অবশেষে নানাবিধ বিতর্কের মুখে পদত্যাগ করেছেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম। শুরু থেকেই এ বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। ডিফেন্স আগে থেকেই ট্রাইব্যুনালের গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। যাদের বিচারের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তারা সবসময়ই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে নানাবিধ বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে। যদিও বিচারিক বিষয় নিয়ে এমন আচরণ মোটেই কাম্য নয় কিন্তু আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার সকল পক্ষেরই রয়েছে এবং আত্মরক্ষার অধিকার সকল আইনেই স্বীকৃত। তাই ন্যায় বিচারের স্বার্থে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষের এমন নেতিবাচক আচরণকে ইতিবাচক হিসাবেই দেখতে হবে এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার বিচারের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের সকল সন্দেহ-সংশয়-অবিশ্বাস অসার প্রমাণ করেই বিচার প্রক্রিয়াকে সম্পন্ন করতে হবে। যাতে তা ক্ষতিগ্রস্তের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলেও অন্তত দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। কিন্তু প্রতিপক্ষের অভিযোগের যদি কোন দালিলিক প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে বিচারকে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ করার জন্য যা যা করা দরকার তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সরকারকেই গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশে চলমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া যে চরম বিতর্কিত ও সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যই করছে তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। এ কথা সর্বজনবিদিত যে, চিহ্নিত ১৯৫ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল এক্টস্-১৯৭৩ প্রণীত হয়েছিল। যাদের বিচারের জন্য এ আইন প্রণীত হয়েছিল তারা সকলেই ছিল পাক সেনা সদস্য। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারই তাদেরকে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছে। মূল অপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে তারা এখন সে আইনে কথিত দালালদের বিচারের আওতায় এনেছে। মূলত কথিত দালালদের বিচারের জন্য আলাদা দালাল আইন ১৯৭৩ সালেই প্রণীত হয়েছিল। সে আইনও পরবর্তীতে বাতিল করা হয়েছে। তাই কথিত এই বিচার প্রক্রিয়ার কোন গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত বলার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।
প্রশ্ন আছে অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গঠন প্রক্রিয়া নিয়েও। বিবাদী পক্ষ বরাবরই অভিযোগ করে আসছিল যে, কথিত এই বিচার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য করা হচ্ছে। যেহেতু বিবাদী পক্ষ বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে এমন গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেছে তাই ট্রাইব্যুনালের গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে অতিমাত্রায় সতর্ক হওয়া উচিত ছিল এবং একটি সর্বজনগ্রাহ্য সার্চ কমিটির মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা উচিত ছিল। যাতে প্রতিপক্ষের সকল অভিযোগ অসার প্রমাণ করা যায়। কিন্তু সরকার তাদের মর্জি মত এবং পূর্বেই বিতর্কিত লোক দিয়ে অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাজিয়ে প্রতিপক্ষের জালানো আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে।
প্রথমেই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয় একজন চরম বিতর্কিত ব্যক্তি বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমকে। তিনি যে তথাকথিত গণআদালতের সেক্রেটারিয়েট সদস্য ছিলেন তা কারোরই অজানা নয়। আর কথিত গণআদালতের কোন আইনগত বা সাংবিধানিক ভিত্তি ছিল না। এমন একটি অসাংবিধানিক, বেআইনী ও রাষ্ট্রদ্রোহীমূলক কাজের সাথে যিনি জড়িত সরকার তাকেই কথিত অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে শুরুতেই বিতর্ককে উস্কে দিয়েছে। এমন কী বিষয়টি নিয়ে ট্রাইব্যুনালে প্রশ্ন তোলা হলে বিচারপতি নাসিম তা স্বীকার করে বলেছিলেন, ‘আমি গণআদালতের সেক্রেটারিয়েটে সদস্য থাকলেও নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করিনি। তাই আমি এ বিচার কাজে অংশ নিতে পারব'। বিচারপতি নাসিমের দাবি কতখানি যৌক্তিক তা ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব আইনজ্ঞদের। তবে যিনি আগেই নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করলেন তাকে কোন বিবেচনায় এমন একটি স্পর্শকাতর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হলো? যেহেতু সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যপারে জাতির কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তাই তাদের উচিত ছিল একটি উপযুক্ত সার্চ কমিটির মাধ্যমে যোগ্য ও দল নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে বিচার সম্পন্ন করে রায় অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। স্বচ্ছ বিচারের মাধ্যমে যে রায় হবে তা সরকার পক্ষ থেকে মেনে নেয়া। যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের দেশের মানুষের কাছে কৃত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা সম্ভব হতো। কিন্তু হালে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, সরকার যেনতেনভাবে বিচার কার্য সমাপন করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে চায় এবং বিশেষ দলের নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলানোর মিশন সম্পন্ন করতে চায়। সরকারের মন্ত্রী-এমপি'রা যেভাবে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে এসেছেন তাতে এ বিচার প্রক্রিয়াকে পাতানো, সাজানো ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ ছাড়া অন্যকিছু বলার উপায় নেই। কোন অপরাধীর কোন দিন বিচার শুরু হবে, কোন দিন শেষ হবে, বিচারের রায় কী হবে, কোন দিন কার্যকর হবে- তা সরকারি দলের নেতারাই উচ্চস্বরে বলে এসেছেন। এতে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, সরকারের নির্ধারিত ছকেই সবকিছু হচ্ছে এবং তারা কথিত বিচারের নামে জাতীয় নেতৃবৃন্দকে ফাঁসিই দিতে চায়। তা না হলে আদালতে কী রায় হবে তা প্রকাশের আগেই তারা কীভাবে রায় কার্যকরের দিন-ক্ষণ ঠিক করে ? এ প্রসংগে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও দফতরবিহীন মন্ত্রী বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মন্তব্য স্মরণযোগ্য। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের এক আলোচনা সভায় বলেছিলেন, ‘কবে কার বিচার শুরু হচ্ছে, কবে কারটা শেষ হচ্ছে, রায়ই বা কী হবে- মন্ত্রীরা যদি এসব মন্তব্য করেন তাহলে আর বিচারকে নিরপেক্ষ বলার সুযোগ থাকে না'। অবশ্য তিনি রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর কথিত বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক ঘটন-অঘটন ঘটলে আর কোন কথা বলেননি বরং এতদবিষয়ে সরকারের ঢাকই বাজিয়ে যাচ্ছেন। অবশ্য আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম বাবু সেনগুপ্তের মন্তব্যের বিরোধিতা করে বলেছেন, যেহেতু সরকার ট্রাইব্যুনালকে বিচার কাজে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। তাই এমন বলার নাকি তাদের অধিকার আছে। নিন্দুকেরা খামাখাই কী বলে.......উকিল !
কথিত বিচারের নামে সরকার যে প্রহসন করতে চায় তা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে পরিষ্কার। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এক আলোচনা সভায় বলেছিলেন, নিজামী-মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলানো হবে। প্রধানমন্ত্রী ও সরকারি দলের শীর্ষ নেতারা তো প্রায়শই বলে থাকেন যুদ্ধাপরাধীদের কেউ বাঁচাতে পারবে না। সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেছিলেন, দু'একটিকে ঝুলিয়ে দিলেই আইন কপচানো বন্ধ হবে। বিচারাধীন বিষয়ে সরকারি দলের শীর্ষ নেতাদের এমন বক্তব্য পুরো বিচার প্রক্রিয়াকেই বিতর্কিত করেছে। আদালত কাকে ঝুলিয়ে দেবে আর কাকে খালাস দেবে একথা বলার এখতিয়ার রায় ঘোষণার আগে আদালতেরও নেই। আর রায় যদি সরকারি দলের নেতারাই দিতে পারেন তাহলে তো আর আদালতের প্রয়োজন হয় না। তারা একটা রায় দিয়ে কার্যকর করলেই পারেন। এতো নাটক-প্রহসনের দরকার কী? মূলত চলমান বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারি দলের নেতাদের লাগামহীন মন্তব্যের কারণেই বিবাদী পক্ষ বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার মোক্ষম সুযোগ পেয়েছেন। এ ব্যাপারে সদ্য পদত্যাগী বিচারপতি বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমও কম যাননি। তিনি প্রকাশ্য আদালতে ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা জাস্টিস করবো না'। বিচারপতির ন্যায় বিচার না করার অঙ্গীকার অবিচার করার দিকেই ইঙ্গিতবহ। বিচারকের আসনে বসে অবিচার করার প্রত্যয় ঘোষণা আমাদের বিচার ব্যবস্থাকে কোন গন্তব্যে নিয়ে যাবে তা বুঝতে খুব একটা পান্ডিত্য অর্জনের দরকার আছে বলে মনে হয় না। এছাড়াও তিনি প্রসিকিউশনের আবেদন মোতাবেক আদালতে উপস্থিত না হওয়ার পরও ১৫ জন সাক্ষীর প্রসিকিউশনের কাছে প্রদত্ত জবানবন্দীকে আদালত সাক্ষী হিসাবে গ্রহণ করছেন। পরবর্তীতে সেইফ হাউস কেলেঙ্কারির মাধ্যমে প্রসিকিউশনের মিথ্যাচার প্রমাণ হলেও আদালত তা আমলে নেয়নি। ট্রাইব্যুনালের উপাখ্যান এখানেই শেষ হয়নি। প্রসিকিউশনের সাক্ষী গণেশ চন্দ্র দাস ডিফেন্স পক্ষে সাক্ষী দেয়ার পর প্রসিকিউশনের বিশ্বাস ভংগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে দাখিলকৃত সকল তথ্য, উপাত্ত, অভিযোগপত্র ও তদন্ত প্রতিবেদনের আর কোন গ্রহণযোগ্যতা থাকেনা। তাই প্রসিকিউশন উত্থাপিত সকল কিছুই বাতিলযোগ্য। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে এই প্রসিকিউশনও পুনর্গঠনের দাবি রাখে। কিন্তু সরকার তা না করে বিশেষ উদ্দেশ্যে বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে মারাত্মক বিতর্কের সৃষ্টি হয় প্রসিকিউশনের অপর সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী ডিফেন্স পক্ষে সাক্ষী দিতে এসে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে অপহরণ হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে সাক্ষী অপহরণের ঘটনা নজিরবিহীন। যা আমাদের বিচার ব্যবস্থায় ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি। মাওলানা প্রসিকিউশনের সাক্ষী মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে এসে দেলোয়ার শিকদারের পিতার নাম উল্লেখ করলেও তা ডিফেন্স পক্ষের পক্ষে যাওয়ায় তা তিনি গ্রহণ করতে রাজি হননি। এমন একজন নৈতিক মানহীন লোক দিয়ে ট্রাইব্যুনালের মত অতিগুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা তো দূরের কথা বরং কোন গ্রাম্য সালিশ করারও তিনি যোগ্য বলে মনে হয় না।
আজকের নিবন্ধে বিচারপতি নাসিমের স্কাইপি কথোপকথন নিয়ে কিছু আলোচনা করার ইচ্ছা থাকলেও আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে তা আর সম্ভব হয়ে উঠলো না। কিন্তু বিচারপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে সরকার পূর্বেই যে বৃত্তে আটকা পড়েছিল তারা এখনো সে বৃত্তেই আটকে আছে বলেই মনে হচ্ছে। তারা বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে এখনো বেফাঁস মন্তব্য অব্যাহত রেখেছে। এর আগে আইনমন্ত্রী বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে মন্ত্রীদের বক্তব্যকে জনআকাঙ্ক্ষা হিসাবে উল্লেখ করে বলেছিলেন, এতে বিচার প্রক্রিয়ায় কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। আর মন্ত্রীর এ বক্তব্যের পরই স্কাইপি কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়। এরপর সরকারি দলের নেতারা যুদ্ধাপরাধ বিচার বিষয়ে সতর্ক মন্তব্য করলেও ১৬ ডিসেম্বর থেকে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ সেদিন সাংবাদিকদের বলেছেন, আগামী বছর ১৬ ডিসেম্বরের আগেই যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় সম্পন্ন হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আরও একটু আগ বাড়িয়ে বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের আগেই বিচারের রায় হবে এবং তা কার্যকরও করা হবে। সরকারের অন্যতম শরীক ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন বলেছেন, আগামী মার্চের মধ্যেই বিচারের রায় সম্পন্ন হবে। সরকারের মন্ত্রী এমপি'দের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে এমন বেফাঁস মন্তব্যই বিচার প্রক্রিয়াকে দেশে-বিদেশে মারাত্মকভাবে বিতর্কিত করছে। সরকার যদি বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত না চায় এবং আদালতের সাথে তাদের কোন প্রকার সখ্যতা না থাকে তাহলে রায়ের দিন তারিখ তারা কিভাবে বলতে পারেন ? এতে সরকারই শুধু বিতর্কিত হচ্ছে না বরং পুরো বিচার প্রক্রিয়াকেই মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। তারা নিজেরাই একের পর এক বিতর্ক সৃষ্টি করছেন আর এর দায়ভার চাপানো হচ্ছে কথিত বিচার বাঞ্চালের ষড়যন্ত্রকারীদের উপর। যা জনমনে রীতিমত হাস্যরসের সৃষ্টি করছে।
এবার আসা যাক বিতর্কিত প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুমের কথায়। তিনি ট্রাইব্যুনালকে সরকারের পক্ষে আইনী সহায়তা দানের দায়িত্বে নিয়োজিত। কিন্তু তিনিই যদি অসাংবিধানিক ও আইনবিরোধী কথা বলেন তাহলে তো তার পক্ষে এমন মর্যাদাকর দায়িত্বে নিয়েজিত থাকার কোন অধিকার থাকে না। তিনি বিজয় দিবসে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘অপরাধীরা ১৯৭১ সালে মানবাধিকার ও আইন মান্য করে অপরাধ করেনি তাই তাদের জন্য মানবাধিকার ও আইন প্রযোজ্য নয়'। কিন্তু একথা জানতে আইনজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন হয় না যে, কোন ব্যক্তি যখন আইন, সংবিধান ও মানবাধিকার ভংগ করে তখনই সে অপরাধ করেছে বলে বিবেচিত হয় এবং অপরাধের প্রতিবিধান করতে হয় মানবাধিকার সংরক্ষণ করে আইন ও সংবিধান মেনে। প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুমের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার সরকার ও প্রসিকিউশন যোগসাজশ করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গুরুদন্ড দিতে চায়।
কথিত বিচারের রায় চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বরের আগে কার্যকর করার কথা থাকলেও সরকার সে অবস্থান থেকে অনেকটাই পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে আগামী বছর ডিসেম্বরের কথা বলতে শুরু করেছেন। এতে মনে হয় সরকারই এ বিচার বিলম্বিত করার জন্য নিজেরাই পরিকল্পিতভাবে নানাবিধ বিতর্ক সৃষ্টি করছে। এ প্রসংগে জে এস ডি সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী আ স ম আব্দুর রবের মন্তব্য উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি বিজয় দিবসে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সরকার এই কথিত বিচারকে ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার বানিয়েছে। তারা আগামীতে বলবে সময় স্বল্পতার কারণে আমরা বিচার শেষ করে যেতে পারিনি। তাই বিচার শেষ করার জন্য আগামীতে আবারও আমাদের ক্ষমতায় পাঠান'।
যাহোক সরকার যে এ বিচার প্রক্রিয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে হস্তক্ষেপ করেছে এবং এখনও করছে একথা সর্বমহলে প্রমাণিত। গত কয়েক দিন আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ গুল রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠিতে অবিচার বন্ধ করার অনুরোধ করেছেন। এতে প্রমাণিত হয়েছে যে, বহির্বিশ্বে এ বিচার প্রক্রিয়া গ্রহণযোগ্য হয়নি। তাই এ সরকারের অধীনে যুদ্ধাপরাধের বিচার কখনোই নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে না। শুধু বিচারপতি নাসিমের পদত্যাগের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ফিরে আসবে না বরং স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার করতে হলে সরকারকে পদত্যাগ করে একটি দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে বিচার কাজ শেষ করতে হবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন