রবিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১২

একজন বিশ্বজিত্ অবরুদ্ধ মাহমুদুর রহমান এবং গণতন্ত্র হত্যার হরতাল



এক.
আবারও ছাত্রলীগের হাত রক্তাক্ত হলো। রক্তাক্ত হলো মানবতা। দিন-দুপুরে বিশ্বজিতের ওপর বর্বর হায়েনার আক্রমণ নিজ চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না রোষের আগুন কত মারাত্মক হতে পারে। নিরীহ পথচারী বিশ্বজিতের বাঁচার আকুতি ওদের কারও মনে দাগ কাটতে পারেনি। তরতাজা একটি যুবককে ওরা রড আর চাপাতি দিয়ে চরম পৈশাচিক কায়দায় মেরে ফেলেছে। পুরো ঘটনা ঘটেছে অসংখ্য মিডিয়াকর্মী, সাধারণ মানুষ আর আইন রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশের সামনে। বিশ্বজিত্ বাঁচতে চেয়েছিল। বাঁচার আশায় দৌড় দিয়েও রক্ষা হয়নি তার। পথচারী আর রিকশাচালকরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ডাক্তাররাও নাকি বিশ্বজিেক শিবিরকর্মী ভেবে চিকিত্সা দিতে চায়নি! মানবতা সেখানেও হার মানল। বিজয়ের মাসে ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের প্রাক্কালে আমাদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে চলে গেছে সে। ‘আমি হিন্দু’ এই কথা বলেও বাঁচতে পারল না বিশ্বজিত্।
দুই.
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্ররা এমন পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডে মেতে উঠতে পারে ভাবতেও অবাক লাগে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্বজিত্ হত্যাকাণ্ডের দায়ভার নেবে কে? প্রথমত, বিশ্বজিত্ খুনের দায়ভার সরকার হিসেবে বর্তমান সরকারকে নিতে হবে। বিশ্বজিত্ খুনের সময় বহু সংখ্যক পুলিশ সদস্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘটনা অবলোকন করেছে; কিন্তু তারা বিশ্বজিেক বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করেনি। এর মধ্য দিয়ে তারা রাষ্ট্রের প্রতি তাদের দায়কে এড়িয়ে গেছেন। শপথ ভঙ্গ করেছেন তারা। যে চিকিত্সক শিবিরকর্মী ভেবে বিশ্বজিেক চিকিত্সা দেয়নি সেও কম বর্বর নয়। দ্বিতীয়ত, এই হত্যাকাণ্ডের দায়ভার পুরোটাই আওয়ামী লীগের ঘারে বর্তায়। হরতালের আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় ছাত্রলীগ-যুবলীগকে জামায়াত-শিবির লাঠি দিয়ে পিটিয়ে দেশছাড়া করার হুকুম দিয়েছেন। দেশে পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী আছে। আইন প্রশাসন থাকতে জামায়াত-শিবিরকে উত্খাতে ছাত্রলীগ-যুবলীগ মাঠে নামবে কেন? তাছাড়া জামায়াত-শিবির এদেশের কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন নয় যে, তাদের উত্খাত করতে হবে। কেউ জামায়াত-শিবিরকে রাজনৈতিক কারণে অপছন্দ করতে পারে, তাই বলে তাদের উত্খাত করার ঘোষণা দিতে পারে না।
তিন.
মাহমুদুর রহমান। কেউ বলেন চান্সড এডিটর! আমরা বলি, সময়ের সাহসী সন্তান। স্বাধীনতা রক্ষায় অকুতোভয় সৈনিক। গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী। বলিষ্ঠ সাংবাদিকতার ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন যিনি। পুরোদস্তুর ইঞ্জিনিয়ার হয়েও জাতির প্রয়োজনে কলম ধরেছেন তিনি। সাংবাদিকতা যখন দল-গোষ্ঠীর বৃত্তে প্রবেশ করেছে ঠিক তখন সত্য সাংবাদিকতার প্রত্যয়ে এগিয়ে এলেন তিনি। সত্য বলার দায়ে এরই মধ্যে প্রায় এক বছর জেল খেটেছেন। এখনও অর্ধশতাধিক মামলার ঘানি টানছেন তিনি। এমন একজন অকুতোভয় সৈনিককে অবরুদ্ধ করে রেখেছে সরকার। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে। বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপি সংলাপ আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশ করাই তার প্রধান অপরাধ। রিপোর্টটি প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশ-বিদেশের কোটি কোটি মানুষের শুভেচ্ছায় ধন্য হয়েছে আমার দেশ পত্রিকা। স্কাইপি সংলাপের প্রথম খবরটি পাওয়ার জন্য মানুষ ৫০০ টাকা দিয়েও আমার দেশ কিনেছে। একটি খবরের জন্য মানুষ যখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষারত থাকে তখন ওই খবরকে তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া বড় কৃতিত্বের কাজ। মাহমুদুর রহমান জামায়াত করেন না। তারপরও তিনি কেন মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কেলেঙ্কারি ফাঁস করতে গেলেন? কারণ তিনি মানবতা এবং ন্যায়বিচারের পক্ষে। তাই তিনি সব রকম ঝুঁকি নিয়েই এগিয়ে এলেন। মাহমুদুর রহমান এখন পত্রিকা অফিসে জামা-কাপড় আর সুটকেস নিয়ে গ্রেফতার হওয়ার অপেক্ষা করছেন। তাবত্ বাংলাদেশ তো বটেই, গোটা পৃথিবীর সত্যপন্থী মানুষের চোখের মণি এখন মাহমুদুর রহমান। আল্লাহ তার কল্যাণ করুন।
চার.
গণতন্ত্র মানে সব মানুষের কথা বলার অধিকার। গণতন্ত্র মানে সব দলের রাজনীতি করার অধিকার। হোক সেটি ধর্মহীন রাজনীতি কিংবা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি। ভারতসহ পশ্চিমা বিশ্বের অনেক সেক্যুলার দেশেই সেক্যুলার রাজনীতির পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চালু আছে। আমাদের দেশেও সবার রাজনীতি করার অধিকার সংবিধান স্বীকৃত। কিন্তু বিজয়ের এই মাসে আমরা দেখলাম গণতান্ত্রিক সেই অধিকারকে হত্যা করার জন্য বামজোট হরতাল করেছে। গণতান্ত্রিক অধিকার হরতাল ব্যবহার করা হয়েছে আরেক গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়ার জন্য। আরও বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এই হরতালে পুলিশ ছিল পিকিটিংয়ের প্রধান দায়িত্বে। সত্যিই আজব! 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads