সোমবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১২

মানবাধিকার ও আইনের শাসনের পরিপন্থী


বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর এখন নানা ধরনের দমন-পীড়ন চলছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রতিদিন এ গ্রেফতার অভিযান চলছে। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এখন প্রধান কাজ হচ্ছে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা। কিন্তু এই গ্রেফতারের সাথে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর নানা ধরনের নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গ্রেফতারের পর পুলিশি হেফাজতে তাদের ওপর এক দফা চালানো হচ্ছে নির্যাতন। এরপর কারাগারে তাদের ওপর নিপীড়ন ও অমানবিকভাবে রাখা হচ্ছে বলে সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হচ্ছে।

সারা দেশে ৬৮টি কারাগারের ধারণক্ষমতা যেখানে ২৭ হাজার, সেখানে লক্ষাধিক ব্যক্তিকে রাখা হয়েছে যাদের বেশির ভাগই রাজনৈতিক নেতাকর্মী। অর্থাৎ একজন বন্দীর স্থানে রাখা হচ্ছে অন্তত পাঁচজন বন্দীকে। ফলে কারাগারে তাদের চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে হচ্ছে। কারাগারে শৃঙ্খলা রক্ষা করা এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। ঠিকমতো খাওয়া বা থাকার ব্যবস্থা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। শৈত্যপ্রবাহের এই সময়েও কারাবন্দীদের কম্বল বা গরম কাপড় দেয়া সম্ভব না হওয়ায় তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এর চেয়েও ভয়ঙ্কর দিক হচ্ছেÑ খুনি ও ফাঁসির আসামিদের কক্ষে রাখা হচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের। সেখানে তারা একধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। কাশিমপুর কারাগারে হাই সিকিউরিটি সেলের এসব কক্ষে সাধারণ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে।
অতীতেও বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু বর্তমানের মতো এমন হাজার হাজার নেতাকর্মীর গণগ্রেফতারের ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। গ্রেফতারের পর নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনাও ঘটেনি। এভাবে নির্যাতন, নিপীড়ন ও গ্রেফতারের ঘটনা মানবাধিকার ও আইনের শাসনের পরিপন্থী। শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচিকে সামনে রেখে বেশির ভাগ গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। যাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন ও দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এ ধরনের রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা ও গ্রেফতার থেকে বিরোধী দলের প্রথম সারির নেতারাও বাদ যাচ্ছেন না। আবার গ্রেফতারকৃতদের অনেকেই ছাত্র। রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতারে তাদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হচ্ছে।
আমরা মনে করি, এভাবে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও নির্যাতন করে আন্দোলন দমন করা যায় না। বরং বিরোধী নেতাকর্মীদের ক্ষোভ ও সরকারের ওপর হতাশা বাড়তে থাকে। বিরোধী নেতাদের কারাগারে রেখে নির্যাতন ও নিপীড়নের মাধ্যমে দেশকে আরো অস্থির করে তোলা হচ্ছে। দুনিয়াজুড়ে সরকারের ভাবমর্যাদা দারুণভাবে ুণœ হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, এখন কোনো কিছুই গোপন রাখা যায় না। এ ধরনের নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডের ফলে সরকার দেশে ও বিদেশে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত গ্রেফতার ও নির্যাতনের পথ বন্ধ করে বিরোধী দলগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনা করে রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন করা। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও হয়রানি বন্ধ করে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার দিকে মনোযোগী হওয়া।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads