ডা. ও য়া জে দ এ খা ন
সুদীর্ঘ চার দশক পর এখন বাহাস-বিতর্ক চলছে দেশের স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি নিয়ে। রাষ্ট্র ও সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তি, একশ্রেণীর রাজনীতিক এমনকি কথিত বুদ্ধিজীবীরাও প্রতিনিয়ত সভা-সেমিনার, টিভি টক শো ও পত্রপত্রিকার লেখনীতে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তির প্রসঙ্গ টেনে জাতিকে বিভক্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। জাতীয় ঐক্য বিনষ্টের চেষ্টা করছেন নিতান্ত রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন হাতেগোনা কিছু ব্যক্তি ছাড়া ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে গোটা জাতি ছিল ঐক্যবদ্ধ। অর্থনৈতিক সমতা, আইনের শাসন, গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার, ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে তারা কেন্দ্রীভূত হয়েছিল একটি বিন্দুতে। পুরো জাতি একক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে প্রাণপণ যুদ্ধ করে চিরতরে বিতাড়িত করেছে পাক হানাদার বাহিনীকে। অর্জন করেছে স্বাধীনতা। আর যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করেছিল স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সময়ের ব্যবধানে তারাও মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে মূল স্রোতধারায়। যেমনটি ঘটেছে বিশ্বের স্বাধীনতা অর্জনকারী প্রতিটি দেশ ও জাতিগোষ্ঠীতে। স্বাধীনতার একচল্লিশ বছর পর ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, স্বার্থের সংঘাত, ধর্মীয় মূল্যবোধ, রাজনৈতিক আদর্শ ও মতপার্থক্যের কারণে অসংখ্য শ্রেণীগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটেছে। গড়ে উঠেছে অসংখ্য রাজনৈতিক দল ও মোর্চা। গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রে এটাই স্বাভাবিক। এতে দোষের কিছু নেই। ক্ষমতার রাজনীতিতে এসব রাজনৈতিক দলের মধ্যে এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রতিযোগিতা ও বিরোধিতা প্রকটভাবে বিদ্যমান। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অসম্মান বা অস্বীকার করে পুনরায় পাকিস্তান বানাতে চাচ্ছে এমন কোনো ধৃষ্টতার নজির নেই। নেই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন। স্বাধীনতাবিরোধী প্রকাশ্য বা গোপন কোনো তত্পরতাও চলছে না দেশে। তাহলে এখানে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তির প্রসঙ্গ আসে কীভাবে? যারা নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে দাবি করে রাজনীতির ময়দান গরম করতে চেষ্টারত তারা কি একবারও ভেবে দেখেছেন, তাদের দাবির পক্ষ-বিপক্ষের মধ্যে পাল্লা কোনদিকে বেশি ভারী? ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মনে করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে যতটুকু অবদান তার পুরোটাই তাদের। এদেশের মালিকানা এবং কর্তৃত্ব একমাত্র আওয়ামী লীগের। দেশ শাসন, শোষণ ও ভোগ-দখল করার একমাত্র এখতিয়ার আওয়ামী লীগের। এখানে অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর কোনো অধিকার নেই। আওয়ামী লীগ এবং তাদের সমর্থক একটি শ্রেণী হচ্ছে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। আর গোটা দেশের মানুষ তাদের চোখে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি। রাজাকার আলবদর। আর তাই যদি সত্যি হয় তাহলে বলতে হবে দেশের দুই-তৃতীয়াংশেরও অধিক মানুষ আজ স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তিতে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ভোট-ব্যাংকের দিকে তাকালেই বিষয়টি অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশেরও অধিক আসনে বিজয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ। এর আগের নির্বাচনে বিএনপিও দুই-তৃতীয়াংশের অধিক আসনে জয়লাভ করে। দেশের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশের সমর্থন রয়েছে এই দল দুটির ওপর। বিগত নির্বাচনগুলোতে জনরায়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোট-ব্যাংক প্রায় সমান সমান। মোট কথা, দুটি দলেরই স্থিত জনসমর্থন বরাবর ৪০ শতাংশের নিচে।
দেশের রাজনীতি ডান ও বাম ধারায় বিভক্ত। ডান রাজনীতির ধারায় রয়েছে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতসহ ইসলামী ও মধ্যপন্থী দলগুলো। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ, জাসদ ও কম্যুনিস্ট পার্টিসহ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সাইনবোর্ডসর্বস্ব কিছু দল বাম রাজনীতির ধারক-বাহক। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ দলীয় নীতি-আদর্শে বিশ্বাসী হলেও তারা নিজেদের বামপন্থী মনে করেন না। সে হিসাবে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশই বলতে হবে ডানপন্থী। বাংলাদেশের একচল্লিশ বছরের ইতিহাসে সিংহভাগ সময় ডানপন্থীদের শাসন এমনটিই প্রমাণ করে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি ছিল প্রায়ই শতভাগ। আজকের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির আত্মপ্রকাশই তখন ঘটেনি। চার দশক পরে তারা কী করে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি হয়? আর আজকে যাদের স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে তাদের একটি বড় অংশের জন্ম স্বাধীন বাংলাদেশে। সবকিছু মিলে বিষয়টি এমন দাঁড়ায় যে বিগত ৪১ বছরে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি পক্ষের শক্তির চেয়ে অনেক বেশি বড়। তাহলে কি আমরা ধরে নেব দিন যত অতিক্রান্ত হবে স্বাধীনতার বিপক্ষ ততই শক্তিশালী হতে থাকবে। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা তো তা নয়। বাংলাদেশের কোনো নাগরিকই এখন স্বাধীনতার বিপক্ষে নয়। তাছাড়া বিপক্ষে গিয়ে তো কোনো লাভ নেই। বাংলাদেশকে আর কখনোই যে পাকিস্তান বানানো যাবে না তা সবারই জানা।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন যারা পাকবাহিনীর পক্ষাবলম্বন করে মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হয়েছিল তাদের কথা ভিন্ন। এছাড়া রাজনৈতিক কারণে তারা তখন স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে এই ভেবে যে পাকিস্তান ভেঙে গেলে তা ভারতের অধীনে চলে যাবে। মুসলমানরা পুনরায় পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হবে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদের সে ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তারা যেমন মেনে নিয়েছে তেমনি তারা ভোগ করেছে সব নাগরিক অধিকার। পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্নকারী বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রেই মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধকালীন এক্টি শ্রেণী স্বাধীনতাবিরোধী শিবিরে সমবেত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় কংগ্রেসের অনেক নেতাকর্মী-সমর্থক ভারতের স্বাধীনতা চাননি। মুসলিম লীগের অনেক নেতাকর্মী চাননি পাকিস্তান হোক। কিন্তু ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন দুটি রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হলে স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার কারণে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সেসব নেতাকর্মীকে ভারত কিংবা পাকিস্তানে কখনোই স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি বলে চিহ্নিত করা হয়নি।
জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে আমেরিকায় মুক্তিযুদ্ধ চলে ১৭৭৫ থেকে ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত। টানা ৮ বছরের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্নভাবে প্রাণ হারায় ২৫ হাজার আমেরিকান। ইউরোপের বৃহত্ শক্তিগুলো এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। আমেরিকার মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় সমর্থন ছিল মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষের। এই যুদ্ধে ২০ শতাংশ আমেরিকান শত্রুপক্ষ ব্রিটিশদের পক্ষাবলম্বন করে। আর নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে ৪০ শতাংশ মানুষ। কিন্তু আমেরিকা স্বাধীনতা লাভের পর বিরোধিতাকারী হাতেগোনা কিছু মানুষ কানাডায় পালিয়ে যায়। বাকি সবাই পক্ষ-বিপক্ষ ভুলে অভিন্ন আমেরিকান জাতি হিসেবে দেশ গড়ায় আত্মনিয়োগ করে। শুধু কি তাই, ১৮৬১ সাল থেকে ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত আমেরিকার গৃহযুদ্ধে প্রায় ৭ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। গৃহযুদ্ধের বর্ণবৈষম্য, বিদ্বেষ ও ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ভেঙে পড়ে গোটা দেশের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো। গৃহযুদ্ধের অবসান শেষে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেন আমেরিকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন। সব বিভেদ বিভ্রান্তি ভুলে গিয়ে সবাইকে ক্ষমা করেন তিনি। নবউদ্যমে শুরু হয় আমেরিকার অগ্রযাত্রা যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। ভিয়েতনামে ১৯৬৫ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত এক দশকের যুদ্ধে আমেরিকার ৬০ সহস্রাধিক সৈন্য প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে ৩ লক্ষাধিক। তারপরও যুদ্ধের ২৫ বছর পর আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ভিয়েতনাম সফরে গিয়ে ২০০০ সালের ১৭ নভেম্বর হ্যানয় ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে দেশটির অবিসংবাদিত নেতা হোচিমিনের প্রতিকৃতির পাদদেশে দাঁড়িয়ে অতীতের দুঃখ-বেদনা, বিরোধ এবং তিক্ততা ভুলে গিয়ে একটি উন্নত, সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত্ গড়ার আহ্বান জানান। আমেরিকান প্রেসিডেন্টরা বরাবরই জাতীয় ঐক্যের প্রতিভূ হিসেবে কাজ করেন। একারণেই আমেরিকা আজ বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ও শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশ গড়ার লক্ষ্যে মূল শত্রু হানাদার পাক বাহিনীকে ক্ষমা করে দেন তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের প্রাক্কালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ গ্রহণের নীতিতে বিশ্বাসী নই। তাই মুক্তিযুদ্ধের শত্রুতা করে যারা দালাল আইনে অভিযুক্ত ও দণ্ডিত হয়েছিলেন তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে।’ ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘ভায়েরা, বোনেরা আমার, আমরা চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু একটা ওয়াদা আমি রাখতে পারি নাই। জীবনে যে ওয়াদা আমি করেছি জীবন দিয়েও সে ওয়াদা আমি পালন করেছি। আমি ওয়াদা করেছিলাম তাদের বিচার করব। এই ওয়াদা আপনাদের পক্ষ থেকে খেলাপ করেছি। আমি তাদের বিচার করিনি। আমি তাদের ছেড়ে দিয়েছি এ জন্য যে এশিয়ায়, দুনিয়ায় আমি বন্ধুত্ব চেয়েছিলাম।’ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বনকারী আমেরিকা, চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করে তত্কালীন ক্ষমতাসীনরা ধন্য হলেও নিজ দেশ ও জাতি-গোষ্ঠীর মানুষকে অকারণে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি বলে গালমন্দ করছে তাদের উত্তরসূরিরা। এতে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বিভেদ, বিদ্বেষ, প্রতিহিংসাপরায়ণতা যেমন বাড়ছে তেমনি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দেশের স্বাভাবিক উন্নয়নের ধারা। স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তির ধুয়ো তুলে দেশ ও জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করে আর যাই হোক, স্বাধীনতার সুফল সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছানো যাবে না।
নির্বাচনে ভোট-ব্যাংকের হিসাব-নিকাশ এবং বিজয়ী হয়ে পুনরায় ক্ষমতাসীন হওয়ার অপকৌশল হিসেবে আওয়ামী লীগ বিএনপি-জামায়াত জোট ভেঙে দিতে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ বিতর্ক ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসে। বিগত ৪ বছরের অপশাসন, দুর্নীতি, অনিয়ম এবং ক্রমাবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে ধামাচাপা দিতেই সরকারদলীয় নেতাকর্মী এবং মন্ত্রীরা এসব ইস্যুতে এতটা সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে যাদের জন্ম, এমনকি তাদের সন্তানরা আজ যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না তাদের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বলে আখ্যায়িত করে দেশছাড়া করার হুমকি দিচ্ছেন সরকারের মন্ত্রী বাহাদুররা। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল আয়তনের বাংলাদেশে কোটি কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে আত্মীয়তার সম্পর্কে সম্পর্কিত। একাত্তরে একই পরিবারে রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা দেখা গেছে। পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বনকারী শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন এমন পিতা তার পুত্রকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। স্বাধীন বাংলাদেশে অনেক আওয়ামী লীগারের ছেলেমেয়ে এখন শিবিরের সক্রিয় কর্মী। আবার অনেক জামায়াত নেতার সন্তান ছাত্রলীগের কর্মী হয়ে উঠেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ের শ্বশুরের পরিবার বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোর বিরোধিতা করেছে একাত্তরে একথা সর্বজনবিদিত। শেখ হাসিনা এক মন্তব্যে বলেছেন, তার মেয়ের শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা রাজাকার ছিলেন। কিন্তু যুদ্ধাপরাধী নন। অথচ এই পরিবারের সদস্য, তার মেয়ের শ্বশুর বর্তমান মন্ত্রিপরিষদের সদস্য। স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তির তালিকা থেকে তাদের নাম মুছে গেছে। আর যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি তাদের এই তালিকাভুক্ত করে দেশান্তরী করার হুঙ্কার দেয়া হচ্ছে। আজ এটাই বাস্তবতা।
স্বাধীন বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ একই নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীভুক্ত। তাদের ভাষা এক। সিংহভাগ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসও অভিন্ন। দেশটির দুটি বিশাল সমুদ্রবন্দরসহ রয়েছে বিপুল জনশক্তি। তারপরও দেশটি কাঙ্ক্ষিত সাফল্য লাভের দোরগোড়ায় পৌঁছতে পারছে না একমাত্র রাজনৈতিক বিভক্তি, দেশপ্রেম ও দুরদর্শী ত্যাগী জাতীয় নেতৃত্বের অভাবে। অথচ আমাদের কাছাকাছি দেশ মালয়েশিয়া ভিন্নধর্মী, ভাষাভাষী ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তরতর করে পৌঁছে গেছে উন্নয়নের শিখরে। সময়ের বিবর্তনে বার্লিন প্রাচীর গুঁড়িয়ে দিয়ে জার্মানসহ বিভিন্ন জাতি যখন একীভূত হচ্ছে, ঐক্যবদ্ধ করছে বিভক্ত জাতিকে, বাংলাদেশে তখন ঐক্যবদ্ধ জাতির মাঝে বিভক্তির প্রাচীর তুলে চলছে জাতীয় ঐক্য বিনষ্টের অশুভ খেলা। আত্মঘাতী এই খেলা দেশ ও জাতিকে ভয়াবহ সংঘাত ও বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিহিংসার রাজনীতি যেভাবে ক্রমান্বয়ে প্রকট হয়ে উঠেছে এ ধারা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে জাতিকে চরম মূল্য দিতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দল বা সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করা মানে স্বাধীনতার বিরোধিতা করা বা রাষ্ট্রদ্রোহিতা নয়। দেশে সরকার আছে, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও প্রতিপক্ষ আছে। স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি বলে কিছু নেই এখন।
লেখক : নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাংলাদেশ-এর সম্পাদক
দেশের রাজনীতি ডান ও বাম ধারায় বিভক্ত। ডান রাজনীতির ধারায় রয়েছে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতসহ ইসলামী ও মধ্যপন্থী দলগুলো। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ, জাসদ ও কম্যুনিস্ট পার্টিসহ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সাইনবোর্ডসর্বস্ব কিছু দল বাম রাজনীতির ধারক-বাহক। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ দলীয় নীতি-আদর্শে বিশ্বাসী হলেও তারা নিজেদের বামপন্থী মনে করেন না। সে হিসাবে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশই বলতে হবে ডানপন্থী। বাংলাদেশের একচল্লিশ বছরের ইতিহাসে সিংহভাগ সময় ডানপন্থীদের শাসন এমনটিই প্রমাণ করে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি ছিল প্রায়ই শতভাগ। আজকের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির আত্মপ্রকাশই তখন ঘটেনি। চার দশক পরে তারা কী করে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি হয়? আর আজকে যাদের স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে তাদের একটি বড় অংশের জন্ম স্বাধীন বাংলাদেশে। সবকিছু মিলে বিষয়টি এমন দাঁড়ায় যে বিগত ৪১ বছরে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি পক্ষের শক্তির চেয়ে অনেক বেশি বড়। তাহলে কি আমরা ধরে নেব দিন যত অতিক্রান্ত হবে স্বাধীনতার বিপক্ষ ততই শক্তিশালী হতে থাকবে। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা তো তা নয়। বাংলাদেশের কোনো নাগরিকই এখন স্বাধীনতার বিপক্ষে নয়। তাছাড়া বিপক্ষে গিয়ে তো কোনো লাভ নেই। বাংলাদেশকে আর কখনোই যে পাকিস্তান বানানো যাবে না তা সবারই জানা।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন যারা পাকবাহিনীর পক্ষাবলম্বন করে মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হয়েছিল তাদের কথা ভিন্ন। এছাড়া রাজনৈতিক কারণে তারা তখন স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে এই ভেবে যে পাকিস্তান ভেঙে গেলে তা ভারতের অধীনে চলে যাবে। মুসলমানরা পুনরায় পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হবে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদের সে ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তারা যেমন মেনে নিয়েছে তেমনি তারা ভোগ করেছে সব নাগরিক অধিকার। পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্নকারী বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রেই মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধকালীন এক্টি শ্রেণী স্বাধীনতাবিরোধী শিবিরে সমবেত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় কংগ্রেসের অনেক নেতাকর্মী-সমর্থক ভারতের স্বাধীনতা চাননি। মুসলিম লীগের অনেক নেতাকর্মী চাননি পাকিস্তান হোক। কিন্তু ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন দুটি রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হলে স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার কারণে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সেসব নেতাকর্মীকে ভারত কিংবা পাকিস্তানে কখনোই স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি বলে চিহ্নিত করা হয়নি।
জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে আমেরিকায় মুক্তিযুদ্ধ চলে ১৭৭৫ থেকে ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত। টানা ৮ বছরের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্নভাবে প্রাণ হারায় ২৫ হাজার আমেরিকান। ইউরোপের বৃহত্ শক্তিগুলো এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। আমেরিকার মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় সমর্থন ছিল মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষের। এই যুদ্ধে ২০ শতাংশ আমেরিকান শত্রুপক্ষ ব্রিটিশদের পক্ষাবলম্বন করে। আর নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে ৪০ শতাংশ মানুষ। কিন্তু আমেরিকা স্বাধীনতা লাভের পর বিরোধিতাকারী হাতেগোনা কিছু মানুষ কানাডায় পালিয়ে যায়। বাকি সবাই পক্ষ-বিপক্ষ ভুলে অভিন্ন আমেরিকান জাতি হিসেবে দেশ গড়ায় আত্মনিয়োগ করে। শুধু কি তাই, ১৮৬১ সাল থেকে ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত আমেরিকার গৃহযুদ্ধে প্রায় ৭ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। গৃহযুদ্ধের বর্ণবৈষম্য, বিদ্বেষ ও ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ভেঙে পড়ে গোটা দেশের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো। গৃহযুদ্ধের অবসান শেষে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেন আমেরিকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন। সব বিভেদ বিভ্রান্তি ভুলে গিয়ে সবাইকে ক্ষমা করেন তিনি। নবউদ্যমে শুরু হয় আমেরিকার অগ্রযাত্রা যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। ভিয়েতনামে ১৯৬৫ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত এক দশকের যুদ্ধে আমেরিকার ৬০ সহস্রাধিক সৈন্য প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে ৩ লক্ষাধিক। তারপরও যুদ্ধের ২৫ বছর পর আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ভিয়েতনাম সফরে গিয়ে ২০০০ সালের ১৭ নভেম্বর হ্যানয় ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে দেশটির অবিসংবাদিত নেতা হোচিমিনের প্রতিকৃতির পাদদেশে দাঁড়িয়ে অতীতের দুঃখ-বেদনা, বিরোধ এবং তিক্ততা ভুলে গিয়ে একটি উন্নত, সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত্ গড়ার আহ্বান জানান। আমেরিকান প্রেসিডেন্টরা বরাবরই জাতীয় ঐক্যের প্রতিভূ হিসেবে কাজ করেন। একারণেই আমেরিকা আজ বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ও শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশ গড়ার লক্ষ্যে মূল শত্রু হানাদার পাক বাহিনীকে ক্ষমা করে দেন তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের প্রাক্কালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ গ্রহণের নীতিতে বিশ্বাসী নই। তাই মুক্তিযুদ্ধের শত্রুতা করে যারা দালাল আইনে অভিযুক্ত ও দণ্ডিত হয়েছিলেন তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে।’ ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘ভায়েরা, বোনেরা আমার, আমরা চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু একটা ওয়াদা আমি রাখতে পারি নাই। জীবনে যে ওয়াদা আমি করেছি জীবন দিয়েও সে ওয়াদা আমি পালন করেছি। আমি ওয়াদা করেছিলাম তাদের বিচার করব। এই ওয়াদা আপনাদের পক্ষ থেকে খেলাপ করেছি। আমি তাদের বিচার করিনি। আমি তাদের ছেড়ে দিয়েছি এ জন্য যে এশিয়ায়, দুনিয়ায় আমি বন্ধুত্ব চেয়েছিলাম।’ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বনকারী আমেরিকা, চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করে তত্কালীন ক্ষমতাসীনরা ধন্য হলেও নিজ দেশ ও জাতি-গোষ্ঠীর মানুষকে অকারণে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি বলে গালমন্দ করছে তাদের উত্তরসূরিরা। এতে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বিভেদ, বিদ্বেষ, প্রতিহিংসাপরায়ণতা যেমন বাড়ছে তেমনি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দেশের স্বাভাবিক উন্নয়নের ধারা। স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তির ধুয়ো তুলে দেশ ও জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করে আর যাই হোক, স্বাধীনতার সুফল সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছানো যাবে না।
নির্বাচনে ভোট-ব্যাংকের হিসাব-নিকাশ এবং বিজয়ী হয়ে পুনরায় ক্ষমতাসীন হওয়ার অপকৌশল হিসেবে আওয়ামী লীগ বিএনপি-জামায়াত জোট ভেঙে দিতে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ বিতর্ক ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসে। বিগত ৪ বছরের অপশাসন, দুর্নীতি, অনিয়ম এবং ক্রমাবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে ধামাচাপা দিতেই সরকারদলীয় নেতাকর্মী এবং মন্ত্রীরা এসব ইস্যুতে এতটা সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে যাদের জন্ম, এমনকি তাদের সন্তানরা আজ যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না তাদের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বলে আখ্যায়িত করে দেশছাড়া করার হুমকি দিচ্ছেন সরকারের মন্ত্রী বাহাদুররা। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল আয়তনের বাংলাদেশে কোটি কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে আত্মীয়তার সম্পর্কে সম্পর্কিত। একাত্তরে একই পরিবারে রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা দেখা গেছে। পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বনকারী শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন এমন পিতা তার পুত্রকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। স্বাধীন বাংলাদেশে অনেক আওয়ামী লীগারের ছেলেমেয়ে এখন শিবিরের সক্রিয় কর্মী। আবার অনেক জামায়াত নেতার সন্তান ছাত্রলীগের কর্মী হয়ে উঠেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ের শ্বশুরের পরিবার বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোর বিরোধিতা করেছে একাত্তরে একথা সর্বজনবিদিত। শেখ হাসিনা এক মন্তব্যে বলেছেন, তার মেয়ের শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা রাজাকার ছিলেন। কিন্তু যুদ্ধাপরাধী নন। অথচ এই পরিবারের সদস্য, তার মেয়ের শ্বশুর বর্তমান মন্ত্রিপরিষদের সদস্য। স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তির তালিকা থেকে তাদের নাম মুছে গেছে। আর যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি তাদের এই তালিকাভুক্ত করে দেশান্তরী করার হুঙ্কার দেয়া হচ্ছে। আজ এটাই বাস্তবতা।
স্বাধীন বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ একই নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীভুক্ত। তাদের ভাষা এক। সিংহভাগ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসও অভিন্ন। দেশটির দুটি বিশাল সমুদ্রবন্দরসহ রয়েছে বিপুল জনশক্তি। তারপরও দেশটি কাঙ্ক্ষিত সাফল্য লাভের দোরগোড়ায় পৌঁছতে পারছে না একমাত্র রাজনৈতিক বিভক্তি, দেশপ্রেম ও দুরদর্শী ত্যাগী জাতীয় নেতৃত্বের অভাবে। অথচ আমাদের কাছাকাছি দেশ মালয়েশিয়া ভিন্নধর্মী, ভাষাভাষী ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তরতর করে পৌঁছে গেছে উন্নয়নের শিখরে। সময়ের বিবর্তনে বার্লিন প্রাচীর গুঁড়িয়ে দিয়ে জার্মানসহ বিভিন্ন জাতি যখন একীভূত হচ্ছে, ঐক্যবদ্ধ করছে বিভক্ত জাতিকে, বাংলাদেশে তখন ঐক্যবদ্ধ জাতির মাঝে বিভক্তির প্রাচীর তুলে চলছে জাতীয় ঐক্য বিনষ্টের অশুভ খেলা। আত্মঘাতী এই খেলা দেশ ও জাতিকে ভয়াবহ সংঘাত ও বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিহিংসার রাজনীতি যেভাবে ক্রমান্বয়ে প্রকট হয়ে উঠেছে এ ধারা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে জাতিকে চরম মূল্য দিতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দল বা সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করা মানে স্বাধীনতার বিরোধিতা করা বা রাষ্ট্রদ্রোহিতা নয়। দেশে সরকার আছে, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও প্রতিপক্ষ আছে। স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি বলে কিছু নেই এখন।
লেখক : নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাংলাদেশ-এর সম্পাদক
আমি সবিনয়ে বলতে চাই, জামাত-সিবিরের কর্মীরা এখনো তাদের ৭১ এর পরাজয় ভুলে নাই এবং তাদের এই অবস্থান যে ভুল ছিল না সেটা এখনো বলে আসছে। প্রকারান্তরে তারা বাংলাদেশ এর অভ্যুদয় মেনে নিতে পারেনি এখনো।
উত্তরমুছুন