প্রত্যেক গণতান্ত্রিক দেশে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার গঠিত হয়ে থাকে। দেশে একাধিক রাজনৈতিক দল থাকে। জনগণ স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে সংসদে পাঠায়। এভাবে যে দলের বেশি সীট লাভ হয় সেই দলই সরকার গঠন করে এবং দেশ চালায়। আর এটাই গণতন্ত্রের দাবি। নির্বাচন যদি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু না হয় তবে জনগণ যথাযথভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না এবং তাদের বাঞ্ছিত ব্যক্তিদের সংসদে পাঠানো সম্ভব হয় না। ফলে দেশবাসীর আকাঙ্ক্ষিত সরকারও গঠন হয় না। এতে গণতন্ত্রের মাথায় যেমন কুঠারাঘাত করা হয় তেমনি দেশ চালাবার মতো সৎ ও দক্ষ ব্যক্তির অভাব ঘটে সরকারে।
সুষ্ঠুভাবে দেশ চালানো, জনগণের কল্যাণ, দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি দূরে থাক, জনগণের জীবন ধারণই কঠিন হয়ে পড়ে। দেশে আইনের শাসন থাকে না। সরকারে যারা থাকেন তাদের মুখের কথাই আইনে পরিণত হয়। জনগণ সরকারের নিকট জিম্মি হয়ে পড়ে। তাদের জানমাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা বলতে কিছুই থাকে না। এমনকি দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বও হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে যতবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে জনগণকে ততবারই সে দুরবস্থার মোকাবিলা করতে হয়েছে।
বাংলাদেশের দু'একটি রাজনৈতিক দল ছাড়া অধিকাংশ দলই রাজনীতিকে অপবিত্র ও ধোঁকা-ফাঁকির নীতি মনে করে। তাদের বিশ্বাস ধোঁকা-ফাঁকি আর জবর-দখলের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করাই হলো রাজনীতির মূল লক্ষ্য। তাই নির্বাচনে জেতার জন্য এমন কোন অপকর্ম নেই যা তারা করেন না।
ফল্স ভোট দেয়া, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, ভোটকেন্দ্র দখল এমনকি মারামারি, খুনাখুনি পর্যন্ত করে থাকেন। এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে তারা নির্বাচনের কৌশল হিসেবে গ্রহণ করেন।
আসলে রাজনীতি অত্যন্ত পবিত্র বিষয়। মানব সভ্যতায় যার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ রাজনীতির মাধ্যমেই দেশের সরকার গঠন হয়। অপবিত্র নীতির মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হয় সে সরকার জনগণ ও দেশের কোন কল্যাণ করতে পারে না। জনগণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা এবং দেশের ধন-সম্পদ লুটপাট করা, জোর করে ক্ষমতায় থাকার অপচেষ্টা করা ছাড়া তাদের আর কোন কাজ থাকে না। আর যারা রাজনীতিকে পবিত্র মনে করেন তারা ক্ষমতায় এলে জনগণের হক্ব আদায় করেন, দেশের সম্পদ লুটপাট না করে জনগণের কল্যাণ, দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করেন। রাজনীতিকে যারা অপবিত্র মনে করেন তারা গণতন্ত্রের কথা দিনে হাজার বার মুখে বললেও ছলে বলে কলে-কৌশলে একবার ক্ষমতায় যেতে পারলে সিন্দাবাদের ভূতের চেয়েও কঠিন অবস্থায় জাতির ঘাড়ে চেপে বসেন। গণোত্থান ছাড়া তাদের নামানোই অসম্ভব হয়ে পড়ে। তারা নিজেদের গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিশ্বকে দেখানোর জন্য ক্ষমতায় থেকেই প্রহসনের নির্বাচন করান। রাষ্ট্রীয় সকল শক্তি প্রয়োগ করে হাজারো রকমের দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে বিপুল ভোটে বিজয় দেখিয়ে তারাই পুনরায় ক্ষমতায় জেঁকে বসেন। তাদের নির্বাচনী যত খরচ তা রাষ্ট্রের টাকা দিয়েই প্রায় মিটিয়ে থাকেন।
জনগণের ভোট ছাড়াই অপকৌশলে যারা ক্ষমতায় আসতে পারে, জনগণের তোয়াক্কা করার তাদের কোন প্রয়োজন হয় না। এ কারণে জনগণের ভোটাধিকারের কোন মূল্যই থাকে না। এ ধরনের সরকার স্বৈরাচারী রূপ ধারণ করে। তাদের দুঃশাসনে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এহেন দুর্গতি থেকে মুক্তি লাভ, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ এবং দেশবাসীর কাঙ্ক্ষিত সরকার নির্বাচিত হবার লক্ষ্যে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন।
সরকারের মেয়াদ শেষ হলে পরবর্তী নির্বাচনের পূর্বে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। পরবর্তী সরকার নির্বাচিত হবার আগ পর্যন্ত দৈনন্দিন সরকারি কাজ চালানো এবং নির্বাচন পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই হলো কেয়ারটেকার সরকার। এই সরকারের কার্যকাল ৯০ দিন। ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে কেয়ারটেকার সরকার পদত্যাগ করবে।
গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনের সময় এক ধরনের কেয়ারটেকার সরকার থাকে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এ সরকারের প্রধান হলে নির্বাচনের ওপর দলীয় প্রভাব ফেলার ব্যাপক সুযোগ থাকে। নির্বাচনকে প্রভাব মুক্ত করার জন্যই প্রয়োজন অরাজনৈতিক ও নির্দলীয় ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত এই কেয়ারটেকার সরকার। সুপ্রিমকোর্টের কর্মরত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সম্পূর্ণরূপে অরাজনৈতিক ও নির্দলীয় কেয়ারটেকার সরকার গঠন হবে। এ সরকারে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় (উপদেষ্টা) যাদের নিয়োগ দেয়া হবে তারা হবেন এমন যে তারা কোন রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত নন এবং কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্তও নন। এ সরকারের প্রধান প্রধান উপদেষ্টা। তার নেতৃত্বে অপর অনধিক ১০ জন উপদেষ্টার সমন্বয়ে এ সরকার গঠিত হবে। উপদেষ্টাগণ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। কেয়ারটেকার সরকারই নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। তবে নির্বাচন কমিশন থাকবে প্রভাবমুক্ত।
পাকিস্তান থেকে শুরু করে বাংলাদেশ তক এ পর্যন্ত যত জাতীয় নির্বাচন হয়েছে ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের নির্বাচন তন্মধ্যে অধিক সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে। নির্বাচনগুলো এত সুষ্ঠু ও সুন্দর হবার কারণ ছিল নির্দলীয় নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকার। বিদেশি পর্যবেক্ষকগণ পর্যন্ত এই নির্বাচনকে উচ্ছবসিত প্রশংসা করেছিলেন। কেউ কেউ এ কথা বলেছেন যে, এই সুন্দর নির্বাচন পদ্ধতি আমাদের দেশেও চালু করতে চেষ্টা করব। কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতির অধীনে নির্বাচন হওয়ার কারণে ওই তিনটি নির্বাচনে কোন দলই নির্বাচন কমিশনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারেনি। সে কারণে অপকৌশলে জিতারও কোন সুযোগ কেউ লাভ করতে পারেনি।
আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তিনি এবং তার দলের লোক ছাড়া অন্য কেউ কিছু করে কৃতিত্ব লাভ করুক এটা মোটেই বরদাস্ত করতে পারেন না। যেমন ড. ইউনূসের নোবেল পুরস্কার পাওয়াটা তার মোটেই পছন্দ না। এরপর সচেতন মহলে কেনা জানে যে, কেয়ারটেকার সরকারের উদ্ভাবক অধ্যাপক গোলাম আযম কিন্তু ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা কেয়ারটেকার সরকারের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে যখন দেখলেন যে, কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি দেশে বিদেশে ব্যাপক প্রশংসা লাভ করেছে, এ কৃতিত্ব কিভাবে হাইজ্যাক করা যায়, সেই চেষ্টায় লেগে গেলেন। তিনি কেয়ারটেকার সরকারের বাংলা অনুবাদ করলেন ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার'। আগে দেয়ালে দেয়ালে লেখা দেখা যেত-
‘কেয়ারটেকার সরকার
গোলাম আযম রূপকার'
এবার তার কর্মীরা দেয়ালের সে লেখা মুছে দিয়ে সেখানে লিখে দিল-
‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার
শেখ হাসিনা রূপকার'
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের দিন রাত ৯টা পর্যন্ত তিনি মনেপ্রাণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপকার ছিলেন। কিন্তু রাত ৯টার পরে যখন বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র থেকে নৌকার ভরাডুবির খবর আসতে লাগল তখন থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর তিনি ভীষণভাবে চটে যান। এই কারণে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার জন্যে তার দল অপকৌশলের সুযোগ পায়নি তাই তাদের এই ভরাডুবি। তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এই পাঁচ বছর দেশ ও জনগণের কল্যাণের জন্য কোন কাজই করেননি। বরং আগামী নির্বাচনে জিতার জন্য পাঁচ বছর ভরে দেশের প্রশাসনকে এমনভাবে ঢেলে সাজিয়েছিলেন যে, নির্বাচনে তার দল ছাড়া আর কোন দলই জিততে পারবে না। কিন্তু সমগ্র জাতি তাদের দুঃশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নির্বাচন কমিশন কেউই তাদের পুনরায় ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে সাহায্য করেনি। সে কারণে তার কর্মীরা ভোট কারচুপি করার সুযোগ পায়নি।
শেখ হাসিনা নির্বাচনের দিন রাত ৯টার আগ পর্যন্ত বলেছিলেন যে, নির্বাচন অত্যন্ত অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হচ্ছে কিন্তু হারার খবর শুনে ক্ষেপে গেলেন এবং বললেন যে, নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে। যখন সারাদেশের দুর্দশার কথা জানতে পারলেন তখন বললেন, স্থূল কারচুপি হয়েছে। এ নির্বাচন মানি না। কিন্তু তাদের অন্যায় আব্দার দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। চারদলীয় জোট সরকার গঠন করলে তিনি বলবেন, চারদলীয় জোট ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় গেছে। সরকার গঠন করেছে করুক, একদিনও তাদের শান্তিতে দেশ চালাতে দেব না। তার সে ওয়াদা তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন। সরকারে থাকতে তিনি বলতেন বিরোধী দলে গেলে আমরা হরতাল দেব না। কিন্তু বিরোধী দলে গিয়েই তিনি ঘনঘন হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও ইত্যাদি শুরু করে দেন। শুধু তাই নয় ১৯৯৮ সালে জেএমবি সৃষ্টি করে ভারতে তাদের ট্রেনিং দিয়ে রেখেছিলেন। ইসলাম কায়েমের নামে দেশব্যাপী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মানুষ মেরে দেশের মধ্যে সন্ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য, যাতে জেএমবির সন্ত্রাস দিয়ে জামায়াত-শিবিরকে দেশে-বিদেশে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। তারা হরতালের আগের দিন দোতলা বাসে আগুন ধরিয়ে ১২/১৪ জন জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছিল। হরতালের দিন সচিব পর্যায়ের ব্যক্তিদের মত সম্মানিত লোকদের দিগম্বর করে রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছিল। তারা কয়েকজন পুলিশ সদস্যকেও হত্যা করেছিল। জেএমবি দিয়ে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বরিশালে দু'জন জজকে হত্যা করেছিল। একদিনে একযোগে চৌষট্টিটি জেলায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সারাদেশে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। এভাবে নানাবিধ নাশকতামূলক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে দেশকে অচল করে দেবার ষড়যন্ত্র চালিয়েছিল। চারদলীয় জোট সরকার অত্যন্ত সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছিল। বিরোধীদল যখন সন্ত্রাসের সীমা ছেড়ে যাচ্ছিল তখন সরকার র্যাব গঠন করে সন্ত্রাস দমন করে। এতে ১৪ দল র্যাবের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা দায়ের করেছিল। আওয়ামী লীগ আগাগোড়াই জানে জনগণের মন জয় করে ভোট পেয়ে ক্ষমতায় যাওয়া তাদের পক্ষে কম্মিনকালেও সম্ভব হবে না। ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংই তাদের ভোটে নির্বাচনে জেতার একমাত্র উপায়। কিন্তু জামায়াত-বিএনপি যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে আর কেয়ারটেকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় তাহলে কোন অপকৌশলের সুযোগ পাওয়া যাবে না। নির্বাচনে জেতা তো দূরের কথা অধিকাংশের জামানত রক্ষা করাই সম্ভব হবে না। সে কারণে তারা জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে ফাটল ধরাবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে লাগল এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অকেজো করার জন্য সংলাপের নামে নানারকম অসংগত প্রস্তাব দিতে লাগল। তাদের ওই প্রস্তাব মেনে নিলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকবে কেবলমাত্র নামকাওয়াস্তে। নির্বাচনে তাদের অপকৌশলে বাধা দেবার কোন শক্তি থাকবে না। সরকার তাদের ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে তাদের ওই সকল প্রস্তাব মেনে নেয়নি। তখন তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বানচালের চেষ্টা চালাতে লাগল। কিন্তু তাতেও সফল হলো না। তারা সিদ্ধান্ত নিল যতক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচনের ফল তাদের পক্ষে ঘুরিয়ে দেবার মত লোক তত্ত্বাবধায়ক সরকারে না দিতে পারবো ততক্ষণ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমরা মেনে নেব না। তাদের অনেকবার ভেটো দেয়ার পর অবশেষে ফখরুদ্দীন ও মইনুদ্দীনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আনা হলো। তারা ১৪ দলকে জিতাবার লক্ষ্যে নানা তালবাহানা করে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন না করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করালো ২ বছর পর। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের কারণে ১৪ দলের যেখানে ৩০টি আসন পাবার সম্ভাবনা ছিল না সেখানে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি আসন দখল করলো। নির্বাচন যে কত সুষ্ঠু হয়েছিল এক কথায় তার নমুনা হলো এ নির্বাচনে অনেক কেন্দ্রে ১০৫% পর্যন্ত ভোট কাস্ট হয়েছিল।
দেশের আপামর জনগণ বলেছিল ২০০৮ সালের নির্বাচন ডিজিটাল ভোট ডাকাতির নির্বাচন। এ ধরনের ভোট ডাকাতি আর কখনো দেখা যায়নি। অথচ শেখ হাসিনা বলেছেন, এই নির্বাচন নাকি সব নির্বাচনের থেকে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন। ১৪ দল ক্ষমতায় এসেই যারা তাদের দেশ ধ্বংসের উদ্দেশ্য-লক্ষ্য বাস্তবায়নে কঠিন বাধা হয়ে দাঁড়াবে সেই সেনাবাহিনীর (ডানপন্থী) ৫৭ চৌকষ কর্মকর্তাকে পিলখানায় ডেকে এনে কিছু বিডিআরকে উস্কিয়ে দিয়ে হত্যা করালো। এরপর এ সকল বিডিআরকে বিদ্রোহী নাম দিয়ে কৌশলে নিঃশেষ করছে। কারণ তাদের অধিকাংশ দেশদরদী ও ইসলামপন্থী।
সংবিধানের পবিত্রতা রক্ষা করার কথা জোর গলায় বললেও তাদের থেকে সংবিধানের অবমাননা আর কেউ বেশি করেনি। সংবিধান সংশোধনের নামে অন্তত ৫০ জায়গায় কেটেছিঁড়ে নিজেদের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের দলিল বানিয়ে নিয়েছে। যেন তাদের ইচ্ছের বাইরে সংবিধানে কিছু থাকতে পারবে না।
তারপর বিরোধীদল থেকে কোন বাধা এসে তাদের গতিপথকে যাতে বিপর্যস্ত করে তুলতে না পারে সেজন্য বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করছে। এক একজনের বিরুদ্ধে ১০/১৫টি মামলা দিয়ে বছরের পর বছর জেলে আটকিয়ে রাখছে। কাউকে কাউকে দুনিয়া থেকে একেবারে মিটিয়ে ফেলারও চেষ্টা চালাচ্ছে।
নানা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়ে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান তুলে দিয়েছে। কোন আইনি বিধান মেনে নয় গায়ের জোরে। বলছে, যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসলে নেতাদের জেল খাটতে হয় সে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর আনা হবে না। ফখরুদ্দীন ও মই উদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকেতো ১৪ দলই নিয়োগ দিয়েছিল। শেখ হাসিনা গর্বের সাথেই বলেছিলেন এ সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল। আসলে ফখরুদ্দীন-মইন উদ্দিন সাহেবদের সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল না। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদকাল ৯০ দিন। কিন্তু তাদের সরকার দু' বছর সময় নিয়েছিল। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কর্মক্ষমতার বাইরে গিয়ে দেশের সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করেছে। বর্তমান আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল যেমন আওয়ামী সরকারের ডমেস্টিক ট্রাইব্যুনাল তেমন ফখরুদ্দীন-মইন উদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারও ছিল তাদের ডমেস্টিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এ সরকার বলছে তত্ত্বাবধাযক সরকার অনির্বাচিত সরকার। এ সরকারের অধীন নির্বাচন করানো গণতন্ত্র বিরোধী। এখানে বলার বিষয় হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারাও অনির্বাচিত, তাদের পরামর্শে দেশ চালানোও তাহলে গণতন্ত্র বিরোধী হয়ে যায়। নির্বাচন কমিশনও অনির্বাচিত। তাদের দিয়ে নির্বাচন পরিচালনাও গণতন্ত্র বিরোধী হবে। প্রিজাইডিং অফিসার, সহ-প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার সকলেই অনির্বাচিত। তাদের দিয়ে নির্বাচনের কাজ করানোও অগণতান্ত্রিক।
সরকার বিরোধী দলের দাবির মোকাবিলায় বলে থাকে আমাদের আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। আদালত সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তুলে দিয়েছে। সুতরাং আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন করা যাবে না। কিন্তু মুখে আদালতের মর্যাদা রক্ষার কথা বললেও তারাই অহরহ আদালতকে অবমাননা করছে। আদালতকে যদি তারা এতই সম্মান করতো তাহলে আদালত আগামী দু'টার্ম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন হওয়ার সুযোগ রেখেছিল। কিন্তু আদালতের সে রায় তারা মানেননি। বরং উক্ত রায়ের গলায় স্বৈরাচারী ছুরি চালিয়েছেন।
দেশের সকল বিরোধীদল, জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গ, আইনবিদ, শিক্ষাবিদ, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক রাজনীতি-বিশ্লেষকগণ এমনকি আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কর্মীরা যারা ময়দানের দাবি বুঝতে পারছেন তারাও দাবি করছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার। বিদেশ থেকেও পরামর্শ আসছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। তারা বলছেন বাংলাদেশে নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই। এটা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে, নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না হলে চরম সংঘাত বেধে যাবে। গৃহযুদ্ধ শুরু হবে। হাজার হাজার জীবন ধ্বংস হবে। কিন্তু তারা সে ব্যাপারে মোটেই কান দিচ্ছেন না। বিরোধীদল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবি করেই বসে নেই। দাবি আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের জযবা নিয়েই সংগ্রামে নেমেছে। সামনে দেশের ভয়াবহতা অাঁচ করতে পেরে ডঃ কামাল হোসেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব, ডঃ এমাজ উদ্দীন আহমদ প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন।
শরীক দলের অধিকাংশ দলই মহাজোট থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। তারাও দাবি করছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন করানোর জন্য। গোঁ না ধরে দেশের শান্তি-শৃক্মখলা রক্ষার্থে সরকারের উচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা দেয়া। সরকার যদি নিজেরা জিততে পারবে না এই ভয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করাতে চায় তাহলে বিরোধীদল এবং জনগণ তা প্রতিহত করার জন্য সাধ্যমতো বাধা দেবে। এতে দু' পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যাবে এবং চরম হানাহানিতে সারা দেশে রক্তের প্লাবন বয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।
আওয়ামী বলয়ের লোকেরা বলে থাকেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াও যে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে তার অনেক প্রমাণ আমাদের সামনে রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করে জামায়াত এবং বিএনপি'র প্রার্থী চেয়ারম্যান হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শামীম ওসমানকে পরাজিত করে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী জিতেছেন। টাঙ্গাইলে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী না জিতে জিতেছেন বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আমানুর রহমান রানা।
রাজনৈতিক সচেতন মহলের বক্তব্য হলো, এসব আওয়ামী সরকারের চালবাজি। জনগণকে এভাবে ধোঁকা দেয়া হচ্ছে যে, দেখো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না হয়েও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকেও চেয়ারম্যান নির্বাচনে তাদের প্রার্থী জামায়াত-বিএনপির কাছে চরমভাবে পরাজিত হয়েছে। অতএব, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এবং অন্য দলের যোগ্য প্রার্থীরাও নির্বাচিত হতে পারবেন। আসলে চেয়ারম্যান নির্বাচন আর জাতীয় পরিষদ নির্বাচন এক জিনিস নয়, একথা জনগণ ভালোভাবেই বুঝে। আওয়ামী লীগের একজন ব্যক্তিও যদি চেয়ারম্যান নির্বাচিত না হয় তাতে তাদের কিছুই আসে-যায় না। বরং জাতীয় নির্বাচনে সরকার গঠনের মতো আসন দখল করতে পারলেই হলো। সে কারণেই তাদের এই পাতানো খেলা। তাদের নিয়ত যে মোটেই সহীহ না, তার প্রমাণ হলো একটি উপ-নির্বাচনেও বিরোধীদলের কাউকে সংসদে আসার সুযোগ দেয়া হয়নি। ভোলার উপ-নির্বাচনে মেজর হাফিজের মতো যোগ্য ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে জবর দখল করে জিততে না দিয়ে শাওনের মতো অযোগ্য লোককে জিতানো হলো। হাফিজের মতো লোকদের এমনভাবে মারধর করা হয়েছিল যে, এখনও কেউ কেউ পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি।
নারায়ণগঞ্জে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শামীম ওসমানকে মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিলেও ডা. আইভীকে মেয়র বানাবার সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন। আর শামীম ওসমানকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে এমপি বানিয়ে সংসদে নেয়ার পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। এতে মেয়র এবং এমপি'র দু'টো পদই তাদের দখলে থাকবে।
টাঙ্গাইলে উপ-নির্বাচনে যাকে জেতানো হবে না তাকে দিল মনোনয়ন আর যাকে জেতানো হবে তাকে বিদ্রোহী সাজিয়ে দল থেকে বহিষ্কার করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জিতিয়ে নিয়েছে। যাতে লোকে ভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও দল থেকে বহিষ্কৃত ব্যক্তি জিতে গেছে। তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন হতে বাধা কিসের? কিন্তু নির্বাচনে জিতেই ভোটারদের চরমভাবে আশাহত করে আমানুর রহমান রানা ঘোষণা দিলেন যে, আমি আমার দলেই ফিরে যাব। এতেই জনগণের বুঝতে বাকী রইল না যে, এটা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অপকৌশল। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন এদেরকে উস্তাদ না মেনে স্বয়ং ইবলীসেরও চলার উপায় নেই।
আসলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ২০০৮ সালের মতো ফলাফল হবে। কারণ আওয়ামী লীগের টার্গেট হলো আপাতত ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার। নির্বাচনে অন্যদল জিতে সরকার গঠন করলে তাদের সে বাসনা পূর্ণ হবে কেমন করে? তাই ছলেবলে কলেকৌশলে যে করেই হোক তাদের ক্ষমতায় আসতেই হবে। অন্যদল ছাড়াই সংসদে সবরকম বিল পাস করিয়ে নিতে পারে এত পরিমাণ আসন নিজেদের দখলে রেখে বাকিগুলো বিরোধীদলের জন্য ছেড়ে দিতে পারে। ২০০৮ সালে যা হয়েছে। পক্ষান্তরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ২০০১ সালে যে কয় আসন পেয়েছিল ২০১৩ সালের নির্বাচনে তার অর্ধেক আসন পেতে পারে বলে অভিজ্ঞমহলের ধারণা।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলে থাকেন নির্বাচন কমিশনকে যদি স্ট্রং করা যায় তাহলে নির্বাচন নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু হবে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন যত শক্তিশালীই হোক না কেন সরকারের নির্দেশের বাইরে তার কিছু করার থাকবে না। এখন যেমন দুদক, হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্ট সরকারের মর্জির বাইরে একপাও নড়তে পারছে না।
আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনে বিরোধীদলকে জিততেই দেবে তাহলে বিরোধীদলের সকল মানবিক, সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার পদদলিত করত না। নিজেদের দাবি-দাওয়া আদায়, সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদে জনসভা, মিছিল-মিটিং করা এবং হরতাল ডাকা এসবই গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার। অথচ সরকার বিরোধীদলকে একেবারেই ময়দানে নামতে দিচ্ছে না। এমনকি মানববন্ধনের মতো নিরীহ ও দুর্বল প্রতিবাদও করতে পারছে না। কোথাও মানববন্ধনের ব্যবস্থা করলে পুলিশ, র্যাব জলকামান, কাঁদুনে গ্যাস, লাঠি ইত্যাদি নিয়ে আক্রমণ করছে। মিছিলকারীদের বেধড়ক পিটাচ্ছে, ধরে নিয়ে মিথ্যা মামলায় রিমান্ডে দিচ্ছে। পুলিশের সাথে দলের ক্যাডার বাহিনী হাসুয়া, রামদা, পিস্তল ইত্যাদি নিয়ে মিছিলকারীদের ওপর চড়াও হচ্ছে। কখনো পুলিশ এবং ক্যাডাররা মিলে গুলী করে বিরোধীদলের কর্মীদের হত্যা করছে। দীর্ঘদিন যাবত বিরোধীদলকে তাদের অফিসে বসতে দিচ্ছে না। অনেক স্থানে বিরোধীদলের অফিসে ভাংচুর, লুট ও অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে।
পুলিশ বাহিনী বিরোধীদলীয় জাতীয় নেতাদের ওপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ করছে। বিরোধীদলের সম্মানিত চীফহুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছিল। আরেক পুলিশ কর্মকর্তাকে দেখা গেল, মিছিলে যোগদানকারী এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মাটিতে ফেলে তার বুকের ওপর বুট পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। বাসায় বাসায় ঢুকে বিরোধীদলের পুরুষ এবং মহিলা কর্মীদের বিনা অপরাধে ধরে নিয়ে রিমান্ডে দিচ্ছে, জেলখানায় পাঠাচ্ছে।
ইউনিভার্সিটি এবং মেডিকেল কলেজের নির্বাচনে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা অন্যমতের লোকদের পিটিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছিল। তাদের আক্রমণে আক্রান্ত হয়ে অনেক সম্মানিত শিক্ষকদের মাসের পর মাস হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আওয়ামী ক্যাডাররা বিরোধীমতের ভোটারদের জোরপূর্বক বের করে দিয়ে ব্যালট পেপার ছিঁড়ে নিজেদের প্রার্থীর বাক্স ভরে দিয়ে বিপুলভোটে বিজয়ী করে দিয়েছে। এটাই কি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নমুনা?
আসলে রাজনীতিকে মিথ্যা ও ধোঁকা-ফাঁকির বিষয় মনে করেন তারা। তাদের জীবনটাকেই মিথ্যা উৎপাদনের কারখানায় পরিণত করে নিয়েছেন। তাই তারা রাতদিন মিথ্যা বলেন এবং মিথ্যার ওপরেই চলেন। যারা বেশি বেশি মিথ্যা বলেন, আল্লাহর দফতরে তাদের নাম মিথ্যাবাদীদের তালিকায় লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। তখন তাদের মুখ দিয়ে সত্য বের হয় না। তারা কোন সত্যকে প্রকাশ করতে চাইলেও মিথ্যার আবরণে প্রকাশ করে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায়- রামুতে যে সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটল, কারা ঘটিয়েছে, কিভাবে ঘটিয়েছে তা টিভি ফুটেজে এবং ভিডিওতে স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে। স্থানীয় জনগণ, ভুক্তভোগী হিন্দু ও বৌদ্ধগণ তা চাক্ষুষভাবে দেখেছেন এবং সাংবাদিকদের নিকট তা খোলাখুলিভাবে বলেও দিয়েছেন যে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বেই এই জঘন্য ঘটনা ঘটেছে। তা সত্ত্বেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সত্য জেনেও তা প্রকাশ করলেন জঘন্য মিথ্যার আবরণে। তারা বললেন, জামায়াত-শিবির ও বিএনপির লোকেরাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংস ও অশান্তি সৃষ্টির জন্যই এ কাজ করেছে। গার্মেন্টসে আগুন ধরে ১২৬ জন মানুষ জীবন্ত পুড়ে মরল, যারা বেঁচে আছে তারা বলছে কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালী ও দুরভিসন্ধির কারণেই এতগুলো জীবন শেষ হলো এবং গার্মেন্টসের সম্পদ নষ্ট হলো। অনেকের ধারণা, এ সরকার গার্মেন্টসের উন্নয়ন সহ্য করতে পারে না তাই এ ঘটনায় সরকারেরও ইন্ধন থাকা অস্বাভাবিক নয়। অথচ সরকার চোখ-মুখ বন্ধ করে বলে ফেলল এখানে জামায়াত-শিবিরের সম্পৃক্ততা আছে।
মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্দেশের অংশ হিসেবে রাজপথে বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে হত্যা করল ছাত্রলীগের হিরের টুকরো ছেলেরা, অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বললেন, জামায়াত-শিবিরই বিশ্বজিৎকে হত্যা করেছে। কিন্তু টিভি ফুটেজে ভিডিওতে হত্যাকারীদের ছবি ধরা পড়েছে। পত্র-পত্রিকায় তার সচিত্র ছবি ছাপা হয়েছে। ফলে সরকার পক্ষ মুখ বন্ধ রাখলেও খুনীদের বাঁচাবার কোশেশ চালিয়েই যাচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী। একদিন সত্যের জয় হবেই।
আইনের শাসন কায়েম জনগণের জানমাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা বিধান, দেশের শান্তি-শৃক্মখলা রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। তাই সরকারের এমন কোন হঠকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নামা উচিত নয় যা দেশবাসীর জান-মাল-ইজ্জতকে বিপন্ন করে, মানবতা মনুষত্ব নিগৃহীত হয়।
শান্তি রক্ষায় দরকার
তত্ত্বাবধায়ক সরকার
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন