শুক্রবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১২

কী লাভ আওয়ামী লীগের?


লেখার খসড়াটি ছিল স্কাইপি কথোপকথন প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির আগের। নিষেধাজ্ঞার কারণে লেখাটির কিছুটা নতুন অবয়ব দিতে হয়েছে।  এ নিয়ে দেশী-বিদেশী মিডিয়ায় চাঞ্চল্যকর খবরাখবর প্রকাশের পর দেশের কয়েকজন নামজাদা আইনজীবী বলেছেন, নিজাম সাহেব বিচারক হিসেবে তার অধিকার হারিয়েছেন। স্বেচ্ছায় তার পদত্যাগ করা উচিত। ট্রাইব্যুনালের চেয়াম্যানের পদ থেকে শেষ পর্যন্ত নিজামুল হক নাসিম পদত্যাগ করেছেন। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীকে নিয়েও অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করেননি। সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে নিয়েও অনেক কথা হয়েছে। তিনিও পদত্যাগ করেননি। এসব সম্পূর্ণরূপে নৈতিকতার ব্যাপার। সাধারণত যেকোনো পদলাভের জন্য যারা তদবির করেন তারা কখনো পদত্যাগ করেন না।

যেমন ধরুন, চোর-ডাকাত, ঘুষখোর বেআইনি ও মন্দ কাজ করে বাড়তি আয়ের জন্য। ধনী হয়ে গেলেও তারা এ কাজ ত্যাগ করে না। তখন বেআইনিভাবে অর্জিত টাকা বা সম্পদ এই সমাজে তাদের মর্যাদার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় ঘুষ প্রকাশ্যে লেনদেনের বিষয়। ঘুষখোরের ছেলেমেয়েরা বিচারপতি, সচিব, সেনাপ্রধান হতে পারে। নামীদামি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিও হতে পারে। এখন ঘুষ যেন কোনো নিন্দনীয় বিষয় নয়। বরং বেশি টাকা হয়ে গেলে তিনি অনেকের কাছেই সম্মানিত ব্যক্তিতে পরিণত হন। আমাদের সমাজে এখন বিত্তের হিসেবে মর্যাদা নির্ধারিত হয়। একজন ধনী লোক বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়ে তার চেয়ারম্যান বা চ্যান্সেলরও হতে পারেন বিনা যোগ্যতায়। যেমন, এক-এগারোর কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান দুই ব্যক্তি এখন বিদেশে নির্বাসিত নিন্দনীয় জীবনযাপন করছেন। কিন্তু তাদের সাথী-সহযোগী উপদেষ্টারা বহাল তবিয়তে আছেন সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে। নামের পাশে ‘সাবেক উপদেষ্টা’ লেখেন। ভিজিটিং কার্ডেও তা লেখা থাকে। টকশোতে জাতিকে উপদেশ দেন। সেমিনারে হন প্রধান অতিথি। যে ব্রিটিশ সরকার এ দেশকে ১৯০ বছর শোষণ করেছে সেই ব্রিটিশের কাছ থেকে এখনো অনেকে টাইটেল গ্রহণ করে সম্মানিত বোধ করেন। বিয়েশাদিতে ব্রিটিশের দেয়া টাইটেলের কারণে খুবই কদর পেয়ে থাকেন। আমাদের মানসিকতা এখনো একধরনের দাসের মানসিকতা। অমুক জমিদারের দাস ছিলাম বলতে অনেকে আনন্দ বোধ করি। বাড়ির নাম দারোগা বাড়ি, চৌকিদার বাড়ি ইত্যাদি। প্রসঙ্গক্রমেই এসব কথা বলছি।
আগের জামানায় শুনেছি, ‘রাষ্ট্র বনাম ব্যক্তি’র মামলার কথা। রাষ্ট্র নাকি সব মামলায় হেরে যায়। ব্যক্তিরা টাকা-পয়সা খরচ করে জিতে যায়। আবার সরকার যখন রাজনৈতিক কারণে কোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা করে তখন নাগরিকের জেতার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। সরকারকে জিততেই হবে। অভিযোগ আছে, বিচারকেরা সরকারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। নিজামুল হক সাহেবের বক্তব্যে বোঝা গেল তিনি খুব চাপে আছেন। আইন প্রতিমন্ত্রী গোপনে তার সাথে দেখা করেছেন। সরকার ডিসেম্বর মাসেই একটা রায় চায়। অনেকের সংশয় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বিদেশে অবস্থানরত কিছু লোকের নির্দেশনায় চলছে। এসব মানুষ বিদেশে থাকেন এবং দেশের ব্যাপারে তাদের কোনো দায়দায়িত্ব নেই। প্রসঙ্গক্রমে ইমামে আজম হজরত আবু হানিফার রহ: কথা মনে পড়েছে। খলিফা মনসুর বিল্লাহ হানাফি মাজহাবের ইমাম আবু হানিফাকে রহ: প্রধান বিচারপতি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি রাজি হননি। ফলে ইমাম সাহেবকে জেলে পাঠানো হয়। তিনি আট বছর জেলে ছিলেন এবং জেলেই মারা যান। এই ছিল একজন ইমামের চরিত্র। আর এখন বাংলাদেশে বিচারপতি হওয়ার জন্য অনেকে রাজনৈতিক আনুগত্য প্রকাশ করেন। তাহলে কি দলীয় আনুগত্য ছাড়া বিচারপতি হওয়ার জন্য আর কোনো গুণের প্রয়োজন নেই?
ক’দিন আগে প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান বিচারপতি মারকান্ডে কাটজু বলেছেন, ৯০ শতাংশ ভারতীয়ই নির্বোধ। ধর্মের নামে খুব সহজেই তাদের বিপথগামী করা যায়। ভারতীয়দের মাথায় কোনো মগজ নেই। খুব সহজেই তাদের বল্গাহীনভাবে চালানো যায়। বিচারপতি কাটজু বলেন, ১৮৫৭ সালের আগে ভারতে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িকতা ছিল না। অথচ এখন দেশের ৮০ ভাগ মানুষই সাম্প্রদায়িক। ভারতবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা ১৫০ বছর পেছনে পড়ে আছেন। ইংরেজরা আপনাদের মাথায় সাম্প্রদায়িকতার বিষ ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে। বাংলাদেশের কোনো বিচারপতি বা বুদ্ধিজীবী এ রকম সত্য কথা কি বলতে পারবেন? যদি বলতে পারতেন, তাহলে বাংলাদেশের অবস্থা আজ এ রকম হতো না। ইদানীং সাংবাদিকদের মুরব্বি ও আমার শিক এবিএম মূসা সাহেব কিছু বাস্তব সত্য কথা বলে যাচ্ছেন। তাকে কেন্দ্র করে মানুষের মনে কিছু আশার সঞ্চার হয়েছে। আল্লাহ পাক তাকে হায়াত দারাজ করুন।
বর্তমান সরকার মতায় আসার পর থেকেই বিচার আর মামলা নিয়ে আছে ব্যস্ত। তাদের মতে, দেশের মানুষ নাকি এখন শুধু মামলা আর হামলা চায়। দেশবাসীকে নাকি গ্লানি থেকে মুক্তি দিতেই সরকার নানা ধরনের মামলা নিয়ে ব্যস্ত আছে। অপর দিকে দেশের প্রবৃদ্ধি এখন নিম্নমুখী। কৃষকসমাজ উৎপাদিত পণ্যের দাম পাচ্ছেন না। লাখ লাখ শিতি যুবক বেকারত্বের অভিশাপে ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রফতানি কমে গেছে। অনেকেই বলছেন, মুসলিম দেশগুলো বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান নীতিকে সমর্থন করছে না। সংসদে দাঁড়িয়ে দামিনামী মন্ত্রীরা আমেরিকাকে গালাগাল করছেন। প্রধানমন্ত্রী নাকি বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির বিচার করবেন। অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের বিবৃতিকে রাবিশ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ দিকে দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করায় পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির প্রমাণ জমা দেয়ার পরেও সরকারের অনুগত দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী হয়নি। সরকারের নির্দেশেই শুধু সাবেক মন্ত্রী আবুল হোসেনকে বাঁচানোর জন্যই নাকি দুদক নানা ধরনের বাহানা করছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) দুর্নীতির যে সূচক প্রকাশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে, দুর্নীতির েেত্র বাংলাদেশের অবনতি হয়েছে আরো বেশি। এর আগে টিআইবি সংসদ সদস্যদের দুর্নীতির ওপরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সরকারের হুমকির মুখে পড়েছিল।
কূটনৈতিক শিষ্টাচার ত্যাগ করে, দেশের স্বার্থকে নস্যাৎ করে ভারতের সাথে বর্তমান সরকার অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তেমন কোনো সম্পর্ক সৃষ্টি হয়নি। দেশের মানুষ ভারতের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে সজাগ থাকার পপাতী। কিন্তু সরকার তা করেনি। বরং সরকারের নেতারা বলেছেন, ভারত আমাদের পরম বন্ধু, তার কাছে ইচ্ছা করলেই সব কিছু চাওয়া যায় না। ওটা ভদ্রতার বাইরে। ভারতের রাজনৈতিক ও ধর্মগত মানসিকতার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে এর আগে বেশ কয়েকবার লিখেছি। ধর্মীয়ভাবেই ভারত একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। তবে এর নেতাদের সাফল্য হলো, তারা ধর্মনিরপেতার নামাবলি গায়ে দিয়ে ভালো অভিনয় করতে এবং বিশ্ববাসীকে মুগ্ধ করতে পেরেছেন। বাংলাদেশেও অনেক বুদ্ধিজীবী মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন ভারত একটি সেকুলার বা ধর্মহীন রাষ্ট্র। সারা ভারতে ব্রাহ্মণের সংখ্যা হয়তো এক কোটি। আর ব্রাহ্মণদের সমর্থনে রয়েছে আরো কয়েক কোটি ত্রিয়। সব মিলিয়ে হয়তো ১০ কোটি হবে। এরাই ভারত শাসন করে আসছেন। এ পর্যন্ত দিল্লি শাসন করে চলেছেন ব্রাহ্মণেরা। ভারতে ৩০ কোটি শূদ্র আর ৩০ কোটি মুসলমান অবহেলিত ও দলিত। ভারত প্রকৃতপক্ষে ১৯৪৮ সালেই ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছে ধর্মীয় কারণে। সেই ভারতের নেতাদের সাথে শেখ হাসিনার মাখামাখি। এর একটা গভীর রহস্য রয়েছে। বঙ্গবন্ধু থাকলে এ অবস্থা হতো না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ বলেছেন, তথাকথিত আল্লাহর আইন চালু হলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবে না, উন্নতিও হবে না। তথাকথিত সৈয়দ সাহেবের কথায় অবাক হইনি। এর আগে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি হিন্দুও নই, মুসলমানও নই।’ সোজাসাপটা সরল কথা। নেই কোনো রাখঢাক। সেই সৈয়দই এখন বললেন, তিনি আল্লাহর আইনও মানেন না। তার পিতা মরহুম সৈয়দ নজরুল ইসলাম খুবই বিনয়ী মানুষ ছিলেন। শুনেছি বঙ্গবন্ধুও তাকে সম্মান করতেন। সেই নজরুল সাহেবের ছেলে বলছেন, তিনি ধর্মে বিশ্বাস করেন না। লোকে বলে, তিনি নাকি সারা দিন চুর হয়ে পড়ে থাকেন। সহজে অফিসে যান না। তার স্ত্রীও নাকি একজন বিদেশিনী। আওয়ামী লীগের জন্য এমন একজন সাধারণ সম্পাদকই কি অপরিহার্য ছিল? কিন্তু শেখ হাসিনা নিয়মিত নামাজ-রোজা করেন বলা হয়। পবিত্র হজব্রত পালন করেছেন। মাঝে মধ্যে হিজাবও পরেন। এমনকি কিসাসের কথা বলেন। তিনি জানেন তাকে এসব করতে হবে, কারণ দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। রাজনৈতিক কারণেই দেশের মানুষকে খুশি রাখতে হবে, তাদের ভোট পেতে হবে।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ। তিনি একসময় পাকিস্তানকে একটি কনফেডারেশন হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশকে নিজের মতো করে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তেমন সাথী-সহযোগী পাননি। পেয়েছিলেন চাটার দল, কম্বল চোর, চোরের খনি। ফলে তার স্বপ্নের সোনার বাংলা তিনি গঠন করতে পারেননি। তার আত্মজীবনী পড়লেই বোঝা যাবে, তিনি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য কী অপরিসীম ত্যাগই না স্বীকার করেছেন! এই ত্যাগ ছিল সাধারণ মানুষের জন্য ভালোবাসার কারণে। সেই স্বপ্নের পাকিস্তানকে ধ্বংস করেছেন জুলফিকার আলী ভুট্টো আর পাকিস্তানের সামরিক জান্তা। পরোভাবে এতে ভারত সমর্থন দিয়েছে। এসব কথা আরো অনেকবার বলেছি। ভারত বাংলাদেশকে তার প্রভাব বলয়ে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেই ’৭১ সাল থেকেই। বঙ্গবন্ধু ভারতের দাদাগিরি কখনোই মেনে নেননি। তিনি ভারতের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের লাহোরে ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন ১৯৭৪-এ। ভারত তখন থেকেই বঙ্গবন্ধুর ওপর নাখোশ। অনেকেই মনে করেন, এর ফলে বঙ্গবন্ধুর পতন হয়েছে। তখন শেখ হাসিনা বিদেশেই ছিলেন এবং এক সময়ে ভারতে এসে আশ্রয় নেন। কয়েক বছর তিনি ভারত সরকারের প্রিয় মেহমান হিসেবে দিল্লিতে অবস্থান করেছেন। জিয়াউর রহমানই তাকে দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন ১৯৮০ সালের ১৭ মে। ওই মাসের ৩০ তারিখে জিয়া শহীদ হন। লোকে মনে করে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে ভারত ও তৎকালীন সেনাপ্রধান জড়িত ছিলেন। রাজনৈতিক কারণেই এসব হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয় না। তেমনি বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছেন শেখ হাসিনা তাদের বিচার করেছেন। কিন্তু হত্যার কারণ ও রহস্য উদঘাটনের জন্য কোনো কমিশন গঠন করেননি। কারণ এর সাথে শক্তিশালী দেশগুলো জড়িত। সেই দেশগুলোর সাথেই এখন শেখ হাসিনার খাতির ও গলাগলি চলছে। আসলে এসব বিচার-রাজনীতির এবং জনগণকে প্রভাবে রাখার একটি কৌশল।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তেমনি একটি রাজনৈতিক কৌশল। অনেকেই বলছেন এর ল্য মুসলমান ও ইসলামকে ধ্বংস করা। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি পৃথিবীর কোথাও নিষিদ্ধ নয়। এমনকি ভারত-পাকিস্তানেও নয়। কিন্তু বাংলাদেশে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। আসলে এটাও একধরনের রাজনীতি। জামায়াতের কয়েকজন নেতাকে ফাঁসি বা শাস্তি দিলে কি ইসলামি রাজনীতি বন্ধ হয়ে যাবে? জামায়াতের শতকরা ৮০ ভাগ নেতার বয়স এখন ৫০-এর নিচে। ’৭১ সালে তারা কোনো মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল না। ‘জামায়াতে ইসলামী’ নামটি নিষিদ্ধ হয়ে গেলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে নাÑ এ কথা আওয়ামী লীগ ভালো করেই জানে। তবুও কেন তারা এ বিষয়টা নিয়ে রাজনীতি করছে? কারণ একটি; আর তা হলো ভারতের ইচ্ছা পূরণ করা। ভারত বাংলাদেশে ইসলামি রাজনীতির বিকাশ মোটেও চায় না। কিন্তু নিজ দেশে বিজেপি, শিবসেনা, হিন্দু পরিষদ, আরএসএসের বিকাশ চায়। এটা হচ্ছে চাণক্যনীতি। ভারতের রাষ্ট্রীয় রাজনীতির মূলনীতি আসলে হিন্দুত্ব। ভারতবাসী সবাই হিন্দু। হিন্দু ছাড়া বাকিরা ‘বিদেশী’। এর সার কথা, বাল থ্যাকারে এই নীতিই প্রচার করতেন। ভারতের প্রায় সব রাজনীতিকই এই আদেশের অনুসারী। তাই ভারত চায় বাংলাদেশের জনগণের ধর্মীয় চেতনা দুর্বল হয়ে যাক। মোটকথা, রাষ্ট্র ধর্ম থেকে দূরে থাকবে। ধর্ম কালক্রমে ব্যক্তিগত ও গৃহের বিষয়ে পরিণত হবে। ভারতে অনেক মসজিদ আছে যেগুলো এখন বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। কারণ ওই সব এলাকায় এখন কোনো মুসলমান নেই। রাশিয়া, চীনেও একসময় মসজিদগুলোতে তালা ঝুলত। কয়েক বছর আগে তালা খুলে দেয়া হয়েছে। মুসলমানেরা আবার ধর্মচর্চা শুরু করেছে।
অখণ্ড বঙ্গদেশ বা বাংলাদেশ মোটামুটিভাবে একটি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল। রাজনৈতিক কারণে সেটা এখন খণ্ডিত। হিন্দুপ্রধান বলে পশ্চিম বাংলা ভারতের অধীনে। মুসলিম প্রধান বলে পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অংশে পরিণত হয়। পূর্ব বাংলার মুসলমানেরা জান দিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেছে। সাবেক পূর্ব পাকিস্তানই আজ বাংলাদেশ। কারণ এ অঞ্চল একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা। যদি এই এলাকা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ হতো তাহলে ভারতেই থাকত। এখনকার বহু নামীদামি তথাকথিত সেকুলার মুসলমান নামধারী বুদ্ধিজীবী ৪৭-এ ভারত ছেড়ে পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিলেন। কারণ তাদের মুরব্বিরা মানে বাপ-দাদা মুসলমান ছিলেন। এখন তারা ভারতের দালালি করেন হীনম্মন্যতার কারণে। মওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ এখন মুসলমানবিরোধী ভারতের স্বার্থসংরক্ষণকে পরিণত হয়েছে জেনে বা না জেনে। আমি মনে করি, শেখ হাসিনা না জেনেই কাজটি করছেন।
বিচারপতি নিজামুল হক নিয়ে কথা শুরু করেছিলাম। সে প্রসঙ্গে ফিরে আসি। কী রায় হবে, রায় কিভাবে ড্রাফট হবে তা নিয়ে তিনি জিয়া উদ্দিন সাহেবের সাথে বিস্তারিত আলাপ করেছেন। আমি তো মনে করি এসব রায় দিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক লাভ হবে না। কারো মনে যদি কোনো প্রতিহিংসা থাকে তবে তা বাস্তবায়িত হতে পারে। বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনীতি কোনো দিনও বিলুপ্ত হবে না। কারণ তা স্বাভাবিক অবস্থা নয়। কমিউনিস্টরা রাজনীতি করতে পারলে ধর্মীয় দলগুলো রাজনীতি করতে পারবে না কেন? বামপন্থী মোর্চা জামায়াতের রাজনীতি বন্ধ করার দাবিতে হরতাল ডেকেছে। অথচ তাদের কোনো জনসমর্থন নেই। জাতীয় সংসদে একটি সিটও নেই। সারা দেশে তাদের নেই এক লাখ ভোটও।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads