আওয়ামী লীগ সরকার আবারও দৈনিক আমার দেশকে ফাঁসানোর জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। এজন্য স্কাইপি সংলাপ প্রকাশের কথিত ‘অপরাধকে’ অজুহাত বানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের পদত্যাগকারী চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ও বেলজিয়াম প্রবাসী ‘আইন বিশেষজ্ঞ’ আহমদ জিয়াউদ্দিনের মধ্যকার স্কাইপি সংলাপ প্রকাশ করায় ক্ষমতাসীনরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন। ট্রাইব্যুনালের কাছে তো বটেই, হাইকোর্ট এবং সিএমএম কোর্টেও ছুটে গেছেন সরকারি আইনজীবীরা। বৃহস্পতিবার রাতের বেলায় সিএমএম কোর্টে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের হাস্যকর অভিযোগ পর্যন্ত উত্থাপন করেছেন তারা। বিচারকও একতরফা বক্তব্য শুনেই মাহমুদুর রহমান এবং প্রকাশক হাসমত আলীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তেজগাঁও থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে তত্পর হয়ে উঠেছিল পুলিশ। গ্রেফতার না করলেও বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার পর্যন্ত আমার দেশ-এর অফিস ঘিরে রেখেছে তারা। অন্যদিকে দেশের মিডিয়া জগতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। প্রচণ্ড প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারাও আমার দেশ-এর পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। ফলে পুলিশের পক্ষে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। হুমকি তাই বলে প্রত্যাহার করা হয়নি। যে কোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন মাহমুদুর রহমান।
আমরা আমার দেশ-এর কণ্ঠরোধের জন্য সরকারের এই ফ্যাসিস্ট প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা মনে করি এবং সার্বিক বিচারে এটাই প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, প্রবাসী একজন কথিত বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপি সংলাপের অংশবিশেষ প্রকাশ করার মাধ্যমে দৈনিক আমার দেশ কোনো অপরাধ করেনি। রাষ্ট্রদ্রোহের প্রশ্নইবা আসে কী করে? কারণ, এ ধরনের সংলাপ প্রকাশ এবং গোপন তথ্য ও দলিলপত্র ফাঁস করে দেয়া বিশ্বব্যাপী মিডিয়ার এক স্বাভাবিক কার্যক্রম। যেমন ১৯৭৩ সালে ‘ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি’ নামে বিশ্বব্যাপী ঝড় তোলা ঘটনায় ১৯৭২ সালের নির্বাচনের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের গোপন টেলিফোন সংলাপ ফাঁস করা হয়েছিল। এসব সংলাপে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের নির্বাচনী কারসাজি সম্পর্কে জানা গিয়েছিল। বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পর এতটাই আলোড়ন উঠেছিল যে, কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত নিক্সন প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে কেটে পড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। তখনও আইন এবং নীতি ও নৈতিকতার প্রশ্ন যথেষ্টই আলোচিত হয়েছিল। কিন্তু সব ছাপিয়ে প্রাধান্যে এসেছিল নিক্সনের গোপন কারসাজির বিষয়টি। ফলে নিক্সন বা তথাকথিত নীতি ও নৈতিকতার ধ্বজাধারীরা কিছুই করতে পারেননি। উল্টো প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে সত্য প্রকাশের জন্য কৃতী দুই সাংবাদিক পুলিত্জার পুরস্কার পেয়েছিলেন।
এত পেছনেইবা যাওয়া কেন? সাম্প্রতিককালে ‘উইকিলিকস’ও তো বিশ্বে যথেষ্টই ঝড় তুলেছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বহু গোপন দলিল পর্যন্ত ‘হ্যাক’ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছে ‘উইকিলিকস’। সে কারণে বিশ্বের অনেক দেশেই পরিবর্তন ঘটেছে, পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। কিন্তু আইন এবং নীতি ও নৈতিকতার ধোঁয়া তুলে কোনো দেশের সরকারই এ পর্যন্ত ‘উইকিলিকস’-এর বিরুদ্ধে আইনগতভাবে কোনো ব্যবস্থা নিতে পেরে ওঠেনি। সংস্থাটির প্রধান জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে দেশে দেশে মামলা হলেও খোদ লন্ডনের মতো আন্তর্জাতিক মহানগরীতে তাকে সসম্মানে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে ল্যাটিন আমেরিকার একটি দেশের দূতাবাস। গ্রেফতার করা দূরে থাকুক, মিস্টার অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে বরং আপসরফার চেষ্টা চালাচ্ছে আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন দেশের সরকার। এভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি’ থেকে দুনিয়া কাঁপানো ‘উইকিলিকস’ পর্যন্ত প্রতিটি ঘটনার পর্যালোচনায় পরিষ্কার হয়ে যাবে, তথ্য প্রকাশ করা থেকে কোনো সাংবাদিক বা টিভি ও সংবাদপত্রসহ মিডিয়ার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায় না। অমন চেষ্টা যারা করে তারাই উল্টো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সেদিক থেকে দৈনিক আমার দেশ যা করেছে তাকে ‘ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি’ ও ‘উইকিলিকস’-এর তুলনায় নিতান্ত ‘নস্যি’ ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। কিন্তু তা সত্ত্বেও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন ক্ষমতাসীনরা। তারা ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে শায়েস্তা করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গেছেন, উচ্চ আদালতে গিয়ে ধরনা দিয়েছেন। সবশেষে তাদের পোষ্য এক উকিল সিএমএম কোর্টে গিয়ে আছাড় খেয়ে পড়েছেন। প্রসঙ্গক্রমে স্কাইপি সম্পর্কে কিছু তথ্য জানানো দরকার। আমার দেশ নয়, এ ব্যাপারে রীতিমত অনুসন্ধান চালিয়েছে ঢাকার অন্য একটি দৈনিক। তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত এক রিপোর্টে দৈনিকটি জানিয়েছে, স্কাইপি সংলাপ যার-তার পক্ষে হ্যাক করা সম্ভব নয়। এটা করা যেতে পারে কেবল তখনই, যখন আলাপকারী দু’জনের মধ্যে যে কোনো একজনের কম্পিউটারের সঙ্গে কেউ সংযোগ স্থাপন করতে পারে। এজন্য ওই কম্পিউটারে একটি ডিভাইস যুক্ত করতে হয়। একইসঙ্গে আলাপকারীর ই-মেইলও হ্যাক করতে হয়। অর্থাত্ এমন কারও পক্ষেই স্কাইপি সংলাপ হ্যাক করা সম্ভব হয়েছে যে বা যারা বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম কিংবা আহমদ জিয়াউদ্দিনের খুব কাছের লোক।
প্রকৃত ঘটনা যা-ই হয়ে থাকুক না কেন, দৈনিক আমার দেশকে অন্তত দোষী সাব্যস্ত করার সুযোগ নেই। কারণ, আমার দেশ ওই স্কাইপি সংলাপ হ্যাক করেনি বরং প্রথম উপলক্ষেই জানিয়ে দিয়েছে, ১৭ ঘণ্টার সংলাপ এবং অসংখ্য ই-মেইল বার্তা আমার দেশ-এর কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। কারা দিয়েছেন সেটা প্রকাশ করতে আমার দেশ বাধ্য নয়। বিশ্বের কোনো দেশের মিডিয়া বা সাংবাদিকই নিজেদের সোর্স বা খবরের সূত্র সম্পর্কে জানান না। এই না জানানোর কারণে অনেক দেশেই সাংবাদিকদের নির্যাতিত হতে হয়েছে। বছরের পর বছর তারা জেলেও কাটিয়েছেন। কিন্তু সোর্স প্রকাশ করেননি। আমরা মনে করি, হুমকি দেয়ার এবং মামলার আড়ালে সম্পাদককে কারাগারে ঢোকানোর ফ্যাসিস্ট পন্থায় পা বাড়ানোর পরিবর্তে সরকারের উচিত বিষয়টির সত্যাসত্য সম্পর্কে অনুসন্ধান চালানো এবং বিশেষ করে পদত্যাগ করে সরে যাওয়া বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের কাছ থেকে কৈফিয়ত্ আদায় করা। কারণ, যুদ্ধাপরাধের মতো অত্যন্ত গুরুতর একটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের মামলার জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হয়েও তিনি শুধু তার শপথই ভঙ্গ করেননি, বিচারের পুরো বিষয়টিকেও হাল্কা ও হাস্যকর বানিয়ে ফেলেছেন। রিপোর্টে বিক্ষিপ্তভাবে প্রকাশিত তার কয়েকটিমাত্র মন্তব্য লক্ষ করলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে, মামলাটিকে তিনি কতটা গুরুত্বহীন তথা ফালতু মনে করতেন। এর পেছনে যে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার উদ্দেশ্য ছিল সে কথাটাও নিজামুল হক নাসিম বুঝিয়ে ছেড়েছেন।
আমরা মনে করি, বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করে রাজনৈতিক অর্থে দুর্গন্ধ ছড়ানোর পরিবর্তে সরকারের উচিত মূল বিষয়ের গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করা। একই কারণে দৈনিক আমার দেশ-এর ব্যাপারে তক্কে তক্কে থাকার এবং উপলক্ষ পাওয়ামাত্র কিছু বুঝে না বুঝেই সম্পাদককে পাকড়াও করার চেষ্টা চালানো থেকেও নিরস্ত হওয়া দরকার। সরকারকে মিডিয়া দলনের কঠিন পরিণতি সম্পর্কেও সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে আমার দেশ সম্পর্কে তো বটেই। কারণ, আমার দেশ-এর আনুগত্য শুধু দেশ ও জনগণের প্রতি। এর আগেও তো সরকার মাহমুদুর রহমানকে বছরখানেক জেলের ভাত খাইয়ে দেখেছে। তার বিরুদ্ধে এখনও তো খান পঞ্চাশেক মামলা চলছে। কিন্তু দেশপ্রেমিক সম্পাদককে যেমন, তেমনি আমার দেশ পরিবারকেও সামান্য দুর্বল করাও সম্ভব হয়নি। বাস্তবে সেটা সম্ভব হওয়ার কথাও নয়। কারণ, আমার দেশ অন্যায়ের কাছে নতিস্বীকার করে না। ফ্যাসিস্ট কোনো সরকারের কাছে নতিস্বীকার করার তো প্রশ্নই ওঠে না। আমরা আশা করি, ক্ষমতাসীনরা কাণ্ডজ্ঞান সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে বসবেন না। ভালো চাইলে তাদের উচিত অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া এবং আমার দেশকে হুমকি দেয়া বন্ধ করা। সেটা না করে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করতে গেলে ক্ষমতাসীনরাই উল্টো ফেঁসে যেতে পারেন।
আমরা আমার দেশ-এর কণ্ঠরোধের জন্য সরকারের এই ফ্যাসিস্ট প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা মনে করি এবং সার্বিক বিচারে এটাই প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, প্রবাসী একজন কথিত বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপি সংলাপের অংশবিশেষ প্রকাশ করার মাধ্যমে দৈনিক আমার দেশ কোনো অপরাধ করেনি। রাষ্ট্রদ্রোহের প্রশ্নইবা আসে কী করে? কারণ, এ ধরনের সংলাপ প্রকাশ এবং গোপন তথ্য ও দলিলপত্র ফাঁস করে দেয়া বিশ্বব্যাপী মিডিয়ার এক স্বাভাবিক কার্যক্রম। যেমন ১৯৭৩ সালে ‘ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি’ নামে বিশ্বব্যাপী ঝড় তোলা ঘটনায় ১৯৭২ সালের নির্বাচনের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের গোপন টেলিফোন সংলাপ ফাঁস করা হয়েছিল। এসব সংলাপে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের নির্বাচনী কারসাজি সম্পর্কে জানা গিয়েছিল। বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পর এতটাই আলোড়ন উঠেছিল যে, কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত নিক্সন প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে কেটে পড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। তখনও আইন এবং নীতি ও নৈতিকতার প্রশ্ন যথেষ্টই আলোচিত হয়েছিল। কিন্তু সব ছাপিয়ে প্রাধান্যে এসেছিল নিক্সনের গোপন কারসাজির বিষয়টি। ফলে নিক্সন বা তথাকথিত নীতি ও নৈতিকতার ধ্বজাধারীরা কিছুই করতে পারেননি। উল্টো প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে সত্য প্রকাশের জন্য কৃতী দুই সাংবাদিক পুলিত্জার পুরস্কার পেয়েছিলেন।
এত পেছনেইবা যাওয়া কেন? সাম্প্রতিককালে ‘উইকিলিকস’ও তো বিশ্বে যথেষ্টই ঝড় তুলেছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বহু গোপন দলিল পর্যন্ত ‘হ্যাক’ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছে ‘উইকিলিকস’। সে কারণে বিশ্বের অনেক দেশেই পরিবর্তন ঘটেছে, পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। কিন্তু আইন এবং নীতি ও নৈতিকতার ধোঁয়া তুলে কোনো দেশের সরকারই এ পর্যন্ত ‘উইকিলিকস’-এর বিরুদ্ধে আইনগতভাবে কোনো ব্যবস্থা নিতে পেরে ওঠেনি। সংস্থাটির প্রধান জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে দেশে দেশে মামলা হলেও খোদ লন্ডনের মতো আন্তর্জাতিক মহানগরীতে তাকে সসম্মানে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে ল্যাটিন আমেরিকার একটি দেশের দূতাবাস। গ্রেফতার করা দূরে থাকুক, মিস্টার অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে বরং আপসরফার চেষ্টা চালাচ্ছে আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন দেশের সরকার। এভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি’ থেকে দুনিয়া কাঁপানো ‘উইকিলিকস’ পর্যন্ত প্রতিটি ঘটনার পর্যালোচনায় পরিষ্কার হয়ে যাবে, তথ্য প্রকাশ করা থেকে কোনো সাংবাদিক বা টিভি ও সংবাদপত্রসহ মিডিয়ার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায় না। অমন চেষ্টা যারা করে তারাই উল্টো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সেদিক থেকে দৈনিক আমার দেশ যা করেছে তাকে ‘ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি’ ও ‘উইকিলিকস’-এর তুলনায় নিতান্ত ‘নস্যি’ ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। কিন্তু তা সত্ত্বেও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন ক্ষমতাসীনরা। তারা ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে শায়েস্তা করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গেছেন, উচ্চ আদালতে গিয়ে ধরনা দিয়েছেন। সবশেষে তাদের পোষ্য এক উকিল সিএমএম কোর্টে গিয়ে আছাড় খেয়ে পড়েছেন। প্রসঙ্গক্রমে স্কাইপি সম্পর্কে কিছু তথ্য জানানো দরকার। আমার দেশ নয়, এ ব্যাপারে রীতিমত অনুসন্ধান চালিয়েছে ঢাকার অন্য একটি দৈনিক। তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত এক রিপোর্টে দৈনিকটি জানিয়েছে, স্কাইপি সংলাপ যার-তার পক্ষে হ্যাক করা সম্ভব নয়। এটা করা যেতে পারে কেবল তখনই, যখন আলাপকারী দু’জনের মধ্যে যে কোনো একজনের কম্পিউটারের সঙ্গে কেউ সংযোগ স্থাপন করতে পারে। এজন্য ওই কম্পিউটারে একটি ডিভাইস যুক্ত করতে হয়। একইসঙ্গে আলাপকারীর ই-মেইলও হ্যাক করতে হয়। অর্থাত্ এমন কারও পক্ষেই স্কাইপি সংলাপ হ্যাক করা সম্ভব হয়েছে যে বা যারা বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম কিংবা আহমদ জিয়াউদ্দিনের খুব কাছের লোক।
প্রকৃত ঘটনা যা-ই হয়ে থাকুক না কেন, দৈনিক আমার দেশকে অন্তত দোষী সাব্যস্ত করার সুযোগ নেই। কারণ, আমার দেশ ওই স্কাইপি সংলাপ হ্যাক করেনি বরং প্রথম উপলক্ষেই জানিয়ে দিয়েছে, ১৭ ঘণ্টার সংলাপ এবং অসংখ্য ই-মেইল বার্তা আমার দেশ-এর কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। কারা দিয়েছেন সেটা প্রকাশ করতে আমার দেশ বাধ্য নয়। বিশ্বের কোনো দেশের মিডিয়া বা সাংবাদিকই নিজেদের সোর্স বা খবরের সূত্র সম্পর্কে জানান না। এই না জানানোর কারণে অনেক দেশেই সাংবাদিকদের নির্যাতিত হতে হয়েছে। বছরের পর বছর তারা জেলেও কাটিয়েছেন। কিন্তু সোর্স প্রকাশ করেননি। আমরা মনে করি, হুমকি দেয়ার এবং মামলার আড়ালে সম্পাদককে কারাগারে ঢোকানোর ফ্যাসিস্ট পন্থায় পা বাড়ানোর পরিবর্তে সরকারের উচিত বিষয়টির সত্যাসত্য সম্পর্কে অনুসন্ধান চালানো এবং বিশেষ করে পদত্যাগ করে সরে যাওয়া বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের কাছ থেকে কৈফিয়ত্ আদায় করা। কারণ, যুদ্ধাপরাধের মতো অত্যন্ত গুরুতর একটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের মামলার জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হয়েও তিনি শুধু তার শপথই ভঙ্গ করেননি, বিচারের পুরো বিষয়টিকেও হাল্কা ও হাস্যকর বানিয়ে ফেলেছেন। রিপোর্টে বিক্ষিপ্তভাবে প্রকাশিত তার কয়েকটিমাত্র মন্তব্য লক্ষ করলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে, মামলাটিকে তিনি কতটা গুরুত্বহীন তথা ফালতু মনে করতেন। এর পেছনে যে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার উদ্দেশ্য ছিল সে কথাটাও নিজামুল হক নাসিম বুঝিয়ে ছেড়েছেন।
আমরা মনে করি, বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করে রাজনৈতিক অর্থে দুর্গন্ধ ছড়ানোর পরিবর্তে সরকারের উচিত মূল বিষয়ের গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করা। একই কারণে দৈনিক আমার দেশ-এর ব্যাপারে তক্কে তক্কে থাকার এবং উপলক্ষ পাওয়ামাত্র কিছু বুঝে না বুঝেই সম্পাদককে পাকড়াও করার চেষ্টা চালানো থেকেও নিরস্ত হওয়া দরকার। সরকারকে মিডিয়া দলনের কঠিন পরিণতি সম্পর্কেও সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে আমার দেশ সম্পর্কে তো বটেই। কারণ, আমার দেশ-এর আনুগত্য শুধু দেশ ও জনগণের প্রতি। এর আগেও তো সরকার মাহমুদুর রহমানকে বছরখানেক জেলের ভাত খাইয়ে দেখেছে। তার বিরুদ্ধে এখনও তো খান পঞ্চাশেক মামলা চলছে। কিন্তু দেশপ্রেমিক সম্পাদককে যেমন, তেমনি আমার দেশ পরিবারকেও সামান্য দুর্বল করাও সম্ভব হয়নি। বাস্তবে সেটা সম্ভব হওয়ার কথাও নয়। কারণ, আমার দেশ অন্যায়ের কাছে নতিস্বীকার করে না। ফ্যাসিস্ট কোনো সরকারের কাছে নতিস্বীকার করার তো প্রশ্নই ওঠে না। আমরা আশা করি, ক্ষমতাসীনরা কাণ্ডজ্ঞান সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে বসবেন না। ভালো চাইলে তাদের উচিত অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া এবং আমার দেশকে হুমকি দেয়া বন্ধ করা। সেটা না করে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করতে গেলে ক্ষমতাসীনরাই উল্টো ফেঁসে যেতে পারেন।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন