্থনও। সুতরাং সরকারি দলের গুণ্ডা-সন্ত্রাসীরা যদি তাদের পাকড়াও করার চেষ্টা চালায় তাহলে আত্মরক্ষার জন্য হলেও তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। সাধারণ মানুষও তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন। তেমন অবস্থায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়বে সারা দেশে। বাস্তবে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়তেও শুরু করেছে।
বলা দরকার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ ধরনের হুকুম এবং পুলিশের পাশাপাশি সরকারি দলের গুণ্ডা-সন্ত্রাসীদের হামলার ফলে সংঘাতই শুধু ছড়িয়ে পড়বে না, রাজনৈতিক সঙ্কটও মারাত্মক হয়ে উঠবে। এজন্যই আমরা দমন-নির্যাতন এবং পুলিশকে দিয়ে গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা দায়েরের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা মনে করি, কোনো রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্রসম্মত কর্মসূচি ভণ্ডুল করা এবং নেতাকর্মীদের ওপর দমন-নির্যাতন চালানো জনগণের ট্যাক্সের অর্থে লালিত পুলিশের কাজ হতে পারে না। তাছাড়া মিছিল-সমাবেশ, মানববন্ধন, হরতাল প্রভৃতি মানুষের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু পুলিশকে দিয়ে এসব কর্মসূচিকেই পণ্ড করানো হচ্ছে। মখা আলমগীর শুধু নন, অন্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরাও একই সুরে উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখছেন। পুলিশকে তো বটেই, দলের গুণ্ডা-সন্ত্রাসীদেরও তারা সন্ত্রাসের ‘ওপেন লাইসেন্স’ দিচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও পিছিয়ে থাকছেন না। বলার অপেক্ষা রাখে না, ক্ষমতাসীনরা যদি এভাবে দমন-নির্যাতনের পথে এগিয়ে যেতে থাকেন তাহলে রাজনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা নস্যাত্ হয়ে যাবে। তেমন অবস্থায় আবারও বাধাগ্রস্ত হতে পারে গণতন্ত্র। আমরা তাই অবিলম্বে গণতন্ত্রসম্মত অবস্থানে ফিরে আসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। সরকারের উচিত অবিলম্বে মির্জা আলমগীরসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মুক্তি দেয়া এবং সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা। নির্দলীয় সরকারের দাবিটি মেনে নেয়ার মধ্যে ক্ষমতাসীনদের নিজেদের জন্যও মঙ্গল নিহিত রয়েছে বলে আমরা মনে করি। ক্ষমতাসীনরাও নিশ্চয়ই জানেন, আগুন নিয়ে বেশি খেললে হাত পুড়ে যায়
!

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads