বিরোধী জোটের ডাকে রোববার ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দেশব্যাপী যেভাবে সর্বাত্মক অবরোধ পালিত হলো সেটাকে এককথায় অভাবিতপূর্ব বলা যায়। একই সঙ্গে ওইদিন ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডার নামধারী গুণ্ডারা খুনের নেশায় উন্মত্ত হয়ে যেভাবে প্রকাশ্যে রক্তাক্ত তাণ্ডব চালিয়ে অন্তত দু’জনকে খুন করেছে, সেটাকেও অভাবিতপূর্ব না বললে রোববারের অবরোধ চলাকালীন বাস্তবতার খণ্ডিত অংশই শুধু প্রকাশ পাবে। যারা স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আশির দশকে ঢাকায় রাজপথ কাঁপানো আন্দোলনের প্রত্যক্ষ স্মৃতি ধারণ করে আছেন তাদেরও অভিমত হচ্ছে এমন নিশ্ছিদ্র অবরোধ স্বাধীন বাংলার মাটিতে এর আগে আর কখনও দেখা যায়নি। পিকেটারদের পাশাপাশি ওইদিন অবরোধ প্রতিহত করার নির্দেশ পেয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররাও রাস্তায় নেমেছিল। তাদের দফায় দফায় হামলায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে, রক্ত ঝরেছে; কিন্তু অবরোধ ‘প্রতিহত’ করা যায়নি।
অবরোধ চলাকালে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা সিরাজগঞ্জে জামায়েত নেতা ওয়ারেস আলীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। রাজধানী ঢাকার পুরনো এলাকায় বাহাদুরশাহ পার্কের কাছে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ চাপাতির কোপে প্রাণ গেছে দর্জি দোকানের কর্মী বিশ্বজিত্ দাসের। বেচারা বিশ্বজিত্ লক্ষ্মীবাজারের বাসা থেকে শাঁখারী বাজারে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিল। হঠাত্ করে ছাত্রলীগের জঙ্গি মিছিলের সামনে পড়ে গিয়ে সে প্রাণ বাঁচানোর জন্য দৌড়ে পাশের পদ্মা বিপণি বিতানের দোতলায় আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু ‘স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি’ ‘বঙ্গবন্ধুর সৈনিক’দের হাত থেকে তার রেহাই মিলেনি। তারা বিশ্বজিতকে ধরে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপাতে কোপাতে রাস্তায় নিয়ে আসে এবং একপর্যায়ে মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে রেখে বিজয়োল্লাস করতে করতে চলে যায়। শত শত মানুষ এই লোমহর্ষক দৃশ্য দেখেছে। উপস্থিত ‘ভিআইপি দর্শক’দের মধ্যে ছিলেন বিরোধীদলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিনের বস্ত্রহরণকারী কৃতবিদ্য পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার হারুন। তিনি তখন ওই এলাকায় শান্তি ‘রক্ষা’ করছিলেন। একজন দয়াপরবশ রিকশাচালক মুমূর্ষু বিশ্বজিতকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। সরকারি হাসপাতালগুলোতে এখন স্বাচিপ রাজত্ব চলছে। এ রাজত্বে রাজনীতি মুখ্য, চিকিত্সা সেবা গৌণ। অভিযোগ উঠেছে, মৃত্যুর আগে বিশ্বজিত্ কোনো চিকিত্সাই পায়নি।
হরতাল অবরোধকালে মৃত্যুর ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। ২০০৬ সালে লগি-বৈঠার তাণ্ডব রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যে দগদগে ঘায়ের সৃষ্টি করেছিল সেই বিকৃতি যে এখনও আমাদের পিছু ছাড়েনি, ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর আওয়ামী তাণ্ডব আবার তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। এ ঘটনা আরও প্রমাণ করল যে, মানুষ খুন করার ব্যাপারেও আওয়ামী রাজনীতির ধব্জাধারীরা অতীতের ফসল লুণ্ঠনকারী বর্গী দস্যুদের মতোই আন্তরিকভাবে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’। কিন্তু খোকা পাঁচপাত্তুর নেতৃত্বে মোনায়েম খানের বরকন্দাজরা যে আইয়ুব শাহীর পতন ঠেকাতে পারেনি সেই ইতিহাস সবার না হলেও অনেকের মনে থাকার কথা। দেশ শাসন করতে গিয়ে একই ধারা অনুসরণ করলে পরিণতিও কি একই হওয়ার কথা নয়? সেদিন যেন বাংলার মাটিতে রাজনীতির নামে বুক কাঁপানো নৃশংসতার স্থায়ী অবসান হয়, আমরা সেই আশায় রইলাম
।
অবরোধ চলাকালে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা সিরাজগঞ্জে জামায়েত নেতা ওয়ারেস আলীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। রাজধানী ঢাকার পুরনো এলাকায় বাহাদুরশাহ পার্কের কাছে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ চাপাতির কোপে প্রাণ গেছে দর্জি দোকানের কর্মী বিশ্বজিত্ দাসের। বেচারা বিশ্বজিত্ লক্ষ্মীবাজারের বাসা থেকে শাঁখারী বাজারে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিল। হঠাত্ করে ছাত্রলীগের জঙ্গি মিছিলের সামনে পড়ে গিয়ে সে প্রাণ বাঁচানোর জন্য দৌড়ে পাশের পদ্মা বিপণি বিতানের দোতলায় আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু ‘স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি’ ‘বঙ্গবন্ধুর সৈনিক’দের হাত থেকে তার রেহাই মিলেনি। তারা বিশ্বজিতকে ধরে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপাতে কোপাতে রাস্তায় নিয়ে আসে এবং একপর্যায়ে মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে রেখে বিজয়োল্লাস করতে করতে চলে যায়। শত শত মানুষ এই লোমহর্ষক দৃশ্য দেখেছে। উপস্থিত ‘ভিআইপি দর্শক’দের মধ্যে ছিলেন বিরোধীদলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিনের বস্ত্রহরণকারী কৃতবিদ্য পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার হারুন। তিনি তখন ওই এলাকায় শান্তি ‘রক্ষা’ করছিলেন। একজন দয়াপরবশ রিকশাচালক মুমূর্ষু বিশ্বজিতকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। সরকারি হাসপাতালগুলোতে এখন স্বাচিপ রাজত্ব চলছে। এ রাজত্বে রাজনীতি মুখ্য, চিকিত্সা সেবা গৌণ। অভিযোগ উঠেছে, মৃত্যুর আগে বিশ্বজিত্ কোনো চিকিত্সাই পায়নি।
হরতাল অবরোধকালে মৃত্যুর ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। ২০০৬ সালে লগি-বৈঠার তাণ্ডব রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যে দগদগে ঘায়ের সৃষ্টি করেছিল সেই বিকৃতি যে এখনও আমাদের পিছু ছাড়েনি, ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর আওয়ামী তাণ্ডব আবার তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। এ ঘটনা আরও প্রমাণ করল যে, মানুষ খুন করার ব্যাপারেও আওয়ামী রাজনীতির ধব্জাধারীরা অতীতের ফসল লুণ্ঠনকারী বর্গী দস্যুদের মতোই আন্তরিকভাবে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’। কিন্তু খোকা পাঁচপাত্তুর নেতৃত্বে মোনায়েম খানের বরকন্দাজরা যে আইয়ুব শাহীর পতন ঠেকাতে পারেনি সেই ইতিহাস সবার না হলেও অনেকের মনে থাকার কথা। দেশ শাসন করতে গিয়ে একই ধারা অনুসরণ করলে পরিণতিও কি একই হওয়ার কথা নয়? সেদিন যেন বাংলার মাটিতে রাজনীতির নামে বুক কাঁপানো নৃশংসতার স্থায়ী অবসান হয়, আমরা সেই আশায় রইলাম
।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন